সুন্দরবনের প্রেমের ছোঁয়ায় একদিন

লিখেছেন লিখেছেন শুভ্র কবুতর ২১ আগস্ট, ২০১৩, ০২:১৬:৩২ দুপুর

সুন্দরবনকে নিয়ে একটা ভ্রমণ কাহিনী লিখতে শুরু করেছি|এটা শুধু কাহিনী নয়,বাস্তব ঘটনা|ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি পর্বে প্রকাশ করব ইনশা আল্লাহ|প্রকৃতপক্ষে সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের জীবনের উপর দিয়ে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা লিখে শেষ করা অসম্ভব|আশা করি সকলের নিকট ভালো লাগবে লেখাটা|অনুরোধ থাকবে অন্তত প্রথম পর্ব পড়ে দেখবেন|ভালো নালাগলে আপনাকে আর পড়তে হবেনা|

______প্রথম পর্ব______

হঠাৎ করেই হাফিজ

নৌকা জোরছে ঠেলা দিল|আমরা এই

অবস্থার জন্য মটেও প্রস্তুত

ছিলামনা|মাজা থেকে নিচের

দিকটা ভিজে একাকার|আর একটু

হলে নদীতে চুপানি খেতে হত!ভাগ্য

ভালো বেঁচে গেলাম|

নইলে ছবি তোলার জন্য

সাথে থাকা মোবাইলটার অবস্থা জল

টুপ টুপ!

নদীতে সবে মাত্র জোয়ার ওঠা শুরু

করায় চর

থেকে পানি কিছুটা নিচে ছিল|উপর

থেকে লগিতে বাধা নৌকাটা আমরা সকলে মিলে ধিরে ধিরে নিচের পানিতে নামাচ্ছিলাম|অকাষ্মাত ওর সজোর ঠেলায় নৌকার

সামনের মাথা প্রায় ডুব ডুব অবস্থায়

পিছন দিকটা উচু হয়ে একটা ড্রাইভ

দিয়ে পানিতে আছড়ে পড়ল|একটু

বিপদজনক হলেও বিষয়টা সকলের

জন্য দারুণ উপভোগ্য হল|

কাদা মাখা পা ধুয়ে ছোট নৌকাটায়

উঠে বসলাম|পরনের

লুঙ্গিটা ভিজে যাওয়ায় খারাপ

লাগলেও একটু পরে কেটে গেল|শুরু হল

বৈঠা বাওয়া,শুরু হল সুন্দরবন ভ্রমণ!

আমরা ছিলাম চার জন|

হাফিজ,মহাসিন,সাঈদী আর চতুর্থ

জন আমি|মাঝি আমরাই,যাত্রি ও তাই|

সাঈদী নৌকা চালাতে বেশ

অভ্যস্থ,আমরা তিনজন

মোটামুটি পারি|নৌকাটা আবার ওদের|

ও পড়া লেখার

ফাকে ফাকে নদীতে কাঁকড়া ধরতেও

যায়|মহাসিন আর হাফিজ ঢাকায়

থেকে লেখা পড়া করছে,সাথে ছোট খাট

চাকরি করে|আর আমি বাইরে এক

কলেজে পড়ছি|ঈদ ছাড়া বছরের অন্য

কোন সময়ে এভাবে নিজেদের এক

স্থানে হওয়া দুষ্কর|আমি এক দুই মাস

পর পর বাড়ি আসলেও ওরা আসে পাঁচ

ছয় কিংবা বছর শেষে শুধু ঈদে|সেই

শৈশব থেকে এক সাথেই

চলা ফেরা,খেলা ধুলা সবকিছুই,শুধু

সাঈদী ছাড়া|ইন্টার লেবেল পার

হতেই একেক জন একেক যায়গায়

চলে গেলাম|যেহেতু ওরা দু'জন

ঢাকাতে থাকে এবং একে অপরের

সাথে সাক্ষাৎ হয় কিন্তু আমার

সাথে আর হয়না|ওদের সাথে আমার

যোগাযোগের মাধ্যম মোবাইল ফোন|

এবার ঈদে আমার মনে একটুও আনন্দ

ছিলনা|দেশ বিদেশে মজলুম জনতার

আর্তনাদ

আমাকে চরমভাবে পিড়া দিচ্ছিল|

তারপরও ওদের সাথে চীর

চেনা সুন্দরবনে ঘুরে দেখার প্রস্তাব

প্রত্যাক্ষাণ করতে পারলাম না|এই

সুন্দরবনের সৌন্দর্যের অপরূপ দৃশ্য

দেখতে দেখতেই আমাদের বেড়ে ওঠা|

আকাশের দক্ষিণ কোন থেকে মেঘের

ভেলা উপকূলের দিকে ভেসে আসছে|

বঙ্গবোসাগর থেকে উঠে আসা মেঘের

পাড়ালগুলো ঝিরি ঝিরি বর্ষণ শুরু

করেছে|মৃদুমন্দ বাতাশে পানিতে একটু

আধটু ঢেউ খেলছে|পরিবেশটা বেশ

উপভোগের হলেও বৃষ্টির

কারণে ছবি তুলতে সমস্যা হচ্ছে|

আমাদের নাও

বয়ে চলেছে সুন্দরবনের

একেবারে কোল ঘেষেই|বাঘ

মামা ইচ্ছা করলে এক লাফে আমাদের

উপর ঝাপিয়ে পড়তে পারে|না,সে ভয়

করছেনা|শুনেছি যে বাঘটা বনের এ

অঞ্চলে রাজত্ব করত বেশ কিছুদিন

ধরে তার আর খোজ নেই|হয়ত গহীন

বনে চলে গেছে|থাকবেইবা কিভায়,ওর

আহার মানুষগুলো ফাঁস

দিয়ে ধরে সাবাড় করে দিচ্ছে|

তাইতো পরিমাণ মত খাবার

না পেয়ে নদী পেরিয়ে মনুষ্য

জগতে প্রবেশ করে|গরু,ছাগল

ধরে ধরে খায়|শুধু তাই!মানুষ ও ধরে|

যে বাঘ একবার এলাকায় যায় জীবন

নিয়ে আর আপন

আলয়ে ফিরতে পারেনা|এমন

ঘটনা প্রায়শ ঘটছে|ছোট

থাকতে দেখতাম ঠিক আমাদের

গ্রামটায় প্রতি বছর একটা করে বাঘ

পার হয়ে আসত|কীযে ভয়ঙ্কর সেই

দিনগুলো ত্রাশে ত্রাশে কেটে যেত

বলে বুঝাতে পারবনা!একবার

একটা বাঘ সাত দিন ধরে এলাকায়

এসেছিল|প্রতিদিন

রাত্রে চলে আসত,ছাগল,গরু

ধরে ধরে খেয়ে কিছু রেখে ভোর হতেই

নদী পেরিয়ে ওপারে চলে যেত|এই

বাঘের ঘটনটা আমার নিকট অন্যান্য

বাঘের ঘটনার তুলনায় সর্বাধিক

রোমাঞ্চকর ঘটনার অমলীন স্মৃতি|

ভাবতে গেলে এখনো ভয়ে অন্তর

কেঁপে ওঠে|এই গল্প যদি লিখি আর

সাথে অন্যান্যগুলো,তাহলে এই

ভ্রমণের গল্প মাটি হয়ে যাবে|

উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন

প্রবাহ লিখলে গল্পের বহর

তৈরী হবে কিন্তু শেষ হবেনা|

আমি ছবি তুলছি,সাথে হাফিজ ও

তুলছে|সাঈদী বৈঠা ফেলে মাঝির

ভূমিকায়|মহাসিন আমাদের

সহযোগিতা করছে|মহাসিন

বলল,"ছবি ফেসবুকে দিয়ে দিতে|"দি

খুব কষ্ট করে একটা ছবি,আর

আপলোর্ড হলনা|এই

মুহূর্তে শিল্পী মশিউর রহমানের

গাওয়া আমার সেই প্রিয়

গানটি মনে পড়ে গেল|

"ছলাত ছলাত ঢেউয়ের মাঝে কীসের

ব্যাথা বাজে,

নদীরে তোর দুঃখ

আমি বুঝতে পারি নাযে|"

উহ! কী অসাধারণ হৃদয় ছোঁয়া|গানটার

ভিডিও ছিল|ছবি তোলা বাদ

দিয়ে ওইটা অন করে দিলাম|গানের

সুরে সুরে নদীর ঢেউ টলমল সৃজন

থেকে সত্যিই যেন দুঃখের গুঞ্জণ

এসে হৃদয় গহীনে আছড়ে পড়ছে!কত

ব্যাথা বুকে চেপে বয়ে চলেছে সে|

নিজের স্রষ্ঠার ছাড়া ওর দুঃখের

কথা আর কাউকে বলেনা|

____প্লিজ কেমন লাগলো জানাবেন|আর ভুল চোখে পড়লে ধরিয়ে দিবেন|||

বিষয়: সাহিত্য

১৫৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File