কবি হেলাল হাফিজ, গলির শোর ও শাম্মী…
লিখেছেন লিখেছেন প্রেস২৪ ২০ জুন, ২০১৩, ০৭:০৭:৫৪ সন্ধ্যা
কবি ও সাংবাদিক হেলাল হাফিজ। কবিতায় আধুনিকতার ছোয়া, বলা চলে স্বপ্নপ্রজ কবি। বেশিরভাগ লেখনীতে ফুটে এসেছে গ্রামের প্রতিনিধি হিসেবে শহুরে সভ্যতাকে (বিকৃত) খোঁচা দিয়ে শেখানোর প্রবণতা।
এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।– ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’র এই দুটি পঙক্তি দিয়ে ৮০’র দশকে সাড়া ফেলেন এই কবি। এরপর তার অসংখ্য কবিতা মানুষের মুখে মুখে।
তবে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন এই কবির কবিতা। তাও রাজনীতির হাত ধরে। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে। গতকাল বুধবার সংসদে বিরোধী দলের সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তার প্রস্তাবিত ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন।
সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের কঠোর সমালোচনা করার এক পর্যায়ে কবি হেলাল হাফিজের একটি কবিতা পড়ে শোনান শাম্মী। তিনি বলেন, ‘গুছাইয়া-গাছাইয়া লন, বেশি দিন পাইবেন না সময়/আলামত যা দেখতাছি মানুষের হইবোই জয়/আমিও গেরামের পোলা, চুতমারানি গাইল দিতে জানি।’
এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সম্মিলিতভাবে সরকারি দলের এমপিরা প্রতিবাদ জানান। প্রায় ৫ মিনিট ধরে চলে এ অবস্থা। এক পর্যায়ে অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিযে যান শাম্মী আক্তার।
এদিকে, তার বক্তব্যের কিছুক্ষণ পরই অধিবেশন কক্ষে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে স্পিকার শাম্মী আক্তারের অসংসদীয় বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করেন।
অশালীন ভাষা নিয়ে গত সপ্তাহে সংসদ কয়েক দফা উত্তপ্ত হওয়ার পর অসন্তোষ প্রকাশ করে এই সপ্তাহের শুরুতে স্পিকার এক রুলিংয়ে বলেন, অসংসদীয় ভাষা হলে তিনি মাইক বন্ধ করে দেবেন।
এর আগে শাম্মী আক্তার বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট একটি লোপাটের বাজেট। এই বাজেট চাপাতি লীগ, চান্দা লীগ আর ধর্ষক লীগের জন্য।’
দলীয় নেতা এম ইলিয়াস আলীর সন্ধান চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে ফেরত চাচ্ছি। আমরা মনে করি, ইলিয়াস আলী সরকারের হেফাজতে আছে। তাকে ফিরিয়ে দিন ভাইয়েরা।’
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে শাম্মী বলেন, ‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, আওয়ামী লীগ চোর হ্যায়।’
এ সময় শাহবাগ আন্দোলনের সমালোচনা করেন এই সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের কাজ স্বাভাবিকভাবে করতে পারছে না। তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে, বাকরুদ্ধ করা হচ্ছে।’
তার এই বক্তব্যের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। সংসদ সদস্যদের মুখে এমন ভাষা মানায় না বলে অনেকে ফেসবুকে পোস্ট ও মন্তব্য করেছেন। অনেকে এটিক নিষিদ্ধ গলির ভাষা বলে মন্তব্য করে সংসদের মতো জায়গায় মানায় বলে মন্তব্য করেছেন।
সঙ্গে আলোচনায় এসেছে হেলাল হাফিজের কবিতা। ‘যে জ্বলে আগুন জ্বলে’ খ্যাত কবির ‘যার যেখানে জায়গা’ শিরোনামের কবিতা পড়ে শোনান শাম্মী আক্তার।
কবি হেলাল হাফিজ সাংবাদিক ও সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কাজ করেছেন। তিনি ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পড়াশোনা করেন নেত্রকোনা দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়, নেত্রকোনা কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রাবস্থায়ই তিনি দৈনিক পূর্বদেশে সার্বক্ষণিক সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন।
পাঠকদের আগ্রহের কথা ভেবে কবি হেলাল হাফিজের কবিতাটি তুলে দেয়া হলো;
ভোলায়া ভালায়া আর কথা দিয়া কতোদিন ঠগাইবেন মানুষ
ভাবছেন অহনো তাদের অয় নাই হুঁশ।
গোছায়া গাছায়া লন বেশি দিন পাইবেন না সময়
আলামত দেখতাছি মানুষের অইবোই জয়।
কলিমুদ্দিনের পোলা চিডি দিয়া জানাইছে,–’ভাই
আইতাছি টাউন দেখতে একসাথে আমরা সবাই,
নগরের ধাপ্পাবাজ মানুষেরে কইও রেডি অইতে
বেদম মাইরের মুখে কতোক্ষণ পারবো দাঁড়াইতে।’
টিকেট ঘরের ছাদে বিকালে দাঁড়ায়ে যখন যা খুশি যারা কন
কোনো দিন খোঁজ লইছেন গ্রামের লোকের সোজা মন
কী কী চায়, কতোখানি চায়
কয়দিন খায় আর কয়বেলা না খায়া কাটায়।
রাইত অইলে অমুক ভবনে বেশ আনাগোনা, খুব কানাকানি,
আমিও গ্রামের পোলা চুত্মারানি গাইল দিতে জানি।
সূত্র: http://www.rtnn.net//newsdetail/deta/1/3/65796#.UcL-A5xBN2U
বিষয়: বিবিধ
২১৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন