অরণ্যে বসবাস
লিখেছেন লিখেছেন নাসিমা খান ১৮ জুন, ২০১৩, ১০:৪৯:৩৪ রাত
নাসিমা খান
পিচের রাস্তাটা চলে গেছে সুদুর শহরের দিকে, রাস্তার একপাশ দিয়ে মানুষের ঘরবাড়ি, অন্যপাশে ধানক্ষেত মিশে গেছে দিগন্ত বরাবর । আকাশটা ঝুকে পড়েছে
সবুজ ধানক্ষেতের উপর ।
মাঠের দিকে মুখ করে বসে আছে জুলি আর নিলয়, বয়সের দোষে তার
াও দুষ্ট, তাদেরও ইচ্ছে করে আকাশের মাঝে পাখা মেলে উড়তে, কিন্তু গ্রামের মোল্লামাতবরদের ছি; ছি: ওদের বিব্রত করে ।
ওরা দুটো ভিন্ন পরিবারে বড় হলেও মেলামেশার ক্ষেত্রে ওদের কেউ বাধা দেয়নি ।
কিন্তু গ্রামের লোক এ বেহায়াপনা কতক্ষণ বরদাস্ত করবে ? সে প্রসংগেই কথা হচ্ছিল ওদের , জুলির বয়স বাইশ, নিলয়েরও তাই ,নিলয় বললো,-জুলি, চল এবার বিয়ে করি
-নিলয়, তুই বেকার, আমরা কি খাবো ? আমাদের দুটো পরিবারের তো তাড়া নেই ।
-কিন্তু গ্রামবাসির তো তাড়া আছে । করিম মাতবর বলেছে গ্রামটাকি পতিতালয় হয়ে গেল ?
-বলুক, আমরাতো অত খারাপ নয় ।-
-কতটা ভালো ?
জুলি হেসে ফেললো, তারা হাত ধরাধরি করে নদীর পাশে বসে দেখেছে সন্ধ্যা রবীর আর ভৈরবের কোলাকুলি, টুপ করে কিভাবে ডুব দেয় পানির বুকে স্রোতের তুয়াক্কা না করে অত বড় উত্তপ্ত সূর্য , কতদিন কেটে যায় তাদের হাদিস পার্কের খোলা উদ্যানে, কিংবা প্রেক্ষাগৃহে, লোকচক্ষুর সম্মুখে এসব ঘটেছে, ভেবেছে দু পরিবারের যখন সম্মতি রয়েছে, তখন তাদের মিলনে ভিলেনের আবির্ভাব হতে পারে না ।কিন্তু
তাই হলো । করিম মাতবরের কানাকানি শেষ পর্যন্ত জানাজানি থেকে হানাহানির পর্যায়ে চলে গেল । জুলির বাবাকে যা না তাই বলে অপমান করলো । মেয়ের বাবা বলে কথা । ঘরে এসে বললো,-জুলি, মা আমার নিলয় কবে কখন চাকুরী করবে সে ভরসায় থেকে গ্রামে আর কলংক রটিয়ে লাভ নেই , আমি তোমার জন্য অন্য ছেলে দেখবো ।
জুলি আতকে উটেছে, "এ কি ভাবে হয়, !!! যৌবনের শুরু থেকে যে স্বপ্ন সে লালিত করেছে, তাতে বিনাঘে বজ্রপাতের মত ভয়ংকর থাবা আসবে, এত সে স্বপ্নেও ভাবে না ।
নিলয় খবর শুনে ছুটে এলো । -জুলি একি শুনছি ?
-বাবা বলছে,
-তুমি বলছো না ?
-কি করবো আমি?
-চলো বিয়ে করি ,তারপর যেভাবে আছি সেভাবে থাকবো, কিছু একটা করলে,
তাদের কথা মত দু পরিবার ওদের বিয়ে দিয়ে দিলো । গ্রামের অশান্তি ঘুচলো, কিন্তু নিলয়ের চাকুরি জোটে না , ক্লান্ত হয়ে পড়ে সে ,শৈষ পর্যন্ত জুলি নার্সিং ভর্তি হয়, তিনবছর ধরে যশোর মেডিকেলে সে নার্সিং কোর্স করে । তখনও নিলয় বেকার ।
একদিন জুলি খবর নিয়ে আসে সে লন্ডনে নার্সিং এর উপর একটা কোর্স করার সুযোগ পেয়েছে । কিন্তু টাকা কোথায় ? নিলয তার বাবাকে বলে তাদের দুবিঘা ধানের জমি বিক্রি করে টাকা দিয়ে হুলি কে লন্ডনে পাঠালো ।
জুরি কৃতজ্ঞতায় কেদে ফেললো,-নিলয় তুমি এত ভালোবাসো ?
নিলয় কেবল ছলছল চোখে তাকালো ।সে কিছু বলতে পারলো না ।
একবছর কাটলো জুরি একটি দোকানে সোপকিপারের চাকুরী করে নিলয়দের আবারও জমি কিনে দিলো । সে কথা দিলো-নিলয় ,আমি োতোমাকে নিয়ে আসবো ।
নিলয় বাংলালিংকের অফিসে ভালো একটা চাকুরি পেল । কিন্তু জুলি ছাড়া তার জীবন চলে না । সে প্রতিক্ষায় থাকে কবে যাবে সে জুলির কাছে ।
হঠাৎ করে নিলয় লন্ডনে যাবার এক লাইন পেয়ে গেল, সে জুলিকে না জানিয়ে পৌছে গেল লন্ডনে ,একদিন পৌছে গেল জুলির বাসাতে । দরজায় নক করতে দরজা খুলে দিলো যে সে জুলি নয় । এক ইন্ডিয়ান যুবক ,
সে প্রশ্ন করলো,-মে কেন আই হেল্প ?
-আই ওয়ান্ট জুলি।
-আর ইউ বাংলাদেশী?
-ইয়েস,
যুবক জুলিকে ডেকে দিলো । জুলির পরনে নাইট ড্রেস, প্রচুর নেশা করেছে সে । ঢুলু চোখে তাকালো সে ।জড়িত কণ্ঠে বললো-হু আর ইউ ?
নিলয় অবাক হলো, কিছুটা সময় নিলো বিষয়টা বুঝতে, তার খুব কান্না আসছিল, তার পা কাপছিলো ,সে বসে পড়লো-এক গ্লাস পানি হবে জুলি ?
জুলি সম্বিত ফিরে পেল । সে বিস্ফোড়িত চোখে তাকালো । চোখের সামনে সে দরজাটা বন্দ করে দিলো ।
নিলয় উঠে দাড়ালো, তার পানির তৃষ্ণায় বুক োেফটে যাচ্ছে, সে দৌড়ে পৌছাতে চাইলো তার অনাগত গন্তব্যের দিকে, তার সেই ছোট্ট গ্রামে ।
বিষয়: সাহিত্য
১৫৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন