'হুর' কি? হুর কি শুধু জান্নাতি পুরুষদের জন্যই?? জান্নাতি নারীদের রিওয়ার্ড কি? কোরআন কি বলে??? (১ম পর্ব)..........*বর্ধিত আকারে রিপোষ্ট।
লিখেছেন লিখেছেন মুক্ত কন্ঠ ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:০১:০১ রাত
সৎ কর্মের প্রতিদানে সকল মুমীন নারী পুরুষরাই বেহেশত পাবেন এটা করুণাময় আল্লাহর ওয়াদা। কিন্তু কোরআন ও হাদিসে হুরের কথা বলা হয়েছে। সাধারণ ভাবে আমরা যা জেনে আসছি এবং ইসলামী জ্ঞানের সেকেন্ডারি রিসোর্স ও আলিম উলামার কাছ থেকে আমরা যে ধারণা পাই, তাতে 'হুর' একটি 'ফিমেল জেন্ডার', যারা থাকবে বেহেশতি পুরুষদের সেবার জন্য সৎ কর্মের প্রতিদানস্বরুপ। এমনকি হাদিসের ভাষ্য মতে (আমাদের কমন ইন্টারপ্রিটেশন অনুযায়ী) একেকজন বেহেশতি পুরুষের জন্য পুরস্কার স্বরুপ ৭০ জন হুর থাকবে।
যাইহোক, হুরের সংখ্যা তত্বটা এখানে আমার আলোচনার কোন বিষয় নয়। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, হুর যদি স্ত্রী লিঙ্গের হয়ে থাকে এবং তারা শুধুমাত্র জান্নাতি পুরুষদের জন্য নির্ধারিত হয়ে থাকে তবে জান্নাতি নারীদের জন্য কারা অপেক্ষা করবে? হুর সম বিপরীত লিঙ্গের কেউ থাকবে? নাকি তার ইহকালীন একমাত্র স্বামীই তার জন্য বরাদ্দ??? জান্নাত হল মুমীন নারী পুরুষ উভয়ের আপন কর্ম ফলের প্রতিদান। পুরস্কারওতো আলাদাই হবে এবং সমানভাবে। এটা পবিত্র কোরআনেই বলা হয়েছে। যেমন -
সূরা নাহল:97 - 'যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমাণদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত।'
আরও দেখুন-
সূরা আত তাওবাহ:72 - 'আল্লাহ ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কানন-কুঞ্জের, যার তলদেশে প্রবাহিত হয় প্রস্রবণ। তারা সেগুলোরই মাঝে থাকবে। আর এসব কানন-কুঞ্জে থাকবে পরিচ্ছন্ন থাকার ঘর। বস্তুতঃ এ সমুদয়ের মাঝে সবচেয়ে বড় হল আল্লাহর সন্তুষ্টি। এটিই হল মহান কৃতকার্যতা।'
বুঝা গেল নারী পুরুষ উভয়ের জন্য জান্নাতে রয়েছে সমান প্রতিদান।
এবার আসুন দেখি হুর প্রসঙ্গে কোরআন কি বলে-
সূরা আদ দোখান:54 - 'এরূপই হবে এবং আমি তাদেরকে হুর এর (বিশুদ্ধ, পবিত্র সঙ্গি/সঙ্গিনী'র) সাথে বিবাহ দেব।' (হুরিন 'ঈন)
আয়াতে 'হুর' ও 'যাওজ' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। হুর টার্মের বিশ্লেষনে পরে আসছি। যাওজ দ্বারা বৈবাহিক সঙ্গী/সঙ্গিনী উভয়টিই বুঝায়। ইংলিশ অনুবাদ হল 'Spouse'. যদিও আয়াতের বেশির ভাগ বাংলা অনুবাদ করা হয়-
'এরূপই হবে এবং আমি তাদেরকে আনতলোচনা স্ত্রী দেব।'
কিন্তু ইংলিশ অনুবাদে দেখুন-
“Even so (it will be). And We shall wed them to fair ones with wide, lovely eyes (Arabic: Hur'in)”
অন্য অনুবাদে আছে- 'Wed them to Houris pure, beautiful ones'.
তবে উভয়টিতে 'Wed' ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ 'বিবাহ দেব'। অর্থাৎ স্পাউজ অথবা কম্পেনিয়ন। এবং এটাই পারফেক্ট অনুবাদ।
এখানে বলা বাহুল্য, আমাদের পৃথিবীটা পুরুষ শাষিত। পরিবার, সমাজ তথা মানব সভ্যতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য এই পুরুষের কর্তৃত্বটা স্রষ্টা কর্তৃক সমর্থিতও। তবে এ সুযোগে পুরুষতন্ত্রটাই পৃথিবীর সর্বব্যাপী জেকে বসেছে। আমাদের সভ্যতাকে গড়ে তুলেছি এরই ভিত্তিতেই। যা স্রষ্টা সমর্থিত নয়। ইসলাম মানুষের জন্য, মানবতার জন্য, পুরুষের জন্য নয়। কিন্তু কঠিন সত্য হল, আমরা ইসলামকে ব্যাখ্যা করেছি আমাদের পুরুষতান্ত্রিক ভিউ থেকেই। শরিয়তের বিধান ও প্রতিদানগুলোকেও সে ভাবেই সাজিয়েছি। জান্নাত জাহান্নামকেও চিত্রায়িত করেছি সেই দৃষ্টিকোন থেকেই। মুমিন-মুত্তাক্বীন হিসেবে নয়।
যেমন আলোচ্য আয়াতে যাদেরকে এমন প্রতিদান দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তারা কারা? দেখুন পূর্ববর্তী আয়াত-
সূরা আদ দোখান:51 - 'নিশ্চয় খোদাভীরুরা নিরাপদ স্থানে থাকবে'।
এই খোদাভীরুদের প্রতিদানের কথাই পরবর্তী আয়াতসমুহে বলা হচ্ছে।
আরেক আয়াতে দেখুন-
সূরা আল বাক্বারাহ:25 - 'আর হে নবী (সাঃ), যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজসমূহ করেছে, আপনি তাদেরকে এমন বেহেশতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান থাকবে। যখনই তারা খাবার হিসেবে কোন ফল প্রাপ্ত হবে, তখনই তারা বলবে, এতো অবিকল সে ফলই যা আমরা ইতিপূর্বেও লাভ করেছিলাম। বস্তুতঃ তাদেরকে একই প্রকৃতির ফল প্রদান করা হবে। এবং সেখানে তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গি/সঙ্গিনী থাকবে। আর সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে।'
এই আয়াতেও ঈমানদার সৎকর্মশীলদের প্রতিদানের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু শেষে 'যাওজ' এর অনুবাদে বাংলা গ্রন্থগুলিতে বলা হচ্ছে 'পবিত্র সঙ্গিনী'।
শরিয়তকে আমাদের এই পুরুষতান্ত্রিক ভিউ থেকে ব্যাখ্যা করার কারনে ইসলাম বিরোধিরা সুযোগ পেয়েছে ঘৃনা ছড়ানোর। ওরা নারীর ক্ষেত্রে জান্নাতের প্রতিদানকে বঞ্চনামুলকভাবে তুলে ধরছে। 'হুর' ইস্যুকে চিত্রায়িত করছে চরম ঘৃনিত, কুৎসিত ও অশালীন রুপে।
একটা বিষয় মনে করিয়ে দেই, যেহেতু জান্নাতে চাইলেই সবকিছু পাওয়া যাবে, এমনকি কল্পনা করতেই সাথে সাথে সামনে হাজির হয়ে যাবে। দুনিয়ার কোন বাউন্ডও সেখানে অবান্তর। যেমন-
সূরা আল-যুমার:34 - 'তাদের জন্যে পালনকর্তার কাছে তাই রয়েছে, যা তারা চাইবে। এটা সৎকর্মীদের পুরস্কার।'
সেখানে ভারসাম্য রক্ষার জন্য পুরুষের কর্তৃত্বের প্রয়োজনীয়তাও আর থাকবে না। সুতরাং দুনিয়ার একক স্বামী রাখার যুক্তি ও বাধ্যবাধকতা কিন্তু ওখানে অচল।
দেখা যাচ্ছে কোরআন ঈমানদার ও সৎকর্মশীলদের জন্য সমান অংশে প্রতিদান দেওয়ার কথা বহু জায়গায় ঘোষনা করছে।
তাহলে.....?
চলুন 'হুর' টার্মটির আভিধানিক বিশ্লেষন এবং কোরআনের হুর বিষয়ক আয়াতগুলো একটু মিলিয়ে নেয়া যাক।
.......চলবে।
২য় পর্বের জন্য এখানে
বিষয়: বিবিধ
৩৪২৬ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চালিয়ে যান।
শুভ কামনা থাকলো।
হ্যা, আল্লাহই ভাল জানেন।
মা লা আইনুন রাআত, ওয়া লা উজুনুন সামিআত, ওয়া লা খাত্বারা আলা ক্বালবি বাশার।
শেষ পর্ব পড়বেন আশা করি।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
জাযাকাল্লাহু আহসানুল জাযা!
শেষ পর্ব পড়বেন আশা করি। কিছু ইংলিশ ইন্টারপ্রিটেশনের ভাষান্তর করতে একটু সময় লাগছে। আল্লাহ সহায় থাকলে দুয়েকদিনের মধ্যেই শেষ পর্ব পোষ্ট করার চেষ্টা করব।
ধন্যবাদ!
ফলশ্রুতিতে অনেক নারী অপমানবোধ করে জান্নাতের প্রশ্ন এলে।
এই ব্যপারে আলেমদেরকে নজর দিতে যেন সত্য প্রচারিত হয়।
ধন্যবাদ!
মন্তব্য করতে লগইন করুন