নীলের নিসর্গরেখায় দাঁড়িয়ে!
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২৮ অক্টোবর, ২০১৭, ০৩:২৬:২৩ দুপুর
পেশাগত বিশেষ প্রয়োজনে অসীম নীলের নিসর্গমালায় ঘেরা সাগর তীরে অবস্থিত একটি হোটেলে অবস্থান করছিলাম আমি। আছরের সালাত আদায় করে জানালার ভারী পর্দা একটু সরিয়ে উঁকি দিয়ে দেখছি বাহিরের ভুবন ভুলানো দৃশ্য। বিরল বিস্ময়কর ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত মুহূর্তগুলো জানালা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছি আর গভীর তন্ময়তায় ভাবছি। একসময় আমি ঘরমুখো ছিলাম। কিন্তু মহান মালিকের অশেষ মেহেরবানীতে প্রায়ই এখন অনেক দর্শনীয় মুহূর্তের অপূর্ব শোভনীয় দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য হয়। আকর্ষণীয় রাশি রাশি নিয়ামতে ভরপুর লোভনীয় মুহূর্তগুলো ভীষণ প্রিয় আমার। বিমুগ্ধ হয়ে এখন প্রায়ই প্রকৃতির টানে এভাবে হারিয়ে যেতে মন টানে খুব। প্রকৃতির দুর্বার আকর্ষণে তাই নিজেকে আর সামাল দিতে পারলাম না। ধীরে ধীরে হোটেল কক্ষ ত্যাগ করে দু তিন মিনিটেই উদার পৃথিবীর বক্ষ মাঝে এসে উপস্থিত হলাম। যেখানে বুকভরা পবিত্রময় প্রশান্তি বিরাজিত। নির্মল বাতাসে ঝাঁকে ঝাঁকে উদ্বেলিত পাখীরা ডানা মেলে উড়ছে ঊর্ধ্বাকাশে। আবার ধবধবে আহল্লাদিত রাজহংসীগুলো উচ্ছ্বসিত মানুষের ছড়িয়ে দেয়া খাবার খাচ্ছে ভীষণ উচ্ছ্বাস ভরে। শিশুরা আনন্দে চিৎকার করে উঠছে। মোবাইলে বা ক্যামেরায় বন্দী করছে ভালোলাগা প্রিয় মুহূর্তগুলোকে। আবেগতাড়িত হয়ে অনেকেই আদরমাখা স্পর্শ বুলিয়ে দিতে যাচ্ছে রাজহংসীগুলোকে। আর অমনি তারা লাফিয়ে পড়ছে পানিতে।
চারিদিকে বিমুগ্ধ করা সবুজের সমারোহ। সমুদ্র বক্ষে একটি বিশাল সাঁকো। সাঁকো পেরিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত যাওয়া যায়। হেটে হেটে গেলাম শেষ সীমানায়। নিজেকে মনে হল যেন প্রকৃতির মেহমান। যতদূর পলক পরে শুধুই অন্তর ছুঁয়ে যায় আর হৃদয় বিগলিত হয়ে উঠে স্রষ্টার প্রতি অগাধ কৃতজ্ঞতায়। মনমাতানো প্রকৃতির অজস্র সৌন্দর্যের শৈল্পিক ভাণ্ডারে মিশে আছে স্রষ্টার অনন্য অনন্তর এক অলৌকিকত্ব। আহা! কি এক অপরূপ বসনে সেজেছে ধরণী! মহান স্রষ্টার অসীম মায়াময় কুদরতের মহিমা ক্ষণে ক্ষণে আনমনা করে তোলে আমাকে। মনের অজান্তেই অন্তরাত্মা বলে উঠে সুবহানআল্লাহ্।
আকাশের গাঁয়ে গাঢ় নীলের নীল প্রান্ত ঘেঁষে মনোমুগ্ধকর লালিমার আভা। নীচে সারি সারি জাহাজ ভীড়েছে বন্দরে। ছোট ছোট নৌকাগুলো পাল তুলে ছুটে যাচ্ছে ভ্রমণ পিয়াসী আরোহীদের নিয়ে। জানা কিংবা অজানার পথে। সমুদ্রের কোল ঘেঁষে জমে উঠেছে সৌখিন বিলাসী বসন্ত মেলা। যেখানে সব শ্রেণীর মানুষের উপস্থিতিতে হয়ে উঠেছে মুখরিত। চারিদিকে সাজ সাজ রব। আনন্দ কোলাহলের গুঞ্জন ধ্বনি বিস্তৃত এলাকা জুড়ে। হুইল চেয়ারে একটু অদূরেই বসে আছে এক সুদর্শন যুবক। চলাফেরা করতে অক্ষম। ব্যাথাতুর বদনে তার চরম হতাশাব্যঞ্জক নিরাশ চাহনি। অশ্রুপূর্ণ আঁখি। একজন সুন্দরী তরুণী তাকে ঠেলে নিয়ে বেড়াচ্ছে। ছেলেটির বোন। আলাপচারিতায় জানা হল প্রাচুর্যের জোয়ারে বল্গাহীন জীবনের তোড়ে আজ তার এই ভয়াবহ দুর্গতি। অস্থির অবাধ জীবনে অশান্ত হৃদয়ের উত্তাল মোহে অধিক মদ্যপানে দুর্ঘটনায় কবলিত হয়ে এই চির পঙ্গুত্ব। আজীবনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেছে জীবনের উন্মাদ চলাফেরা, বাকশক্তি। হারিয়ে গেছে স্মৃতিশক্তি। প্রাত্যহিক জীবনের সব প্রয়োজন মেটাতে হয় পরিবারের অন্য মানুষকে।
কয়েকদিন আগে এই জায়গাটিতে আমাকে নিয়ে এসেছিলেন একজন আফ্রিকান মেয়ে। সুন্দর জায়গাটি তথা কাজের পরিবেশের সাথে মানুষগুলোর উষ্ণ আতিথেয়তা ভীষণভাবে মুগ্ধ করে আমাকে। আমার উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃতির খুব কাছাকাছি থেকে আল্লাহ্র সৃষ্টির মাঝে একাগ্রচিত্তে ডুবে থাকা। সেইসাথে মহান রবের অফুরান দানের মাহাত্ম্য ও গূঢ়ার্থ অনুধাবন করা। যিনি এ ধরিত্রীকে দান করেছেন অফুরন্ত মনোরঞ্জনের উপকরণ সেইসাথে মানবকূলের জন্য প্রভূত কল্যাণ। প্রায়শঃই স্রষ্টার অনুপম সৃষ্টি সৌন্দর্যের রোমাঞ্চকর দৃশ্য কিংবা দুঃখ ভারাক্রান্তপূর্ণ অভিজ্ঞতাগুলো আমাকে নাড়িয়ে দেয় ভীষণভাবে। অন্তরকে আনন্দে বিষাদে পুলকিত, আন্দোলিত ও ব্যথিত করে তোলে। এসব অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির মণি মুক্তাগুলো ভাবনার বাহনে সওয়ার হয়ে চলে যায় অদৃশ্য এক ভুবনে। তুমুলভাবে আলোড়িত করে নশ্বর পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী আনন্দ উচ্ছ্বাসের অন্তরালে স্থায়ী জীবনের স্পষ্ট আওয়াজ। ধরণীর বুকে বসন্তের মাঝে হেমন্তের নীরব আগমন। দুরন্ত বালকের দুর্দশাগ্রস্ত দৃশ্যের বাস্তব দৃশ্য যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল অনেক কিছু। কম্পিত হৃদয়ে উত্থিত হল, দুনিয়াতে মুনাফিকদের আনন্দ ফুর্তি খুবই সাময়িক। তাদের জন্য আখিরাতের লাঞ্ছনা হবে অনন্তকালের।
আল্লাহ্ সুবহানুতাআলা কুরআনুল মাজীদে এরশাদ করেন- তারা দুনিয়াতে সামান্য হেসে নিক, অচিরেই তারা কৃতকর্মের জন্য অনেক বেশী ক্রন্দন করবে। (সূরা তাওবাঃ ৮২)
মহান রবের এসব কথার গূঢ়ার্থ ও মর্মার্থ আরেকবার গভীরভাবে হৃদয়ঙ্গম করলাম নীলের নিসর্গরেখায় দাঁড়িয়ে!
বিষয়: বিবিধ
১০৭৯ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঘুম ভাঙাতে চাই আপু ,তবুওআশাবা্দী ভাই উনিও লিখতেন, আর একজন ভাইকে ভাল লাগতো উনি হলো, সাদা মেঘ। উনিও হারিয়ে গেছে। আশা করি ব্লগে লিখে যাবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন