বীরের জাতি-ভারতের ক্রীতদাসী!
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১৩ অক্টোবর, ২০১৯, ০৭:৩২:০৫ সন্ধ্যা
স্বপ্নের শুকনো পাতাগুলো আজ বিষণ্ণ বেদনায় উড়ে যায় ঊর্ধ্বাকাশে। দূরে বহুদূরে। সাগরের ফেনিল স্রোতে মিশে যায় সুখের ঝরনারাশি। প্রশান্তির নিদ্রার রাতি হয়েছে প্রচণ্ড দমকা ঝড়ো হাওয়া। সারা দেহমনে ভয়ঙ্কর ভীতির অস্থিরতা। শান্তিপ্রিয় বুকের মাঝে উত্তাল সাগরের ঢেউ। প্রতিদিন ফেসবুক, খবরের পাতায় এবং ব্লগে বাস্তব জীবনের যেসব লোমহর্ষক ঘটনা ও যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা ভুক্তভোগীরা ছবিসহ শেয়ার করছে তা দেখে এবং পড়ে লজ্জায় অপমানে মাথা হেট হয়ে আসে। বীর বাঙালী কীভাবে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে ভারতের ক্রীতদাসী?
দেশের ষোল কোটি মানুষকে ত্রাসের মাধ্যমে জিম্মি করে ভারত বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ হরিলুট করছে। লুটেরা মিডিয়ার মাধ্যমে ইচ্ছেমত ভ্রান্তিপূর্ণ সংবাদ পরিবেশন করছে জাতির সামনে। আর সত্য সংবাদ পরিবেশন করার অপরাধে দৈনিক আমার দেশ, ইসলামী টিভি, দিগন্ত টিভিসহ অনেক চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভারতের প্রত্যক্ষ মদদে বন্ধ কর হয়েছে মুসলমানদের প্রাণপ্রিয় চ্যানেল পিস টিভি। একইসাথে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সম্মানিত জাকির নায়েককে বিতাড়িত করা হয়েছে আপন জন্মভূমি ভারত থেকে।
ভারতের নীল নকশা বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে পাঠ্যপুস্তকে ইসলামের নিশানা মুছে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশকে ইসলাম শূন্য ও মেধাশূন্য করার মানসে আবরারের অন্যতম খুনি মদ্যপ অমিতের নির্যাতনেই ইতিপূর্বে স্বপ্নের বুয়েট ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে ৩০ জন ছাত্র।
মিডিয়া, শিক্ষাঙ্গন, হলমার্ক, শেয়ার বাজার, ব্যাঙ্ক, ক্যাসিনো সহ সর্বত্রই আজ দানবীয় দাপট।
বাংলাদেশে সুস্থভাবে বসবাস করা এখন সত্যিই দুরূহ ব্যাপার। প্রতিনিয়ত হৃদয়ের ভিতরে এক অপ্রকাশ্য হাহাকারের বেদনাময় ছবি দুমড়ে মুচড়ে ক্ষতবিক্ষত করছে মানুষকে। রক্তক্ষরণ হচ্ছে অবিরত। ভুক্তভোগীরা মুখ মুখলেই তাদের বরণ করতে হচ্ছে ভয়াবহ পরিণতি। আর এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী মূলতঃ আমরাই। যারা শত অপরাধ দেখেও না দেখার ভান করছি। দিনের পর দিন মুখ বুজে সহ্য করছি। ঘসেটি বেগমের নির্যাতনের বিরুদ্ধে টু শব্দটি পর্যন্ত করছি না প্রাণের ভয়ে। তাদের হাতে অবৈধ ক্ষমতার মসনদ তুলে দিয়ে লাগামহীনভাবে লোভাতুর করতে সহায়তা করছি আমরাই।
অন্যায়কে রুখে দেয়ার মত আমাদের না আছে কোন প্রত্যয় ও প্রতিজ্ঞা, না আছে অটল অবিচল হিম্মত ও সাহস। তাইতো রক্ষক আজ ভক্ষকের ভূমিকায়। আমরা যতদিন পর্যন্ত আল্লাহ্র হুকুম আহকাম, ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা ও শাশ্বত জীবন জিন্দেগীর প্রতি আন্তরিক ও নিবেদিতপ্রাণ না হবো, নিজেকে দ্বীনের মধ্যে বিলীন করে না দিতে পারবো, কর্ম ও চিন্তায় দ্বীনকে জীবন্ত রূপে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হবো ততদিন পর্যন্ত আমাদের এই অমানবিক ভোগান্তি ও অসহনীয় দুর্ভোগ-দুর্যোগ নির্মমভাবে সহ্য করতে হবে। দাসত্বের শৃঙ্খলে নিজেকে আমরা এভাবেই আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছি। অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে উভয়েই অপরাধী।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য ইসলামী শিক্ষার ক্ষেত্রে কোন বিপদাপদ আসলে আমাদের মধ্যে কোন ক্ষোভের সৃষ্টি হয় না। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের স্পৃহা অন্তরে জাগে না। আমাদের চেতনা একেবারে ভোতা হয়ে গেছে। বিবেক পচে গলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আদর্শিক শক্তিতে বলীয়ান আধ্যাত্মিক আলেম ওলামাদের দাবীদার চক্র আপন স্বার্থে হুমড়ি দিয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। এই বিরাজমান ব্যাপক নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্র আজ প্রতিটি পেশায়, পল্লী হতে দেশের প্রতিটি কোণে। উদর চিন্তা ও মন্দ ভোগবিলাসীতা লাগামহীনভাবে গ্রাস করে ফেলেছে জাতীকে।
যুবকদের প্রতিবাদী কণ্ঠ, জ্বিহাদী তামান্না ও শহীদি চেতনার ইতিহাস আজ বিস্মৃত প্রায়। তারা অন্যায়কারী, দুষ্কৃতিকারী জুলুমবাজদের মোকাবিলা করার সাহস ও হিম্মত হারিয়ে ফেলেছে। ইসলামের চিরন্তন বাণীর শিক্ষা এবং জীবন জিন্দেগীর বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে ঠেলে দেয়ার নীল নকশা বাস্তবায়িত হচ্ছে সুনিপুণভাবে। এই চক্রের সুবাদে রাষ্ট্র ও সরকার তাদের দায় দায়িত্বের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে ভিন্নমত ও পথের মানুষকে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত, বিপর্যস্ত ও পর্যুদস্ত করে তুলছে।
আমাদের মেধাবী ছেলেদের হাত থেকে বই কেড়ে নিয়ে মারণাস্ত্র অস্ত্র তুলে দেয়া হয়েছে। চারিদিকে ড্রাগ, নারী, মাদক, লুণ্ঠন, খুন, ক্যাসিনো ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দুষ্কর্মের প্রতিযোগিতায় আজ যে যত বেশী পারদর্শী তাকে সেভাবেই মূল্যায়ন ও পুরুস্কৃত করা হচ্ছে। শুধুমাত্র অবৈধ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য!
আমাদের ঈমানের মধ্যে মরিচা ধরেছে। নেই তাতে কোন প্রভাব-প্রতাপ ও ত্যাগের প্রাণ এবং প্রাণশক্তি। আমাদের কণ্ঠে নেই কোন ঈমানের যাদুময় আকর্ষণ। আমাদের লিখনী, বক্তব্য অন্তসারশুন্য! নেই তাতে কোন হৃদয়স্পর্শী চৌম্বকতা।
রক্তে রঞ্জিত প্রিয় বাংলাদেশের প্রাণপ্রাচুর্যময় ললাটে আজ তাই বিষাক্ত কলঙ্কের দাগ। একদা যে দেশকে আমরা জানতাম সোনার বাংলাদেশ বলে আজ তা ভারতের দালাল, বিশ্বাসঘাতক, মীরজাফর এবং বেঈমান দিয়ে পরিপূর্ণ। নিজের সহপাঠী ভাইকে পিটিয়ে মারছে দানবের মত। আবরারের নিষ্ঠুরতম মৃত্যুবরণ সেই নির্মম সত্যের অদৃশ্যকে করেছে দৃশ্যমান। আবরার নিজের প্রাণের বিনিময়ে জাতিকে দিয়ে গেছে এক কঠিন বার্তা। যে বার্তায় সে রেখে গেছে সকল অন্যায়-অবিচার-অকল্যাণ ও বিস্মৃতি-বিচ্যুতির গল্প। সে স্বপ্নের বীজ বুনে গেছে অধিকারের এবং স্বাধীকারের। সে কণ্ঠে আওয়াজ তুলে দিয়ে গেছে আধিপত্যবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।
অনেক দেরীতে হলেও আবরারের মর্মান্তিক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে নিপীড়িত, বঞ্চিত, অসহায় ও নির্যাতিতদের বুকে জ্বলে উঠেছে অবিচার আর শোষণ লাঞ্ছনার লেলিহান শিখা। অপমান ও অপদস্তের প্রতিবাদী সত্যের মশাল। অন্যায় ও জুলুম রোধে ক্ষীণকণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে হায়েনাদের বিরুদ্ধে ব্জ্রধ্বনি। যে ধ্বনি প্রতিধ্বনিত, স্পন্দিত ও আলোড়িত করছে মানুষের বিবেক বোধকে। গোটা বিশ্ব জুড়ে।
এমনি এক সংঘাতময় সঙ্কটাপন্ন মুহূর্তে প্রত্যেকের উচিৎ বিগত দিনের সকল কৃত কর্মের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার বিশ্লেষণ করে ত্বরিৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ভারতের সাথে দেশ বিরোধী সকল চুক্তি বাতিলের যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
সেইসাথে আমাদের আগামী প্রজন্ম তথা দেশ রক্ষায় ইসলামী শিক্ষাকে সর্বস্তরে বুলন্দ করে প্রতিটি ঘরে ঘরে আদর্শিক পরিবার গড়ে তোলা।
আল্লাহ্মুখিতা ছাড়া ইসলাম বিহীন জীবন কখনো সুখ-শান্তিময় হতে পারে না। তাই ব্যক্তি গোষ্ঠী জাতি বর্ণ ধর্ম ও দলমত নির্বিশেষে বৃহত্তর ঐক্যে সাড়া দিয়ে শত প্রতিকূলতার মুখে ইসলামের প্রতি অবিচল ও অটুট থাকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা ছাড়া আর কোন পথ নেই। এটাই হবে দুর্দশাপূর্ণ আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশকে বাঁচানোর দীপ্ত অঙ্গীকারের একমাত্র পথ এবং পাথেয়।
যুবশক্তি ও তরুণ সমাজের রক্ত জাতির আসল প্রাণ এবং অমূল্য মূলধন। তাই জুলুম নিপীড়ন নির্মূলের এই মহান দায়িত্ব তাদেরকেই নিতে হবে। বেঁচে থাকার, টিকে থাকার এবং জাতির অস্তিত্ব রক্ষার সময়ের ডাকে সাড়া দিয়ে অসহায় মেহনতী মানুষের প্রাণের দাবী পূরণ করতে ঝাঁপিয়ে পরতে হবে। প্রতিটি দুর্যোগকালীন সময়ে দুশমনরা যখনই আমাদের ইসলামের অস্তিত্বকে গিলে খেতে আসবে, দেশের ইজ্জৎ সম্মান লুণ্ঠন করতে চাইবে, পতাকা ছিনিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র করবে তখনই অকুতোভয় তরুণ যুব সমাজ যে কোন মুল্যে রুখে দাঁড়াবে। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেবে। এটাই আজকের রূঢ় বাস্তবতা। অন্যথায় আমাদের হার অবশ্যম্ভাবী।
তাই ইসলামের কবি আল্লামা ইকবালের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরা একসাথে উচ্চারণ করতে চাই- আমরা হবো ইসলামের রক্ষক, আর ইসলাম হবে আমাদের রক্ষক। ইনশাআল্লাহ্!
আমরা আবারো বীরের জাতি হিসাবে বেঁচে থাকতে চাই...
বিষয়: বিবিধ
৯৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন