সুন্দরবনের প্রেমের ছোঁয়ায় একদিন(তৃতীয় পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন শুভ্র কবুতর ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০১:০৭:১৭ দুপুর
খাল থেকে বের হয়ে আমাদের বহনকারী নৌকা পুনরায় বনের ধার দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চললো|ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির গতি কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হলাম নদীর পানি ছুই ছুই কয়েকটা ঝোপ সাদৃশ্য গাছের নিচে নৌকা থামাতে|বৃষ্টির পানি সরাসরি তেমন গায়ে নাপড়লেও গাছগুলোর কচি ডাল বেয়ে টুপ টুপ করে নিজেদেরকে ভিজিয়ে দিচ্ছিল|এক সময় বৃষ্টির গতি কমে এলে আমরা পুনরায় রওনা হলাম|
সুন্দরবনের বিখ্যাত একটি ফল জন্মানর সময় এটি|আফসোসের বিষয় হল,কেঁওড়া খেতে খুব ইচ্ছা করলেও নদীর ধারে ফল হওয়া কোন গাছ দেখা যাচ্ছিলনা|কেঁওড়া খেতে যারা অভ্যস্ত কিংবা কেঁওড়ার স্বাধ কেমন যে ব্যাক্তিটি অবগত তার জিহ্বায় পানি আসাটা স্বাভাবিক ব্যাপার|কিছুদূর যেতেই একজনকে দেখতে পেলাম জাল ফেলে বাগদা চিংড়ীর পোনা ধরছে|হাতের মোবাইলটা এই দৃশ্য ধারণ করতে কয়েকবার ক্লিক করে উঠলো|কথা হলো লোকটার সাথে মাছ ধরা নিয়ে|আনুমানিক তিন থেকে চারশ মাছ তার জালে ধরা পড়েছে|যার আর্থিক পরিমাণ দুইশ থেকে আড়াইশ হতে পারে|লোকটি আমাদের পরিচিত ছিল মুখে মুখে|মণ্ডা উপজাতির কিছু বসতি নদীর ওপারে উপকূলে রয়েছে|যাদের ধর্ম হিন্দু হলেও খ্রিস্টানদের অর্থের লোভে অনেকেই খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেছে|মাছ ধরা জেলেটিও মণ্ডা উপজাতির লোক|আমাদের অবশ্য জানা নেই লোকটা তার ধর্মকে ত্যাগ করে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেছে কি না|বাংলাদেশের যেখানেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির আবাস রয়েছে,খ্রিস্টান মিশনারীরা তাদের দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে প্রচুর অর্থের প্রলোভনে তাদেরকে খ্রিস্ট ধর্মে দিক্ষিত করছে|এক্ষেত্রে ব্যার্থতা মুসলমানদের ছাড়া কাওকে দেয়া যায়না|লোকটির জাল তোলা ফেলার দৃশ্য খুব মোহনীয় ছিল|ভাবছিলাম এই জেলে বাওয়ালদের জীবন সংগ্রাম কত ঝঞ্জা বিক্ষুব্ধ হয়ে থাকে,কত অনিশ্চয়তার মধ্যে তাদের চলতে হয়,যেকোন দুর্ঘটনাকে মোকাবেলায় প্রস্তুত সদা সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হয়|
নদীর পানিতে নেমে থাকা একটা বাইন গাছের সাথে নৌকা বেধে ছবি তুলতে লাগলাম|মোহাসিন আর হাফিজ তো গাছে চড়ে বসলো|সব থেকে আনন্দটা হয়েছিল এখানে|ঝুলে থাকা ডাল ধরে নদীর লোনা পানিতে দুই পা ফেলে দোল খাওয়া যে কত আনন্দের সেটা নিশ্চয় গ্রাম বাংলার দামাল ছেলেরাই বেশী করে বুঝবে|বিষয়টি আমাদের কৈশর জীবনের রোমাঞ্চকর দিনগুলিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে নিশ্চয়|পুকুর পাড়ের সিরিজ গাছের মগ ডালে উঠে পানিতে ঝাপিয়ে পড়ার ফেলে আসা স্মৃতি আপনি সহজে ভুলতে পারেন না|মনে আছে এজন্য মায়ের বকুনি শুনতে হত!
এবার আমাদের ফিরে আসার পর্ব শুরু হল|তবে ফেরার পথের ঘটনাগুলো আরো চমৎকার উপভোগ্য হয়েছিল|অবশ্য আমি আরো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওরা বললো নদীর উপকূলের চরে কৃত্রিম ভাবে সুন্দরবনের বিভিন্ন বৃক্ষের চারা নান্দনিক ভাবে সারি সারি লাগান রয়েছে,ওগুলো দেখতে হবে|তাছাড়া পিছনে আমরা এমন একটা খাল রেখে এসেছি যেখানে বেশী জোয়ার উঠলেই যাওয়া সহজ ও নিরাপদ এবং সেখানেই যেতে হবে|
বিষয়: সাহিত্য
১১৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন