বন্দী রনি এবং আইনের শাসন
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের পক্ষে ০৮ আগস্ট, ২০১৩, ০৫:২৭:১৮ সকাল
তোষামোদীর বদলে আত্মসমালোচনা আর যুক্তিনির্ভর গঠনমূলক কথাবার্তাই সর্বনাশ করেছে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনির। এবার ঈদ তাকে করতে হবে কারাগারে। সংবাদকর্মীকে মারধোর করায় সরকার নিজ দলের এমপিকে ছাড় দেননি। ‘আইন সবার জন্য সমান’ হওয়ায় আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে সরকার বদ্ধপরিকর (!)। আইন-শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর কাজে হস্তক্ষেপ না করায় রনিকে কারাগারে যেতে হয়েছে। একজন গোলাম মাওলা রনিকে কারাগারে পাঠিয়ে সরকার ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার’ আন্তরিকতা (!) দেখাচ্ছে। সরকারী দলের আলোচিত আরো কয়েকজন এমপি এবং চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, খুন, দখলদার, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের উপর এসিড নিক্ষেপ, ছাত্রবাসে অগ্নিসংযোগকারী ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাদের ক্ষেত্রে একই পথ অনুসরণ করা হয়নি। সবার ক্ষেত্রে ‘এমন যদি হতো’ তাহলে এখন হারানো ইমেজ উদ্ধারের চেষ্টায় কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে রাতের আঁধারে গোপনে নামহীন শত শত বিলবোর্ড লাগিয়ে ‘সাফল্যের ফিরিস্তি’ তুলে ধরার প্রয়োজন পড়তো না
রনিকে গ্রেফতারের মাধ্যমে সরকার সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং আইনকে কার ‘নিজস্ব গতিতে চলতে’ দেয়ার দাবি করলেও মানুষ কি সেটা বিশ্বাস করে? কারণ সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখালে অনেক আগেই সাগর-রুনির খুনিরা ধরা পড়তো। সরকার চাইলে পুলিশ পারে না এমন কোনো কাজ আছে কি? আর আইন তার নিজস্ব গতিতে চললে সরকার দলীয় এমপি ময়মনসিংহের গিয়াসউদ্দিন আহমদ, যশোরের শেখ আফিল উদ্দিন, রাজশাহীর মেরাজউদ্দিন মোল্লা, পাবনার গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, ভোলার নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, ঢাকার কামাল আহমদ মজুমদার, বরিশালের মনিরুল ইসলাম, পিরোজপুরের একেএম আউয়াল, সাভারের তালুকদার তৌহিদ মুরাদ জং, নরসিংদীর রাজিউদ্দিন আহমদ রাজু, মাদারীপুরের শাজাহান খান, একই জেলার সৈয়দ আবুল হোসেন, সুনামগঞ্জের সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, সিরাজগঞ্জের আবদুল লতিফ বিশ্বাস, চট্টগ্রামের আবদুল লতিফ, কক্সবাজারের আবদুর রহমান বদিসহ অনেক এমপি গ্রেফতার হতেন। গোলাম মাওলা রনি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নষ্ট করার জন্য মিডিয়ার দুজন কর্মীকে মারধোর করেছেন; কিন্তু সরকার দলীয় এসব এমপির কয়েকজনের বিরুদ্ধে ‘ভয়ঙ্কর’ অভিযোগ উঠেছে। একজন মহিলা সাংবাদিকের হাতও ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ এমপি মহিলা সাংবাদিকের হাত ভেঙ্গে দেয়ার ঘটনা সাংবাদিক নেতাদের আহত না করলে হেফাজতের সমাবেশে এক মহিলা সাংবাদিকের লাঞ্ছিতের (সমর্থন যোগ্য নয়) ঘটনা নিয়ে মিডিয়ায় তোলপাড় করা হয়। আওয়ামী লীগের এই এমপিরা দলের নেতানেত্রীদের তোয়াজ এবং প্রতিপক্ষকে ‘ধরো মারো’ করে দাবিয়ে রাখায় সরকারের শীর্ষ মহল তাদের পারফমেন্সে খুশি। এ জন্য তাদের ‘ছায়া’ দিয়ে রাখা হচ্ছে। এছাড়াও ছাত্রলীগ যুবলীগের ভয়ঙ্কর কর্মকা- লাগামহীনভাবে চলছে। কিন্তু সরকার কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ক্ষমতার মেয়াদের শেষ বেলায় এসে গোলাম মাওলা রনিকে গ্রেফতার করে সরকার যে ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার’ ম্যাসেজ দিচ্ছেন মানুষ তা বিশ্বাস করছে না। অবশ্য গ্রেফতারের পর রনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। তবে যারা রাজনীতির খোঁজ-খবর রাখেন, টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নেন এবং দেখেন তাদের ধারণা শীর্ষ নেতানেত্রীদের তোষামোদের বদলে গঠনমূলক কথাবার্তা আর দলের ভুলত্রুটি তুলে ধরার ‘খেসারত’ দিতে হচ্ছে রনিকে।
বিষয়: বিবিধ
১২০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন