ছোট গল্প ভালোবাসার অবুঝ কথন
লিখেছেন লিখেছেন নাসিমা খান ০৮ জুন, ২০১৩, ০৭:২৪:২১ সন্ধ্যা
নাসিমা খান
ভদ্রলোক অতিশয় বিনয়ী ,মুখে হাল্কা দাড়িঁ,পাঁচ ফিট ছয় ইঞ্চি লম্বা ,রাজনৈতিকতায় অতিশয় দক্ষ, একনজর দেখেই অনু তাকে গুরু মেনে নিল ।তার নম্র ব্যবহার ,অমায়িক হাসি ভারিক্কি ,চলন বলন শ্রদ্ধা না করে পারা যায় না ।প্রথমে ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তাকে রিং দিলো , ভদ্রলোক সাদরেই গ্রহন করলেন ।অনু হৃদয়ের খুব গভীরে তার জন্য একটা টান অনুভব করলো ,মনে হলো কতযুগ ধরে তাকে সে চেনে, কত না আপন ,একে বন্ধু ভাবতে আপত্তি কোথায় ? হৃদয় যখন বায়না ধরে তখন কাপ্তাই বাধেঁ ও সে বায়নাকে রোধ করা সম্ভব না ।তো হৃদযের টানেই অল্পদিনেই সে তাকে নিজের বলে ভারতে শুরু করলো, আর এ ভাবনা যে একবার ভেবেছে ,সে তো মরেছে, ভিতরে বাইরে সবটাতেই সে পুড়ে পুড়ে খাক হয়েছে ।খুলনা শহরের দক্ষিনে ,একেবারে নোনা পানির বাসিন্দা অনু ,গায়ের বর্ণ পুরোপুরি শ্যামলা না হলেও ,শ্যামলা বলা চলে, দাকোপরে এমন জায়গাতে তার আবাস যেখানে, আজ অবধি বিদ্যুৎ তার পায়ের ধুলি দিতে কার্পন্য করেছে, বাড়ির সামনের বিশাল অবদার রাস্তা, তারপর বিল আর বিল, পাঁচ মাইল হেটে গিয়ে লক্ষিখোলা বাজার ,কোন মতে এস এস সি পাশ করে গ্রাম ছেড়েছিলো অনু,তারপর খুলনা শহরের পাইওনিয়ার কলেজের হোস্টেল । এন্টার পাশ করে সিলেট মেডিকেল কলেজে চলে এসেছিলো সে । বাবার অনেক টাকা ব্যায় করে
তার ডাক্তারি পড়াও শেষ করলো । চাকুরি নিলো সিলেট জেলা শহরের একটা প্রাইভেট ক্লিনিকে ।বাবার ঘোর আপত্তি থাকা সত্তেও সে সিলেট ছাড়তে পারলো না, কারন এ শহরেই সে আছে ।অনুর বাবা ছিলেন কৃষক, মেয়েকে এম বি বি এস পাশ করাতে তার জমিজমা প্রায় শেষের কোঠায় ।স্ত্রী অসুখে পড়াতে তিনি মেয়েকে খুলনাতে চলে আসার জন্য আদেশ করলেন ।অনু তখন ভদ্রলোকের নাম জানলো নওরোজ খান ,কথা বলার জন্য আকুল হলো ,ফোন নং ও পেয়ে গেল ।এভাবেই তার ভালোবাসার যাত্রা শুরু হয়েছিলো ।কথা বলে ফিরে এসেছিলো খুলনাতে ,দেশের দুপ্রান্তে দুজন ,নওরোজ বলেছিলো,-এ আমায কি করলে, ব্যবসাতে মন নেই, পার্টির মিটিং মিস করছি, ঘরের বউকে ভালো লাগছে না, কি জাদু করে পাখি তুমি খুলনাতে উড়াল দিলে ?
অনু খুলনার একটা ক্লিনিকে চাকুরি নিলো ,কিন্তু তার মন পড়ে রইলো ঐ উচু নিচু পাহাড়ি চা বাগানে ঘেরা সবুজ প্রান্তরে ।হায়রে মানুষের মন, কি আছে ঐ নওরোজের ভিতর ,যা তাকে এমন ভাবে আকৃষ্ট করলো, ভালো লাগে না বাবার স্নেহ ,মায়ের আদর, বন্ধুদের প্রেমের আহ্বান ,কি এক অমোঘ টান তাকে এমন করে নি:শ্ব করলো !
হঠৎ করে সিলেটের বি এন পি নেতা ইলিয়াস আলী নিখোজ হলেন, সিলেট তখন উত্তপ্ত, বিশ্বনাথরে থানা ঘেরাও কর্মসূচি চলছে, পুলিশে আর বিশ্বনাথ বাসীদের মধ্যে চলছে ধাওয়া পাল্টাধাওযা,নওরোজ জড়িযে পড়েছে তাতে,ফোন দিলো সে ,ঘরে থাকতে পারছি না ।পুলিশের যন্ত্রনায় যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াছ্ছি ।
অনু বললো,- তুমি ঢাকা এসে থাকো
-না. আমি সিলেট ছাড়তে চাছ্ছি না,
আসো ,আমরা দেখা করি,
নওরোজ আপত্তি জানালো না ।
অনু খুলনা থেকে ঢাকা রওনা দিলো ।
অনুর বুকটা দুরু দুরু করে কাঁপছিলো, এই প্রথম সে তার প্রিয় মানুষটাকে দুচোখ ভরে দেখবে,ভালোবাসার অমিয সুধায সে ভরিযে দিবে তার মুখ, যদিও অনেক সে ভেবেছে ,যার বউ সন্তান রয়েছে তাকে কেন সে এভাবে ভালোবাসলো ।তাদের আদেৌ কি মিলন হবে ? তবে কেন এই ছুটে যাওয়া ,কিসের মোহ তাকে সম্মোহিত করলো ?নওরোজের নির্ভরশীলতা তাকে মুগ্ধ করেছে ,তার সরলতা মিষ্টি হাসি অনুকে পাগল করেছে ,নওরোজের আল্লাহর প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা তাকে বিস্মিত করেছে , ভক্তিতে সে বিনম্র হয়ে ঢেলে দিয়েছে তার বুকের সবটুকু শ্রদ্ধাবোধ ।মানুষের প্রতি মানুষের এইবোধই তাকে প্রেমিকা করেছে ! তাই সে ছুটে চলেছে প্রেয়সিকে একবার দেখার জন্য ।একেই কি বলে ভালোবাসা ?
যার মুখটা কেবল দুর থেকে দেখেছে, শ্লোগানে মুখোর, বক্তৃতার মঞ্চে দেখেছে, রাজ পথে দেখেছে, এবার দেখবে একবারে মুখোমুখি বসে,একেই কি বলে স্বপ্নপূরন ?
অনু জানে না একে কি বলে ?
বাস থেকে নেমে দেখলো সেই মানূষটাকে ।নওরোজ খান ,তার স্বপ্ন পুরুষ ।
অপূর্ব আকষর্ণীয় তার দুটি চোখ ,মধুর তার মিষ্টি হাসি ,কি মোহনীয় তার ব্যক্তিত্ব !অনু মাথা নিচু করে তার সামনে দাড়ালো ।নওরোজ তার হাত বাড়িয়ে দিলো ,অনু তার নরম হাত দিয়ে সে হাত স্পর্শ করলো ।নওরোজ বললো ,-চলো
-কোথায ?
-হোটেলে, তাছাড়া কোথায় থাকবো?
-কিভাবে ?
-যে ভাবে অন্যরা এসে থাকে ?
-অন্যরা মানে ?
-চলো হোটেলে গিয়ে বলি !
হোটের ম্রানেজার ওদের ছবি নিলো ।রুমে ঢুকতেই জড়িয়ে ধরলো নওরোজ ।
-কেমন আছো অনু ?
অনু মাথা ঝাকালো,বললো –জানি না ।
-আমাকে তুমি কত ভালোবাসো?
-এক পৃথিবী সমান .
-আমাদের তো মিলন সম্ভব না ,অনু
-কেন ?
-আমার স্ত্রী সন্তান রয়েছে
-আমরা বন্ধু হয়ে থাকতে পারি না ,খান ?
-পারি
নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে অনু বললো,-এখন চলো, বাইরে কোথাও যেয়ে কথা বলি ,আমার ভয় করছে ,
-তাকি হয অনু ?
-মানে ?
-একবারের জন্য অন্তত তোমাকে চাই,
-আমি তো তোমার রইলাম,
-এইথাকাকে কি থাকা বলে?এত কষ্ট করে এলাম সেই সিলেট থেকে ?
-প্লিজ খান,এভাবে না,
নওরোজ কিছুই শুনতে চাই না, তার সেই মোহনীয় ব্যক্তিত্ব,বিনয়ী ব্যবহার এখন তুলে রেখেছে পশুত্বের গোয়াল ঘরে, সিংহের চোখের ভাষায ।অনুর স্বর্গ দেবতা কোথায় হারালো,এক ঘন্টা পরে একটি বিধস্ত নি:শ্ব মানুষ তার অবসন্ন শরীরটাকে টানতে টানতে বেরিয়ে এলো রাজপথে । অনু হাটছে, সে তার সারাজীবনের সঞ্চিত ছোট্ট একটা ইজ্জত বাক্স রেখে এসেছে ঐ হোটেলেরে বদ্ধ ঘরে ।
মনে মনে বললো ,হে আল্লাহ যে আবেগ মানুষের মনুষত্ব কেড়ে নেয়,যে ভালোবাসা মানুষকে মানুষ রাখে না ,এ জবিনে সেই ভালোবাসার নাম আর কখনও আসতে দিও না, গুড বাই ভালোবাসা ,অনেক ধন্যবাদ তোমায !!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
নাসিমা খান
মোবাইল:01727472537
ফেসবুক ইমেইলে
Rupsha.Khulna
বিষয়: Contest_mother
৫৭৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন