আই লাইক ই্ওর রিংটোন
লিখেছেন লিখেছেন নাসিমা খান ২৭ জুন, ২০১৩, ০৪:২৮:১৬ বিকাল
মাঝরাতে টেলিফোনটা বেজে উঠলো। রিসিভ করলাম,।ও পাশ থেকে নিশ্বাসের শব্দ পেলাম ,কোনো সাড়া পেলাম না।হ্যালো হ্যালো করে রিসিভার রেখে দিলাম ।এর পর আবার্ ও দুবার বাজলো ,তারপর থেমে গেল । সকালে উঠে সেল ফোনে মেসেজ পেলাম, ডোন্ট ডিস্টার্ব ফিল, আই লাইক ইওর রিং টোন।প্রচন্ড কৌতুহল নিয়ে বাড়ি থেকে বাইরে গেলাম।কারন আমর বউ আমকে খুব ভালোবাসে ,তার বিশ্বাসে ঘুন পোকা লাগাতে চাই না ।ওই নম্বারে ফোন দিতে অসাধারন একটি মিষ্টি কন্ঠ উপহার দিলো অসাধরন একটা মিষ্টি হাসি,। শুনিনি ,কখনও শুনিনি কারো কণ্ঠে অমন মিষ্টি হাসি!কোন ভনিতা না করে বললো ,-আমাকে চিনবেন না ,আমি খুব সাধারন একজন মানুষ ।আমাকে কখনও দেখেননি।আপনার রিং টোন আমার খুব ।
ভালো লেগেছে । সে বললো,- আমি একটু ব্যস্ত আছি, রান্না করছি ।।ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দিলাম।
সারাদিন একধরনের মুগ্ধতা আমকে আচ্ছন্ন করে রাখলো। অফিসের কোন কাজই আমার দারা হলো না ,সেই মিষ্টি হাসি আমাকে ব্যাকুল করে তুললো ।মাগরিবের নামাজ শেষে আর নিজেকে সংযত রাখতে পারলাম না,ফোন দিলাম,আবারও সেই মিষ্টি হাসি, এত সাবলিলো তার বাচন ভংগি, যেন যুগযুগ ধরে তাকে চিনি,পরিচয় জানতে চাইলে বললো,- আমি আপনার ফেসবুকের একজন ফ্রেন্ড,। আমি একাধিক মেয়ে আইডির নাম বললাম, সে বললো আমি ওদের কেউ না, আমি২০১২ এর ১৭ অক্টোবর আইডি খুলেছি ।আপনাকে আমার ভালো লেগেছে, আমি ভুলে গেলাম আমি তিন কন্যার জনক,ভুলে গেলাম ঘরে আমার সুন্দরী স্ত্রী ,সামাজিক স্থান, আমার পার্টিগত অবস্থান ।তার একটু খানি মিষ্টি হাসি আমকে দিশাহারা করে তুললো ।প্রতিদিনের নিয়ম হলো ভংগ ,পাঁচটার বাড়ি ফেরা হলো রাত দশটায়,নানা অজুহাতে মিটিং সভায় যেতে অনিহা প্রকাশ করলাম ।কথা বলতে বলতে একদিন তার পরিচয় পেলাম , সত্যি সে সাধারন সাদামাটা একজন নারী ।দেখতে সুশ্রী নয় ,কিন্তু তার দৈহিক কাঠামো ,কথা বলার সাচ্ছন্দতা ,হাসির শব্দ ,লেখনির তীক্ষতা আমাকে একটা ঘোরের ভিতর রেখে দিল ।আমার বয়স হয়েছে ,স্ত্রীর সান্নিধ্যে যে সুখ পা্য়নি ,শরীরের যে চাহিদা কখন্ও তীব্রতর হয়নি , অনন্যার একটুখানি হাসি আমাকে কল্পনাতেও সে সুখ দিয়ে গেল । আমার ভিতর তাকে পাবার তীব্র আকাঙ্খা জাগলো ,মনে হতে লাগলো যে কোন কিছুর বিনিময়ে তাকে আমার চা্য় ।আমি মরিয়া হয়ে উঠলাম ।খুলনা থেকে সিলেট অনেক দুর, অনন্যা সিলেটি মহিলা ,আমার প্রিয় শাহাজালাল পীরের মাজার ষেখানে উচু নিচু টিলা আর সবুজ সবুজ চা বাগান । টিকিট কেটে ফেললাম ,
কিন্তু অনন্যার ঘোর আপত্তি, এখন না, ডিসেম্বরে আমাদের সম্মেলন ,আমি ঢাকা আসছি ।টিকিট ফেরত দিলাম। দিন মোটে কাটে না, ২৫ ডিসেম্বর আমাদের দেখা হবে , ডিসেম্বরের ২৩ তারিখ থেকে হঠাৎ করে ওর ফোন বন্দ পেলাম .ওর এক বন্ধুর থেকে জানতে পারলাম ও অসুস্থ ।তিনদিন পর অনন্যা কথা বললো ,এই তিনদিন ছিলো তিনশ বছরের সমান !বললো , ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ আমার আসার কথা ছিলো কিন্তু আসতে পারিনি ,তুমি আমাকে মাপ করে দা্ও ,,বললাম ,-তোমার সুস্থতা সবার আগে, বেঁচে থাকলে দেখা হবে ।
২৫ জানুয়ারি ২০১২ ,সে্ প্রত্যাশিত দিনটি এলো ,আমরা ঢাকা পৌছালাম ।পাঁচ ফিট তিন ইঞ্চি লম্বা ,শ্যামলা মেযে সে, সাদামাটা একজন মানুষ, তবু কি এক আকষর্ন আমাকে সম্মোহন করে রাখলো ।সমস্যা হলো আমাদের থাকা নিয়ে ! সিদ্ধান্ত নিলাম হোটেলে উঠবো কিন্তু কি পরিচয়ে ?অনন্যা জানালো স্বামি স্ত্রীর পরিচযে উঠতে তার আপত্তি না্ ।কিন্তু তার ভয় পত্রিকায় ফ্লাস হলে লজ্জার পরিসীম থাকবে না ।বললাম,- যা হবার হবে,চলো উঠে পড়ি ।আমার এতোদিনের অহংকারের কথা গেলাম ভুলে ।একটি বদ্ধ ঘরে অনন্যাকে পেয়ে কি করবো ভেবে উঠতে পারছি না ।্ওকে আমার কলিজার ভিতর ঢুকিয়ে নেবার জন্য ঝাপিয়ে পড়লাম ওর বুকে ।আচমকা ঝটকা মেরে আমাকে ছিটকে ফেললো দুরে ,আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে, বললাম –প্লিজ ,অনন্যা !
অনন্যা বললো ,অসম্ভব , আমি মরে গেলেও এ পারবো না্।
আমি চা্ইলে অনন্যাকে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে খেয়ে ফেলতে পারতাম ।কিন্তু আকুল হয়ে আমি বললাম, -এত দুর কেন ছুটে এলাম আমি? অনন্যা পায়ের কাছে বসে বললো, আমকে ক্ষমা করো ,
আমার রাগে দুঃখে চোখে পানি এসে গেছে ।এ আমার পরাজয় ,একটি সাধারন মেয়ের কাছে ?
অনন্যা রুম থেকে বের হয়ে গেল ! আমি হতবিহ্বল হয়ে বসে রইলাম।।
বিষয়: সাহিত্য
২৫১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন