পর্ণোগ্রাফি- প্রযুক্তি- পতিতা- প্রশাসন- আমাদের করণীয়
লিখেছেন লিখেছেন লিমন ০১ জুন, ২০১৩, ১১:০৭:৫৫ সকাল
২০১৩ সাল। আধুনিকতার চরম পর্যায়ে আমরা। আজ থেকে ১০ বছর আগে আমরা যা ভাবতেই পারতাম না, প্রযুক্তির ঈর্ষণীয় উন্নতির ফলে আজ আমরা তা অনায়াসে করতে পারছি।
আজ এমন একটা বিষয় নিয়ে লিখতে বসেছি, যেটা নিয়ে হয়তো অনেকে ভেবেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি- অন্তত আমাদের এই বাংলাদেশে।
প্রযুক্তি আজ কোন পর্যায়ে সেটা বলে বোঝানোর দরকার নেই। তবুও বাস্তব জীবন থেকে ছোট্ট একটা উদাহরণ দিয়েই আজ্কের লেখাটা শুরু করবো-
"ক্লাস ৮ এ পড়াকালীন অবস্থায়, আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে একটা গানের সিডি ক্যাসেট ধার নিই। ডিস্কটার প্যকেট নস্ট হয়ে গেছে বিধায়, শুধু ডিস্কটাই হাতে করে নিয়ে আসি। আর আমার হাতে এই রকম একটা খালি ডিস্ক দেখে অনেকেই ভেবেছে এটা পর্ণোগ্রাফি- যার কারনে বাসায় আনার পর আমার গুরুজন কর্তৃক এটা চেক ও হয়েছে।
কিন্তু আজ?
আজ যদি আমি সতি্য সতি্য পর্ণোগ্রাফির সিডি ক্যাসেট নিয়েও ঘুরি, কেউ কিচ্ছু বলবে না। কারণ সবাই ভাববে এটা নিশ্চয়ই কম্পিউটারের কোন সফ্টওয়্যারের ডিস্ক!"
ইন্টারনেটের কল্যানে পর্ণোগ্রাফি ভিডিও গুলো ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা মামুলি ব্যপার মাত্র। আর মোবাইল টেকনোলজি ব্যাপারটাকে আরো সহজ করে দিয়েছে। একটা মেমোরি কার্ড দোকানে দিয়ে দোকানদারকে চোখ টিপ দিলেই আপনার মেমোরি কার্ডে পর্ণোগ্রাফি চলে আসবে।
যে সমস্ত সাইটে পোর্ণোগ্রাফি পাওয়া যায়, সেই সব সাইটগুলোতে মূল্যবান তেমন কোন তথ্য নেই, যেটা দ্বারা আমি কিংবা আপনি উপকৃত হবো।(ইউটিউবের মতো কয়েকটা ব্যতিক্রমি সাইট ছাড়া)
একটি ইসলাম বিরোধি ভিডিওচিত্র কয়েক মাস আগে ইউটিউবে প্রাকাশ হবার পর বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী এক দিনের মধে্যই ইউটিউব বাংলাদেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিসন্দেহে এটা প্রশংসার দাবীদার। এখন কথা হচ্ছে ইউটিউবে আমরা সকলে কিন্তু ওই একটা ভিডিও দেখার জন্য ভিজিট করতাম না, কিংবা পর্ণোগ্রাফি দেখার জনে্যও না। অনেক প্রয়োজন হত!
আর ওই ভিডিও টা দেখলে আমাদের ধর্মীও অনুভুতিতে আঘাত লাগ্তো।
কিন্তু আজ আমরা যখন এডাল্ট সাইটগুলো থেকে পর্ণোগ্রাফি ডাউনলোড করে কিংবা দোকানদারকে চোখের ইশারা দিয়ে মোবাইলে পর্ণোগ্রাফি দেখি তখন কিন্তু আমাদের ঈমান ই নস্ট হয়ে যায়! তাই না?
আর এই পর্ণোগ্রাফি শুধু দেখার মধে্যই সীমাবদ্ধ থাকে না। নৈতিকতার অনেক অবক্ষয় ও ঘটিয়ে থাকে, সেটা কিভাবে আপনারা ভালো করেই জানেন। তাই উল্লেখ করলাম না। এছাড়াও অনেক মানসিক ও শারিরীক রোগের ও উৎপত্তি হয়ে থাকে!
আরেকটা উদাহরন দিচ্ছি
আমি হলফ করে বলতে পারি- যারা এই লেখাটি পড়ছেন, "প্রভার" কথা বললে তাদের চোখে কোন দৃশ্য ভেসে উঠবে সেটা আমি কিংবা আপনি- আমরা সবাই জানি, কেননা সেই দৃশ্য আমরা সবাই দেখেছি। প্রযুক্তির জন্যই আজ এটা সম্ভব হয়েছে।
এডাল্ট সাইটগুলোতে যখন আপনি কিংবা আমি ভিজিট করি তখন একটা সতর্কমূলক বার্তা দেয়- ১৮ বছর হয়েছে কিনা এই সম্পর্কে। এখন একটা দুধের বাচ্চাও যদি yes লেখায় ক্লিক করে সেও এডাল্ট কন্টেন্ট্গুলো দেখতে পারবে।
চটি সাইটগুলো নিয়ে তেমনকিছু বলার নেই। এই সম্পর্কে আমি আগেও একটা পোস্ট দিয়েছি।
আর ফেসবুকের মতো একটা সোসাল মিডিয়াতে যে হারে এডাল্ট পেজের সংখ্যা বাড়ছে তাতে করে আমাদের যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে- এটা না বলে বলা উচিত "কিশোর সমাজ" ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কেননা যুবক হওয়ার আগেই তারা প্রাপ্ত বয়স্কদের সব হাতের নাগালে পেয়ে যাচ্ছে!!!
যার পরিণতি হচ্ছে- কিছু হোটেলে ভালো খদ্দের জোটে!!!
এখন কথা হচ্ছে সরকারের একটা হুকুমে যদি ইউটিউবের মতো একটা সাইট বন্ধ হয়ে যেতে পারে, তাহলে সরকারের আরেকটা হুকুমে কি এই সমস্ত পর্ণোগ্রাফি কিংবা চটি সাইটগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে না? আমি আগেই বলেছি, এই সমস্ত সাইট থেকে আপনি কিংবা আমি নেগেটিভ ইফেক্ট ছাড়া পজিটিভ কোন ইফেক্ট পাবো বলে মনে হয় না। তাই আমাদের দেশে এগুলো চালু থাকার দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না। পশ্চিমা দেশগুলোতে এগুলো অবশ্যই দরকারি! কেননা ওগুলো ফ্রী সেক্সের দেশ! কিন্তু আমাদের বাংলাদেশ তেমন নয়।
আর মেমোরিকার্ডে চোখের ইশারায় যে পর্ণোগ্রাফি লোড হওয়া বন্ধ করতে আমাদের "সৎ পুলিশ প্রশাসনই" যথেস্ট। আমি শুধু এখানে "পুলিশ প্রশাসন" বলে উল্লেখ করলেই হতো। কিন্তু তার আগে "সৎ" বিশেষনটা যুক্ত করা অনিবার্য হয়ে পড়েছে।
কারণটা বলছি....
আমাদের এই ঢাকা শহরে রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা পতিতাদের কখন অধিকহারে গ্রেফতার করা হয় জানেন?
বৃহস্পতিবার।
কারণ এরপর শুক্র ও শনিবার দুই দিন সরকারি ছুটি থাকে বিধায় কোর্ট বন্ধ থাকে!!! অর্থাৎ তাদের এই দুই দিন থানাতেই থাকতে হয়!
বাকীটা বুঝে নেওয়া আপনার দায়িত্ব।
প্রযুক্তির উন্নতির ফলেই এসব কাজ সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু এটাও সতি্য প্রযুক্তির এতটা উন্নতি না হলে আমি এই পর্নোগ্রাফি নিয়ে আপনার পড়ার জন্য লেখাটা লিখতেও পারতাম না।
এখন আমরা যে পর্যায়ে আছি- তাতে লেখালেখির মাধ্যমে এসব রোধ করা যাবে বলে আমার মনে হয় না- যদি সরকারের সঠিক হস্তক্ষেপ না পাই।
আমাদের সমাজে নাস্তিকের বিচারে দাবিতে সমাবেশ হয়, ইসলাম বিরোধিদের কঠোর হস্তে দমন করার জন্য সরকার সদা সচেতন।
অথচ যা আমাদের ঈমান নস্ট করে, কবিরা গুনাহ করতে সহোযোগিতা করে সেগুলো বন্ধে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। উনারা কেন বোঝেন না, বড় বড় অপরাধ গুলো দমন করতে হলে আগে ছোট ছোট অপরাধ গুলো নির্মুল করতে হবে।
আর এখন আমরা প্রযুক্তির যুগে। আমাদের জীবনের প্রায় ৯৯ ভাগ কাজই প্রযুক্তির সাহায্য প্রত্যাশী। আমাদের জীবনে প্রযুক্তির প্রভাব খুব দ্রুত পড়ে। এর ভালো দিকগুলো যেমন আমরা খুব দ্রুত আয়ত্ত করতে পারি, তেমনি খারপ দিক গুলোও।
তাই খারাপ দিকগুলো রোধ করার সময় এখনই নয় কী?
সরকার কোন পদক্ষেপ না নিলে, অন্তত আমাদের একটু বেশী সচেতন হয়ে এগুলো রোধ করতে হবে। আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে, ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভেবে!!
বিষয়: বিবিধ
১৭৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন