দাড়ি শুধু সুন্নাত বা ফ্যাশানই নয়, পুরুষের স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো !
লিখেছেন লিখেছেন মুক্ত কন্ঠ ১০ নভেম্বর, ২০১৪, ১২:৩৫:২২ রাত
আজকাল অনেকেই ফ্যাশন করে দাড়ি রাখেন। নিজের ইচ্ছামতো স্টাইল করে ফ্যাশনেবল লুকে আসতে মুখের সাথে মানানসই দাড়ি রাখা সব চাইতে ভালো আইডিয়া। কিন্তু আপনি জানেন কি, দাড়ি রাখা শুধু মাত্র ফ্যাশনের সাথে যুক্ত নয় এটি যুক্ত আপনার স্বাস্থ্যের সাথেও। পুরুষের দাড়ি রাখা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো। জানতে চান কী কারণে? চলুন তবে জেনে নেয়া যাক দাড়ি রাখার স্বাস্থ্যকর দিকগুলো। প্রেমিকের দাড়ি দেখে মেয়েদের রাগ করার দিন এবার সত্যি ফুরালো!
১) অ্যালার্জি থেকে দূরে রাখে
পুরুষদের মধ্যে যাদের ধুলো ময়লা এবং রোদে অ্যালার্জি রয়েছে তাদের জন্য দাড়ি রাখা অনেক উপকারী। এতে করে মুখের ত্বক সরাসরি ধুলো-বালি এবং রোদের সংস্পর্শে আসে না। সুতরাং অ্যালার্জি সংক্রান্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
২) শেভিং র্যাশ থেকে মুক্তি
অনেকের ত্বক খুব সেনসিটিভ হয়ে থাকে। তারা যদি বারবার শেভ করেন তাহলে ত্বকের সেনসিটিভিটির কারণে শেভিং র্যাশের সৃষ্টি হয়। দাড়ি রাখার অভ্যাস এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে।
৩) স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
সরাসরি রোদ ত্বকে লাগা, শেভ করার সময় ও শেভ করার পর নানা ধরণের কেমিক্যাল জাতীয় প্রোডাক্ট ব্যবহার করা ইত্যাদি স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। তাই পুরুষদের ক্ষেত্রে ডারম্যাটোলজিস্টগণ স্কিন ক্যান্সার থেকে রক্ষা পেতে দাড়ি রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
৪) ব্রণের ঝামেলা থেকে মুক্তি
পুরুষের ত্বকেও ব্রণ ওঠে থাকে। শেভ করার প্রোডাক্ট ও ধুলো-বালি এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলে। যারা দাড়ি রাখেন তারা নিয়মিত দাড়ির যত্ন নিলে এই ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন খুব সহজেই।
৫) ত্বকে বয়সের ছাপ ধীরে পড়ে
যারা দাড়ি রাখেন তাদের ত্বকে বয়সের ছাপ ধীরে পড়ে। ডারম্যাটোলজিস্ট ডঃ অ্যাডাম ফ্রাইডম্যান বলেন, ‘মুখের ত্বক দাড়ি দিয়ে ঢাকা থাকার ফলে সূর্যের আলোর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হয়। এতে ত্বকের ক্ষতি কম হয়, রিংকেল পড়ে অনেক দেরিতে। সুতরাং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেরি হয়’।
৬) অ্যাজমার প্রকোপ কমায়
গবেষণায় দেখা যায় দাড়ি রাখা নাকে মুখে ক্ষতিকর ধুলো-বালি ঢুকতে বাঁধা প্রদান করে। ফলে ডাস্ট মাইট যার ফলে অ্যাজমার প্রকোপ বৃদ্ধি পায় তা অনেকাংশে কমে আসে। এতে করে অ্যাজমা সংক্রান্ত ঝামেলা থেকেও মুক্ত থাকা সম্ভব হয়।
সুত্রঃ ডেইলি মিরর, দ্য ইন্ডিয়া টাইমস
**দাঁড়ি রাখার শরয়ী হুকুম**
প্রথমে একটি হাদিস দেখি:
যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে মুহাব্বত করল সে যেন আমাকেই মুহাব্বত করল। আর যে আমাকে মুহাব্বত করল সে আমার সাথে জান্নাতে বসবাস করবে।
(তিরমিযী শরীফ, মেশকাত- পৃ: ৩০)
দাঁড়ির হুকুম ও পরিমাপ:
ইসলামী শরীয়তে একমুষ্টি পরমান লম্বা দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব বা আবশ্যক। দাঁড়ি এক মুষ্টির কম রাখা বা একেবারে তা মুন্ডিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে হারাম এবং কবীরা গুনাহ। স্বয়ং হুজুর স. এর দাঁড়ি রাখা এবং তার অসংখ্য হাদীসে উম্মতের প্রতি দাঁড়ি রাখার সাধারণ নির্দেশই প্রমান করে যে, দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব এবং না রাখা হারাম। কারন, শরীয়ত প্রবর্তক কর্তৃক কোন বিষয়ের প্রতি সাধারন নির্দেশ হলে তা পালন করা ওয়াজিব এবং বিপরীত করা হারাম হয়ে যায়। আরে এটা ফিক্বাহ শাস্ত্রের একটি মূলনীতিও বটে। এছাড়া সাহাবা, সালফে সালেহীন এবং ফুক্বাহাগণের দাঁড়ি রাখার নিরবচ্ছিন্ন আমল এবং তাদের বিভিন্ন উক্তিসমূহের দ্বারাও এক মুষ্টি পরিমাপ লম্বা দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব এবং এর বিপরীত করা হারাম প্রমাণিত হয়।
নিম্নে দাঁড়ি সম্পর্কিত কতিপয় হাদীস, সাহাবাগণের আমল ও ফুক্বাহাগণের উক্তিসমূহ উল্লেখ করা হল:
হাদীস শরীফে দাঁড়ি:
১. হযরত আয়েশা রা. বলেন, রাসূল স. ইরশাদ করেছেন, দশটি বিষয় সকল নবী রাসূলগণের সুন্নাত। তন্মধ্যে গোঁফ ছোট করা এবং দাঁড়ি লম্বা করা অন্যতম।
(মুসলিম শরীফ,১/১২৯)
২. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল স. ইরশাদ করেছেন, তোমরা গোঁফ কাট এবং দাঁড়ি লম্বা কর, আর অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা কর।
(মুসলিম শরীফ,১/১২৯)
৩. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল স. ইরশাদ করেন, মুশরিকদের বিরোধিতরা কর, দাঁড়ি লম্বা কর, আর গোঁফ ছোট কর।
(বুখারী শরীফ- ২/৮৭৫, মুসলিম)
৪. হুজুর স. বলেছেন যে, তোমরা ভালভাবে গোঁফ কাট এবং দাড়ি বাড়াও। (বুখারী শরীফ)
৫. হুজুর স. এরশাদ করেন যে, গোঁফ কাট এবং দাড়ি ছড়িয়ে রাখ। (কাজী এয়াজ শরহে মুসলিম নববী)
৬. হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম স. ইরশাদ করেন, দাড়ি বাড়াও , গোঁফ কাট এবং এ ক্ষেত্রে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের সাদৃশ্য অবলম্বন করোনা। (মাসনাদে আহমদ)
৭. নবী করীম স. এর আমল দ্বারাও দাড়ি প্রমান পাওয়া যায়। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, সাহাবী হযরত খাব্বাব রা.-কে কেউ জিজ্ঞেস করেন, হুজুর পাক স. কি জোহর ও আছর নামাযে কেরআত পাঠ করতেন? তিনি বলেন, হ্যা, পাঠ করতেন। লোকটি পুন:প্রশ্ন করেন, আপনি কিভাবে তা বুঝতেন ? তিনি বলেন হুজুর স.-এর দাড়ি মুবারকের দোলায় আমরা বুঝতাম যে, তিনি কিরআত পাঠ করছেন। (তাহাবী শরীফ)
বলাবাহুল্য, কেরআত পাঠকালে ঐ দাড়ি দোলাই পরিদৃষ্ট হবে, যা যথেষ্ট দীর্ঘ হয়, ছোট ছোট দাড়ি কখনো দুলবে না।
এক নজরে দাড়ি:
১. দাড়ি বাড়াও। (বুখারী, মুসলিম শরীফ)
২. দাড়ি পূর্ণ কর। (মুসলিম শরীফ)
৩. দাড়ি ঝুলন্ত ও লম্বা রাখ। (মুসলিম শরীফ)
৪. দাড়ি বহার রাখ। (মাজমাউল বিহার)
৫. দাড়ি বেশী রাখ (বুখারী, মুসলিম)
৬. দাড়িকে ছাড়, অর্থাৎ কর্তন করো না। (তাবরানী)
দাঁড়ি ও সাহাবায়ে কেরামের আমল :
১.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.যখন হজ্জ্ব বা উমরা আদায় করতে, তখন স্বীয় দাঁড়ি মুষ্টি করে ধরতেন, অতঃপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন।
(বুখারী শরীফ- ২/৮৭৫)
২. হযরত আবু হুরায়রা রা. স্বীয় দাঁড়ি ধরতেন, অতঃপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন।
(মুসান্নাফ লি-ইবনি আবি শাইবা- ১৩/১১২)
দাঁড়ি ও ফুক্বাহাদের উক্তি:
১. হানাফী মাযহাবের কিতাব শরহে মুনহাল ও শরহে মানজুমাতুর আদবের মধ্যে লিখেছেন, নির্ভরযোগ্য ফতোয়া হল দাড়ি মুন্ডানো হারাম।
২.মাওলানা আশেকে এলাহী মিরাঠী রহ. তার প্রণিত “’”দাড়ি কী কদর ও কীমত” কিতাবে চার মাজহাবের ফক্বীহগণের মতামত শাফেয়ী মাজাহাবের প্রামান্য গ্রন্থ “আল ওবাব” হতে উদ্বৃত করেছেন :
ইমাম ইবনুর রাফ’আ বলেন, ইমাম শাফেয়ী রহ. “আলউম্ম” কিতাবে লেখেন যে, দাড়ি কাটা হারাম।
৩. মালেকী মাজহাব মতেও দাড়ি মুন্ডন করা হারাম। অনুরূপভাবে ছুরত বিগড়ে যাওয়া মত ছেটে ফেলাও হারাম। (কিতাবুল ওবদা)
৪. হাম্বলী মাজহাবের কিতাব “শাহহুল মুন্তাহা” ও “শরহে মুজ্জুমাতুল আদব” এর উল্লেখ হয়েছে যে, নির্ভরযোগ্য মত হল দাড়ি মুন্ডন করা হারাম।
অনুরূপ অন্যান্য গ্রন্থাকারও দাড়ি রাখা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে মাননীয় ইমামদের ইজমা (ঐকমত) বর্ণনা করেছেন।
দাড়ি কর্তনকারী আল্লাহ পাকের দুশমনদের মধ্যে গণ্য হওয়ার সম্ভাবনা:
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. নিজ রচিত “কিতাবুজ্জুহুদে” আকীল ইবনে মোদরেক সালামী হতে উদ্ধৃতি করেন যে, আল্লাহ জাল্লা শানুহু বনী ইস্রাইলের এক নবীর নিকট এই অহী প্রেরন করেন যে, তিনি যেন নিজ কওম বনী ইস্রাইলকে এ কথা জানিয়ে দেন যে, তারা যেন আল্লাহ তা’য়ালার দুশমনদের বিশেষ খাদ্য শুকরের গোশত না খায় এবং তাদের বিশেষ পানীয় অর্থাৎ শরাব(মদ) পান না করে এবং তাদের শিক্ল ছুরত (আকৃতি) না বানায়। যদি তারা এমন করে অর্থাৎ শুকরের গোশত খায়, বা মদ পান করে, অথবা দাড়ি মুন্ডায় বা ছোট করে (ফ্রেন্সকাট করে) অথবা বড় বড় মোচ রাখে, তা’হলে তারাও আমার দুশমন হবে, যেমন তারা আমার দুশমন। (দালায়েলুল আসর)
কওমে লূতের নিন্দনীয় বৈশিষ্ট্য ও ধ্বংসের কারন:
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে আসাকেরসহ আরো কতিপয় মুহাদ্দিস হযরত হাসান রা. হতে নবী করীম স. এর এই মুবারক হাদীস বর্ণনা করেন যে, দশ প্রকার পাপে লূত সম্প্রদায় ধ্বংস হয়েছিল; তন্মধ্যে দাড়ি কাটা, গোঁফ বড় রাখা অন্যতম।
আল্লাহ সুবানুহুতা’’য়ালা আমাদের সকলকে দাঁড়ি রাখার গুরুত্ব অনুধাবন করে যারা এখন দাঁড়ি রাখিনি তাদের দাঁড়ি রাখার তৌফিক দান করুন
এবং যারা দাঁড়ি সম্পর্কে আজেবাজে মন্তব্য করেন তাদের হেদায়াত দান করুন। আমীন।
ক্রেডিট: সময়ের কন্ঠস্বর
বিষয়: বিবিধ
২৪৪১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7238
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7238
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> রায়হান রহমান লিখেছেন : দাড়ি, মেসওয়াক আর গিড়ার উপর কাপর পরার কী কী বৈজ্ঞানিক উপাদান আছে গবেষণা করে মুসলিম জাহানকে উদ্ধার করেন।মন্তব্য করতে লগইন করুন