কাবিন(ছোট গল্প)
লিখেছেন লিখেছেন নাসিমা খান ২৬ জুন, ২০১৩, ০৭:৩৪:১৭ সন্ধ্যা
ফরিদ বাড়ির বাইরে দাড়িয়ে আছে,বাড়িতে ঢুকার সাহস তার নাই, বাড়িতে হুলুস্থল কান্ড চলছে ।তার মায়ের পুরোন রোগটা আবার বেড়েছে ।বাবার সাখে কাবিনের টাকা নিয়ে গোন্ডগোল।তার বয়স চব্বিশ বছর ,সে বোঝা অবধি শুণে আসছে এই এক বিষয়ে মার দৃড় পদক্ষেপ,কিন্তু ফল কখনও পেতে দেখনি সে ।ফরিদ মাঝে মাঝে বলে ,-মা তোমাদের কবিনের টাকা কত ?
-কেন ,তা প্রশ্ন করছিস কেন ?
-টাকাটা আমি দিতাম !
মা অবাক হয়ে তাকিয়ে বলেন,-মর জালা, তোকে আবার এর ভিতর নাক গলাতে কে বলেছে ?
-বাবার তো সামর্থ নেই,
-বিয়ের সখ হই বুড়ো বেটার ,কবিনের টাকার কথা মনে থাকে না?
ফরিদ পাশ কাটিয়ে চলে যাই,মার কথার যুক্তি আছে ,কাবিনের টাকা পরিশোধ না করে বেৌ এর পানি গ্রহন করা ঠিক না ।শরিয়তের বিধান লঙ্ঘন করে স্ত্রী গ্রহন করা ঠিক না ।ফরিদ তার বাবাকে চুপি চুপি ডেকে বললো,-বাবা ,তুমি টাকাটা আমার কাছ থেকে নিয়ে ,মা কে দিয়ে দাও,কত টাকা বাবা ?
-অনেক বাপজান
-কত ?
-দশ হাজার
-সে তো বেশি নয় ,বাবা .
-আমি তো বেকার
-তো?
ফরিদের বাবা তাজ মিযা ছেলের টাকা নিতে ভয় পান,তিনি ছিলেন লজিং মাষ্টার, বিয়ে করেছিলেন শশুরের টাকায়,কাবিনের টাকা দিতে পারেন নি ্ স্ত্রী প্রথমদিকে রসিকতা করতো, কিন্তু যত দিন যেতে লাগলো ততই তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠলেন ,কাবিনের টাকা তার চাই চাইই ।তাজ মিয়া শিক্ষাঅফিসের ছাপোষা কর্মোচারী ছিলেন, চার সন্তারে সংসার চালিয়ে দশ হাজার টাকা আজ অবধি জোগাড় করতে পারেননি ।শাড়ি কাপড় গয়না যা কিছু দেন না কেন, তা আর কাবিনের টাকা হয়ে ,ওঠেনি, তিনি শুনেছেন, বাসর ঘরে হয় পরিশোধ করতে , না হয় ক্ষমা চেয়ে নিতে হয়,তার স্ত্রী ঝানুবিবি নাছোড় বান্দা ,বাকি রইল, শোধ তোমার করতেই হবে । তিনি কাবিনের টাকা না জোগাড় করে বিয়ে করে যে ভুল করেছেন, তা ভালোই বুঝতে পারেন ।
ছেলেমেয়ের সামনে লজ্জা পেতে হচ্ছে ।ছেলেটার বিয়ে দিয়েছেন ,কাবিনের টাকা নিযে ভিষন গোন্ডগোল, ঝানুবিবির পৈতৃক গয়না বিক্রি করে পরিশোধ করতে হযেছে, বউমা যতই বলে,-না মা লাগবে না, ঝানু বিবি ততই বিগড়ে যান,এটা নারীর একটি পবিত্র পাওনা,এখানে অবহেলা করলে চলবে না ।
মেয়েদুটোর বিয়ে দিয়েছেন ,নাম মাত্র কাবিনে ,বাকি আছে ছোট ছেলটা, তিনি বদ্ধপরিকর তাকেও তেমন বিয়ে দিবেন,শুরু হলো এই নিয়ে দন্ধ, ছোটছেলে রাজু গাজিপুর কলেজে চাকুরী করছে, সে একলাখ টাকার কম কাবিন দিয়ে বিয়ে করবেনা, সমাজে তার একটা প্রেস্টিজ আছে ।তাছাড়া এই যুগে পাঁচলাখের কম কাবিন হয় নাকি, লোকের কাছে,মুখ দেখানোটা তো মুশকিল হবে ।
ঝানুবিবি বলে দিয়েছেন, ওকে বাধেঁা আপত্তি নাই, তবে নগদ পরিশোধ করতে হবে ।
তাজমিয়ার মত রাজুও বিপদে, নীলা বলে দিয়েছে কম পক্ষে দুলাখ কাবিন না হলে ,আমার বাবা মা এ বিয়েতে নাই !
ঝানু বিবির এক কথা ,-নাইতো নাই, মেয়ের অভাব নাকি, ধান ছড়ালে কত কাক আসবে !
ণীলা শুনে মাইন্ড করেছে,- তোমার মা আমাকে কাক বললো ?
-না, যাস্ট উদাহরন,
-রাখো তোমার উদাহরন,উনি নিজেই একটা দাড়কাক!
মার সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য কে সহ্য করে ?
রাজু নিরবে চলে এসেছে ।বাড়ির সামনে এস দেখে ফরিদ দাড়িয়ে আছে ।
বললো ,-ভাইয়া কি হয়েছে ?
-কাবিন,
-ও, চলো বাড়ি যাই
-আচ্ছা বাবাকে কিভাবে বাঁচানো যায় ,বলতো ?
দুইভাইয়ে পরামর্শ করে ঠিক করলো, বাবাকে তারা একটা টুকটুকি কিনে দেবে ।কিছুদিন চালিয়ে দশ হাজার টাকা উপার্জন করুক ,
তাজমিয়া অবাক হলো এই বুড়ো বয়সে টুকটুকি চালাবো ?
-বাবা,প্রতিদিন এই এক কথা কার সহ্য হয় ?
সকালে তিন বাপবেটা বের হচ্ছে দেখে ঝানুবিবি অবাক হয়ে বললেন,-বিষয়টা কি ?
ফরিদ বললো ,-পরে বলি মা,
সারাদিন তাজমিয়া ফিরছেন না,চিন্তিতো হলিন ঝানুবিবি।বিকালে কর্মক্লান্ত মানুষটি ক্লান্ত পাযে ঘরে ঢুকলিন,তিনি গম্ভির,ঝানুবিবি অবাক হলেন, তাজমিয়াকে আজ কেমন পুরুষ মনে হচ্ছে ।কিছুটা ভয়ও পেলেন তিনি,কিছুই প্রশ্ন করলেন না,শুয়ামাত্র ঘুমিয়ে গেলেন তিনি, ঝানুবিবি ক্লান্ত মানুশটাকে দেখলেন, ফরিদের ঘরে গিয়ে প্রশ্ন করলেন,-তোদের বাবাকে কোথায় নেয়ে গিয়েছিলি ?
ফরিদ কোন জবাবদিলো না ,বললো,-বাবাকে প্রশ্ন করো ,বাবা তো সবই বলেন,
-জানি না বাপু কি সব হচেছ!লোকটার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না !
পরপর সাতদিন তাজমিয়া কঠিন পরিশ্রম করে নয় হাজার টাকা উপার্জন করলেন,তিনি আর পারছেন না,হাত পা ভেংগে আসছে তার ।ঝানুবিবিও গম্ভীর, কাবিনের কথা মনেও আনছেন না ।রাতে তাজমিয়ার খুব জর এলো, তিনি ভুল বকা শুরু করলেন, ঝানুবিবি কান্না শুরু করলেন ,,ডাক্তার ডাকা হলো,ওষুধ দিয়ে বলে গেলেন ঠিক হয়ে যাবেন,
সকালে দুই ছেলে পাশে বসলো, দেখলো জর কমেছে ।বললো,-বাবা, এক হাজার টাকা তুমি ধার নাও,সুস্থ হয়ে শোধ দিও,পথ তো তোমার জানা রইলো ।
-তীরে এসে তরী ডুববে ?
-বাবা ,তোমার ঘড়িটা বিক্রি করো .
-এটা তোর মার খুব প্রিয় ।
ছেলেরা ফিরে যাই, তাজমিয়া এক হাজার টাকার কথা ভাবতে থাকে ।
ঝানুবিবি স্বামীর পাশে বসেন, অনুনয়ের সাথে বলেন,-ওগো তোমার কি হয়েছে ?
তাজাময়া মুখ খোলেন না ,পাশ ফিরে ঘুমান ,মনভেংগে যাই ঝানু বিবির,কি হলো তার স্বামীর?
তাজমিয়ার একটা কাশ্মিরি শাল ছিলো, ওটা বিক্রি করে এক হাজার টাকার জোগাড় হয় ।মহা খুশি তাজমিয়া ।
তিান গুনতে থাকেন,তার বিবাহ বার্ষিকির দিন তারিখ ।ওদিকে রাজুর সাথে নীলার মনোমালিন্য চলছে ।
এনিয়েও তাজমিয়ার টেনশন হচ্ছে ,নীলা ঝানুকে দাড়কাক বলেছে বিষয়টা হাল্কাভাবে নিলে চলবে না ,ঝানুবিবি বিষয়টা শুনেছে ,তাতে তার মাথা ব্যাথা নেই,তার এক কথা ওই পেতনির মেয়েকে এ বাড়ির বউ করা চলবেন না ।
নীলার মা রেগে আগুন, মেয়েকে কেটে নদীতে ফেলবেন,তবু ওই শাকচুন্নির ঘরে মেয়েদিবেন না ।
দুপক্ষেরে বাককিতন্ডা যখন চরম, নীলা আর রাজু মাত্র পঞ্চাশ হাজার এক টাকা দেনমোহরে বিয়ে সেরে ফেললো কোটে,নগদ পরিশোধ ।তাজমিয়া যে জোগসাজগে ছিলেন,একথা কেউ বুঝতে পারলো না ।
রাজু বউ নিয়ে বাড়িতে হাজির ।ঝানুবিবি একটা কথা বললেন,-দেনমোহর পরিশোধ হলে ঘরে ,যাও না হলে এখান থেকে বিদায় হও,
তাজমিয়া খুশি হলেন,
তিনি মেয়েদেরকে আসতে বললেন,তার আর দু:খ রইল না, সে তার পঁচাত্তর বছর বয়সে পঞ্চান্নতম বিবাহ বার্ষিকিতে ঝানুবিবিকে দেনমোহর পরিশোধ করবেন ।
সকাল থেকে সাজসাজরব,বাড়িতে উৎসব হচ্ছে রাজুর বিয়ে উপলক্ষে,সন্ধা এলো, রাত্র হলো,আকাশে চাঁদ তার কিরণ দিলো ,ঝলমল করে চাদণীর আলো পৃথিবীতে আলোকিত করছে,বাড়িতে খুশির ঢল নেমেছে ।
আস্তে আস্তে আলমারী খুললো তাজমিয়া,তার বুক ছ্যাত করে উঠলো কোথায় তার দেনমোহরের টাকা ? শূন্য পড়ে আছে তার ছোট্টমানিব্যাগটা ।
তাজ মিয়া বুকে হাত দিয়ে বসে পড়লো, ঝানুবিবি পাশে এসে দাড়লো,-ওগো কি হলো তোমার ?
-আমাকে পানি দাও ফরিদের মা ,আমার বুক জলে গেল !
ঝানুবিবি চিৎকার করে ছেলেমেয়েদের ডাকলো,-তোরা এদিকে আয়, তোর বাবা কেমন করছে !
ছুটে এলো ছেলেমেয়েরা ্তাজমিয়া হাপাচ্ছেন ,-ফরিদ, রাজু আমার টাকা ?
-বাবা তোমার দেনমোহরের টাকা ?
তাজমিয়া আ আ করলেন, তিনি বলতে পারছেন না ,
ঝানুবিবি বুঝতে পারলেন ,আলমারিতে মনের ভুলে রাখা টাকা ভেবে যে টাকা তিনি অন্যত্র সরিয়ে রেখেছেন ,সেই টাকাই । তিনি বললেন,-ওগো দশ হাজার এক টাকা আমি সরিয়ে রেখেছি, তুমি শান্ত হও,
তাজমিয়া ফিস ফিস করে বললেন, ওটা তোমার দেন মোহরের টাকা, আমি চললাম ।
তাজ মিয়া তার দেন মোহরের- টাকা পরিশোধ করে এ ধরাদাম থেকে বিদায় নিলেন ।।।।।
বিষয়: সাহিত্য
২৮৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন