বুক ফাটে তবু মুখ ফুটে না: কথাটি নারীর বেলায় প্রযোজ্য নাকি পুরুষের বেলায়!
লিখেছেন লিখেছেন মুক্ত কন্ঠ ১৯ জুন, ২০১৭, ০২:৪৯:৩৯ রাত
(এই লেখাটি সকল বাবাদের জন্য উৎসর্গিত।)
(ভিডিওটি দেখবেন। বাবাদের কিছু কঠিন বাস্তবতা তুলে এনেছে এখানে)
-----------------------------------------
নারীদের ব্যাপারে বাংলায় একটি প্রবাদ আছে- "বুক ফাটে, তবু মুখ ফুটে না।"
কথাটা সত্যি। পৃথিবির সব মায়েরাই কস্টের পর কস্ট সহ্য করে মমতার বন্ধনে একটি পরিবার গড়ে তুলেন। কিন্তু সেই কস্ট গুলোকে মানুষের সামনে প্রকাশ করেন না।
পক্ষান্তরে একজন পুরুষের বেলায় ব্যাপারটা কেমন?
বাস্তবতা হলো, যে নারী তার কস্টগুলোকে প্রকাশ করেন না, বুকের মাঝে চেপে রাখেন, সেই নারীই কিন্তু তার দুঃখের অনল দ্বারা তার স্বামীকে দগ্ধ করে নিজের বুকের আগুনকে প্রশমিত করেন। কিংবা নিভৃতে চোখের জল ফেলে বুকের কস্টগুলোকে লাঘব করেন। সুতরাং তাদের মুখ না ফুটলেও চোঁখ ফুটে।
কিন্তু বেচারা স্বামী "না পারে কইতে না পারে সইতে অবস্থা"।
নিজের দুঃখের কথা কাউকে বলতে পারেই না উপরন্তু দুঃখ লাঘবের শেষ অবলম্বন 'চোঁখের অশ্রু' টা ও ঝরাতে পারে না পুরুষত্বের কারনে।
সন্তানদের চাহিদা মেটাতে, তাদের ডিমান্ড পুর্ন করতে গিয়ে সকল পিতাদেরকে স্বামর্থ্যের বাইরের অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করতে হয়। ঘর বাড়ি থেকে দুরে, দেশে কিংবা বিদেশে মাসের পর মাস বছরের পর বছর পড়ে থাকতে হয়, নিজে না খেয়ে না পরে স্ত্রী সন্তানদের অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসার যোগাড় যন্ত্র করতে দিন দিন হালাক হতে হয়। হাজারো কষ্টকে বুকে চাপা দিয়ে স্ত্রী সন্তানের কাছে সুখের অভিনয় করে যেতে হয়।
মায়েদের মমতার প্রকাশ ঘটে সন্তান গর্ভ ধারন থেকে শুরু করে সন্তান বড় করার প্রতিটি ক্ষেত্রে। কিন্তু পিতাদের স্নেহটা থেকে যায় সবার অন্তরালে। একটি চারাগাছকে বিশাল মহিরুহে পরিনত করার আপ্রান প্রয়াসেই বাবাদের স্নেহের ঝর্নাধারা উৎসর্গিত হয় সবার অলক্ষ্যেই। বাবারা সারাটা জিবন শুধু দিয়েই যান, নেন না কিছুই।
স্ত্রী সন্তানের মুখে হাসি ফুটাতে বাবাদের বিলিয়ে দেওয়া জীবন সংগ্রামের পেছনে ঘটে যাওয়া হাজারও লাঞ্চনা, বঞ্চনা আর অপমানের মর্মস্পর্শি দাস্তান তাদের বুকের গহীনে জমে থাকা সেসব স্নেহের অতলান্তে চাপা পড়ে থাকে। স্নেহের সন্তানদেরও জানা হয় না বাবার স্নেহের পরিমাপ। জানা হয়না বাবার জীবনে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার নিরব ইতিহাস।
এতকিছুর পরও জীবন সায়াহ্নে এসে সন্তানদের কাছ থেকে অপ্রাপ্তির অসন্তুষ্টি, না পাওয়া আর বঞ্চনার অভিযোগ জমতে থাকে বাবাদের পাপ্তির ঝুলিতে। বুকের ভিতরে স্নেহের নির্ঝরিণীর পাশে তৈরি হয় বেদনার সাগর। এক সময় সেই সাগরে প্রবল ঝড় উঠে। সেই প্রলয়ংকরী ঝড়ের ছোবলে বাবাদের জীবনের নীরব আখ্যানের করুণ পরিসমাপ্তি ঘটে।
এখানে প্রসঙ্গত প্রশ্ন করি, পৃথিবীতে সবচাইতে বেশি হার্ট এ্যাটাকের শিকার হয় কারা? নারী না পুরুষ!
পৃথিবীর সকল হার্ট হসপিটাল কিংবা মেডিকেলগুলোর কার্ডিওলোজি বিভাগে খোজ করলে হয়ত দেখা যাবে ৯০ ভাগ রোগিই পুরুষ। তেমনিভাবে কার্ডিয়াক এ্যাটাক বা হার্ট এ্যাটাকে মৃত্যুর পরিসংখ্যানেও রিজাল্টটা এমনই আসবে।
আমার বাবা চাচারা সহ ঘনিষ্ট পুরুষ আত্বিয়দের মধ্যে যারা মারা গেছেন তাদের অধিকাংশই হার্ট এ্যাটাকে হঠাৎ করেই মারা গেছেন। কিন্তু নারী আত্বিয়দের মধ্যে এমনটা দেখিনি।
আজকে এই বাবা দিবসে হৃদয়ের গহিন থেকে সকল বাবাদেরকে গভির শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
আমার বাবাও তেমন এক বাবা, যিনি আজিবন দিয়েই গেছেন, নেননি কিছুই।
ক্ষমা চাওয়ার অধিকার আমার নেই প্রিয় বাবা, শুধু দোয়া করি আল্লাহ পাক যেন আপনাকে তাহার রহমতের চাদর দ্বারা বেষ্টন করে রাখেন!
*যাদের বাবা দুনিয়ায় আছেন, তাদেরকে শুধু এটুকু বলব, বাবার স্নেহকে অনুভব করার চেষ্টা করুন। বাবা কি জিনিষ তা শুধু হারালেই বুঝতে পারবেন।
বিষয়: বিবিধ
১২৬৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এত হাঁড় ভাঙ্গা খাটুনীর পর শেষমেশ উনি পান নানা রোগ শোকের বান্ডেল অফার । এই প্যারা না নিলে হয়ত উনি একটু শান্তিতে চলতেও পারতেন।
বিয়ের পর একজন নারীর জীবন নিশ্চিন্ত হয়ে যায় , বিপরীতে একজন পুরুষের জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিষা। ফলে সেটা শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতির উপর বিরাট একটা প্রভাব ফেলে।
আপনি যদি বিবাহিত পুরুষ হন তাহলে ব্যাঁ ব্যাঁ বা ম্যাঁ ম্যাঁ এর অর্থ ভালই জানেন আপনার স্ত্রীর বদৌলতে ।
আর যদি বিবাহিতা মহিলা হয়ে থাকেন তাহলে এটা আপনি আপনার হাজবেন্ডকে কম করে হলেও হাজার বার বলে ফেলেছেন যদি সে স্ত্রৈন না হয়ে থাকে।
আর যদি অবিবাহিত থাকেন এখনও তাহলে সেটা বলার বা শোনার সময় সামনে আসতেছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন