মিন্দানাওয়ের মরো মুসলমানদের ভাগ্যের পরিবর্তনঃ মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসন দিল ফিলিপাইন সরকার
লিখেছেন লিখেছেন মুক্ত কন্ঠ ২৮ মার্চ, ২০১৪, ১২:৩৬:৩৮ দুপুর
ফিলিপাইনের স্বাধীনতাকামী মুসলিম বিদ্রোহীদরে সঙ্গে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি করেছে দেশটির সরকার। ১৭ বছর ধরে চলা আলোচনার ফল এ শান্তি চুক্তির মাধ্যমে দেশটির দশকের পর দশক ধরে চলা সরকার আর বিদ্রোহীদের লড়াইয়ের অবসান ঘটল। গতকাল রাজধানী ম্যানিলায় নিজ বাসভবনে সরকারের পক্ষে শান্তি চুক্তিতে সই করেন প্রেসিডেন্ট বেনিগনো আকুইনো। বিদ্রোহীদের পক্ষে চুক্তি সই করেন মরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্ট (এমআইএলএফ)-এর চেয়ারম্যান মুরাদ ইবরাহিম। চুক্তিতে মুসলিম অধ্যুষিত বাংসামোরোকে স্বায়ত্তশাসিত হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। বাংসামোরোকে নিজের বাজেট ও পুলিশ গঠন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। চুক্তির শর্তমতে এমআইএলএফ তার ১০ থেকে ১৫ হাজার সৈন্যের অস্ত্রসমপর্ণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। স্বায়ত্তশাসন পেয়ে সরকারবিরোধী সংগ্রাম ছেড়ে দেবে সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী মনে করা হয় এমআইএলএফকে। চুক্তিমতে, বাংসামোরোর সরকার সংগৃহীত করের ৭৫ শতাংশ নেবে, ধাতব খনিজ পদার্থ থেকে আয়ের ৭৫ শতাংশ পাবে এবং মৎস্য অঞ্চলের কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণ করবে। ২০১৬ সালের স্থানীয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বাংসামোরোর শাসনক্ষমতায় থাকবে অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষ।
মিন্দানাওয়ে নিজেদের আত্বনিয়ন্ত্রনাধীকারের জন্য এমআইএলএফ যুদ্ধ করে আসছিল। এ অঞ্চলের আদি অধিবাসী মরো মুসলমানরা নিজেদের পিতৃভূমির উপর উপনেবেশিকদের শাষন কখনও মেনে নিতে পারেনি। যার ফলে স্বাধিনতাকামী বিভিন্ন সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন গড়ে উঠে। স্বাধীনতাকামী মুর মুসলমানরা ঐ গ্রুপগুলোর নেতৃত্বে লড়াই চালিয়ে আসছিল। এ যাবত মিন্দানাও দ্বীপের মুসলিমদের সঙ্গে সরকারের লড়াইয়ে ১ লাখ ২০ হাজার ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এই হিসাব অফিসিয়াল। প্রকৃতপক্ষে নিহতের সংখ্যা কয়েক গুন বেশি। দশকের পর দশক ধরে জুলুম নির্যাতনের ষ্টিম রোলার চালিয়ে যে ভাবে মুসলিম নিধন করা হয়েছে সেগুলোর খুব কমই বিশ্ববাসী জানতে পেরেছে।
চুক্তিতে সইয়ের আগে আকুইনো বলেন, অতীতের কুসংস্কার দূরে ঠেলে আসুন আশার পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখি। চুক্তি সইয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন এমআইএলএফের চেয়ারম্যান মুরাদ ইবরাহিম ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। বিদ্রোহীদের সঙ্গে ফিলিপাইন সরকারের শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রেখেছে মালয়েশিয়া। চুক্তি সই অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এমআইএলএফের পাঁচ শতাধিক সদস্যকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক বলেন, অনেক বছরের দ্বন্দ্ব ও অনেক জীবনহানির পরও এটি সাহসিকতার গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। অতীতের সমস্যার দিকে না তাকিয়ে দুই পক্ষই ভবিষ্যতের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে চুক্তিতে অংশ নেয়নি মোরো ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট ও বাংসামোরো ইসলামিক ফ্রিডম ফাইটারস। মোরো ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট ১৯৯৬ সালে সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল।
চুক্তিতে সইকারীদের একজন এমআইএলএফের জ্যেষ্ঠ সদস্য আবহৌদ সাইদ এম লিঙ্গা। তিনি বলেছেন, চুক্তিতে ছোট ছোট কিছু গোষ্ঠী খুশি নয়, কিন্তু বাংসামোরোর জনগণ খুশি। বাংসামোরোর দ্বন্দ্বের সমাপ্তি ঘটবে। তিনি আরও বলেন, এখনই যে সবাই যোগ দেবে এটা আমরা আশা করছি না। কেননা তাদের মনে শঙ্কা চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে। চুক্তি বাস্তবায়িত হলে এর সুফল জনগণ ভোগ করবে বলে জানান তিনি। এমআইএলএফের সিনিয়র ফিল্ড কমান্ডার, গোষ্ঠীর মুখপাত্র ভন আল-হক ১৯৭২ সাল থেকে সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছেন। তিনি আলজাজিরাকে বলেছেন, যুদ্ধের ময়দানে থাকা তরুণ যোদ্ধারা পুরো জীবনেই যুদ্ধ দেখেছেন। তারা তাদের পরিবারের কোলে ফিরে যেতে চান, স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চান।
বিবিসি, আলজাজিরা।
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১৩৪৮ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুব ভালো লাগ্লো...
মুল্যবান মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন