শিশির ধোঁয়া(ছোট গল্প)

লিখেছেন লিখেছেন নাসিমা খান ২৪ জুন, ২০১৩, ০৮:৩৬:০৫ সকাল



বাবা মার একমাত্র মেয়ে ধোয়া,ফর্সা রঙের মেয়েটি মাবাবার চোখের মনি,আত্মীয়সজনের কাছে খুবই প্রিয় ।এস এস সি পাশ করে যশোর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো ।প্রতিদিন খুলনা থেকে যাতায়াত করা কটিন বিধায় যশোরেই থাকার ব্যবস্থা করা হলো । বাবা মাকে ছেড়ে কষ্ট হলো তার ,তেমনি ওর বাবা মার ও ।প্রজাপতির আর ফড়িং এর মত তার চলা ফেরা, সারাক্ষণ হাসতেই থাকে, পৃথিবীতে ওর যেন শুধু হাসার জন্য জন্ম হয়েছে ।বাবা ব্যাংকার মা স্কুল টিচার ।ভীষণ সুখি পরিবার, সেখানে হঠাৎ করে হাল্কা মেঘ জমলো ধোঁয়া বাড়ি ছাড়বার পর ,বাড়িটা ভীষন শূণ্য মনে হতে লাগলো ধোয়ার বাবা রফিক সাহেবের,মা সাহেরা খাতুনের আচল ভিজে যেতে লাগলো ,তবু লেখাপড়ার খাতিরে এ যন্ত্রনা সহ্য করলেন ওরা ।প্রতিদিন কতবার যে ফোনালাপ হয় তার ইয়ত্তা নেই ।মাগো তোর চুল বেধেছিস ?কাপড়গুলো ধোপাকে দিস মনে করে, বুয়াকে বলিস থালা বাটিতে যেন জীবানু না থাকে, মাগো রাস্তা পার হবার সময় খেয়াল করিস ,সাবধানে থাকিস ।ধোয়া হাসে আর বলে ,-মা তোমার মেয়ে বড় হয়েছে তো!

তবু মা বাবার মন শুধু অলুক্ষনে ডাক ডাকে, ঘুম হয় না স্বপ্ন দেখার ভয়ে ,যদি কোন খারাপ স্বপ্ন দেখে ফেলে ।ওখানেই পড়ে ঝিনাইদহ থেকে আসা শিশির, লম্বা চওড়া ছেলেটা একটু দুরন্ত বেশি ,ছুটে বেড়ানো তার স্বভাব ।চোখের মাঝে সব সময় খেলা করে যেন ধ্বংশের লিলা ,ভালোবাসার গভীর সমুদ্র তার চোখে,বুকে প্রেমের অন্তহীন তৃষ্ণা, একে না ভালোবাসে থাকা সম্ভব নয়, তাইতো দেখেই মনে হয় এ বাধার নয়, ধরার নয়, শুধুই গতির ।ভেংগেচুরে কেবলই ছুটবে ।

প্রথম দর্শনেই দুজনে অবাক বিশ্বয়ে তাকিয়ে রইল দুজনের দিকে, এতো তাকিয়ে থাকা নয়, যেন সব কিছু হারানোর দৃষ্টি ,হিসাবের বাইরে ঘটে গেল দ্রুত সবকিছু,ভালোবাসার এক অদৃশ্য সেতু মূহুর্তে তৈরি হলো দুটো হৃদয় বেদিতে, সেখানে অসম্ভব রকম সুন্দর সব ফুল ফুটলো ,বিকোশিত হলো চারিদিক,পুরো কলেজ জুড়ে রব উঠলো শিশির ধোয়া অলিখিত প্রেম সম্রাট সম্রাজ্ঞী ,মুকুট ছিলো দুরন্তপনার,ভালোবাসার মহলে ডিজিটাল এ যুগে দুটো সফ্টওয়ারের নাম শিশির ধোয়া ।

প্রভাষক আমীন সাহেবের কানে গেল বিষয়টি ,তিনি বেরসিক নন,ডেকে পাঠালেন, বললেন,-বাবা ও মাগো ,তোমরা সফল জুটি হবে নি:সন্দেহে, তবু ভার্সিটির সম্মান রক্ষার্থে তোমাদের জন্য আমার উপদেশ হলো,এখানের পড়ার পরিবেশে বিঘ্ন ঘটানো যাবে না । আমরা অভিভাবক ডাকতে অভ্যস্ত নয় ,

মাথা নিচু করে ওরা বেরিয়ে এলো ,ধোয়া বললো ,আমরা ভার্সিটির বাইরে গিয়ে কথা বলবো ।

শিশির মানতে চাই না । বললো,-চলো আমরা পালিয়ে বিয়ে করি ।

ধোয়া বললো ,-তা ঠিক হবে না

-তবে?

-আমরা এখান থেকে আগে পাশ করে বের হই ,তারপর বাবা মাকে বললে আপত্তি জানাবেন না ,

শিশির বললো,-তোমাকে হারাতে পারবো না ,তোমার সাথে কথা না বলে আমি একদিন ও বাঁচবো না,

-ফোন তো রইল

-আমি মুখোমুখি এভাবে বসে কথা বলতে চাই ।

কোন নিষেধ ওদের কাছে নিষেধ মনে হলো না ,হাজারো পরামর্শ হারিয়ে গেল ওদের প্রেমের অশান্ত স্রোতের কাছে ,সাহেরা খাতুন কে ডাকা হলো ,শিশিরের বাবা মাকে ডাকা হলো ,অভিভাবকদের সামনে চ্যানসেলর সাহেব ওদের ধিক্কার দিলেন, শিশির বললো ,-ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না

ছেলের ধৃষ্টতায় শিশিরের বাবা কষ্ট পেলেন ।ছেলেকে ভার্সিটি থেকে তিনি নিয়ে যেতে বাধ্য হলেন ,ধোয়াকে বোঝানো হলো ,ধোয়া কিছুই বললো না কেবল ওর চোখ থেকে ঝরে পড়লো দুফোটা পানি ।সাহেরা খাতুন বললেন,-মারে সংসারে এমন ছোট খাটো অনেক বিরহ আসে ,নদীর মত সহনীয় হতে হবে, ভুলে যাও ওকে,সাগরের জলে কত রুই কাতলা ভেষে আসবে, তখন পেছনের এইসব ছোটছোট ভুলের জন্য কেবল লজ্জাই পাবে ।সাহেরা খাতুন মেয়েকে আবার ও বললেন ,-শরীরে প্রতি খেয়াল রেখো,সাবধানে থেকো, আমি তোমোকে খুবভালোবাসি, শিশিরের মত না, আমার অন্য রকম ভালোবাসাকে আকড়ে ধরে থাকলে ,মাগো তুমি পথচ্যুত হবে না ।ধোয়া ডুকরে ডুকরে কাদলো ,বললো ,-মা ,আমাকে মাপ করে দাও আমি তোমার অবাধ্য হবো না ।

প্রথম সেমিস্টার শেষ, ছুটি পেল ধোয়া, মা এলেন নিতে । এ দুমাসে একবারও শিশির আসেনি ,ফোন করেনি,অন্তরে ক্ষয়ে গেছে ধোয়া,মনে মনে কষ্ট পেয়েছে ,তবু তার মার সাথে শপথের যন্ত্রনা ভুলেনি, সে বুঝেছে, মার অন্যরকম ভালোবাসা তাকে কেবল বাইরে থেকে বাঁধতে পেরেছে, ভেতরে সে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা শিশিরের ভালোবাসার কাছে ।মিশিরের জীবনটা তার জন্য নষ্ট হলো এরকম বোধও তাকে ভীষণভাবে পেষন করেছে !

সাহেরা খাতুন মেয়ের মলিন মুখের কায়া দেখে বুঝলেন ,মেয়েকে তিনি ,অসাধ্য সাধনের শপথ করিয়েছেন,বাসে উঠবেন তারা ঠিক সেই মূহুর্তে শিশির একটা মোটর সাইকেল এনে ব্রেক করলো ,সাহেরা খাতুন অবাক হলেন, বললেন,-ধোয়া ,তুমি আমার অবাধ্য হয়ে ওর সাথে দেখা করেছো ?

-না, মা, তবে আজ একবার ওর সাথে কথা বলতে দাও ,মা !

সাহেরা খাতুনের সামনে দুহাত জড়ো করে দাড়ালো শিশির।বললো,-মা, আমি ওকে নিয়ে একটু ঘুরতে চাই ,আর কখনও আমি ওর সাতে দেখা করবো না !

-কোথায় যেতে চাও ?

-আমি ওকে আমার বাইকে করে খুলনাতে পেৌছে দিয়ে আসবো

-কি বলছো তুমি?

-হা,একটাদিন আমাকে নিতে দিন ,আমি দেশের বাইরে চলে যাচ্ছি ,পরশু াামার ফ্লাইট

শিশির পকেট থেকে টেনে বের করলো তার ভিষা পাসপোর্ট ।সাহেরা খাতুন তাকালেন মেয়ের দিকে,সেখানে দেখতে পেলেন আকুল আবেদন ,

কিভেবে তিনি বাসে উঠলেন,মেয়েকে বললেন,-যাও !

বাইকে চড়ে ওরা ছুটলো খুলনার দিকে ।

এতো চলা নই যেন ভেসে যাওয়া, খাচার পাখি নিশ্বাস নিচ্ছে বাতাসে,শিশির বললো,-তুমি অপেক্ষা করবে, বলো করবে তো ? আমি ঠিক ফিরে আসবো ।

শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ধোয়া ,সে অনন্তকালের জন্য অপেক্ষা করবে ।

ফুলতলা ছাড়িয়েছে তারা ,সামনে দিয়ে ছুটে আসছে দানব ট্রাক, ব্রেক চাপতে পারলো না শিশির,যন্ত্র দানব মূহুর্তে পিশে ফেললো ওদের ্দুটো মনের কি মর্মান্তিক মিলন!

রাস্তার মাঝে অপরিচিত দুটো মানূষ স্পটডেট হয়ে পড়ে আছে, পিছনে এসে দাড়ালো সাহেরা খাতুনের বাসটি, সাহেরা খাতুন ভীড় ঠেলে এগিয়ে আসছেন ,দুটো লাশ সনাক্ত করবার জন্য ।

।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।সত্য ঘটনা, ইষৎ বিকৃত।।।।।।।।।

নাসিমা খান

গ্রাম+ডাকঘর=যুগিহাটী

উপজেলা=রূপসা

জেলা=খুলনা

মোবাইল০১৭২৭৪৭২৫৩৭

ইমেইল;

বিষয়: বিবিধ

১৬৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File