দিগন্তের দুঃখপ্রকাশ, সতর্ক থাকার প্রতিশ্রুতি
লিখেছেন লিখেছেন প্রেস২৪ ১৮ জুন, ২০১৩, ১১:১৭:২৮ রাত
বেসরকারি দিগন্ত টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ সরকারের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবে দুঃখপ্রকাশ করেছে। পাশাপাশি দিগন্ত কর্তৃপক্ষ সম্প্রচারের ক্ষেত্রে ‘অধিকতর সতর্কতা’ ও ‘তত্ত্বাবধান জোরদার’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তবে সরকার এখনো দিগন্তের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এ প্রসঙ্গে প্রথম আলো ডটকমকে বলেছেন, দিগন্ত টেলিভিশন সরকারের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দিয়েছে। জবাব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সরকার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে।
গত ৫ মে হেফাজতে ইসলাম ঢাকায় সমাবেশের নামে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের যে ঘটনা ঘটায়, তাতে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে দিগন্ত ও ইসলামিক টেলিভিশনের প্রচার সাময়িকভাবে স্থগিত করে সরকার। সরকার বলছে, টেলিভিশন চ্যানেল দুটি সম্প্রচারের শর্ত ভঙ্গ করেছে এবং সুস্পষ্টভাবে আইন লঙ্ঘন করেছে।
দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহ আবদুল হান্নান সরকারের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবে বলেছেন, ‘...আন্তরিক প্রয়াস সত্ত্বেও ২৪ ঘণ্টার বিরামহীন সম্প্রচারকালে মানবীয় সীমাবদ্ধতার কারণে সাম্প্রতিককালে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদ, অংশগ্রহণকারী কোনো ব্যক্তির দায়িত্বহীন বক্তব্য বা অনুষ্ঠানের অংশবিশেষ আমাদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রচারিত হয়ে থাকলে তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আমরা অধিকতর সতর্কতা ও তত্ত্বাবধান জোরদার করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছি।’
তবে সরকারের কাছে লেখা চিঠিতে দুঃখপ্রকাশ করলেও নিজেদের ওয়েবসাইটে সম্প্রচার সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়ার সমালোচনা করেছে দিগন্ত কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের কোটি মানুষের প্রিয় টিভি চ্যানেল দিগন্ত টেলিভিশন সরকারের নির্বাহী আদেশে বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ, র্যাব ও বিটিআরসি। আমাদের ট্রান্সমিশনের মূল্যবান যন্ত্রাংশ বিচ্ছিন্ন করে খুলে নিয়ে গেছে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এইসব যন্ত্রাংশ ছাড়া দিগন্তের ট্রান্সমিশন (সম্প্রচার) পুনরায় চালু করা সম্ভব না। গত ৬ মে সোমবার ভোর ৪-২৪ এ এই চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাকস্বাধীনতা ও তথ্যের অবাধ প্রবাহে বাধা সৃষ্টিতে সরকারের এহেন সিদ্ধান্তে আমরা হতবাক।’
কী বলছে দিগন্ত: দিগন্ত টেলিভিশনের নির্বাহী পরিচালক মাহাবুবুল আলম বলেছেন, কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব যথাসময়ে দেওয়া হয়েছে। দু-একদিন আগে আরও একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তাঁরা আশা করছিলেন, মাস খানেকের মধ্যেই দিগন্ত আবার সম্প্রচার শুরু করতে পারবে।
সরকারের অবস্থান কী: সরকার টিভি চ্যানেল বরাবর যে চিঠি দিয়েছে তাতে বলেছে, গত ৫ মে দিগন্ত ও ইসলামিক টেলিভিশন এমনভাবে তাদের সম্প্রচার চালায় যা উত্তেজনা ও অশান্তি তৈরির ক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে উসকানিমূলক ছিল এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া অনাপত্তিপত্রের ছয় ও নয় নম্বর শর্ত তারা ভঙ্গ করেছে এবং বিটিআরসি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০১-এর ৬৬ ধারার লঙ্ঘন করেছে।
অনাপত্তিপত্রের ছয় নম্বর শর্তে বলা আছে, বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, মন ও মানসিকতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় সংহতি, উন্নয়ন ও রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ইত্যাদির পরিপন্থী কোনো অনুষ্ঠান তৈরি ও রপ্তানি/প্রচার করা যাবে না। আর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন এর ৬৬-র ১ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি বা বেতার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মিথ্যা বা প্রতারণামূলক বিপদসংকেত, বার্তা বা আহ্বান প্রেরণ করিবেন না বা তাহা করাইবেন না।’ এ আইনের লঙ্ঘন করলে তিন বছর কারাদণ্ড বা অনধিক তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা দুটো দণ্ডেই দণ্ডিত হওয়ার কথা।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন অ্যান্ড ফিল্ম স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান শফিউল আলম ভূঁইয়া মনে করেন, অপরাধের মাত্রা যা-ই হোক না কেন, টেলিভিশনটিকে সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন। তিনি প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, সম্প্রীতি রক্ষায় ওই মুহূর্তে সরকারের হাতে আর কোনো বিকল্প ছিল না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কতটুকু সেটা কেউ বুঝে, কেউ না বুঝে ব্যবহার করছে। শর্ত লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে চ্যানেলটিকে সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন। গণমাধ্যমের সম্প্রচার বন্ধের এই সিদ্ধান্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কোনো ভালো বার্তা দেয় না।
সূত্র:
১. http://prothom-alo.com/detail/date/2013-06-18/news/361391
২.http://www.bdtomorrow.net/newsdetail/detail/200/31835
বিষয়: বিবিধ
১৯২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন