পরম শক্তিমান দেবী দুর্গা!!!???
লিখেছেন লিখেছেন মুক্ত কন্ঠ ১৩ অক্টোবর, ২০১৩, ০১:২৯:৩৬ দুপুর
প্রথমেই বাংলাদেশ প্রতিদিন এর একটি কলাম থেকে নেয়া কিছু অংশ এখানে কোট করছি-
ঈশ্বরের রূপ দুইটি- একটি আকার, অন্যটি নিরাকার। আকার রূপের নাম দেবতা এবং তার নিরাকার রূপের নাম ব্রহ্ম। ঈশ্বরের নিরাকার রূপটি নির্দিষ্ট হলেও আকার রূপটি নির্দিষ্ট নয়। ভক্ত যদি ভক্তির সঙ্গে যে কোনো বাস্তব, অবাস্তব ও কাল্পনিক কিংবা অন্য কোনো রূপে তাকে আরাধনা করে; তবে সেই রূপেও ঈশ্বর ভক্তকে কৃপা করতে পারেন। ঈশ্বরের রূপ তাই মুখ্য নয়, ভক্ত কোন আকৃতিতে তাকে আরাধনা করল এটা কোনো বিষয় নয়। এক্ষেত্রে ভক্তের ভক্তি, শ্রদ্ধা ও উদ্দেশ্যই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। হিন্দুরা প্রধানত দুটি রূপে তাকে আরাধনা করে। এর একটি প্রেমিক রূপে, অন্যটি মাতৃরূপে। ঈশ্বরের মাতৃ রূপের নাম দুর্গা।
See more at: http://www.bd-pratidin.com/2013/10/11/21045#sthash.3MIKmWR9.dpuf
উপরের বক্তব্যের অংশ 'ঈশ্বরের রূপ তাই মুখ্য নয়, ভক্ত কোন আকৃতিতে তাকে আরাধনা করল এটা কোনো বিষয় নয়। এক্ষেত্রে ভক্তের ভক্তি, শ্রদ্ধা ও উদ্দেশ্যই অধিক গুরুত্বপূর্ণ।" হ্যা, ভক্তের ভক্তি, শ্রদ্ধা ও উদ্যেশ্যই মুখ্য, কথাটা শতভাগ ঠিক, কিন্তু প্রশ্ন হল, পূজার আগ্রহ সৃষ্টির জন্য চোঁখের সামনে কিছু রাখতে হলে খোদাই করা পাথরই কি তার জন্য জরুরী? চন্দ্র-সূর্য দেখে কি ভগবানের পূজা করার আগ্রহ সৃষ্টি হতে পারে না? পৃথিবীর সকল মূর্তি মিলে চন্দ্র-সূর্য তৈরী করতে পারবে? দিগন্ত বিস্তৃত বিশাল আকাশ অথবা আকাশ ছোয়া পর্বতমালা কি মহামহিয়ান স্রষ্টার প্রতি মাথা নত করে দিতে উৎসাহিত করে না? এই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের বিচিত্র সৃষ্টির যিনি স্রষ্টা, সেই মহাশক্তিমানকে কি তারই এক সৃষ্টি মানুষের রুপে কল্পনা করা যায়? তার সৃষ্টি পাথর দিয়ে তৈরী মুর্তির মাঝে কি তার অবয়ব ফুটিয়ে তোলা যায়? আসলে ভগবানকে দৃষ্টির সীমা দিয়ে বাঁধা যায় না। আমরা শুধু স্রষ্টার সৃষ্টি থেকে তার বিশালত্ব অনুমান করতে পারি কিন্তু হাতে গড়া পাথর কখনো ভগবানের আকৃতিতে রূপান্তরিত হতে পারে না? সৃষ্টির রুপে স্রষ্টার অবয়ব কল্পনা করা মহাশক্তিমান স্রষ্টার জন্য অবমাননাকর ও অপমানজনকই বঠে! নিরাকার স্রষ্টাকে বাস্তব অবাস্তব অথবা কাল্পনিক কোন কিছু দিয়েই আকার দেয়া কোন ভাবেই যু্ক্তিসংগত নয়।
সবকিছুই গুলমেলে লাগে যখন ঈশ্বরের সৃষ্টিকেই আকারগত ঈশ্বর বলা হয়। উপরে আলোচিত কলামের লেখক আকারগত ঈশ্বরকে দেবতা হিসেবে উল্যেখ করেছেন। একই লেখাতে চন্দ্র সূর্যকে দেবতা বলেছেন। যেমন- 'দেবতারা দেবীকে সর্ব অস্ত্রে ভূষিতা করে তুললেন। ব্রহ্মা দিলেন কমণ্ডুলু, সূর্য দিলেন ধনুর্বাণ, বিষ্ণু দিলেন চক্র, শিব দিলেন শূল, চন্দ্র দিলেন অষ্টচন্দ্র, যম দিলেন দণ্ড, কালদেব দিলেন সুতীক্ষ্ন খড়গ, বিশ্বকর্মা দিলেন অভেদ বর্ম, কুবের দিলেন রত্নভার।' অথচ এগুলোকে ঈশ্বর মানুষের প্রয়োজনেই সৃষ্টি করেছেন। এখানে যমকে ও দেবতা বলেছেন। অথচ যম বা আজরাঈল ও ঈশ্বরেরই আরেক সৃষ্টি। আরেকটা ব্যাপার দেখুন, লেখক দেবীকে নিরাকার 'ব্রক্ষা' বা মহাশক্তিমান স্রষ্টার চেয়েও শক্তিশালী বলেছেন। যেমন- 'আহরিত সে সব পুঞ্জীভূত শক্তির সমন্বয়ে শ্রী দুর্গাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তোলা হয়। সেদিক থেকে শ্রী দুর্গা অদ্বিতীয়া। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিবের পক্ষেও যা পারা সম্ভব নয়, সে সব গুরুতর সমস্যা সমাধানের জন্য তাই দ্বারস্থ হতে হয় শ্রী দুর্গার পদ্মপাতার চরণ যুগলে।' এটা সত্য হয়ে থাকলে নিরাকার ব্রক্ষার আর প্রয়োজন কি? দুর্গা মানবীয় দুর্বলতার অধিকারী হয়ে আবার পরম শক্তিমান হন কেমন করে? দেবীর স্বামী আছেন, ছেলেমেয়ে আছে। পূজার সময় তিনি ফিরে ফিরে আসেন। আবার তাকে স্বামীর সংসারে ফিরে যেতে হয়। এসব কি মানবীয় দুর্বলতা নয়? অথচ, ঈশ্বর সকল মানবীয় এবং সৃষ্টিগত দুর্বলতার উর্দ্ধে।
বিষয়: বিবিধ
১৮৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন