মাছি-পানীয় সংশ্লিষ্ট হাদিস নিয়ে উগ্র বিতর্ক: মধ্যমপন্থাই কাম্য।
লিখেছেন লিখেছেন মুক্ত কন্ঠ ২৯ অক্টোবর, ২০১৪, ০৩:১১:৩১ দুপুর
"যদি তোমাদের কারো পানীয়ের মধ্যে ঘরের কোন মাছি পড়ে, সে যেন পুরো মাছিটাকেই পানীয়ের মধ্যে চুবিয়ে নেয়, কারণ মাছির এক পাখায় আছে রোগ, আর অন্য পাখায় আছে সে রোগের ঔষধ"
এটা সহিহ বোখারির একটি হাদিস।
হাদিসটিকে কেন্দ্র করে সহিহ হাদিসের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে ব্লগার "ইমরান ভাই" এর পোষ্টে অনেক মন্তব্য প্রতি মন্তব্য যুক্তিতর্ক দেখলাম। কেউ কেউ অমুসলিম ফতোয়া দিতেও ভুলেননি। আমিও মন্তব্য করেছি। মন্তব্যটি একটু দীর্ঘ এবং বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিধায় এখানে পোষ্ট করলাম।
মাযহাবের সকল ইমামগন যেসব হাদিস তাদের বোধগম্য এবং হৃদয়ঙ্গম হয়েছে সেগুলো দিয়েই মাসআলা দিয়েছেন। এর কারনেই কিন্তু মাযহাবের সৃষ্টি। এবং হাদিস পরস্পর সাংঘর্ষিক বলেই বর্তমান যুগে মাযহাব মানা অত্যাবশ্যকিয়। তবে কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক 'সুন্নাহ' তথা হাদিসকে কিন্তু স্বয়ং রাসুলই সঃ প্রত্যাখ্যান করতে বলেছেন। উসুলে শরিয়তও তাই বলে। কোরআন, সুন্নাহ, ইজমায়ে উম্মাত, ক্বিয়াস, এই চারটি মূলনীতির মধ্যে ক্রমধারা অনুযায়ী প্রায়োরিটি দিতে হবে। উদাহরণতঃ কোরআনের সাথে সুন্নাহ সাংঘর্ষিক হলে সুন্নাহ পরিত্যাজ্য। সুন্নাহর সাথে ইজমা সাংঘর্ষিক হলে ইজমা পরিত্যাজ্য।
সুতরাং এ ধরনের হাদিস প্রত্যখ্যানকারিকে কাফির বা মুসলিম থেকে খারিজ ফতোয়া দেয়া কোনভাবেই সঠিক নয়। আমি কোনভাবেই হাদিসকে কোরআনের সমান্তরালে (কোরআনের কোন আয়াত অস্বীকার কারী অবশ্যই কাফের) নিতে পারি না।
আমি এটুকু মনে প্রানে বিশ্বাস করি যে, এটা (আলোচ্য মাছি বিষয়ক হাদিস) যদি বাস্তবে রাসুল সঃ এর কথাই হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই কোন দিন যদি বিজ্ঞান মাছির এ বিষয়টা নিয়ে গবেষনা করে তবে এর সত্যতাই প্রকাশ পাবে। উদ্ভাসিত হবে এর নিগুঢ় তাৎপর্য ও রহস্য।
তবে হাদিসটির বিষয়ে আমার একটি প্রশ্ন, মাছির বৈশিষ্ঠ্য অনুযায়ী তারা গু মুত ইত্যাদি পচা গান্ধা বস্তুতেই বসে এবং খাদ্য গ্রহন করে। এদিক থেকে মাছিকে পানিতে চোবানো পবিত্রতার হাদিস ও বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। এবং যে কারো জন্যই অরুচিকরও বটে। বাস্তবে এ কাজটা করতে আপনারও রুচিতে বাধবে।
একই ভাবে বুদাআহ নামক কুপের পানি সংশ্লিষ্ট হাদিসের অংশ-
'পানি পবিত্র, কোন কিছু একে অপবিত্র করতে পারেনা।'
এ কথায় কিন্তু পানির মৌলিক বিশেষত্ব প্রকাশ পায়, এখানে ঐ কুপের পানিকে নির্দিষ্ট করা হয়নি। সুতরাং এ কথাটা প্রশ্নবিদ্ধ এবং ত্বাহারাতের হাদিস বা বিধানগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক; যা আমরা মাদ্রাসা পড়ুয়ারা হাতিস ও ফেক্বাহ গ্রন্থগুলোর কিতাবুত ত্বাহারাতে পড়েছি। পানি নাপাক হওয়ার মানদন্ডে পড়লে অবশ্যই সেটা নাপাক।
এমন ভাবাটা অযৌক্তিক নয় যে, সনদ সহিহ, কিন্তু কোন এক রাবি বা বর্ননাকারি অজান্তেই বর্ননায় ভুল করেছেন।
পরিশেষে বলতে চাই, হাদিস যদি সহীহ সনদে হয় তবে সে হাদিস বোধগম্য না হলে/কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক এবং অযৌক্তিক হলেও-
১। অস্বীকার করা যাবে না। এভয়েড করতে হবে। যে ভাবে ইমামগন করেছেন। অন্যথায় ফিতনার সৃষ্টি হবে। আর ফিতনা হত্যার চেয়েও কঠিন।
২। আমল করাও জরুরী নয়। কারণ এটা পরিস্থিতির একটা সাধারণ সমাধান। আমলে নেয়া না নেয়া আপনার ইচ্ছা। যেমনঃ মাছি পানীয়তে পড়ে গেলে ঐ পানি যদি খেতেই হয় তবে এই হাদিসটির অনুস্বরন করবেন। তবে মাছিটা ঘরের কি না সেটাও বিচার্য বিষয়।
৩। অস্বীকার কারিকে অমুসলিমও বলা যাবে না। কারণ, এটার মানে রাসুলকে বা মৌলিক আক্বিদাকে অস্বীকার করা নয়। এখানে অস্বীকারকারীর নিয়্যাতটাই গুরুত্বপূর্ণ। সে রাসুলকে বা রাসুলের সুন্নাহকে অস্বীকার করছে না কি এটা রাসুলের সত্যিকার সুন্নাহ নয় বলেই অস্বীকার করছে সেটাই ধর্তব্য বিষয়।
পরিশেষে বলব, এসব বিষয়ে কাউকে অমুসলিম ফতোয়া না দিয়ে বিষয়টির ভার আল্লাহর উপর ছেড়ে দেওয়া উচীত।
কোরআনের বাণী-সূরা আন নিসা:৫৯ - "হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।"
আপন ভাবনাঃ আমাকেও অমুসলিম ট্যাগ করা হয় কিনা সেটাই ভাবছি।
বিষয়: বিবিধ
২২১৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হাদীসের উপর ফিকহশাস্ত্র প্রাধান্য পাবে কোন যুক্তিতে? হাদীস ও ফিকহশাসেত্র বিরোধ দেখা গেলে অবশ্যই আগে সহীহ হাদীস মানতে হবে। এটা মাযহাবের ইমামদেরও মত।
মাযহাবের সমাধানগুলি যে সাংঘর্ষিক!
হানাফি মাযহাব কি আপনি যথাযথ মানেন? নাকি গোঁয়ারদের মত ফিকহে হানাফি, আক্বীদায় খারেজি?
সহীহ হাদীস কখনো সাংঘর্ষিক হয় না পরস্পর। যে টি সাংঘর্ষিক মনে হয়, সেটি আপনার/আমার উপলব্ধির দুর্বলতা। আর স্থান কাল পাত্রও মাথায় রাখতে হবে।
আলোচ্য হাদীসে সে পানি খাওয়া আপনার জন্য সুন্নাত ঘোষণা করা হয় নি। এটি একটি সমাধান। আরবে তখন খাবার পানির সংকট ছিল।
আমিতো হাদিসের উপর ফিক্হকে প্রাধান্য দেইনি।
আর সহীহ হাদিসের মধ্যে সাংঘর্ষিক নেই! এক নামাজের প্রাকটিসেইতো সহিহ হাদিসের কত সংঘর্ষ!!
Click this link
Click this link
ধন্যবাদ।
”কোরআনের সাথে সুন্নাহ সাংঘর্ষিক হলে সুন্নাহ পরিত্যাজ্য।”
একটা উদাহরন দেন। কোথায় এমন সুন্নাহ আছে যা কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক ??
Click this link
আল্লাহই সর্ব বিষয়ে অবগত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন