মহান শাসক সুলতান মাহমুদ - ন্যায় বিচারের উজ্জ্বল প্রতীক!
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:৫৪:০৫ দুপুর
সম্রাট সুলতান মাহমুদ ছিলেন অত্যন্ত উদার, প্রতিভাধর একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক। তাঁর শাসনামলে হঠাৎ একদিন এক দরিদ্র হিন্দু প্রজা সম্রাটের নিকট এই মর্মে অভিযোগ জানালেন যে, সম্রাটের ভাগ্নে তার অসহায় স্ত্রীকে প্রতি সপ্তাহে বলপূর্বক পৈশাচিক অত্যাচারে বাধ্য করে। একথা শুনামাত্রই সম্রাট তাকে সান্ত্বনার বাণী শুনিয়ে সাথে একটি নির্দেশ প্রদান করলেন। বললেন, পরবর্তীতে যখনই তাঁর ভাগ্নে কুমতলব নিয়ে তার বাড়ীতে উপস্থিত হবে, কালবিলম্ব না করে তিনি যেন সাথেসাথেই সম্রাটকে বিষয়টি অবহিত করেন। এই নির্দেশনামা পালনের জন্য সম্রাট আগন্তককে একটি কার্ড প্রদান করে বললেন এটি দেখালেই যেকোন মুহূর্তেই রাজভৃত্যরা তাকে সরাসরি সম্রাটের কাছে পৌঁছে দিবে।
হিন্দু প্রজাগণ বাদশাহর ইনসাফ ও ইসলামিক বিচারকার্য পরখ করার জন্য অধীর আগ্রহে সেই মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। একদিন রাত্রে যথারীতি সম্রাটের ভাগ্নে সেই হিন্দু প্রজার বাড়ীতে উপস্থিত হলে তারা তৎক্ষণাৎ সম্রাটের নিকট খবরটি পৌঁছে দেয়। বাদশাহ ঘটনা শুনেই তরবারি হাতে নিয়ে সেই দরিদ্র প্রজার বাড়ীতে হাজির হলেন। গৃহাভ্যন্তরে তখন টিম টিম করে আলো জ্বলছিল। এই মৃদু আলোয় বাদশাহ অবলোকন করলেন একজন উন্নত মস্তক যুবক হিংস্রমূর্তিতে দণ্ডায়মান। তিনি ইশারায় আলোটি নিভিয়ে দিতে বললেন। তারপর পিছন থেকে ধারালো তরবারির আঘাতে এক চোটে যুবকটিকে দ্বিখণ্ডিত করলেন।
এরপর বাদশাহ গৃহকর্ত্রীকে আলো জ্বালাতে বললেন এবং তাঁকে এক গ্লাস পানি দেয়ার জন্য অনুরোধ জানালেন। এক গ্লাস পানি হাতে নিয়ে বাদশাহ তিন নিঃশ্বাসে তা পান করলেন। তারপর আল্লাহ্র শুকরিয়া আদায়ের জন্য দু’রাকাত নফল নামায আদায় করে যথারীতি মোনাজাতে বললেন- “ওগো আল্লাহ্, আমি আপনার পছন্দনীয় ও নির্দেশিত পথে এবং ইসলামের রীতিনীতি অনুযায়ী আমার এক প্রজার বিচারের ভার স্বহস্তে সুসম্পন্ন করতে পারলাম, সেজন্য আপনার দরবারে অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।”
পরবর্তীতে হিন্দু প্রজা বাদশাহ সুলতান মাহমুদকে তাঁর আলো নিভানো ও পানি পান করার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি অকুণ্ঠচিত্তে বলেন- স্নেহসিক্ত ভাগ্নের শিরচ্ছেদ মুহূর্তে যাতে আমার অন্তরে কোনপ্রকার দয়া-মায়া-মমতার বন্ধন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে সেজন্যই আলো নিভানোর নির্দেশ দিয়েছিলাম। আর আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম যে, যতক্ষণ না আমি আপনার অভিযোগের সুবিচার করতে পাচ্ছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমি পানি পান করবো না। তাই বিচারকার্য সমাপ্ত করেই আমি পানি পান করেছি। মূলত আমি তখনো ছিলাম ভীষণ ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত। কিন্তু খুবই আশ্চর্যের বিষয় যে, সেই হতভাগ্য যুবক আমার ভাগ্নে নয়, সে আমার একজন রাজকর্মচারী।
সেদিন মহান শাসক সুলতান মাহমুদের ইসলামনিষ্ঠ ন্যায় বিচার পদ্ধতির বাস্তবায়নে তাঁর প্রজাগণ হয়েছিলেন পরম বিস্ময়ে বিমুগ্ধ ও হতবাক। সুলতান মাহমুদের শাসনামলে প্রজাগণ সুখ ও শান্তিময় নিরাপদ জীবনযাপন করতেন যা ইতিহাসের সোনালী পাতায় আজও মহাগৌরবে জ্বলজ্বল করছে।
বিষয়: বিবিধ
১০২৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন