বি প রী ত : বামপন্থীদের উগ্র শ্রেণীচেতনা
লিখেছেন লিখেছেন সাঈদ আহাম্মদ ১১ জুন, ২০১৩, ০৯:৪৮:৫৬ রাত
শ্রেণীহীন সমাজকায়েমের কথা।শুনতেও বলতে বড় মজা লাগে। সমাজতন্ত্রী কিংবা বামপন্থীরা সে মজাটা বেশি উপভোগ
করে থাকেন। মুখের মজা পর্যন্তই। ভেতরে কিছু নেই। শব্দবড়, কিন্তু আত্মাটা ছোট। পুঁটি মাছের মতো। পেশাদার
ফকিরের মন নিয়ে বহু বামপন্থী শ্রেণীবৈষম্য দূরকরতেচায়। এদেশের বেলায় এটাই সত্য। আগেকথাটা শুনতাম, বুঝতামনা। এখন এদের আচার-আচরণে হাবভাবে সব পরিষ্কার। কেন বলছি-একটু শুনুন। গত ৬ মের মতিঝিল ট্র্যাজেডি সম্পর্কে সবাই সবিস্তারে জানেন। জানেন এর পক্ষ- বিপক্ষেরনানা প্রচারণার কথাও।এসবের একটি হচ্ছে, ‘কওমী মাদরাসা- পড়ুয়ারা হতদরিদ্রপরিবারের সন্তান। খাওয়া-পরার ফ্রি সুবিধা পাওয়ার জন্য ওরা মাদরাসায় ভর্তি হয়ে থাকে। অনেকেই
এতীম। মা-বাবার সঙ্গেও তাদের কোনোযোগাযোগ নেই। কেউ কেউ শহরের বস্তিবাসীর সন্তান।ওরা সমাজের নিচের তলার বাসিন্দা। দুনিয়ার কিছুই বোঝে না।
আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকার রাজপথে এসে ওরা ঝামেলা বাঁধাবে কেন?’
তীব্র তাচ্ছিল্যের সঙ্গে মাদরাসা- ছাত্রদের এসবপরিচিতি নির্ধারণের কাজটি বেশি করছেন বামপন্থী সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীরা। পত্রিকার লেখাজোখা ও চ্যানেলের টকশোগুলোতে বামপন্থীদের এসব নাক উঁচু মূল্যায়ন এখন প্রায়ই ভেসে আসছে। সম্পাদক
ও পরিচালক বামপন্থী-এমনপত্রিকা ও চ্যানেলগুলোতে মাদরাসা-ছাত্রদের হতদরিদ্র বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার প্রবণতাটা একটু বেশি মাত্রায় চোখে পড়ছে। এজন্যই বলছি, শ্রেণীবৈষম্য দূর করার মুখরোচকস্লোগান দিলেও ছোট্ট মেজাজ এরা ছেড়ে আসতে পারেননি। এসব বামপন্থীর প্রায় সবক’জনই নিম্নবিত্ত- দরিদ্র পরিবার থেকে এলেওএখন কলার উঁচিয়ে ‘এলিট’ সাজার চেষ্টা করেন। এরা অর্ধেক জীবনপার করেনদুপুরেটোস্ট আর চা খেয়ে। বিরানি-তেহারির প্রতি থাকে খুববিষোদগার। কিন্তুশেষ জীবনে সুযোগ পেলেই বাশি পোলাউয়ের পাতিলে হুমড়িখেয়ে পড়েন।মুখে পুঁজিবাদ বিদ্বেষ। মুখে শ্রেণীসংগ্রাম। মুখে মেহনতী মানুষের গান। আর সুযোগ পেলেই পুঁজিপতিদস্যুর পা-চাটা দালাল। হা-ভাতে বুভুক্ষ ফকীর। সব কটি মিডিয়া হাউজ দেুখন। সেখানে কর্মরত
বামপন্থীদের দেখুন। ওই সব মিডিয়া হাউজের মালিকদের সামাজিক ও পেশাগত পরিচিতি দেখুন। বিভিন্ন বামপন্থীবুদ্ধিজীবীর পারিবারিক পরিচয় জানার চেষ্টা করুন!এখন তারা কোথায় কীভাবে উপার্জন করে চলেন-খোঁজ নিন। দেখবেন উচ্চবিত্তশ্রেণীর তল্পিবহন ছাড়া এরা আর কিছুতেই নেই। এরা করবেন শ্রেণীসংগ্রাম? এরা দূর করবেন শ্রেণীবৈষম্য? এদের মনে সমাজতন্ত্র? আসলে এদের মুখে কওমী মাদরাসার ‘হতদরিদ্র’ ছাত্রদের প্রতি তাচ্ছিল্যের ভাষা শুনে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এইসববামপন্থীর প্রতি সহানুভূতিশীল শ্রেণীরও অভাব নেই এদেশে। তারাও মাদরাসা-ছাত্রদের ‘গরিব-মিসকীন’ আখ্যা দিয়ে বিকৃত সুখ বোধ করেন। মনে করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদেরকে বলতে পারি, বর্তমানেও এদেশের প্রথম শ্রেণীর বহু আমলা, অধ্যাপক, জজ-ব্যারিস্টার, প্রশাসক, তাত্ত্বিক, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক আছেন, যারা এসেছেন হতদরিদ্র
পরিবার থেকে। তাদের মা-বাবা অন্য পরিবারে দিনমজুরেরকাজকরতেন।তাদের পরীক্ষার ফিসের টাকা হাট- বাজারে চাঁদা করে তুলতে হয়েছে। তারা এখনও বড়চেয়ারে বসে দায়িত্ব পালনকরছেন।তাছাড়া এই ঢাকা শহরের ক’জনবাড়িওয়ালা-গাড়িওয়ালা দু’পুরুষ আগে থেকেই বিত্তবান? বর্তমান বিত্তবানদের ৯০ জনেরই তো এক পুরুষ আগের ইতিহাস হচ্ছে ফসলের কাদামাটিতে লাঙলের ফলা ঠেলা। এটা কি তাদের গ্লানি? এতেকি লজ্জার কিছু আছে? তাহলে মাদরাসা-ছাত্রদের ‘হতদরিদ্র’বলে তাচ্ছিল্য করায় বিকৃত সুখবোধটা কেন? দারিদ্র কি অপরাধ? কে বলেছে তাদের-এসবছেলে মাদরাসায় এসেছে ফ্রিখাওয়া-পরার সুবিধা পাওয়ার জন্য?আর একথা কতটুকু সত্যযে, এখন মাদরাসায় হতদরিদ্র পরিবারের ছেলেরা বেশি আসছে? তথ্য হিসেবে তো এটা সঠিক নয়। বর্তমানে কওমীমাদরাসায় যারা পড়েন তাদের শতকরা৬০ভাগ আসছেনস্বচ্ছল পরিবার থেকে। কেউ কেউ মধ্যবিত্ত, অবশ্যই কেউ কেউ উচ্চবিত্তপরিবার থেকেও। আরযারা নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে এসেছেন তারা এসেছেন সৎ, দ্বীনদার ও সামাজিকভাবে প্রশংসিত বিভিন্ন পরিবার থেকে। তাদের প্রতি ছোটলোকী তাচ্ছিল্য দেখানোর মতো ছোট তারা নন। স্কুল-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়াসব ছাত্রকি স্বচ্ছল পরিবার থেকে আসছেন? তাহলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক বাজেটে বিরাট অংকের ভর্তুকি রাখতে হয় কেন? ৮ম শ্রেণী পর্যন্তঅবৈতনিক শিক্ষা এবং শিক্ষার সঙ্গেখাদ্যকর্মসূচির পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কারণ কী? হ্যাঁ, একটা জায়গায় এদের মনোভাব সঠিক। কওমী মাদরাসার ছাত্র, ছাত্রদের অভিভাবকও শিক্ষকদেরপক্ষে ডিজিটাল বড়লোকীঅবলম্বনের কোনোপথ খোলা নেই। ডেসটিনির কোটিপতি আররানাপ্লাজার শিল্পপতি হওয়া তাদের পক্ষেসম্ভব নয়। একইভাবে শেয়ার বাজারের আলাদিনের চেরাগ হাতে নেওয়া আরপদ্মাসেতুর ‘দেশপ্রেমিক’ সাজা তাদের আরাধ্য হতে পারে না। বন্দুক- চাপাতি দিয়ে ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ
কিংবা ভিওআইপির‘বাতাসী’ ব্যবসায় কোটি টাকা কামানোর রুচি তাদের হয় না। জমি, জলাশয়, গ্যাস-বিদ্যুৎ,কমিশনসহ শত ধান্দার অন্ধিসন্ধিতে মাস্টারি করার মতো ‘যোগ্যতা’ তাদের নেই। এই ডিজিটাল
বড়লোকীতে তারা পিছিয়েই আছেন।এজন্য তাদের ‘হতদরিদ্র’ বলে সুখ পেতে চাইলে কিছু বামপন্থী ও বাম- সহানুভূতিশীল ভোগপন্থীদের প্রতি আমরা করুণাই করতে পারি। হায়রে বেচারা! মুখে তার শ্রেণীসংগ্রাম, অন্তরে উৎকট বৈষম্য! এদেশে এরাইকরেন বাম রাজনীতি! মায়াই হয়এই রাজনীতির জন্য।
উৎসঃ মাসিক আলকাউসার
বিষয়: বিবিধ
১৩৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন