প্রিয় মাতৃভুমির বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয়
লিখেছেন লিখেছেন জাকির হোসাইন আজামী ১৭ জুন, ২০১৪, ০২:০০:২১ রাত
মানুষ শ্রেষ্ঠ কেন ? মানুষের মধ্যে আল্লাহ্ তায়ালা এমন কিছু মহানসম্পদ গচ্ছিত রেখেছেন যা অন্য কোন সৃষ্টির মাঝে রাখেন্নাই - এ কারণে মানুষ শ্রেষ্ঠ ।
সম্পদ গুলো হল , ভাল- মন্দের জন্মগত জ্ঞান , চিন্তা -ভাবনা করার এবং বুঝার ক্ষমতা , অতঃপর ভাল- মন্দের যে কোন একটিকে গ্রহণ করার পূর্ণ স্বাধীনতার সুযোগ । এবং সেই অনুসারে কাজ করবার পূর্ণ উপযোগী একটি অতুলনীয় দেহ । আর এগুলো দান করবার উদ্দেশ্য হল -মানুষ এখানে আল্লাহ্র দাস হয়ে তার প্রতিনিধিত্বের কাজ করবে ।
কাজটি হল - নিজে আল্লাহ্র আইন মেনে চলা এবং অন্যকে সে আইন মেনে চলবার আহ্বান করা তথা সত্যের পক্ষে থাকা আবং মিত্যার বিপক্ষে থাকা ।
একাজ যত সময় পর্যন্তু মানুষ করে তত সময় পর্যন্তু সে শ্রেষ্ঠ আর যখন এ কাজে সম্পৃক্ত না হয় বা এ কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখন সে পশুর চেয়েও অধম হয়ে যায় ।
এ কথা আমার নয় , - মহান স্রষ্টার । দেখুন , সূরা আত তীন ।
দুই ঃ- বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ ।
নব্বই শতাংশের বেশী মুসলিম এখানে । কার্যত না হলেও এরা সবাই নিজেদেরকে মুসলিম দাবী করে । এমন কি স্বঘোষিত নাস্তিককেও তার মৃত্যুর পর তার পরিবার ইসলামের নিয়মানুসারে কাফন পরিয়ে জানাযা দিয়ে কবরস্থ করে , এই মিত্যা আশায় যে, আল্লাহ্ তাকে মাফ করে দেবেন । অথচ তা কিছুতেই হবার নয় । কারণ , আল্লাহ্ তায়ালা কোন অবিশ্বাসীকে মাফ করবেননা ।
্ = এ দেশে সিনেমা শুরু হয় বিসমিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম দিয়ে ,- যদিও তা অশ্লীল ।
এখানে সুদের সমিতির অফিস ঘরের দেয়ালে লেখা থাকে - " নবীর শিক্ষা করনা ভিক্ষা মেহনত কর সবে " -অথচ সর্বনিম্ন গুনাহ্ হচ্ছে নিজের গর্ভধারিনী মাকে বিয়ে করা । নাউযুবিল্লাহ্ ।
্= এদেশের সাংসদদেরকে নির্বাচনী প্রচারনাকালে মাথায় টুপি পরে গায়ে পাঞ্জাবী লাগিয়ে , সালাম দিয়ে , মোসাফাহ্ করে , কোলাকুলি করে খাটি ধার্মিক সেজে ভোট চাইতে হয় । আর সংসদে গিয়ে নারীনীতি সহ বিভিন্ন নীতির নামে ক্বুরান বিরোধী আইন পাশ করার পক্ষে শয়তানের একনিষ্ঠ প্রতিনিধি হিসেবে নিঃর্লজ্জের মত দাঁড়িয়ে কথা বলে - যা দেখে শয়তান নিজে পর্যুন্ত লজ্জায় মাথা নিচু করে বলে , হায়রে আমিতো এতটা শয়তান না !
= এদেশে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দলীয় প্রধান হজ্জের অভিনয় করেন , মাথায় পট্টি বাধেন , হাতে তছবিহ্ নেন এবং নিজেকে রাবেয়া বসরীর খালাতো বোন হিসেবে জনগণের সামনে পেশ করেন। অতঃপর প্রধানমন্ত্রী হয়ে সংসদে দাঁড়িয়ে ইসলাম ও প্রকৃত মোসলমানদের বিরুদ্ধে ফেরাউন ও আবু জাহেলের একনিষ্ঠ প্রতিনিধি হিসেবে তাদের কাজ এ দেশে বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকারই শুধু ব্যক্ত করেননা, নবীর সম্নান ও ক্বুরানের জন্য যারা জীবন দিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে ছিল - ( প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই যাদেরকে চরম নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে ) তাদের সম্পর্কে বলেন , এরা গায়ে রঙ মেখে মৃত্যুর ভান ধরে শুয়ে ছিল ।
- যা শুনে শয়তান অপমানে আত্নহত্যা করতে চায় যে , আমি বেচে থেকে লাভ কি ! এতো আমার চেয়েও বড় ! একে আমার মা বলা ছাড়া উপায় নাই ।
= এই মুসলিম অধ্যুষিত দেশের মাটিতেই মুসলিম নামধারী মানুষ নামের কুলাঙ্গাররা ধর্ষনের সেঞ্চুরি করে মিষ্টি বিতরণ করেছে । অসংখ্য মেয়েকে ধর্ষন করার পর সীমাহীন নির্যাতন করে হত্যা করেছে এবং এখনও এই পাশবিকতা জারি আছে । বহু মা এবং মেয়েকে একি ঘরে ধর্ষন করেছে । কাউকে তো ধর্ষন করে লজ্জা স্থানে রড ঢুকিয়ে রাস্তায় ফেলে রেখা হয়েছে আর কারো লজ্জাস্থান কেটে গাছের ডালে ঝুলিয়ে রেখেছে । আর এসব নরপশুরা এই অকল্পনীয় জঘন্যতার পরিচয় দিয়ে তাদের মুরুব্বীদের কাছ থেকে পেয়েছে প্রকৃত যোগ্য হিসেবে বাহ্বাহ্!
আমাদের সমাজের কুকুরগুলি যদি জানতো এই বীভৎসতা তাহলে অবশ্যই আল্লাহ্র কাছে এই বলে নালিশ করতো যে, হে আল্লাহ্ ! আমাদেরকে কুকুর বানিয়ে ছিলে কেন ? - আমরা কি এদের চেয়েও খারাব ! এদের পাশবিক থাবা থেকে সত্তর বছরের বৃদ্ধাও তো রেহাই পায়না !
= এই দেশেই শুধুমাত্র আল্লাহ্র আইন চাই - সৎলোকের শাসন চাই ' এ কথা বলবার অপরাধে মানুষকে সাপের মত পিটিয়ে মেরে সেই মৃত মানুষটির লাশের উপর নৃত্য করেছে মুসলিম নামধারী যুবকেরা ! - যা জঙ্গলের হিংস্র পশুরা দেখলে নিশ্চিত আল্লাহ্র দর্বারে বিনীতভাবে ফরিয়াদ করতো , হে আল্লাহ্ ! আমাদেরকে মানুষ না বানিয়ে এদেরকেই মানুষ বানালে ! আমরা কি এদের চেয়েও জঘন্য ?
= আজ এদেশের সংবিধানের মূলনীতি থেকে " শর্বশক্তিমান আল্লাহ্র উপর পুর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস" - অপসারণ করা হয়েছে । আর সে জায়গায় বসানো হয়েছে - " ধর্মনিরোপেক্ষতা তথা ধর্মহীনতা ।
এদেশের হাইকোর্ট থেকেই রায় দেয়া হয়েছে হিজাব পরিধানে বাধ্য করা যাবেনা বলে । ফতোয়ার মত ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন বিষয়কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এই দেশের হাইকোর্ট তথা উচ্চ আদালত থেকেই ।
= সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ইমাম সাহেবদের সামনে আমেরিকার প্রায় উলংগ নর্তকীদের দিয়ে নৃত্য পরিবেশন করিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডি,জি, এই দেশের মাটিতেই । শুধু এদেশের মাটিতে নয় , - ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমীতে বসেই এই অপকর্ম সংঘটিত করেছে ।
= ভারত থেকে উলংগ নর্তকী -( যতটুকু কাপড় ছিল তা আসলে পোশাক হিসেবে নয় , তা ছিল অশ্লীলতাকে ভালভাবে প্রত্যক্ষ করাবার জন্যে) এনে এই দেশের রাজধানীতে ঘটা করে আয়োজন করে পিতা -মাতা , ময়-মুরুব্বিদের সামনে পশুদের চেয়েও নীচ অশ্লীল নৃত্য করানো হয়েছে পরিকল্পিতভাবে ।
নির্দিধায় , নির্বিঘ্নে ও চরম উচ্ছাস ভরেই এসব করেছে এবং করছে বাংলাদেশ নামক নব্বই ভাগ মোসলমানের দেশে !
তিন ঃ- এসবই হচ্ছে এমন একটি দেশে যার নব্বই ভাগ লোক নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবী করে ।
যে দেশটি লক্ষ লক্ষ মসজিদ বুকে ধারন করে আছে । রয়েছে অসংখ্য দ্বীনি প্রতিষ্ঠান যাতে দিন-রাত চব্বিশ ঘনটা কুরান ও হাদীসের তা'লীম দেয়া হচ্ছে ।
এটা সেই যমীন যার বুকে আছে অগণিত নিঃষ্পাপ শিশু হাফেজে কুরান যারা গুনাহের বয়সে পৌঁছার আগেই আল্লাহ্র কালামকে মুখস্ত করে আমাদেরকে ধৈন্য করেছে ।
এটা এমন ভূমি যার কোটি কোটি নাগরিকরা ফজরের সুমধুর আযানের আওয়াজ শুনে ঘুম থেকে জাগ্রত হয় । এই ভূমিতেই প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব ইজতেমা নামক সেই দ্বীনি মাহ্ফিল যাতে ছুটে আসে দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ খোদার পথের পথিক । রয়েছে হক্ব পন্থী অসংখ্য খানকাহ্ - যেখান থেকে অগণিত লোক আত্নশুদ্ধির শিক্ষা নিচ্ছে ।
দ্বীন কায়েমের চেষ্টায় রত রয়েছে বহুগুলি ইসলামী সংগঠন ।
চার ঃ- এতসব দ্বীনি প্রতিষ্ঠান যেই মাটিতে আছে সেখানে আজ যা ঘটছে তা আমাদের অজানা নয় ।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের কাজ কি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা , না আরো কোন দায়-দায়িত্ব আছে ?
আমরা যদি মানুষ হয়ে থাকি এবং একি সাথে আমাদের যদি ঈমান থেকে থাকে তাহলে আমরা শুধু চেয়ে দেখতে পারিনা ।
আমরা কি চাই আমাদের স্ত্রী- মেয়েরা ধর্ষীতা হউক ? - বা ব্যভিচারিণী হউক ? চাই কি আমাদের আদরের ছেলেরা সন্ত্রাসের শিকার হউক বা নিজেরাই সন্ত্রাসী হউক ? আমরা কি চাই আমাদের ঈমান ও সম্পদ কেউ কেড়ে নিক ? না । এসব আমরা চাইনা, - চাইতে পারিনা । কিন্তু আপনার আমার না চাওয়ায় কেবল এসব মহাবিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয় । আমরা যদি মুসলিম হিসেবে দায়িত্ব পালনে এগিয়ে না আসি , তাহলে অসত্যের এই তীব্র স্রোত থেকে আমরা কেউ-ই রক্ষা পাবনা । হয়তো কেউ আজ স্রোতের কবলে পড়বো আর কেউ কাল ।
সুতরাং আমরা যারা এখনও বিবেককে শয়তানের কাছে বিক্রি করিনি তাদের উচিৎ শয়তান যে গাফলতির চাদর আমাদের গায়ে জড়িয়ে দিয়েছে তা আরেক মুহুর্ত ও দেরী না করে ছিড়ে ফেলা এবং কুরানের পক্ষের মানুষদের কাতারে এসে শামিল হওয়া আবং তিনটি কাজ করবার দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা । -
১ - আমরা পরিবার - পরিজন সহ আল্লাহ্র আইন মানবো ।
২- অন্যকে আল্লাহ্র আইন মানতে আহবান করবো ।
৩- মিত্যার শিকড়কে উপড়ে ফেলতে কুরানের পক্ষের মানুষদের সঙ্গে সংঘবদ্ধভাবে সংগ্রামে সক্রিয় হব এবং মৃত্যু না আসা পর্যন্তু একাজ থেকে ক্ষান্ত হবনা ইনশাআল্লাহ্ ।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতে আমরা যদি একাজ না করে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করি তাহলে তার অর্থ হবে - আমরা শক্ত কসম খেয়েছি যে আমরা জাহান্নামে যাবই যাব, জান্নাতে কিছুতেই যাবনা ।
বিষয়: বিবিধ
১৩২৯ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ্ আপনাকে ভাল রাখুন ।
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন