মাটি থেকে নবীর সৃষ্টি তার প্রমাণঃ

লিখেছেন লিখেছেন সকাল বেলার পাখি ১৩ জুন, ২০১৩, ০৭:১০:০৬ সকাল

ক) কুরআন থেকেঃ

আমার নিকট আশ্চর্য লাগে যে বিদআতীরা কেমন করে মহান আল্লাহর দ্ব্যর্থহীন বাণীকে অস্বীকার করে বলে যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়াসাল্লাম) মাটির তৈরী নন, বরং নূরের তৈরী। কারণ মহান আল্লাহ একাধিক স্থানে বলেছেন যে নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম) সৃষ্টিগত দিক থেকে بشر তথা আমাদের মতই একজন মানুষ। যেমনঃ

1. সূরা কাহাফে মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ (হে রাসূল!) ‘আপনি বলে দিন, আমি তো তোমাদেরই মত এক জন মানুষ, আমার নিকট এই মর্মে ওহী করা হয় যে, তোমাদের উপাস্য এক ও একক, অতএব যে নিজ প্রতিপালকের দিদার লাভের আশাবাদী সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ প্রতিপালকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে’। (সূরা আল্ কাহাফঃ ১১০)

2. অন্যত্রে মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘আপনি বলুন আমি আমার প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। একজন মানব, একজন রাসূল বৈ আমি কে? (সূরা বনী ইসরাইল: ৯৩(

3. তিনি আরো বলেনঃ ‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের বড় উপকার করেছেন, যেহেতু তাদেরই মধ্য থেকে একজনকে রাসূল হিসাবে পাঠিয়েছেন যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন, এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান করেন, যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল। (সূরাহ আলে ইমরানঃ ১৬৪(

4. তিনি আরো বলেনঃ তোমাদের নিকট আগমন করেছে, তোমাদেরই মধ্যকার এমন একজন রাসূল, যার কাছে তোমাদের ক্ষতিকর বিষয় অতি কষ্টদায়ক মনে হয়, যিনি হচ্ছেন তোমাদের খুবই হিতাকাঙ্খী, মুমিনদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল, করুনাপরায়ণ। (সূরা তাওবা: ১২৮(

5. তিনি আরো বলেনঃ এ লোকদের জন্যে এটা কী বিস্ময়কর হয়েছে যে, আমি তাদের মধ্য হতে একজনের নিকট অহী প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তুমি লোকদেরকে ভয় প্রদর্শন কর এবং যারা ঈমান এনেছে তাদরকে এই সুসংবাদ দাও যে, তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট (পূর্ণ মর্যাদা) লাভ করবে, কাফেররা বলতে লাগলো যে, এই ব্যক্তি তো নিঃসন্দেহে প্রকাশ্য যাদুকর। (সূরা ইউনুস: ২(

6. তিনি আরো বলেনঃ তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন তাদের নিকট, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত, যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল। (সূরা-আল্ জুমুআহ: ২)

7. আল্লাহ আরো বলেনঃ আমি তোমাদের মধ্য হতে এরূপ রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমাদের নিকট আমার নিদর্শনাবলী পাঠ করে ও তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং তোমাদেরকে গ্রন্থ ও বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়, আর তোমরা যা অবগত ছিলে না তা শিক্ষা দান করেন। (সূরা বাকারা ১৫১(

এখানে মহান আল্লাহ বলেই দিয়েছেন যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম) ঐসব লোকদেরই একজন, তিনি তাদের বাইরের কোন লোক নন। কাজেই ঐসব লোক যদি নূরের তৈরী হন, তাহলে নবী(ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম)ও নূরের তৈরী হবেন, আর যদি তারা নূরের তৈরী না হন তবে তিনিও নূরের তৈরী হবেন না এটাইতো স্বাভাবিক। আসলে বিদআতীরা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ আয়ত্ব করতে এবং এর সঠিক ব্যাখ্যা অনুধাবন করা থেকে চির ব্যর্থ, তাই তারা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে কুরআন ও হাদীছ বিরোধী কথা বলে যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী নন, বরং তিনি নূরের তৈরী। অথচ এভাবে তারা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অধিক সম্মান দিতে গিয়ে আরো তাঁকে খাটো করে দিয়েছে। কারণ নূরের তৈরী ফেরেশতার উপর আল্লাহ মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সালাম)কে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তাদেরকে দিয়ে আদমের সিজদা করিয়ে নিয়েছেন। (দ্রঃসূরা আল বাকারাহ: ৩৪, সূরা আল্ আ’রাফ: ১১) তাহলে কার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হল? নূরের তৈরী ফেরেশতাদের নাকি মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সাল্লাম)এর? অবশ্যই মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সালাম) এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হল। তবে আমরা তর্কের খাতিরে এটা বললেও আমাদের বিশ্বাস, আদম (আলাইহিস্ সালাম) ফেরেশতাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে ছিলেন তাঁর ইলমের মাধ্যমে। আর এটা একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহেই হয়ে ছিল। তিনিই আদমের প্রতি অনুগ্রহ করে ফেরেশতাদের চেয়ে তাকে বেশি ইলম দান করে ছিলেন।

আমি বিশ্বের সকল বিদআতীকে বলতে চাই, এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী ও রাসূল (অনেকে বলেনঃ নবী ও রাসূলদের সর্ব মোট সংখ্যা হলঃ এক লক্ষ চব্বিশ হাজার, মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার। এভাবে বলে থাকেন, এটা প্রমাণ করে তারা ঐমর্মে নবী এর কোন হাদীছ অবগত হন নি। মুসনাদ আহমাদ, ছহীহ ইবনু ইব্বান প্রভৃতিতে নবী ও রাসূলদের সর্ব মোট সংখ্যা একলক্ষ চব্বিশ হাজার বলা হয়েছে, আরো বলা হয়েছে তাদের মধ্যে রাসূলদের সংখ্যা সর্ব মোট ৩১৫ জন দ্রঃ মুসনাদ আহমাদ ৫/১৭৯,হা/২১৫৯২, ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/ প্রভৃতি হাদীছ ছহীহ, সিলসিলাতুল আহাদীছ আছ ছহীহাহ ) এর মধ্যে শুধু নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে নূরের তৈরী হলেন? যদি তাঁকে নূরের তৈরী না বলায় তার মান খাটো করা হয়,তবে বাকী এক লক্ষ তেইশ হাজার নয়শো নিরানব্বই জন নবী রাসূলকে মাটির তৈরী বলে কি তাদের মান খাটো করা হয় না? নাকি তারাও নূরের তৈরী? কৈ কোন বিদআতীকে তো বলতে শুনি না যে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মত বাকী সমস্ত নবী, রাসূলগণও নূরের তৈরী! বরং তারা এমনটি শুধু নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ক্ষেত্রেই বলে থাকে। সুতরাং বাকী সমস্ত নবীকে মাটির তৈরী বলায় যেমন তাদের মান হানী হয় না, তদ্রুপ আমাদের নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কেও মাটির তৈরী বলায় তার মানহানী হবে না। তবে কেন বিষয়টি নিয়ে এত বাড়াবাড়ি?

এমনকি অনেক মূর্খ বিদআতী নবীকে যারা মাটির তৈরী মানুষ বলে তাদের সকলকে কাফের ফাৎওয়া মেরে দেয়! একজন মুসলিমকে কাফের বলা কী এতই সহজ? না, কখনই নয়, বরং এই বিষয়টি অতীব জটিল এবং সুকঠিন। কারণ একজন মুসলিম ব্যক্তিকে কাফির ফাৎওয়া দেওয়ার অর্থই হলঃ সে জীবিত অবস্থায় থাকলে তার সাথে তার স্ত্রীর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। নিজ মুসলিম সন্তান-সন্ততির উপর তার অবিভাবকত্ব চলবে না। সে মৃত্যু বরণ করলে তাকে গোসল দেওয়া যাবে না, কাফন পরানো যাবে না, তার জানাযা ছালাত আদায় করা যাবে না। তার জন্য মাগফেরাতের দুআ করা যাবে না, মুসলিমদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা যাবে না। তার কোন মুসলিম আত্মীয় স্বজন তার মীরাছ পাবে না, বরং তার সমুদয় ধন-সম্পদ সরকারী বায়তুল মালে জমা হয়ে যাবে। পরকালে সে জাহান্নামে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে...প্রভৃতি। আর যদি সে প্রকৃত অর্থে কাফের না হয় তবে কাফের ফাৎওয়া দাতা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপকারী বলে গণ্য হবে ফলে সে সর্বাধিক যালিমে পরিণত হবে। আর তার একমাত্র বাসস্থান হবে জাহান্নাম (দ্রঃ আরাফঃ)। এবং তাকে অন্যায়ভাবে কাফের বলার জন্য নিজেই কাফিরে পরিণত হবে (বুখারী প্রভৃতি)। এ থেকেই প্রতীয়মান হয় বিষয়টি কত জটিল এবং সুকঠিন। এজন্যই বড় বড় ওলামায়েদ্বীন মুসলিম ব্যক্তিকে সহজে কাফের বলেন না,বরং সে ক্ষেত্রে বহু সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন) তাদের এই মূর্খামীদুষ্ট ফাৎওয়া অনুযায়ী সালাফে ছালেহীনের সকলই কাফের গণ্য হবে। কারণ তারা সৃষ্টি গত দিক থেকে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মাটির তৈরী মানুষই মনে করতেন। তাঁরা আদৌ তাঁকে নূরের তৈরী গণ্য করতেন না।

বিষয়: বিবিধ

১৩৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File