রিমান্ডে নির্যাতন এবং অন্ধ বিচার ব্যবস্থা
লিখেছেন লিখেছেন মুক্ত কন্ঠ ০৩ জুন, ২০১৩, ০৩:৪৩:৫৪ দুপুর
আমরা জানি রিমান্ড মানে হচ্ছে পুলিশী হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি বর্তমান আওয়ামী সরকারের আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলার আসামীদেরকে রিমান্ডে নিয়ে যে ধরনের নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো হচ্ছে তাতে রিমান্ডের ধারণাটাই পাল্টে গেছে। রিমান্ডে নিয়ে ইন্টেরোগেশন এর ধারণা আমরা অতীতের সব সরকার থেকেই কমবেশি পেয়েছি। কিন্তু বর্তমান সরকারের বিশেষ করে অতি সাম্প্রতিক কালের রাজনৈতিক বন্দিদের ক্ষেত্রে যা ঘটছে তা অতীতের সকল রেকর্ডকে ম্লান করে দিয়েছে। বর্তমান সরকার এ ক্ষেত্রে যে কালো অধ্যায় সৃষ্টি করেছে তা আগের সকল সৈরশাষককে হার মানিয়েছে। যে সামরিক শাষকের আমলে গণতন্ত্র সবচেয়ে বিপন্ন ছিল বলে মনে করা হয় সেই সৈরাচারী এরশাদের আমলেও এত বিপূল সংখ্যক রাজনৈতিক বন্দির উপর এমন ভয়ংকর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। চার বছর বাদ দিয়ে গত কয়েক মাসের কথাই যদি ধরি তাহলেও রীতিমত আতংকিত হতে হয়। আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সহ বিরোধী দলের শীর্ষ নেতা যারাই বন্দি হয়েছেন বা রিমান্ডে গেছেন সবাইকেই রিমান্ড বা জেল থেকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। মির্জা ফখরুল চিকিত্সার জন্য সিঙ্গাপুর যেতে হয়েছে। আরও যারা সদ্য জামিন লাভ করেছেন তাদের অনেকেই সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন। হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা বাবুনগরীর অবস্থাও যখন চরম সংকটাপন্ন তখন তড়িঘড়ি করে জামিন দেয়া হয়েছে। অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দিরা জামিন আবেদন করেও জামিন পাচ্ছেন না। অথচ বাবুনগরীকে রিমান্ড চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের ব্যবস্থাপনায় জামিন দেয়া হয়েছে। স্বয়ং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি জামিনের অনুরোধ করেছেন। এটা স্পষ্টতঃই প্রতিয়মান যে নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ বা দায় এড়াতেই জামিন দেয়া হয়েছে। যদিও সরকার পক্ষ বলছেন বাবুনগরী আগে থেকেই অসুস্থতায় ভুগছেন। কিন্তু আমরা দেখেছি গ্রেফতারের আগে তিনি সুস্থ অবস্থায় হেফাজতের কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করেছেন। অথচ জামিন পেয়েছেন চরম সংকটজনক অবস্থায়। বর্তমান দেশজ রাজনীতির পূতিগন্ধময় গলি সম্পর্কে যে সম্পূর্ণ অজ্ঞ এমন একজন ধর্মনেতাকে এত লম্বা সময়ের রিমান্ড এই প্রথম। তেমনি ভাবে রিমান্ড থেকে এমন অবস্থায় মুক্তি পাওয়াটাও আমাদের কাছে নতুন। আমাদেরকে সবচেয়ে আতংকিত এবং উদ্বিগ্ন করেছে ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রিয় সভাপতি দেলোয়ার হোসেন এর রিমান্ড। সেদিন আদালতে তাকে যে ভাবে দেশবাসি দেখেছে তা গণতন্ত্রের জন্য একটি কল্পনাতীত বিষয়। গণতান্ত্রিক শাষনে রাজনৈতিক বন্দির এমন দশা হলে এই গণতন্ত্রকে আর গণতন্ত্র বলার সুযোগ থাকে না। এ গেল গণতান্ত্রিক সরকারের কথা। এবারে আসি আমাদের বিচার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে। আমার দেশে একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থাও তো আছে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে বিচার ব্যবস্থার আচরণ দেখে এটা মনে না হওয়ার কোন কারণ নেই যে, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে সরকারের একটি আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিচার কার্যক্রমে সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপ আয়নার মত পরিস্কার ভাবে জনগণ দেখতে পাচ্ছে। সংসদের মত জায়গায় দাড়িয়েও বিচার ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টিকারী মন্তব্য/বক্তব্যও আমরা শুনেছি। শিবির সভাপতির এমন দুর্ভাগ্যজনক অবস্থা দেখে আমার মনে একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খেয়েছে, আমার দেশে আদালত, বিচার ব্যাবস্থার আদৌ প্রয়োজন আছে কি? বিচারিক সাজা বা দন্ডের আগেই যদি এমন সাজা আর নির্যাতন ভোগ করতে হয় তবে আর আদালতের কিইবা প্রয়োজন। তার এমন অবস্থার জন্য দায়ীদের জবাবদিহী করা তো দুরে থাক হাসপাতালে প্রেরণের নির্দেশ দেওয়ার মত মানবিকতাটুকুও আদালত দেখাতে পারলেন না। এর মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার পক্ষপাতদুষ্টতা অথবা অক্ষমতা প্রসূত অন্ধত্ব চরম নগ্নভাবে আমাদের সামনে এসেছে। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা যে কত ভঙ্গুর অবস্থায় এসে ঠেকেছে তা খুবই কঠিনভাবে বুঝিয়েছে। আদালত সত্যিকার অর্থেই কালো কাপড়ে চোখ বেধে অন্ধত্ব বরণ করে নিয়েছে। শিবির সভাপতির এই দীর্ঘ রিমান্ড বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক। মোস্ট ওয়ান্টেড কোন সন্ত্রাসীরও এমন রিমান্ড এ যাবত কালে হয়নি। মেধাবী একজন ছাত্রনেতার কী এমন অপরাধ যে তাকে এত দীর্ঘ রিমান্ড আর ইন্টেরোগেশন এর প্রয়োজন পড়লো? সে এমন কোন আন্ডার ওয়ার্লড গ্যাং এর নেতাও নয় যে তাকে ইন্টেরোগেট করে ক্রিমিনালদের খোঁজ বের করতে হবে? অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকার দমন পীড়ণের মাধ্যমে বিরোধী নেতৃবৃন্দের মধ্যে ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করে রাখতে চায়। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রতি অনিহা সৃষ্টি করে একদলীয় বাকশালের পথ সুগম করতে চায়। কিন্তু আমরা জানি অন্ধকার যত গভীর হয় সোবহে সাদিক হয় তত নিকটবর্তী। ততক্ষণে অন্ধকার এই পথচলায় ইসলামিস্টদের হয়ত একটু বেশিই ত্যাগ শিকার করা লাগতে পারে।
এটা আমার নিজস্ব ব্লগ সাইট http://muktokonto.blogspot.com/ এর পুরনো একটি লেখার সংশোধিত রুপ।
বিষয়: রাজনীতি
১২৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন