"সুন্দরবনের প্রেমের ছোঁয়ায় একদিন" ...দ্বিতীয় পর্ব|||

লিখেছেন লিখেছেন শুভ্র কবুতর ৩০ আগস্ট, ২০১৩, ১০:৫২:০১ সকাল

_**_দ্বিতীয় পর্ব_**_

আমাদের বহনকারী নৌকা প্রবেশ

করলো একটি প্রসস্ত খালের ভিতরে|এটি দীর্ঘ দিনের পরিচিত হলেও কয়েক বছর পরে পুনরায় আসা হল|যতদূর মনে পড়ে চার পাঁচ বছর পূর্বে শেষ বার আসা হয়েছিল|আমাদের সাথে যশোর থেকে আসা তিন জন মেহমান ছিল|পূর্বের তুলনায় খালটা বেশ প্রসস্ত মনে হচ্ছে|ভীতিকর একটা ঘটনা ঘটেছিল সেবার|সাথে আনা নৌকাটা গাছের সাথে বেধে একটা দৃষ্টি নন্দন বাইন

গাছকে কেন্দ্র করে ছবি তোলা হচ্ছিল|বনের আরো ভিতরে যাওয়ার জন্য যেইনা কিছুদূর

এগিয়েছি তখনি দৃশ্যটা চোখে পড়ল|হয়ত ঘন্টা দুই পূর্বের ঘটনা,আমাদের ছবি তোলার স্পটের পাস দিয়েই শিকারী বাঘ

একটা হরিণকে তাড়িয়ে নিয়ে গেছে|আমাদেরকে সুন্দরবন

দেখতে নিয়ে আসা ভাইটি এমনটায় বলেছিল বাঘ আর হরিণের তাজা পদচিহ্ন দেখে|সেদিন আর দেখা হইনি,ফিরে আসতে হয়েছিল দুরুদুরু বুক নিয়ে|অবশ্য জেলে বাওয়ালদের এর থেকে ভয়ানক দৃশ্যকে অগ্রায্য করেই গহীন বনে পথ চলতে হয়|

এমনকি তাদেরকে সরাসরি বাঘের

মুখোমুখি ও হতে হয়|প্রতি বছর শত শত মানুষের প্রাণ যায় এই ভয়ানক প্রাণিটির থাবায়|তারপরেও থেমে থাকেনা ওনাদের জীবন সংগ্রাম|

আজ আমরা সকলেই ছেলে মানুs|আমাদের নেই সুন্দরবনে চলার

বাস্তব তেমন কোন অভিজ্ঞতা,যদিও আমরা এখানকার সন্তান|এই মুহূর্তে মনের গহীনে এক অদৃশ্য শক্তি সুড়সুড়ি দিচ্ছে|সম্ভবত ভয় নামক আযব বস্তুটির কাজ এটি|ভ্রমণের শুরুতে আমাদের

লুঙ্গি ভিজে যাওয়ায় ওরা তিনজন

কাছা মেরেছিল|এমন ঘটনা আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত

ঘটছে যে বিপদে পড়লে বান্দা পাক্কা ওরাও এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম কিছু করলোনা,কাছাটা খুলে দিয়ে হাটু ঢেকে বসলো|

খালের দু প্রান্তের সবুজ বনের

মোনরম দৃশ্য দেখছিলাম|কত্ত

মোহনীয় দৃশ্য মহান আল্লাহ ওই

গাছগুলোর মাঝে ফুটিয়ে তুলেছেন যেটি কেবল মাত্র আনুধাবন ছাড়া বর্ণনাযোগ্য নয়|

স্বর্ণালী সবুজের কারুকার্য যেন

হাতছানি দিয়ে ডাকছে!

যেখানে হেতাল ঝাড় সেখানে শুধুই হেতাল গাছ|খুব ঘণ হয় বিধায় বাঘের আবাসের জন্য এটি খুব উপযোগী|সুন্দরবনের একটি অবাক করা বৈশিষ্ট হল যেখানে যে গাছ জন্মে সেখানে ওই গাছগুলো দীর্ঘ এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠে এবং অন্য কোন গাছ এখানে হয়না দু একটা ছাড়া|তবে এ

দৃশ্য সাধারণত গহীন বনে বেশী দেখা যায়|সারি সারি বাইন,গরান,কেঁওড়া,পশুর,ধোতল,গোল

পাতা সুন্দরী ইত্যাদি বৃক্ষে আবৃত

খালের দুই প্রান্ত|

তখনো জোয়ারের পানি খাল

দিয়ে বনের গহীনে প্রবেশ করছিল|এরকম হাজার হাজার খাল বনের ভিতর দিয়ে সাপের মত একে বেকে বয়ে চলেছে দূরপ্রান্তে|জোয়ারের পানি খালগুলোতে প্রবেশ

করলে বিভিন্ন ধরণের মাছ আর

কাঁকড়া নদী থেকে এখানে এসে জমা হ.জেলেরা বিশেষ ধরণের জাল ফেলে মাছগুলোকে শিকার করে|আর কাঁকড়া ধরার জন্য শক্ত লম্বা দড়িতে লোভনীয় খাবার

লটকিয়ে রাখা হয়|যখনি ওরা মনের আয়াশে খাবারগুলো খেতে থাকে তখন নেট জালদিয়ে তৈরী জালতি(স্থানীয়

নাম)দিয়ে বিশেষ

পদ্ধতিতে ওদেরকে ধরা হয়|

জেলে বাওয়ালদের আয়ের প্রধান

মাধ্যম হলো এই মাছ,কাঁকড়া আর মধুর মৌসুমে মধু আহরণ করা|এই খালগুলো তৈরী হয় বনের অপেক্ষাকৃত উচ্চাঞ্চাল

থেকে জোয়ার আর বৃষ্টির

পানি ঢলের মত নেমে আসা থেকে|পানি প্রবাহের সরু চিকন পথ

থেকে তৈরী হয় জোলা(স্থানীয়

পরিভাষা)|তার থেকে তৈরী হয় খাল যা একসময় বৃহৎ নদীর রূপ ধারণ করে|

খালের খুব বেশী ভিতরে আমাদের

যাওয়া হলোনা| পুনরায় মূল নদীর

দিকে ফিরতে হল|ইদানিং জলদস্যুদের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন জেলে বাওয়ালরা|এই খালেও দস্যুদের

আনাগোনা দেখা যায়,যদিও এর

বাইরের অংশটা লোকালয় থেকে স্পষ্ট

দেখা যায়|জেলেদের নিকট

থেকে ওরা একেকবারে ৪০,৫০,৬০

থেকে এক লাখ পর্যন্ত অর্থ আদায়

করে|আর আমাদের ধরতে পারে যদি তাহলেতো ওদের ব্যাবসা ভালো জমে উঠবে|

দিশেহারা জেলে বাওয়ালরা অনেকেই

পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে|যদিও

উপকূলীয় অঞ্চলে বনে কাজ

করা ছাড়া তেমন কোন পেশা নেই|

বিষয়: সাহিত্য

১৬৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File