মুসলমানদের ভয়াবহ সঙ্কট উত্তরণে যা করণীয়...
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২৭ নভেম্বর, ২০১৯, ০৩:৪৮:৫৪ দুপুর
পরম করুণাময় আল্লাহ্ সুবহানুতাআলা বিশ্ব নিখিলে জ্ঞান প্রজ্ঞাসহ বিশাল নেয়ামতরাশি দান করেছেন তাঁর সৃষ্টির সেরা আশরাফুল মাখলুকাতের শান্তিপূর্ণ জীবন জিন্দেগীর জন্য। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় সৃষ্টির সেরা মানবকূল সেই দয়াময় স্রষ্টার আইনকানুনকে না মেনে দ্বিধাহীনচিত্তে অবারিতভাবে অপকর্মে লিপ্ত। এই লাগামহীন কুকর্ম ও অপশাসনের জিম্মি আজ শুধুমাত্র মুসলিম শিশু ও নরনারী। জুলুম নির্যাতনের ভয়াবহ পরিণতির স্বীকার আজ গোটা পৃথিবীর দিক নির্দেশনা বিহীন অসহায় মুসলমান। এরূপ শ্বাসরুদ্ধকর দমবন্ধ পরিবেশ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে বের করা বর্তমান সময়ের মুখ্য দাবী।
আল্লাহ্র অফুরান দয়া ও অপার রহমতের বারিধারার সৌন্দর্যে সিক্ত হতে চাইলে এবং তাঁর অনিঃশেষ করুণার চিরন্তন নির্মলতা ও কমনীয় রূপের আলোয় দুনো জগতে উদ্ভাসিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকলে আমাদের করণীয় হল-
• সারা মুসলিম জাহানের মানুষকে নিজের দেহের সমতুল্য জ্ঞানে অনুধাবন করা যেমনটি ইসলাম ধর্মে নির্দেশিত আছে। এটা আজ কাগজ সর্বস্ব বাণী, এই বাণীকে বাস্তবে প্রাণপ্রাচুর্য ঢেলে জীবন্ত করতে হবে।
• ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থ ও অস্থায়ী ভঙ্গুর ক্ষমতার মোহকে পরিহার করে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য সীসে ঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্য গড়তে হবে। আর এর একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ শুধুমাত্র মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টির নিমিত্তে অসহায় মানুষদের জন্য আমরণ কাজ করে যাওয়া। খেয়াল রাখতে হবে, এই ঐক্যের দুর্গপ্রাচীর যেন স্বার্থান্বেষী মহলের কোনপ্রকার চাতুরীপূর্ণ লোভে ও প্রলোভনে তছনছ হয়ে না যায়। বিশ্বাস ও হৃদ্যতার মজবুত গাঁথুনির উপর ঐক্যের ভিত্তি নির্মাণ চূড়ান্ত করতে হবে।
• ঐক্যের ভিত্তিকে মজবুত করতে ও মুসলিম বিশ্বে বিরাজমান সঙ্কট সমাধানের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে সমমনা মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানগণের নিবিড় বৈঠক বাঞ্ছনীয়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মূল সমস্যাগুলো চিহ্নিতকরণ এবং সেসব সমাধানের পথ উত্তরণে ত্বরিত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যাতে দ্রুততর সময়ে সুসম্পন্ন করা সম্ভব হয়।
• এক্ষেত্রে বিরাজমান চরম সঙ্কটময় সমস্যা উত্তরণের পাশাপাশি সুদূরপ্রসারী কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে। সমস্যার ধরণ, প্রকটতা, ব্যাপকতা ও গুরুত্ব অনুযায়ী স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী স্তরে ভাগ করতে হবে এবং সেই মোতাবেক ফলপ্রসূ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রত্যেকটি পদক্ষেপের ফলাফল বা পরিণতি অনুসারে পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারণ করতে হবে।
• যত কঠিন এবং কষ্টকর হোক না কেন ক্রমান্বয়ে তা ধাপে ধাপে ভিন্ন মত ও পথের নেতাদের সাথে আলোচনা ও বৈঠক চলমান রাখতে হবে। যাতে বৃহত্তর মুসলিম উম্মাহর উপর বর্বরোচিত নির্যাতনের বিষয়গুলো বিবেচনা করে দুরত্ব কমিয়ে আনা সম্ভবপর হয়।
• ইসলামের দুশমনেরা নতুন নতুন ধর্মীয় ও জাতিগত বিভক্তিতে সর্বদা তৎপর। এদের উদ্দেশ্য হল এক গ্রুপকে আরেক গ্রুপের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া। মুসলমানদের ঐক্যকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা। তাই বিভক্তির মূল সূত্র ও উৎসগুলো চিহ্নিত করে যথোপযুক্ত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মুসলমানদের মধ্যে পারস্পারিক সহৃদয়তা, সৌহার্দ্যতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে সুসম্পর্ক বিনষ্টকারীগণ নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য কোন অবস্থাতেই সুযোগ গ্রহণ করতে না পারে।
• তবে সর্বক্ষেত্রে মানুষের জন্য মহান স্রষ্টার যে বিধিবিধান তা পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণরূপে অনুসরণ করা। সেইসাথে আল্লাহ্র প্রিয় হাবীব (সাঃ) এর কোন সুন্নত পরিপন্থী কাজ কোন অবস্থাতেই গ্রহণ না করা। মতানৈক্য ও বিভেদ নিরসনে সকল প্রকার মতামতকে সম্মানপ্রদর্শনপূর্বক উপযুক্ত এবং গ্রহণযোগ্য অকাট্য দলিলসহ তত্ত্ব ও উপাত্ত উপস্থাপন করতে হবে। নিজের মতামতই সঠিক এই মানসিকতা পরিহার করতে হবে। ভিন্ন মত বা পথ এবং ভিন্ন যুক্তি বা পরামর্শ থাকতেই পারে তবে সেটা হতে হবে সফলতা এবং কল্যাণময় দৃষ্টিভঙ্গীর আঙ্গিক থেকে। বক্র বা মন্দ চিন্তার বশবর্তী হয়ে নয়। যা ঐক্যকে টুকরো টুকরো করে বড় অর্জন থেকে ধ্বংসের প্রান্তসীমায় নিয়ে যায়। তাই এসব বিষয়কে সর্বাবস্থায় আন্তরিকভাবে পরিহার করতে হবে।
আল কুরআনে আল্লাহ্ পাক এসব মতবিরোধ নিরসনে বলেন-
অতঃপর তোমাদের মধ্যে যদি কোন বিষয়ে মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়, তাহলে তা ফয়সালার ভার ন্যস্ত করো আল্লাহ্তাআলা ও তাঁর রাসূলের উপর। (৪;৫৯)
• তাই আল্লাহ্র বিধান অনুযায়ী উত্থাপিত বিবাদমান বিতর্কিত, অকল্যাণকর, অনুচিত ও অযৌক্তিক বিষয়গুলো শান্তিপূর্ণভাবে নিরসন করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে পারস্পারিক সহমর্মিতা ও সম্প্রীতি সর্বাবস্থায় বজায় থাকে। এরূপ পরিবেশে ইসলামের বিজ্ঞ পণ্ডিত ও শ্রদ্ধাভাজন মনিষী ইমাম মালিক তাঁর হৃদয়গ্রাহী অনুভূতি তুলে ধরে বলেন-
• আমি একজন রক্ত মাংসে গড়া মানুষ। তাই আমি সঠিকও হতে পারি, আবার ভুলও করতে পারি। আমার প্রতিটি মতামতকে যাচাই করার মাপকাঠি হল কুরআন এবং সুন্নাহ। ততটুকুই গ্রহণ করুণ যেটুকু কুরআন এবং সুন্নাহর অনুসারী, যা কুরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী তা সর্বতোভাবে পরিহার করুণ।
• ইসলামী জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ছাড়া সময়োপযোগী ব্যাপক ও বিচক্ষণ গণজাগরণ সম্ভব নয়। তাই সর্বক্ষেত্রে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি চালু রাখতে হবে। পাশাপাশি আদর্শিক উত্তম জীবনের পথ ও পাথেয় বিষয়ক মহামূল্যবান বিষয়গুলোকে বিস্তৃত পরিসরে গুরুত্বের সাথে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। সেইসাথে সর্বাত্মকভাবে সর্বসাধারণদের মাঝে এর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
• একজন আদর্শ মা পরিবারের শক্তিশালী স্তম্ভ বিবেচনায় রেখে প্রত্যেকটি শিশুর নৈতিক ও আদর্শিক শিক্ষার উত্তম পরিবেশ প্রতিটি গৃহে সুনিশ্চিত করতে হবে। আদর্শ মানুষ গড়ে তুলতে প্রয়োজন সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষাকে বেগবান করা। মনে রাখতে হবে, উত্তম গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ ছাড়া কল্যাণধর্মী কাজ আশা করা বোকামিতুল্য বৈ আর কিছু নয়।
• ইসলাম বিষয়ক যেকোন ধরণের বিভ্রান্তিমূলক অপ্প্রচার নিরসনে যথাযথভাবে যথাসময়ে সোচ্চার হতে হবে। বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে শক্তিশালী গণমাধ্যমের কার্যক্রম সক্রিয়ভাবে সচল রাখতে হবে।
• যেকোন ধরণের নির্যাতন, জুলুমবাজি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অপশাসনের বিরুদ্ধে সঠিক সময়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সমস্বরে উচ্চকিত হতে হবে।
• দিকনির্দেশনাকারীদের সর্বাত্মক আকাঙ্ক্ষা থাকবে ঐক্যমত্য বজায় রাখা। যে চিন্তা ও নীতিমালা মানুষের কল্যাণে নিবেদিত সেটাই আল্লাহ্র পছন্দনীয় পথ। যার সুরভিত প্রভাব ইসলামী আচার আচরণকে সরলতায় রাঙিয়ে তোলে এবং আল্লাহ্ ও তাঁর প্রিয় হাবীবের প্রতি মুসলিমদের মনের মণিকোঠায় সতেজ খাঁটি ঈমানের বীজ বপন করে। যার অহর্নিশ দীপ্তি ও জৌলুষ সবাইকে আলোড়িত ও মুগ্ধ করে। এভাবেই সৎ তেজস্বী চিন্তা চেতনা ও বলিষ্ঠ আপোষহীন মানসিকতা যেকোন কঠিন উদ্দ্যেশ্যকে সহজ করে দেয়।
• দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্র প্রধানগণ, ইসলামিক স্কলার, যুবসমাজ, ধর্মীয় নেতাসহ সর্বস্তরের বুদ্ধিজীবিগণকে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করে জনগণের কল্যাণমূলক কাজে সম্পৃক্ত রেখে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।
• সঠিক ইতিহাস আমাদের প্রজন্মের কাছে তুলে ধরে তার নির্যাস ব্যাখ্যা করা। এরূপ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, ধর্মীয় বহুমুখী মতাদর্শিক দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। যারা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য নোংরা মিথ্যা ইতিহাস তৈরি করে মারাত্মক সাংঘর্ষিক পরিবেশ সৃষ্টি করে তাদের বিপরীতে শক্তিশালী একটি কাফেলাকে দায়িত্বে রাখতে হবে এসব বানোয়াট ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কার্যক্রম মোকাবিলা করার জন্য।
• যেকোন দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে প্রয়োজন দৃঢ় প্রত্যয়পূর্ণ প্রতিজ্ঞা, অটল অবিচল হিম্মত ও সাহস। আর এসব লক্ষ্য অর্জনে সর্বাগ্রে দরকার আল্লাহ্র নির্দেশ ও ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা ও চেতনা। তাই মানবিক ও নৈতিক গুণাবলী বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ এবং আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত রাখা।
• ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির পরিবেশ নিশ্চিত করে বাস্তবভিত্তিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যোগ্যতর মানুষ তৈরি করা। যারা মানুষের হৃদয়ে জাগাতে পারবে জানমাল কোরবানির অসীম প্রেরণাদায়ক প্রাণশক্তি।
একটি চিত্র স্বচ্ছ ও দৃশ্যমান যে, বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের ভয়াবহ সঙ্কটের মূল কারণ তারা মুসলমান এবং তাদের ধর্ম ইসলাম। দৃশ্যতঃ ইসলাম বিরোধী দুশমনেরা ইসলামকে ভয় পায়। কেননা ইসলাম ধর্ম এমন একটি ধর্ম যা জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা প্রদান করে। তাই তারা বিভিন্ন কূটকৌশল, মিথ্যা ষড়যন্ত্র, ক্ষমতা ও বিলাসী জীবন যাপনে লোভাতূর একটি চতুর গোষ্ঠীকে মুসলমানদেরকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার জন্য মোক্ষম হাতিয়ার হিসাবে বেছে নিয়েছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, পৃথিবীতে খুব কম দেশ আছে যেখানে মুসলমানরা প্রতিনিয়ত নিগৃহীত, লাঞ্ছিত ও অপমানিত হচ্ছে না।
এভাবেই ইসলামের চির দুশমনেরা ঐতিহ্যবাহী ইসলামী বিশ্বসভ্যতার মতাদর্শিক ময়দানকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করতে চায়। আর এ বিষয়ে তাদের মধ্যে কোন মতপার্থক্য নেই। এই সহজ বিষয়টি হৃদয়াঙ্গম করতঃ যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাঝেই মুসলিম উম্মাহর দুনো জগতের কল্যাণ নিহিত।
বিষয়: বিবিধ
১১৯৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন