এ ভাল সে মন্দ নয়, শেখান এটা ভাল সেটা মন্দ
লিখেছেন লিখেছেন আমিন ইউসুফ ২৫ মে, ২০১৪, ০৭:৩৩:০৫ সন্ধ্যা
জন্মের সাথে সাথেই একটা শিশু কিছু মৌলিক অধিকারপ্রাপ্ত হয়। তবে অধিকারের তাগাদায় নয়, আল্লাহ্ পাক পিতামাতার অন্তরে অনন্ত স্নেহের এহেন সাগর প্লাবিত করে দেন যে তারা সন্তানের জন্য নিজের অস্তিত্বের কথাও ভুলে যেতে দ্বিধা করেন না। এটা প্রাকৃতিক, এটা চিরায়ত, এটা শাশ্বত।
অতি ক্ষুদ্রাকায়, সম্পূর্ণ পরনির্ভরশীল একটা শিশু তার পরিবারের মধ্যে আদরে ভালবাসায় বড় হতে থাকে। পিতামাতা তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে, তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য প্রানান্ত চেষ্টা করতে থাকে। শিশু স্কুলে যায়। বাইরের পৃথিবীর সাথে পরিচিত হয়। দুনিয়ার রঙ তার শিশুমনে প্রভাব ফেলতে থাকে।
সব মা-বাবাই চান তার সন্তান ভাল মানুষ হোক। লেখাপড়া করুক। আদব কায়দা শিখুক। কিন্তু কয়টা ছেলে তা হতে পারে! কউ হয় আবার কেউ হয় না।
এই না হওয়ার পিছনে মা বাবার দায় কম থাকেনা। শিশুমন কাদামাটির মত। তাকে আপনি যে রূপ দান করবেন তা সে আকারেই প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই শিশু অবস্থাতেই তার সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আর পিতামাতার চেয়ে বড় শিক্ষক একজন শিশুর কাছে আর কেউ হতে পারেনা।
আমি এই লেখাটা লিখছি আমার অভিজ্ঞতা থেকে। অভিজ্ঞতালব্ধ উপলব্ধি থেকে।
পরিবার যত বড় হয়, সমস্যা তত প্রকট হয়। একান্নবর্তী হোক বা ছোট পরিবার, কখনো সন্তানের সাথে তা শেয়ার করবেন না। অনেককেই দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার মধ্যে সন্তানকে সামনে নিয়ে আসে। সন্তানকে নিজের পক্ষাবলম্বন করতে উদ্বুদ্ধ করে। এটা করবেন না। অনেকেই ভাবছেন এর ফলে সন্তানের মধ্যে পিতামাতার ব্যাপারে মন্দ ধারনা গড়ে উঠবে তাই এর থেকে বিরত থাকবে। ব্যাপারটা কিন্তু শুধু তা নয়, মন্দ ধারনা তো গড়ে উঠবেই, পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধার ঘাটতিও দেখা দিবে, কিন্তু তার চেয়েও বড় হল আপনি তাকে বিচার বিশ্লেশন না করে কারো পক্ষাবলম্বন করতে শিক্ষা দিলেন।
এটা ভুল। এবং এই ভুলটা অনেকেই করে থাকেন, প্রায়শই। কেউ ইচ্ছে করে বা কেউ অনিচ্ছায়।
এই ধরনের আরেকটা উদাহরন দেই। মাদেরকেই এই ভুলটা বেশী করতে দেখি- ছেলেমেয়েদেরকে শেখান অমুক চাচা ভাল, অমুক চাচি খারাপ। কিংবা এই মামা ভাল তো সেই খালু খারাপ।
এ ভাল, সে মন্দ।
সন্তানের কাছে মা-বাবার কথা অমোঘ সত্য মনে হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারাও মানুষ। তাদের বিচার ও বিশ্লেষণ সব সময় সঠিক হবে এমন কথা নেই। ফলে কি হয়, পিতামাতার মুখে সর্বক্ষেত্রে অমুকের প্রশংসা শুনতে শুনতে তার সম্পর্কে একটা অন্ধ ইতিবাচক ধারনা জন্ম নেয়। অনুরূপভাবে অন্ধ একটা নেতিবাচক ধারনা জন্ম নেয় যার নিন্দা জ্ঞাপন করা হয় তার প্রতি। সন্তান তখন তার নিজের বিচার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। সে তার মাবাবার দৃষ্টিকোন থেকে সবকিছু দেখতে থাকে।
কে ভাল কে মন্দ সেটা নয়, আপনি তাকে শেখান কী ভাল আর কী মন্দ । তাকে বুঝান ভাল জিনিসটা যার মধ্যে দেখবে সেই ভাল লোক। সে মামা হোক, বা চাচা। আর এই মন্দকাজগুলো যাকে করতে দেখবে সেই মন্দ লোক। সে যেই হোক না কেন।
সন্তানের বিবেককে জাগ্রত করতে দিন। তাকে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে শেখান। মনে রাখবেন আমি বা আপনি আমরা কেউই চিরদিন থাকবনা। আমরা যখন থাকবনা তখন যেন সে নিজেই নিজের ভাল মন্দ বুঝতে পারে।
এই ধরণের বহু বিষয় আছে যা এখন এখানে লিখে শেষ করা যাবেনা। অনেক পিতামাতাকেই দেখি, সন্তানের ভুলের জন্য তকদির বা অন্য কারো ভুমিকার কথা ভেবে দুঃখলাভ করতে কিন্তু বেশিরভাগক্ষেত্রে তার জন্য কিন্তু এই পিতামাতারাই দায়ী।
বিষয়: বিবিধ
১৮৩৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন