আয়লানঃ মাটিতে যার জন্ম জলে যার মৃত্যু আর অন্তরীক্ষে বাসস্থান
লিখেছেন লিখেছেন আমিন ইউসুফ ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:৩৯:১৬ রাত
আ তে আকিব। আমার বড় ছেলে। আ তে আরিয়ান আর আদিব ও। আমার ছোট ছোট বাকি দুই ছেলে। বাংলা হোক বা ইংরেজি, কিংবা আরবি- সব ভাষাতেই আ উচ্চারণের বর্ণ সর্বপ্রথম দিকেই থাকে। কারণ, আ মানেই সারল্য, আ মানেই সহজাত। তাই বাচ্চা যখন কিছু বুঝে না, তখন শুধু আ আ করে। ওটাই তার প্রথম বচন।
এখন আ তে আয়লান ও হয়। আয়লান কুর্দি। বাবা আব্দুল্লাহ কুর্দি। জন্মস্থান কোবাণে, সিরিয়া।
আর দশটা শিশুর মত আয়লানও সরল। শুদ্ধ ও সুন্দরের প্রতীক। কিন্তু পৃথিবীটা আর শুদ্ধ আর সুন্দরের জায়গা নয়। এখানে বিচরন করে হিংস্র প্রাণী, সৃষ্টির নিকৃষ্ট জাতিঃ মানুষ। সেই মানুষ যে শুধু ক্ষমতার লোভে তার নিজ দেশের দেড় লক্ষ মানুষকে বোমা মেরে শেষ করে দেয়। আর তাদের কে উদ্ধারের লোভ দেখিয়ে আক্রমন করে বসে আরও বড় বড় হায়েনা। পশ্চিমি হায়েনা, উত্তরী হায়েনা। হায়েনাদের হাত থেকে বাঁচতে আয়লান রা দৌড়ায়। আর ক্ষত বিক্ষত দেহে দৌড়ায় মানবতা। পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় পাহাড়, রুখে দিতে চায় বিপদসংকুল জনপদ- তবু দৌড়ানো থামেনা। একটু নিরাপদ থাকার, জান নিয়ে একটু বেঁচে থাকার আকুলতায়।
পাহাড় যা পারে নি, সমুদ্রও তা পারবেনা এমন তো কথা নেই। স্থলের মানুষের প্রতি স্থলের মানুষেরই এত অত্যাচার তাহলে জলের আর কি দোষ!
তাই শিশু আয়লান জলের তোড়ে ভেসে যায়। বাবার হাত ছেড়ে, মার হাত ছেড়ে দূরে চলে যায় রুদ্রমূর্তি জলের আঘাতে। বাবা একদিকে, মা একদিকে আর ভাই আরেক দিকে।
স্থলের শিশু যখন জলে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিল তখন আসমানের বাসিন্দাদের বুক একটুও কেঁপে উঠেনি।
ছেলে টা পানি গিলছে আর ভাবছে তার মায়ের কথা। মা কোথায়? মা তো কখনো তাকে বিপদে ফেলে পালিয়ে যায় নি। কোথায় আমার বাবা যে আমার সামান্য কষ্টে নিজেকে উজাড় করে ভালবাসা দিয়েছে। ছেলেটা পানি গিলছে, নোনা পানি। পানি নয়, ছেলেটা গিলছে বিষ।
যে বিষ আমরা ছড়িয়ে দিয়েছি দেশ থেকে দেশান্তরে। কোথাও গনতন্ত্রের নামে, তো কোথাও ধর্মের নামে। কোথাও সেকুলারিজমের নামে তো কোথাও অর্থনৈতিক মুক্তির নামে। নাম বদলেছে বারবার কিন্তু বিষ বদলে নি।
মাটির আয়লান আবার মাটিতেই ফিরে এসেছে। উপুড় হয়ে। ঘৃণায়, অপমানে আর অভিযোগে এই প্রথিবীতে সে আর মুখ দেখাতেই রাজি নয়। পৃথিবী হয় তো এই নিস্পাপ চেহারা দর্শনের যোগ্য নয়।
আয়লান মরে গেছে। এমন বহু আয়লানরা মরছে।
ইউরোপ জুড়ে মানুষের ক্ষোভে সরকারগুলো লক্ষ লক্ষ যুদ্ধবিদ্ধস্ত শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার প্রক্রিয়ায় আছে। পত্র পত্রিকায়, রাস্তায়,স্তেডিইয়ামে খেলাচলাকালীন অবস্থায় জনগন সরকারকে চাপ দিচ্ছে তাদের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে। নিজ দেশে তাদেরকে আশ্রয় দিতে। মরতে মরতে আবার মানবতা এই সব মানুষদের হাত ধরে বেঁচে উঠতে চাইছে। যাদের কাছে ধর্ম মুখ্য নয়, জাত গন্য নয়।
আয়লানরা যখন সাগরের নোনা জল গিলছে, তখন হয়তোবা আরবের বড় বড় শেখ আর সম্রাটরা সোনার চেয়ারে বসে আস্ত হরিণের রোস্টে আয়েশে কামড় দিচ্ছেন।হোয়াইট হাউস আর ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটএ যুদ্ধবাজরা নতুন ফন্দি আঁটছেন নতুন করে কোন দেশকে আবার গনতন্ত্রের স্বাদ দেয়া যায়। আর সিলিকন ভ্যালির বিলিনিয়র রা কম্পিউটার সামনে কঠিন কোড নিয়ে ভাবছেন কিভাবে এটার মাধ্যমে আরও লাখো কোটি মানুষের পকেটমারি করে Forbes এর তালিকায় উপরের দিকে থাকা যায়।
আয়লান তুই মরে গেছিস। মরে গিয়ে বেঁচে গেছিস রে বাপ। আমরা যে এসব দেখে দেখে তিলে তিলে মরছি!!
https://www.facebook.com/aminbd21
বিষয়: বিবিধ
১৩১৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অথচ আয়লান'দের সাহায্যে কোন আল্লা, ফেরেস্তা বা আসমানি কুদরত এগিয়ে আসে নি। সাহায্যের হাত প্রসস্ত করেছে ইউরোপের ইহুদী-নাসারা জনতা এবং সরকার। এতেই প্রমান হয় ইসলাম ধর্ম পঁচে গেছে।
১০১ মাহাজাব এবং ফ্যাকড়া, ফ্যাসাদে নিম্মর্জ্জিত ইসলাম ধর্মের দাঙ্গাবাজ মুমিনদের খেলাফতী তান্ডব বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আয়লানদের দুর্দশা লাঘব হবে না। ধন্যবাদ।
আয়লানদের দুর্ভোগের জন্য আপনাদের মত হিংসা ব্যবসায়ীদের কম নয় কিন্তু।
হুমম!! অন্যদিকে শরিয়া শাসিত সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, আমিরাত, দুবাই নাকডেকে ঘুমায়। তাছাড়া, ইরাক-সিরিয়ায় এতবড় ইসলামী খলিফা রাস্ট্র থেকে খোদ মুসলিমরাই পালাচ্ছে কেন?
নাকি সব ইহুদী-নাসার ষড়যন্ত্র! মুমিন গেলমানরা কিছুই বুঝে না!!!
আর পানি যে ইউরোপ, আমেরিকা বিরোধী বিষবাস্প ছড়িয়ে দেয়ার মিশনে নেমেছে, তা ভেবে দেখেছেন কি??
আর আপানি যে ইউরোপ, আমেরিকা বিরোধী বিষবাস্প ছড়িয়ে দেয়ার মিশনে নেমেছে, তা ভেবে দেখেছেন কি??
মন্তব্য করতে লগইন করুন