'হুর' কি? হুর কি শুধু জান্নাতি পুরুষদের জন্যই?? জান্নাতি নারীদের রিওয়ার্ড কি? কোরআন কি বলে??? ********************* (২য় পর্ব) **********************
লিখেছেন লিখেছেন মুক্ত কন্ঠ ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:৫৫:৫৪ সকাল
প্রথম পর্বের জন্য এখানে ক্লিক করুন
'হুর এর আভিধানিক অর্থ:
The word hoor is actually the plural of ahwar (applicable to man) and of haura (applicable to woman)
It literally translates as "white-eyed", or persons distinguished by 'Hawar', signifying the intense whiteness of white of an eye.
আরবী (Ha-waw-Ra) 'হুর' শব্দটা মুলত 'আহওয়ার' (পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) এবং 'হাওরা' (নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) এর বহুবচন।
আক্ষরিক অর্থে এটার ভাষান্তর হয় 'শ্বেত চক্ষুবিশিষ্ট' 'তীব্র শুভ্রতাবোধক' অথবা এমন ব্যাক্তি যার চক্ষু সুনিবিড় সাদার চেয়েও সাদা।
Generally, it has the significance of ‘whiteness’, ‘purity’, or ‘pure beings’. It is not ‘gender specific’ for male as it is more commonly known. A better and correct rendering is ‘companions pure'.
সাধারনতঃ, এটা 'শুভ্রতা', 'বিশুদ্ধতা' অথবা বিশুদ্ধ বা পবিত্র হওয়ার কথা বুঝায়। এটার কোন নির্দিষ্ট লিঙ্গ নেই যা আমরা সাধারনতঃ মনে করি বা জানি। সবচেয়ে উৎকৃষ্ট এবং সঠিক ভাষান্তর হল, 'বিশুদ্ধ' বা পবিত্র সাথি'।
অতএব, 'হুর' শব্দের লিঙ্গ নির্দিষ্ট নেই।
মোহাম্মাদ আসাদ 'হুর' শব্দের অর্থ করেছেন 'স্পাউজ' বা স্বামী/স্ত্রী, আর আব্দুল্লাহ ইউসুফ আলী অর্থ করেছেন 'কম্পেনিয়ন' বা 'সাথী'।
রুট হুর (হা-ওয়াও-রা) জান্নাত বিষয়ক বর্ননা ছাড়াও অন্য এক জায়গায় এসেছে।
যা দ্বারা ঈসা আঃ এর সঙগিদেরকে ঈঙ্গিত করা হয়েছে।
এখানে একটা বিষয় মনে রাখা জরুরী, ঐ আয়াতের অনুবাদের ক্ষেত্রে 'হাওয়ারি' শব্দ এসেছে যার সঠিক রেন্ডার 'সাদা বস্ত্র পরিধানকারী' এর জায়গায় ' 'শিষ্য' শব্দ দ্বারা অনুবাদ করা হয়।
আয়াতটি হল-
فَلَمَّا أَحَسَّ عِيسَىٰ مِنْهُمُ الْكُفْرَ قَالَ مَنْ أَنْصَارِي إِلَى اللَّهِ ۖ قَالَ الْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ أَنْصَارُ اللَّهِ آمَنَّا بِاللَّهِ وَاشْهَدْ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ
সূরা আলে ইমরান:৫২ - "অতঃপর ঈসা
(আঃ) যখন বণী ইসরায়ীলের কুফরী সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারল, তখন বলল, কারা আছে আল্লাহর পথে আমাকে সাহায্য করবে? হাওয়ারি গন (রুট হা-ওয়াও-রা) বললো, আমরা রয়েছি আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। আর তুমি সাক্ষী থাক যে, আমরা হুকুম কবুল করে নিয়েছি।"
এই আয়াতে রুট হা-ওয়াও-রা (হুর) থেকে হাওয়ারী শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে ঈসা আঃ এর ঐ বিশেষ সঙ্গিদেরকে এ শব্দ দ্বারা কেন নির্দেশ করা হল? মুলতঃ ঐ সাথি বা অনুসারীগন সাদা পোষাক পরিধান করতেন। এটা ছিল তাদের বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া তারা ছিলেন সককল দোষ-ত্রুটি ও কলুষতা থেকে মুক্ত, পবিত্র। ঐ বৈশিষ্ট্যের দিকে ঈংগিত করেই তাদেরকে 'হাওয়ারী' দ্বারা আয়াতে উল্ল্যেখ করা হয়েছে। বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য আসুন আমরা ঈসা আঃ এর ঐ বিশেষ শিষ্য বা সঙ্গিদের পরিধেয় বস্ত্রের শর্ট ডিস্ক্রিপশন দেখে নেই-
The definition denotes one who whitens clothes/garments by washing them or is applied as a signification of one who is free from vice, faults or defects proven time after time. Again, the underlying significance of pure and clean is apparent. This is supported by further analysis of examples from early Jewish sects at the time of Prophet Jesus (pbuh) such as the Essenes, who, adopted the use of white clothing and were referred to as the ‘brethren in white clothing’. This was possibly as a mark of their insistence on purity.
The white garment given to the novice accords well with Josephus' previous statement in J. W. 2 §123 that the Essenes were always dressed in white (Note 187)" [BEALL. Todd S., Josephus' Description of the Essenes Illustrated by the Dead Sea Scrolls, Cambridge University Press, First Published 1988 Page 155, Note 187 Reads: "See discussion above, p. 46 (2 §123). J. Danielou's statement that "the practice of dressing the newly baptized in a white robe inevitably recalls the description in Josephus of the white garments worn by those who were newly admitted to the Essenian community" (The Dead Sea Scrolls and Primitive Christianity [Baltimore: Helicon, 1958], 42) ignores the fact that according to Josephus all Essenes wore white, not simply the novices.
হাওয়ারিগনের ডিস্ক্রিপশন থেকে পরিস্কার, ঈসা আঃ এর সাথিরা সব সময় সাদা বস্ত্র পরিধান করতেন, এবং তারা ছিলেন সবধরণের দোষ ত্রুটি থেকে মুক্ত, বিশুদ্ধ। সে কারণেই কোরআনে 'হাওয়ারী' শব্দ দ্বারা তাদেরকে নির্দেশ করা হয়েছে।
এবার আমরা নজর দেই কোরআনের জান্নাত বিষয়ক আলোচনায় হুর সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলোর দিকে। কোরআনে অন্ততঃ চার জায়গায় হুরের উল্ল্যেখ এসেছে-
১. সূরা আদ দোখান:৫৪ -
كَذَٰلِكَ وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُورٍ عِينٍ
'এরূপই হবে এবং আমি তাদেরকে হুর এর (বিশুদ্ধ, পবিত্র সঙ্গি/সঙ্গিনী'র) সাথে বিবাহ দেব।' (হুরিন 'ঈন)
২. সূরা আত্ব তূর:২০-
مُتَّكِئِينَ عَلَىٰ سُرُرٍ مَصْفُوفَةٍ ۖ وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُورٍ عِينٍ
"তারা শ্রেণীবদ্ধ সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। আমি তাদেরকে আনতলোচনা হুরদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দেব।"
৩. সূরা আর রহমান:৭২ -
حُورٌ مَقْصُورَاتٌ فِي الْخِيَامِ
"তাঁবুতে অবস্থানকারি হুরগণ।"
এখানে দুটি বিষয় আমার কাছে খুবই গুরুত্বপুর্ণ মনে হয়েছে। প্রথমতঃ এই আয়াতের পুর্বে ৫৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে-
فِيهِنَّ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنْسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ
'তথায় থাকবে আনতনয়না রমনীগন, কোন জিন ও মানব পূর্বে যাদের স্পর্শ করেনি।'
প্রশ্ন উঠে, হুর যদি শুধু মাত্র নারীই হত তাহলে জান্নাতের বর্ননা দিতে গিয়ে স্পষ্টভাবে রমনিগনের কথা উল্ল্যেখ করার পর আবার আলাদা করে হুরের কথা বলা হল কেন? এটা কি রিপিটেটিভ নয়?? দ্বিতীয়তঃ হুরের কথা বলার পর বলা হল, -
فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
"অতএব, তোমরা উভয়ে (জ্বীন ও মানব) তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে!"
প্রশ্ন থেকে যায়, হুর স্পেসিফিক জেন্ডার (ফিমেল) হলে নারীর জন্য এটা অবদান হয় কিভাবে?
৪. সূরা আল ওয়াক্বিয়া:২২ - ২৪
وَحُورٌ عِينٌ * كَأَمْثَالِ اللُّؤْلُؤِ الْمَكْنُونِ * جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
'এবং তথায় থাকবে আনতনয়না হুরগণ'। 'আবরণে রক্ষিত মোতির ন্যায়।'
তারা যা কিছু করত, তার পুরস্কারস্বরূপ।
আলোচ্য আয়াতগুলির কোনো একটায়ও এমন রেফারেন্স নেই যে, হুর শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য, বরং প্রতিটি আয়াত থেকে এটাই বুঝা যায় যে ঈমানদার সৎকর্মশীলদের জন্য রয়েছে হুরের ওয়াদা। এমনকি সুরা ওয়াক্বিয়ার যে আয়াতগুলি দিয়ে মিস্ইন্টারপ্রিটেশন করা হয় সে গুলোও একই কথা বলে যে, ডানপন্থী অর্থাৎ সৎকর্মশীলদের জন্যই হুরের ওয়াদা রয়েছে।
আসুন সুরা ওয়াক্বিয়ার আয়াতগুলো একটু দেখে নেই-(বুঝার সুবিধার্থে ইংলিশ বাংলা উভয় ট্রান্সলেট দেয়া হল)
সূরা আল ওয়াক্বিয়া:২৭-৩৪ -
وَأَصْحَابُ الْيَمِينِ مَا أَصْحَابُ الْيَمِينِ * فِي سِدْرٍ مَخْضُودٍ * وَطَلْحٍ مَنْضُودٍ * وَظِلٍّ مَمْدُودٍ * وَمَاءٍ مَسْكُوبٍ * وَفَاكِهَةٍ كَثِيرَةٍ * لَا مَقْطُوعَةٍ وَلَا مَمْنُوعَةٍ * وَفُرُشٍ مَرْفُوعَةٍ
“The Companions of the Right Hand,- what will be the Companions of the Right Hand? (They will be) among Lote-trees without thorns. Among tall trees with flowers (or fruits) piled one above another. In shade long-extended, By water flowing constantly, And fruit in abundance. Whose season is not limited, nor (supply) forbidden, And on Thrones (of Dignity), raised high”
"যারা ডান দিকে থাকবে, ডানপন্থি সাথি কারা? তারা থাকবে কাঁটাবিহীন বদরিকা বৃক্ষে। এবং কাঁদি কাঁদি কলায়। এবং দীর্ঘ ছায়ায়। এবং প্রবাহিত পানিতে। এবং প্রচুর ফলমুলে। যা শেষ হবার নয় এবং নিষিদ্ধ ও নয়, আর থাকবে সমুন্নত শয্যায়।"
সূরা আল ওয়াক্বিয়া:৩৫
إِنَّا أَنْشَأْنَاهُنَّ إِنْشَاءً
‘Lo” We have created them a (New Creation. "আমি তাদেরকে (স্ত্রিবাচক) বিশেষরুপে সৃষ্টি করেছি।"
আয়াত থেকে এমন কিছু প্রমান হয় না যেমনটা ভাষান্তর করা হয় যে, বিশ্বাসী পুরুষদের জন্য থাকবে কুমারী নারী। আয়াতের বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, ডানপন্থী লোকদেরকে জান্নাতে পুরস্কৃত করার বর্ননাই করা হচ্ছে। এখানে কোন লিঙ্গ ভেদ করা হয়নি। এবং এ ডানপন্থীরা চিত্তবিনোদন করবে আল্লাহর সম্পুর্ন নতুন একটি সৃষ্টির সাথে।
সূরা আল ওয়াক্বিয়া: ৩৬
فَجَعَلْنَاهُنَّ أَبْكَارًا
“And we have made them virgins (Arabic: Abkaran - Root BKR)” অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী।" (আরবী আরবাকান শব্দ যার রুট হল, 'বা-কাফ-রা'।
BKR - A virgin - anything untouched, new, fresh.
মানে হল, তারা হবে ভার্জিন অর্থাৎ কুমার/কুমারী। স্পর্শবিহীন, নতুন।
সূরা আল ওয়াক্বিয়া:৩৭
عُرُبًا أَتْرَابًا
Devoted (Arabic: Uruban) Equal in age / well matched. "তারা হবে কামিনী, সমবয়সী।"
বৈশিষ্ট্য বর্ননার পর বলা হচ্ছে তারা কাদের জন্য-
সূরা আল ওয়াক্বিয়া: ৩৮
لِأَصْحَابِ الْيَمِينِ
For the companions on the right hand. "তারা হল, ডানপন্থী লোকদের জন্য।" (নর-নারী উভয়)
আয়াতগুলো স্পষ্টতঃ বারবার আমাদেরকে এটাই জানাচ্ছে যে, সৎকর্মশীল ডানপন্থীরাই এসব প্রতিদানে পুরস্কৃত হবে।
আর এ ডানপন্থীদের একদল হবে পুর্ববর্তীদের মধ্য হতে আর একদল পরবর্তীদের মধ্য থেকে।
যেমনটা ৩৯ ও ৪০ নং আয়াতে বলা হচ্ছে-
সূরা আল ওয়াক্বিয়া:৩৯-৪০
ثُلَّةٌ مِنَ الْأَوَّلِينَ * وَثُلَّةٌ مِنَ الْآخِرِينَ
"A company of the former people
And a company of the later people"
"তাদের একদল হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে।"
"এবং একদল হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে।"
'আসহাবুল ইয়ামিন' বা ডানপন্থী বা সৎ কর্মশীলরা যে উভয়েই জান্নাতে সমানভাবে প্রতিদান পাবে সেটাও স্পষ্ট হয়েছে সুরা নাহল ৯৭ তে-
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً ۖ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
"As for anyone - be it man or woman [Arabic: Lit., min (from) thakarin (male) aw (or) ontha (female)] who does righteous deeds, and is a believer - him shall We most certainly cause to live a good life, and most certainly shall We grant unto such as these their reward in accordance with the best that they ever did.
"যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমাণদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত।"
তবে সুনির্দিষ্ট ভাবে পুর্ন যৌবনা নারীরও উল্ল্যেখ আছে কোরআনে। যেমন- সুরাহ নাবা: ৩৩:
وَكَوَاعِبَ أَتْرَابًا
“And youthful women (Kawaiba) of equal age (well matched."
"সমবয়স্কা, পূর্ণযৌবনা তরুণী।" তবে এখানে আরবি 'কাওয়াইবা' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
তেমনিভাবে তরুন পুরুষদের কথাও উল্ল্যেখ আছে- সূরা আত্ব তূর:২৪ -
وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ غِلْمَانٌ لَهُمْ كَأَنَّهُمْ لُؤْلُؤٌ مَكْنُونٌ
"সুরক্ষিত মোতিসদৃশ কিশোররা তাদের সেবায় ঘুরাফেরা করবে।"
সূরা আল ইনসান (আদ-দাহর): ১৯ -
وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيْتَهُمْ حَسِبْتَهُمْ لُؤْلُؤًا مَنْثُورًا
"তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরগণ। আপনি তাদেরকে দেখে মনে করবেন যেন বিক্ষিপ্ত মনি-মুক্তা।"
কোরআনে হুরের উল্ল্যেখ ছাড়াও আরও অনেক আয়াতে 'জাওয', 'আজওয়ায' বলা হয়েছে, যার সঠিক রেন্ডারিং বা অর্থ হল, 'Spouse', 'Companion' অর্থাৎ জান্নাতে বিশুদ্ধ পবিত্র স্পাউজ, কম্পেনিয়ন, অর্থাৎ সঙ্গি বা সাথি থাকবে। এ সংশ্লিষ্ট আয়াত পুর্বে আলোচনা করেছি তদুপরি বিষয়টি বিশ্লেষনের তাগিদে এখানে আরেকটি আয়াত উল্ল্যেখ করা যেতে পারে।
যেমন- সূরা আন নিসা:৫৭ -
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۖ لَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُطَهَّرَةٌ ۖ وَنُدْخِلُهُمْ ظِلًّا ظَلِيلًا
"আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, অবশ্য আমি প্রবিষ্ট করাব তাদেরকে জান্নাতে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহর সমূহ। সেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। সেখানে তাদের জন্য থাকবে পবিত্র সাথি (আজওয়াযুন মোত্বাহ্হারাত)। তাদেরকে আমি প্রবিষ্ট করব ঘন ছায়া নীড়ে।"
সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, সুরাহ ওয়াক্বিয়ার আয়াত কিংবা উপরোক্ত সুরাহ নাবা'র আয়াতের উপর ভিত্তি করে হুরকে ফিমেল জেন্ডার হিসেবে জাস্টিফাই করা কোন ভাবেই যৌক্তিক নয়। এক দুইটি আয়াতের উপর ভিত্তি করে কোরআনের এতদ্সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আয়াতের বক্তব্য এবং ঐসব আয়াতগুলোর পুর্বাপর বক্তব্যকে একপেশেভাবে ট্রান্সলেট ও ইন্টারপ্রিটেশন করা কোন ভাবেই ঠিক নয়।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি-
*কোরআনের সংশ্লিষ্ট সব উদাহরন জান্নাতের সকল অধিবাসির জন্যই। জান্নাতী পুরুষরা এমন হুর পাবে যারা হবে ডাগর ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট পুতঃপবিত্র চির কুমারী লাস্যময়ী সুন্দরি ললনা। আর জান্নাতী নারীরা পাবে এমন হুর যারা হবে ডাগর ডাগর শ্বেতশুভ্র চোঁখের অধিকারি চির কুমার পুতঃপবিত্র সুদর্শন পুরুষ।
*আলোচ্য আয়াতগুলোতে 'হুম' (পুরুষবাচক) এবং 'হুন্না'(স্ত্রীবাচক) এর ব্যাপারে বক্তব্য হল-
আরবি ভাষায় কোন ক্লীবলিঙ্গ নেই. 'জেন্ডার' একটি ভাষা কনভেনশন ফাংশন এবং 'দেহতত্ব' সেখানে কোন জরুরি বিষয় নয়। উদাহরণস্বরূপ, আরবি মেয়েলি 'শামস' (সূর্য) বা পুংলিঙ্গ 'ক্বামার' (চাঁদ) এর যেমন লিঙ্গ নির্ধারিত। যা আরবদের দ্বারা নিছক একটি ভাষা কনভেনশন ফাংশন হিসেবেই ধরা হয়।
উপরে আলোচিত সুরাহ নাহল এর ৯৭ নং আয়াতে স্পষ্টভাবে সৎ কর্মশীল নারি পুরুষ আলাদা করে উল্ল্যেখ করা হয়েছে, কিন্তু প্রতিদানের বেলায় পুরুষবাচক وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ, আরবীতে ক্লীবলিঙ্গ নেই। একইভাবে, কুরআন জগতের এমনসব উদাহরন উপস্থাপন করে যা এখন পর্যন্ত মানুষের কাছে অজানা। অতএব, 'হূর' এর বিষয়টাও জাগতিক জ্ঞান এবং ধারণা নির্ভর জেন্ডারের কনসেপ্ট, শারিরিক বৈশিষ্ট্য, দেহ তত্ব দিয়ে সঠিক রুপে বুঝে উঠা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। বিশেষ করে কোরআন যখন বলছে- "আমি একে সৃষ্টি করব এক নতুন রুপে" (ওয়াকেয়াহ:৩৫) পরকালীন আধ্যাত্মিক জগতের ব্যাপারে শুধুমাত্র দৃষ্টান্তগুলোই আমাদেরকে উপস্থাপন করা হয়। সর্বোপরি জান্নাত আল্লাহর এমন এক সৃষ্টি যার রুপ- বৈশিষ্ট্য, এবং তার মধ্যকার 'হুর' 'গিলমান' সহ যাবতীয় সৃষ্টিসমুহকে আল্লাহ পাক কোন্ শৈল্পিক রুপ দিয়ে সাজিয়েছেন তা যেমন কোন চোঁখ দেখেনি, কোন কান শুনেনি, তেমনিভাবে কোন মানব হৃদয়ের কল্পনা করারও সাধ্যে নেই।
তদুপরি, কোরআনের উপমাগুলো থেকে আমরা আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞান দ্বারা এটুকু বুঝতে পারি, 'হূর', একটি পুরুষ (Ahwar) এবং মহিলা (হাওরা) উভয়ের একটি বহুবচন গঠন। যার সেরা এবং উৎকৃষ্ট (এমনকি আরবি ভাষা কনভেনশন অনুযায়ী) রেন্ডারিং হবে 'বিশুদ্ধ সাথি'।
*'হুর' কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে এবং সবখানেই বহুবচন, যদিও কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা বরাদ্দ নয়। তারা লিঙ্গ নির্বিশেষে সব মুসলমানদের জন্যই।
*অন্যান্য আয়াতের সাথে সুরাহ আত-ত্বুর ২৪, দাহর ১৯, সুরাহ নাবা ৩৩ ও আর-রাহমান ৫৬ আয়াতগুলো সকল উপমাকে সামঞ্জস্য বিধান করে দেয় যে, হুর জান্নাতের সকল অধিবাসিদের জন্যই।
আল্লাহই সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ!
সেলিম সামীর
১১.০৯.২০১৫
বিষয়: বিবিধ
১১৩৮০ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এবং এই বিবাহ ইসলামী মতে একজন নারী ও পুরুষদের মধ্যেই হয়ে থাকে । এর অন্যথা যে হয় না তার প্রমান আমরা লুত (আঃ) এর কাহিনী থেকে জানতে পারি।
এখন একটা প্রশ্ন উঠা খুবই স্বাভাবিক যে (আল্লাহ আমায় ক্ষমা করুন) :
প্রত্যেকের জন্য যদি ৭০ জন হুর থাকে (নারী হুর / পুরুষ হুর) তাহলে আমাদের নবীজী মু'হাম্মাদ (সাঃ) এর যে কজন স্ত্রী ছিলেন তারা কি প্রত্যেকে ৭০ জন করে পুরুষ হুর পাবে ও তাদের সাথে বিয়েও করিয়ে দেওয়া হবে এবং তাদেরকে নিয়ে উনারা নবীজীর সাথে একসঙ্গে বেহেশতে থাকবেন , সাথে নবীজীর সাথের ৭০ জন স্ত্রী হুরও ?
পুরুষদের একাধিক স্ত্রী রাখা ইসলাম অনুমোদন করলেও মহিলাদের ব্যাপারে সেটা নেই ।
বেহেশতে কি এর ব্যাত্যায় হবে যে একজন মহিলার ৭০ জন স্বামী থাকবে সেখানে ?
জান্নাতে মুলতঃ বৈবাহিক ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই। আমি লেখায় বলেছি যে, আয়াতের 'জাওয' এবং 'হুর' দ্বারা 'কম্পেনিয়ন' হল পারফেক্ট ভাষান্তর।
কোরআনের হুরের সংখ্যাও কিন্তু কোথাও বলা হয়নি।
আর জাগতিক জেন্ডারের কনসেপ্ট দিয়ে হুর বা জান্নাতি সঙ্গিকে কোন ভাবেই বিচার করা যায় না। আমাদের মধ্যে যে লিঙ্গ আকর্ষন, স্বামী স্ত্রীর দৈহিক মিলন ইত্যাদি যৌন বিষয়ের সংজ্ঞাও সেখানে সম্পুর্ন ভিন্ন হতে পারে। এমনকি এসব অনুভুতি বা চিন্তার অস্থিত্বও হয়ত সেখানে থাকবে না। 'সাথি' বললেই কি যৌন চিন্তা করতে হবে? আপনার বন্ধু যারা তারা তো আপনার সাথি। তাই বলে তাদেরকে নিয়ে কি যৌন চিন্তা করতে হবে?
০ তাহলে সেখানে বিবি আয়েশা ও বিবি খাদিজার সাথে নবী (সাঃ) এর একসঙ্গে থাকারও প্রশ্ন আসে না !
০ অথচ পরিবারের লোকদের সাথেও মিলিয়ে দেবার কথা এসেছে (যদি তারা জান্নাতপ্রাপ্ত হয়)
০ হুরদের সাথে বিবাহ করিয়ে দেবার কথা আল্লাহ পবিত্র ক্বুরআনে বলেছেন । আর বন্ধু ও স্পাউস কি এক জিনিস ? হুররা তো আর জান্নাতপ্রাপ্তদের বন্ধু হিসেবে থাকবে না যদি বিবাহ করিয়ে দেওয়া হয় ?
আর ইসলামী শরিয়তে কি ছেলেতে মেয়েতে বন্ধুত্ব হয় (এখানে আপনার সাথে ফখরুল সাহেবের মিল পাওয়া যাচ্ছে)?
আমি আগেও বলেছি 'বিবাহ' রুপক অর্থ। বিখ্যাত কোরআন বিশ্লেষকদের ইন্টারপ্রিটেশন অনুযায়ী 'কম্পেনিয়ন' বা সাথিই হল প্রপার ভাষান্তর।
আমি বললাম 'বন্ধু', আর আপনি প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন শরিয়তে ছেলে মেয়েতে কি বন্ধুত্ব হয়?
আমি কি মেয়ে বন্ধুর কথা বলেছি? আমি এটাই বুঝাতে চেয়েছি যে, সাথি বলতেই কি যৌন সাথি বোঝায়? যৌনতার উর্ধে কি সাথি হতে পারে না?
আমাকে ফখরুইল্লার মত মনে হলেতো কিছু করার নেই। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান এবং গ্রহনযোগ্য বিশ্লেষকদের ইন্টারপ্রিটেশন অনুযায়ী যতটুকু করা যায় লিখার চেষ্ঠা করেছি। তবে আপনার কাছে যদি বিষয়টির গ্রহনযোগ্য কোন ব্যাখ্যা থাকে তাহলে দয়া করে বলবেন কি!
অনেক কৃতজ্ঞ হব।
ধন্যবাদ!
আপনি পার্থিব জীবনের জন্য প্রজোয্য এসব বিধানের আলোকেই জান্নাতকে বিশ্লেষন করতে চান?
আসলে আপনি জাগতিকতার সাথে জান্নাতকে গুলমেলে করে ফেলেছেন। জাগতিকতার উর্ধে উঠে ভাবতে পারেননি।
আর এসব দিয়ে বিষয়টা কে আপনি কোনদিকে টেনে নিতে চাচ্ছেন বুঝা যাচ্ছেনা।
আপনি কি জগতের বাইরের কেউ ? এটা বলার পরেই তো আপনার প্রস্থান সালাম দিয়ে ।
আপনার পারলৌকিক বিশ্লেষন মতে নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই যদি হুর থাকে ( যাদের সাথে বিবাহ করিয়ে দেবার কথা আল্লাহ স্বয়ং পবিত্র ক্বুরআনে বলে দিয়েছেন) , তাহলে বিবি খাদিজা(রাঃ) ও বিবি আয়েশা (রাঃ) জন্যও তো রাসুল(সাঃ) এর অনুরুপ প্রতিজনের সাথে ৭০ জন করে পুরুষ হুর থাকার কথা এবং তাদের সাথে বিবাহ করিয়ে দেবার কথা ।
ইসলামে এবং পবিত্র ক্বুরআন ও হাদিসে আমরা বিবাহ সম্পর্কে যে ধারনা পাই তা হল , নারী ও পুরুষের সাথে শরিয়ত মতে সম্পর্ক স্থাপন । অন্যথা চরমভাবে নিষিদ্ধ ।
এর বাইরে বিবাহের আর কি মিনিং থাকতে পারে আপনার পারলৌকিক ধারনায় ?
আপনার অপেক্ষায় অধীর ছিলাম বাইদানী আপু!!
আপনি সম্ভবতঃ খেয়াল করেননি। আপনি যেটা বলেছেন সেটা পোষ্টে হাওয়ারিগনের শর্ট ডিস্ক্রিপশনে (ইংলিশ) উল্ল্যেখ আছে।
আবারও ধন্যবাদ!
সুন্দর আলোচনা, উভয়পর্ব পড়লাম
অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ..
কষ্ট করে উভয় পর্ব পড়ার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ! জাযাকাল্লাহু আহসানুল জাযা।
আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে আলোচনা করা, বিতকর্ করা সবই সওয়াবের কাজ, আল্লাহ তাতে খুশী হন। আমরা দুনিয়ার দৃশ্যমান জিনিষ দিয়েই তো সবকিছুর বিচার করি, তাই হুরের ব্যাপারটিও বহু বউ রাখার বিষয়ের মত মনে হয়। তাই মানুষের আকষর্ন বেশী এবং সতীনে হিংসুক নারীরা ক্ষিপত্ হচ্ছেন।
অথচ আল্লাহ জান্নাতকে শান্তি ও আনন্দের জন্য বানিয়েছেন, ঝগড়া ফ্যাসাদের জন্য নয়। তার পরও আমরা আমাদের সীমাবদ্ধ জ্ঞান দিয়ে সেভাবেই চিন্তা করি যা আমরা দেখি!
আল্লাহ তো বলেই দিয়েছেন যে, সর্বোপরি জান্নাত আল্লাহর এমন এক সৃষ্টি যার রুপ- বৈশিষ্ট্য, এবং তার মধ্যকার 'হুর' 'গিলমান' সহ যাবতীয় সৃষ্টিসমুহকে আল্লাহ পাক কোন্ শৈল্পিক রুপ দিয়ে সাজিয়েছেন তা যেমন কোন চোঁখ দেখেনি, কোন কান শুনেনি, তেমনিভাবে কোন মানব হৃদয়ের কল্পনা করারও সাধ্যে নেই।
সুতরাং বিষয়টি আমরা প্রমান করব কিভাবে যা কল্পনাতেও প্রকাশ পায়না। আপনার পুরো পোষ্টের সাথে আমি একমত। আবারো ধন্যবাদ এবং প্রিয়েতে রাখলাম।
আপনার অতি সুন্দর মন্তব্য, মুল্যায়ন এবং সহমতের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ!
১ম পর্ব পড়ার দাওয়াত রইল! লিংক পোষ্টের উপরেই দেয়া আছে।
আবারও ধন্যবাদ আপনাকে!
আপনার অতি সুন্দর মন্তব্য, মুল্যায়ন এবং সহমতের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ!
১ম পর্ব পড়ার দাওয়াত রইল! লিংক পোষ্টের উপরেই দেয়া আছে।
আবারও ধন্যবাদ আপনাকে!
পক্ষে বিপক্ষে অনেক পোষ্টই পড়েছি, সবাই তো মোটামুটি দলিল প্রমান দিয়ে লিখার চেষ্টা করেছে। বাস্তবতা আল্লাহই ভালো জানেন।
তবে একটি কথা হলঃ দুনিয়াতে পুরুষরাই বহু বিবাহের অনুমোদন পেয়েছে। নারীরা নয়। আর মানুষের স্বভাবও কিন্তু এরকমই।
যেমন ধরুন: অনেক রাজা বাদশাহগণ বহু স্ত্রী থাকা সত্তেও চাকরানীর সাথেও যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছে, কারণ পুরুষের সৃষ্টিগত মানষিকতাও কিন্তু এমনই।
কোন রানীর ব্যপারে কিন্তু এমন নযীর নেই যে, আপন স্বামী থাকা সত্বেও বহু পুরুষের সজ্জাসায়ী হয়েছেন।
আমার মনে হয় আখেরাতেও মহিলারা বহু পুরুষ চাইবেন না।
দুনিয়ার বিধিবিধান আখিরাতে নেই, হবে দুটি বিধান অবশ্যই থাকবে, ১টি হল ঈমান, যা দুনিয়াতেও ফরজ আখিরাতেও ফরজ। ২য় টি হল বিবাহ সম্পর্ক, বহু হাদিস ও আয়াত দ্বারা জান্নাতে বিবাহের সত্যায়ন পাওয়া যায়।
আপনার গবেষণালব্য পোষ্টির জন্য শুকরিয়া। যদিও আমি পুরোপুরি একমত হতে পারছি না। কারণ জান্নাত তো মানুষের কল্পনাতীত। যতই কিছু আমরা ভাবি, তার ছেয়েও অধিক হারে উন্নত।
আল্লাহই ভালো জানেন। জাযাকাল্লাহ খাইর
ধন্যবাদ আপনাকে!
মন্তব্য করতে লগইন করুন