তারা তো বেশী কিছু চায় না!!!

লিখেছেন লিখেছেন লিমন ০২ জুন, ২০১৩, ১১:২৭:৫০ সকাল

আফনেই কন ওইখান থেকে এইখান পর্যন্ত ভাড়া কী ১০ টাকা?

ভাড়া ১০ টাকা দেইখাই তো ১০ টাকা দিতাছি।

না, ভাড়া তো ১৫ টাকা।

ভাড়া দশ টাকাই! রাখ্লে রাখ, না রাখলে যা ভাগ্। তোরে ভাড়াই দিমু না।

............................

আম্মাকে নিয়ে ডাক্তার কাছে গিয়েছিলাম। রিক্সা থেকে নেমেই পাশে এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্র আর এক রিক্সাওয়ালার এই শেষ কথোপকথনটুকু শুনলাম।

রিক্সাওয়ালার বয়স খুব বেশী না হলেও অন্তত কলেজ পড়ুয়া ছাত্রটির বয়সের দ্বিগুন হবে নিশ্চয়ই।

প্রতিদিনই ওদের সাথে আমাদের বাকবিতন্ডা হয়- হয় রিক্সাওয়ালার সাথে নয়তো বাসের হেলপারের সাথে! কখনো কখনো তাদের গায়েও হাত তুলতে দ্বিধাবোধ করিনা। আমিও তুলেছিলাম!

কিন্তু আমি বলতে চাই অন্য কিছু।

ওদের ও ভালো লাগে কারো কারো কাছ থেকে একটু সম্মান পেলে। তাই না?

ওদের ও ভালো লাগে কেউ তাদের সাথে হাসিমুখে কথা বললে! তাই না?

ওদের ও ভালো লাগে কেউ তাকে আপনি বলে সম্মোধন করলে! তাই না?

হাসিমুখে, একটু সম্মান দিয়ে আপনি আপনার যৌক্তিকতা ওদের বুঝান। ওরা মানতে বাধ্য! না মানলে তখন মাইরা তক্তা করে ফেলেন সেটা সমস্যা না!

আমার এই ১৪ বছরের পড়াশোনায় আমি অন্তত এইটুকু শিখেছি যে অপরিচিত লোকদেরকে *আপনি* করে সম্মোধন করতে হয়। হোক সে আমার থেকে বয়সে বড় কিংবা ছোট!

এটা এক ধরনের সৈজন্যবোধ। অপরিচিত কেউ আমাকে তুমি করে বললে আমার ও খারাপ লাগে! আমিতো ওনাকে তুমি করে বলার অনুমতি দিই নি, তাহলে কেন বলবে?

ওদের ও খারাপ লাগে। কিন্তু তাঁদের এখন এসব অপমান গায়ে লাগে না। কিংবা গায়ে লাগলেও প্রতিবাদের সাহস পায় না। আর ওদের এই সাহস টা কেড়ে নিয়েছে আপনার পকেটের টাকা!

হ্যাঁ, এটা সত্য যে একজন রিক্সাওয়ালার কিংবা একজন বাস ড্রাইভার কিংবা একজন হেল্পারের সম্মান আমাদের থেকে অনেক কম!

তাদেরকে আপনি বলে সম্মোধন করতে যদি আপনার বিবেকে বাধা খায়, তাহলে অন্তত *তুমি* করে ও তো বলা যায়!

তাই না?

কিন্তু হয় কী?

ঠিক তার উল্টো। বয়সে দ্বিগুন হওয়া সত্তেও একটা কলেজ পড়ুয়া ছাত্র এক মাঝবয়সী লোককে *তুই* বলে সম্মোধন করে!

তবে আমি এটা বলছি না যে ওই পুচকি হেল্পারগুলোকেও আপনি করে বলতে হবে। তবে তাদের উপহাস করে কিছু বলবেন না!

যে শিক্ষা মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে পারে না, সেই শিক্ষার কী প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সেটা বুঝতে পারি না।

আমাদের গ্রামে অনেক রিক্সাওয়ালার সাথে আমার পরিচয় আছে। সম্পর্কে কেউ কেউ আমার দূর সম্পর্কের কাকা, কেউ কেউ মামা, কেউ ভাই।

বছরে যখন দুই-একবার বাড়িতে যাই, দোকানে আড্ডা দিই- তখন তাদের কাছ থেকে যে স্নেহ পাই, যে ভালোবাসা পাই, সেটা এই শহরের অনেক শিক্ষিত আত্মীয়য়ের কাছেও পাই না!

ভালো লাগে, সতি্যই অনেক ভালো লাগে তখন!

এই পেশাটা তো খারাপ না- কিন্তু খুব কস্টকর।

বেশী না, অল্প একটু সম্মান ও কি তাদের দেওয়া যায় না?

বিষয়: বিবিধ

১১২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File