ভূবণ ভুলানো ভ্যালি এবং শিমুল পলাশের রক্তিম দেশে…!
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৯:১১:৪৮ রাত
শীতের আবহে সূর্যের আলো ঝলমলে স্বর্ণালী দিনে সপরিবারে লং ড্রাইভের যাত্রা শুরু। একটি ভূবণ ভুলানো ভ্যালির স্বপ্নময় স্বর্গীয় রাজ্য অভিমুখে। মাহিশার জন্য যদিও এটি কোন বিলাসী ভ্রমণ ছিল না। মনের জটিল চিন্তা গ্রন্থিতে স্বস্তি আনায়নে এবং দিলের অবিরত অস্থিরতা মোচনেই মূলতঃ এই ভ্রমণের প্রয়াস। এযেন আত্মোদ্ধ্বোধনের আকুলতা কিংবা অবাঞ্ছিত বড় কোন দুর্ঘটনা থেকে মুক্তির ব্যাকুল ব্যঞ্জনা। চতুর্দিগন্তে উঁচু নীচু পাহাড়ের অপূর্ব কারুকার্যময় সৌন্দর্যের সমাহারে সজ্জিত। পাথর কেটে মনোমুগ্ধকর চতুর্থমুখী পথের সূচনা। উঁচু পাহাড়ে আকাশ ছোঁয়ার অভিভূত করা স্পর্শ। ছোট বড় ঝর্ণার অবগাহন। মহান প্রভুর কি যে এক অকৃপণ অদ্ভুত মোহিত করা সৃষ্টি! নয়নাভিরাম নিয়ামতরাজি! সত্যিই অবিশ্বাস্য! চক্ষু যুগল শান্তির প্লাবনে হারিয়ে যায় মুহূর্তেই! জান্নাতী সুখের শীতল পরশে। পথগুলোর দৃশ্য অভিভূত করার মত! ঠিক যেন রোলার কোস্টার! খাড়া উঁচু এবং ঢালু। রোমাঞ্চকর এবং বিপদসংকুলও বটে! একটুখানি অসাবধান হলে ঘটে যেতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। সবারই কৌতূহল ও উপভোগ্য দৃষ্টি সৃষ্টির অনবদ্য অবগাহনে। কিন্তু মাহিশার হৃদয়ে জ্বলে অবিরত দোযখের অসহ্য অনল!!
দুঃখজয়ী এক রমণী মাহিশা। কিন্তু জীবনে এই প্রথম তার বড় পরাজয়। সাধ্যমত চেষ্টা করেও সুস্থ কিংবা স্বস্তিতে সে থাকতে পাচ্ছে না কিছুতেই। শিমুল পলাশের দেশে সর্বক্ষণই পড়ে থাকছে হৃদয়টা। দু’বছরের জান্নাতি অশ্রুপ্লাবিত ক্রন্দনরত নাম না জানা সে মুখটি! যে তার মা বাবাসহ সকল জবাইকৃত লাশের স্তূপের সামনে বসে আম্মী আম্মী, আব্বু আব্বু করে কাঁদছিল তখন তার কথার উত্তর দেয়ার জন্য দুনিয়াতে কেউ বেঁচে ছিল না। বুভুক্ষু মনের গভীর আর্তনাদের বিস্ফারিত ক্রন্দনে আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে সে যেন। ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পদপিষ্ট কচি শিশুর পাঁপড়ি ছিটানো জান্নাতি মুখগুলো, গণহত্যার পাশাপাশি গণধর্ষিত বোনদের আহাজারি, আত্মহননের সিদ্ধান্ত, অপমৃত্যুর পরোপারে অবস্থিত আত্মাগুলোর বলিষ্ঠ বিপ্লবী প্রতিবাদী কণ্ঠের প্রতিফলন মিশে আছে তার সর্বত্রই।
এর আরও একটি মূল কারণ আগুনের কারাগার বইটি। যার মূল লেখকঃ আবদুর রাজ্জাক হেকনোভিক ও খাওলা বেগোভিচ। অনুবাদ শেখ নাঈম রেজওয়ান। যদিও আজ অবধি বইটি শেষ করতে পারেনি সে। বসনিয়ার একজন মুসলিম সাংবাদিকের আত্মকাহিনী পড়ে জীবনটা অন্য রকম হয়ে গেছে তার। সারাক্ষণ মনটা মর্মপীড়ার বিষাদে ছেয়ে থাকে। অসভ্য সার্ব সেনা ও নর খাদক ক্রোট খৃষ্টানদের নির্মম বর্বরতার লোমহর্ষক কাহিনীগুলোর বীভৎস চিত্র জ্বলন্ত এক কারাগার হয়ে বসে থাকে মানসপটে। উচ্চ রক্ত চাপের ঝাপটায় বেসামাল হয়ে পড়ে মাহিশা। যন্ত্রণাকাতর মস্তিষ্কে আর কিছুই ভাবতে পারে না সে।
বেশ কয়েকবছর আগের কথা। ইউরোপীয় দেশগুলোর কড়া হুঁশিয়ারি ইউরোপের মাটিতে কোন স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র কোনভাবেই বরদাশত করা হবে না। বসনিয়ায় মুসলিম উম্মাহকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য অসভ্য সার্ব ও ক্রোট খৃষ্টান নরপশুরা নিরস্ত্র নিরীহ মুসলমানদের উপর অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো। নর পাষণ্ডরা মা বাবার সামনে সন্তানকে জবাই করে সেই গোশতের কাবাব তিরী করে তাঁদেরকে খেতে বাধ্য করেছিল। সন্তানের রক্ত গ্লাস ভরে বাবা মাকে পান করিয়েছিল। গর্ভবতী মহিলাদের পেট চিরে দেখাতো সন্তানটি মেয়ে না ছেলে। বাবার সামনে তাঁর মেয়েকে, ছেলের সামনে মাকে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে এবং ভাইয়ের সামনে বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করছিলো বর্বর সার্ব ও ক্রোট খৃষ্টান হায়েনারা। তাদের কবল থেকে ছয় বছরের বালিকা থেকে শুরু করে সত্তর বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত কেহই নিষ্কৃতি পায়নি। তারপর পাশবিক নির্যাতনশেষে নির্দয়ভাবে জবাই করা হতো তাঁদের। একজন পুরুষ মুসলমানকে অন্য পুরুষ মুসলমানের পুরুষাঙ্গ দাঁত দিয়ে কামড়ে কেটে বিচ্ছিন্ন করাতো। অতি নিকৃষ্টভাবে। সিরিয়া, মায়ানমার, মিশর, আফগানিস্থানসহ শিমুল পলাশের রঙে রক্ত ভেজা দেশে দেশে একই দৃশ্যের মহড়া! মনে পড়তেই বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠে মাহিশার।
মুহূর্তেই মাহিশার অন্তরাত্মা চিৎকার দিয়ে বলে উঠে! হে মুসলিম ভাই ও বোনেরা! হে বিশ্বের শাসকবৃন্দ! দোহাই আল্লাহ্র! বন্ধ করো তোমাদের এ নিষ্ঠুর পৈশাচিক খেলা। ঘাপটি মেরে চুপটি করে বসে থাকার সময় নেই। একটিবারের জন্য ভাবো তোমাদের মৃত্যুও সামনে অপেক্ষমাণ! বাঁচাও আমাদের মুসলিম মা বোনদের ইজ্জত আব্রু। একবার অন্তরের চোখ মেলে দেখ! মানুষরূপী ভয়ঙ্কর জন্তুদের অমানবিক নির্যাতনের তাণ্ডব দেখে গযবের আশঙ্কায় তামাম পৃথিবী ও আসমান যমীন থর থর করে কাঁপছে। মা বোনদের হিজ্জত ও সম্ভ্রমহানী ঘটনা মহামারীর আকার ধারণ করেছে। উত্তাল হচ্ছে রক্তাক্ত স্রোত। নর পশুদের বর্বরতা হিংস্রতা কতটা মারাত্মক তা নারীদের আত্মহননের সিদ্ধান্ত ও আর্তনাদ থেকে আঁচ করা যায়। হাজার হাজার রক্তস্নাত ধর্ষিতা নারীদের আহাজারির ঘটনা ও কলজে ছেঁচা রক্তাক্ত বিলাপ তোমাদের কর্ণগুহরে আদৌ পৌঁছে কি?!!
দুনিয়াব্যাপী মুসলমানদের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। মানবতা কলুষিত, ভূলুণ্ঠিত। বর্তমানের নারকীয় ভয়াবহতা হালাকু, চেঙ্গিস খান ও হিটলারের বর্বরতাকেও হার মানিয়ে দিচ্ছে।
হাজারো শিশুর মত মিয়ানমারের নাফ নদের তীরে অবুঝ শিশু তোতাইতের কাদাবালিতে মুখ গুঁজে পড়ে থাকা কিংবা সিরিয়ার আইলানের নিথর দেহের আকুতি দেশে দেশে বিপন্ন মানবতা, নির্যাতন আর মর্মন্তুদ চিত্রের বিমূর্ত প্রতীক। এসব নিষ্পাপ নিথর ছবিগুলোকে কী বলে সান্ত্বনা দিবে?
কোথায় মুসলিম বিশ্ব? বিশ্বনেতা? আইসিসি? ‘জাতিসংঘ’?!
সমস্যা নিরসনে এতো অবহেলা গাফিলতি কেন? তোমাদের মা বোনরা হলে কি করতে তোমরা? অন্তহীন প্রশ্ন জাগে মাহিশার দগদগে ক্ষত মনে???
সারাদিনের আনন্দ কোলাহলে কখন যেন সোনালী সন্ধ্যার সুদূরের আকর্ষণে হারিয়ে গেছে সবাই প্রকৃতির মেলায়। অকুণ্ঠিত রূপক মাধুর্যের অনবদ্য সৌন্দর্যে বিমোহিত। মুখরিত। অপার রূপসীর রূপের প্লাবনের অমোঘ শক্তির উৎসমালার কেন্দ্রস্থল ঝর্ণাধারার প্রেমমুগ্ধ জোয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে তখন সবাই ভাবাবেগে আপ্লূত।
কিন্তু হারিয়ে যাওয়া মায়াভরা ঐশ্বর্যময় মুখগুলোর পবিত্র জান্নাতের উষ্ণ রক্ত ধারায় গেঁথে ছিল মাহিয়ার আত্মা আর মন। জেগে উঠে শিরায় শিরায় বুকের তাজা খুন ঢেলে দেবার অমূল্য বাসনা। সবার অলক্ষ্যে হৃদয় নিঙড়ানো ভালোবাসায় আলিঙ্গনাবদ্ধ আবেগপূর্ণ মাহীশার নিস্কোষিত অন্তর রক্তে রাঙানো শিমুল পলাশের রক্তিম রঙে। আর প্রাণের গহীন থেকে কলশব্দে বেরিয়ে আসে! শোকের পাথরে আর স্তব্ধ হয়ে থাকা নয়, আর বিদ্রূপ নয়, অপমান বা লাঞ্ছনার ইতিহাস নয়। শিরায় শিরায় তখন শাণিত রক্ত বহমান। আর অশ্রুপাত নয়, আফসোস নয়, নয় নীরবতা। গর্জে উঠো হে মুসলমান। বিবেকের কষাঘাতে। আর কতো অসুরের গর্জন! তারপরও দীলের দোযখের আগুন গলে চোখের পথ ধরে বেরিয়ে আসে আঁসুর ধারায়।
অন্তর কেঁদে কেঁদে বলে… ! ওগো আসমান যমিনের মহান মালিক! মুসলমানদের গাফেলতের ঘুম ভাঙ্গিয়ে খোদায়ী হুকুম পালনের তাগিদ মনে জাগিয়ে দাও। ওদের দুর্বল কদম মজবুত রাখো। খোদায়ী সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়ার সমস্ত লোভ লালসা দুর করে দাও। ক্ষণস্থায়ী আশা আকাঙ্ক্ষাকে কোরবানী করার হিম্মত দাও। দ্বীনের তেজ্যোষিতা বুলন্দ করে দাও। মহান দুর্দমনীয় শক্তির আবেগে তোমার ভালোবাসার দরিয়ায় তুফান জাগিয়ে দাও। উদ্বুদ্ধ করো দুশমনদের বিরুদ্ধে অথৈ সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ার। উত্তপ্ত অনন্তপ্রসারী দুর্গমগিরি অতিক্রম করার। আকাশচুম্বী পর্বতচূড়ায় বিজয়ের পদচিহ্ন এঁকে দেবার। মাহিশার অন্তরে সৃষ্টি হয় তখন অনিঃশেষ মুহাব্বতের আবেগপূর্ণ ঝর্ণারাশি। হঠাৎ মাহিশার দেহ মনে জেগে উঠে জান্নাতী অনুভূতির এক অপূর্ব শিহরণ। সেই আলোড়িত স্পন্দনের স্বর্গীয় আবেশে তার দু’চোখ বন্ধ হয়ে আসে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৭৮ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নর পাষণ্ডরা মা বাবার সামনে সন্তানকে জবাই করে সেই গোশতের কাবাব তিরী করে তাঁদেরকে খেতে বাধ্য করেছিল। সন্তানের রক্ত গ্লাস ভরে বাবা মাকে পান করিয়েছিল। গর্ভবতী মহিলাদের পেট চিরে দেখাতো সন্তানটি মেয়ে না ছেলে। বাবার সামনে তাঁর মেয়েকে, ছেলের সামনে মাকে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে এবং ভাইয়ের সামনে বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করছিলো বর্বর সার্ব ও ক্রোট খৃষ্টান হায়েনারা। তাদের কবল থেকে ছয় বছরের বালিকা থেকে শুরু করে সত্তর বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত কেহই নিষ্কৃতি পায়নি। তারপর পাশবিক নির্যাতনশেষে নির্দয়ভাবে জবাই করা হতো তাঁদের। একজন পুরুষ মুসলমানকে অন্য পুরুষ মুসলমানের পুরুষাঙ্গ দাঁত দিয়ে কামড়ে কেটে বিচ্ছিন্ন করাতো।
মন্তব্যের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
নির্যাতিতদের আল্লাহ তায়ালা রহম করুক। জান্নাতের মেহমান বানিয়ে নিক।
মুসলিম বিশ্ব যেন আবারো জাগিয়ে উঠে এই প্রত্যাশা করি। অনেক অনেক মুবারাকবাদ
সত্যিই কিছু বলার ভাষা থাকে না। কিন্তু তারপরও মুসলমানরা যখন দলাদলি আর কোন্দলে ব্যস্ত তখনই ভীষণ কষ্ট ও দুঃখ হয়।
আপনার দোয়ায় আমীন।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
অনেক দিন ধরেই লিখছেন না! খুব ব্যস্ত মনে হয়!!
ঠিকই বলেছেন।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
ঠিকই বলেছেন।
আমাদের করণীয় যে যার অবস্থান থেকে সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। প্রতিবাদ করা। ইস্যুগুলো তুলে ধরা। নিদেনপক্ষে কিছুই করতে না পারলে অন্তত দুর্দশাগ্রস্ত মুসলিম ভাই বোনদের জন্য দোয়া করা।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
আপনার মনের অবস্থা কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারি। এসব সত্য কাহিনী পড়তে কার ভাল লাগে বলেন?
কিন্তু বাস্তবতাকে আড়াল করে রাখলে কোন ভাল পরিণতিও তো বয়ে আনবে না। এসব করুণ অসহ্য ভয়াবহ দৃশ্যের কথা স্মরণ করে একজন গাদ্দার মুসলমানেরও যদি ঘুম ভাঙ্গে তাই তুলে ধরার প্রয়াস।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
ঠিক তাই! মন্তব্য করার কোন ভাষা নাই! শুধুই অন্তর নিংড়ানো দোয়া ছাড়া।
তোমার মূল্যবান উপস্থিতির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন