খামচে ধরা অনুভূতিঃ পর্ব-৪
লিখেছেন লিখেছেন জাকির হোসাইন আজামী ২৬ জুন, ২০১৩, ০৮:০৪:১১ রাত
[img]http://www.bdtomorrow.net/blog/bloggeruploadedimage/zaberbinzakir/1372236280.jpg[/i
আপা sorry . বলেই নাইম সরে পড়ল ।
আনিকা ধোলাইটা তো মাশা আল্লাহ্ ঠিকমতই দিলা । বেচারা একেবারে দুমড়েমুচড়ে গেছে । আহারে ! বেচারার চেহারাটা ঘাম আর লজ্জায় পাংশুল হয়ে গেছে । ঠিকি আছে , ডাইয়া পোকার মন্ত্র জেনে সাপের গায়ে হাত দিতে নেই । কেমন লাগে এখন ! যাও এবার গিয়ে বিষ শামলাও । আধুনিকতা শিখাতে এসে পড়লে তো আগুনে ! আর একি যেমন তেমন আগুন ! ধাউ ধাউ করা অগ্নি । এখন বোঝ মজা । আধুনিকতা শেখাবার মজাটা হারে হারে টের পাবে ।
ভাবি , তুমি কিন্তু একটু বেশী বেশী করছো । দরদে একদম কলজে ফেটে যাচ্ছে দেখছি ! কি ব্যাপার ? মনে ধরছে নাকি ! ভাইয়ার কাছে বলে দেব কিন্তু ।
ছামিরা হেসে খান খান হয়ে আনিকার গায়ে পড়ে যাচ্ছে । আনিকা ধাক্কা দিয়ে বলল , কী ! আনন্দে যে একেবারে মাজনুন হয়ে যাচ্ছ ! কোথায় কষ্ট লাগবে তা না - উল্টা খুশীতে বাগ বাগ !
আরে আমি কি এমনিতে হাসছি । বেচারা আধুনিক লোকটা কয় দিকের আগুন নিভাবে বল ! ?
মানে ?
মানে আর কি, তোমার আগুন ঝরা এই বক্তব্য তার অন্তরকে পুড়ে কিছু রাখবে ? যতই সে আধুনিক সাজুক, বোরখার ভেতর থেকে এই যে জ্ঞান ভিত্তিক , যৌক্তিক ও ধারাল বক্তব্য সে শুনল - তাও আবার মধুমাখা কণ্ঠে --বেচারার জ্ঞান- বুদ্ধি ঠিক থাকলে হয় ।
এরপর তোমার ঐ পরীমার্কা পটলচেরা চোখ দুখানি । তার নজর যে একবারও এই চোখের জ্বলন্ত আগুনে পড়েনাই তা আমি কিছুতেই বিশ্বাস করিনা ।
এই চোখ যে যুবক একবার দেখবে , তার খাওয়া-দাওয়া - ঘুম ও কাজকারবারে তো সিডরের নির্মম আঘাত লাগবেই । আর সিডরের আঘাত যেখানে লাগে সেখানে তো সব লন্ড-ভণ্ড হয়ে যায় ।
ভাবি, তোমার মনে হয় সিডরের আঘাত লেগেছে তাই এতসব অভিজ্ঞতা ঝাড়ছ ।
আরে আমার লাগবে কোথায় ?
আমি কি আর আমি আছি । আমি তো তোমার ভাইয়ের মাঝে বিলীন হয়ে গেছি ।
যাক বাপু , আধুনিক লোকটার কপাল ভাল যে , তোমার এই মেগনেট মার্কা রূপখানা দেখে নাই । দেখলে আধুনিকতার গায়ে ঝাড়ু মেরে তোমার পিছু ধরতো ।
ভালই করেছ তোমার কলেজের ঠিকানা বল নাই । বললে সেখানে এ লোক হাজির হতে মোটেই কছুর করতনা ।
ভাবি, তুমি কি থামবে ! না বগ বগ করতেই থাকবে । না না থামলাম ভাই । আসলে সত্য কথা না বলতে পারলে আমার পেট বিষ করে । তাই বললাম ।
ওরে আমার সত্য বাদিনী !
ছামিরা ভাবি অনুমান করতে মোটেই ভূল করে নাই । নাইম আনিকার সামনে থেকে সরে গিয়ে ভাবনার জগতে হারিয়ে গেল । বিক্ষিপ্তভাবে সমুদ্র তীরে হাটছে আর ভাবছে । তার বিবেকের রুদ্ধ ঘরের দরজায় আনিকার কথাগুলো বার বার কড়া নাড়ছে । আমি একজন শিক্ষিত মোসলমান - অথচ আমার মধ্যে ইসলামের জ্ঞান নাই বললেই চলে । কুরান শরীফকে আল্লাহ্র কিতাব বলে আমরা সম্মান করি এবং নির্ভূল গ্রন্থ বলে আমারা গর্বও করি । কিন্তু আমি তো এর একটি আয়াতের অর্থও জানিনা । শেষ নবীর উম্মত বলে বড়াই করি । কিন্তু নবীর একটি বাণীও(হাদীস) জীবনে পড়লাম না ।
আধুনিকতা বলতে বুঝেছি , ছেলে-মেয়ে একসাথে চলবে , নাচগান করবে , নাটক- সিনেমা বানাবে, দেখব।
মেয়েরা যত বেশী সম্ভব আঁটসাঁট পোশাক পরবে যাতে খুব বেশী আবেদনময়ী হয় । কিন্তু আজকে কি শুনলাম - "আধুনিকতা মানে সমকালীন জ্ঞান - বিজ্ঞানে পারদর্শিতা অর্জন এবং তাতে পিছিয়ে না থাকা " সত্যিই তো, কথাগুলো জ্ঞান ভিত্তিক যুক্তির উপর শক্তভাবে দাঁড়ান ।
ও বলেছে - " পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুসরণ আমাদের বিপর্যের একটি কারণ । "
কথাটা তো আসলেই চিন্তা করবার মতো । ইসলামের কথা নাইবা ধরলাম , আমি কি কোন দিন ভেবে দেখেছি যে , পাশ্চাত্যের সকল বিষয়গুলো একজন মানুষ হিসেবে গ্রহণ করা যায় কিনা ?
না । কখনই ভাবিনি । অথচ ভাবা কি উচিৎ ছিলনা ! যে কারো কিছুই কি গ্রহণ যোগ্য ? না না তা কিভাবে হয় ! তাহলে ওর কথায় সত্যিই গ্রহণ যোগ্য যুক্তি আছে ।
এসব ভাবনার মাঝেই হঠাৎ পিঠে হাতের স্পর্শ টের পেল । পাশ ফিরে দেখল সেই মানুষটি যে ওর এবং আনিকার কথার মাঝে হঠাৎ আনিকা বলে ডাক দিয়ে জিজ্ঞ্যেস করেছিল কার সাথে কথা বলছ ?
আরিফ সাহেব নাইমের পাশ দিয়েই ফিরে যাচ্ছিলেন বোন ও স্ত্রীর কাছে । নাইমকে দেখে ভাবল লোকটার সাথে আমার তো কোন কথা হল না । একটু পরিচয় হয়ে যাই ।
আসসালামু আলাইকুম । নাইম সাহেব কেমন আছেন ? আপনার সাথে আমার তো কোন কথা হল না । আমি আরিফ । আনিকা আমার বোন আর আনিকার সঙ্গে যাকে দেখেছেন সে আমার স্ত্রী ।
জি ভাইয়া আমি শুনেছি ।
ভাইয়া আমি ঢাকা ধান মণ্ডিতে থাকি ।
ওহ আচ্ছা ।
তো কি করছেন ? পড়াশুনা না অন্য কিছু ?
ইংলিশে অনার্স করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ।
বাহ্ ,ভালই মাশা আল্লাহ্ ।
আপনার আব্বা -আম্মা আছেন ?
হ্যাঁ আছেন ।
আল্লাহ্ ওনাদেরকে বাঁচিয়ে রাখুন । পৃথিবীতে বাবা মা হচ্ছেন সন্তানের জন্য এমন বট বৃক্ষ যার প্রতিটি পাতাই হৃদয় ছোঁয়া প্রশান্তির এক একটা নীড় ।
ভাইয়া , আমি আপনাকে কি বলব বুঝতে পারছিনা । আমি আপনার ছোট বোনের সাথে কথা বলেছি । হয় তো কোন কথা ভূল বলেছি । আমাকে মাফ করে দিতে বলবেন ।
না না অসুবিধা নেই ।
মানুষ কোথাও গেলে একে অপরের সঙ্গে কথা তো হয়ই । আর কথা বললে সবারই কিছু না কিছু ভূল হয় । ভূল হয়না শুধু বোবার । তাই না ?
আরিফ সাহেব পকেট থেকে একটি কার্ড বের করে নাইমের হাতে দিয়ে বললেন ,এই কার্ডটি রাখুন । আমি ইসলামী ব্যাংকে ছোট্ট একটি চাকরী করছি । উত্তরা শাখায় আছি । কখনো ওদিকে আসলে অবশ্যই ব্যাংকে আসবেন , কথা হবে । আল্লাহ্ হাফেজ ।
আরিফ সাহেব চলে গেলেন ।
নাইম কার্ডটি পেয়ে মনে হল যেন আকাশের চাঁদটি সে হাতে পেয়েছে । আনিকার কথা শুনে বার বার ইচ্ছে হয়েছে আনিকাদের ঢাকার ঠিকানা জানতে , কিন্তু সাহসে কুলায়নি ।
এখন তাই সে পেয়ে গেল ।
একি সাথে আনিকার ভাইয়ের সাথে কথা বলে নাইম আরো বেশী মুগ্ধ হল ।
০০০০০ চলবে ইনশা আল্লাহ্ ।
বিষয়: বিবিধ
১৮৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন