সৃজনশীল বই পিপাসুদের জন্য… “ ঈমানদীপ্ত দাস্তান”
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০১:৪৩:৪৪ দুপুর
নিদ্রাহীন নিঃশব্দ রাতে হৃদয়রাজ্যে অবিরত জাগে যাচিত অযাচিত নানা প্রশ্নের! এমনি এক বিশেষ ক্ষণে বইটির প্রচ্ছদে দৃষ্টি আটকিয়ে যায়। বইয়ের নামকরণের জন্য। তারপর পাতা উল্টাতে উল্টাতে তলিয়ে যেতে থাকি গভীর থেকে গভীরে। মন্ত্রমুগ্ধের মত। তিমির রাত্রির গহীন আঁধারে হাজারো তারকারাজির ভীড়ে অজানা আনন্দে হঠাৎ অন্তর ঝলমলিয়ে উঠলো। বইয়ের প্রতিটি আকর্ষণীয় শব্দে, প্রাঞ্জল আঁখরে ও বর্ণনার ভাঁজে ভাঁজে খুঁজে পেয়েছি অভূতপূর্ব সোনাঝরা এক গৌরবগাঁথা ইতিহাস। রোমাঞ্চিত করে অতুলনীয় এক আবেগে, অনুপ্রেরণার জগতকে তুমুলভাবে আন্দোলিত করে হৃদয়ছোঁয়া সঞ্চিত ভালোবাসায়। অনুবাদকের বিজ্ঞ জাদুময় উপস্থাপনা পাঠকের বোধ ও ভাবনাকে নাড়িয়ে তোলে বারবার। ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়ে দেয়। আবেগে উচ্ছ্বাসে চোখের পানি ঝরে পাঠকের। আপন মুগ্ধময় জগতে অনুভূত হয় ইসলামের অনুপম স্বাদ আর উচ্চমার্গীয় গতিশীল কর্মের প্রতি অসাধারণ ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ। তাই বইটি হতে পারে নির্যাতিত মুসলিম মিল্লাতের জন্য হৃদয়গ্রাহী এক নতুন পথের আলোক দিশারী। পরিশীলিত চিন্তা, শুভ্র সতেজ মন ও মননের অনিঃশেষ খোরাক। বইটির ধারাবাহিকগুলো ইসলাম বিমুখ মানুষকে আবারো তাঁদের শেকড়ের কাছে ফিরাতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে একজন বিস্বস্থ পরম বন্ধুর মত।
নির্বাচিত বই- ঈমানদীপ্ত দাস্তান (ঐতিহাসিক ধারাবাহিক উপন্যাস)
মূল লেখক- এনায়তেল্লাহ আলতামাস
অনুবাদক- মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন
সাল্লাউদ্দীন আইউবীর অমর কীর্তি কাহিনী মুসলিম মিল্লাতের জন্য এক পরম গৌরবের ও বিশাল ঐশ্বর্যের মহামূল্যবান ভাণ্ডার। তাঁর অবিস্মরণীয় জীবন ও কর্মের মাঝে লুকিয়ে আছে অনেক অসাধারণ শিক্ষণীয় ঘটনা। একান্ত আপনজন ও স্বগোত্রীয়দের হিংসাত্মক শত্রুতা, চরিত্র হনন এবং সার্বক্ষণিকভাবে চারপাশের মানুষদের দ্বারা বহু দিগন্ত বিস্তৃত ভয়ঙ্কর চক্রান্তজাল, অনিন্দ্য সুন্দরী নারীসহ নিত্য নতুন শত্রুপক্ষের গভীর পাতানো ফাঁদের অনবরত মুকাবিলা করতে হয়েছে তাঁকে। তাঁর বিরল প্রতিভা, অসামান্য দূরদর্শিতা ও দক্ষ-উপযুক্ত যুদ্ধবিদ্যা ও অসীম প্রজ্ঞাপূর্ণ দৃঢ় মনোবল দিয়ে। যারা বুকের শেষ রক্ত ফোঁটা দিয়ে হেফাজত করার প্রতিজ্ঞা করেছিল তারাই অতি সূক্ষ্ম চাতুরী, কৌশলী আচরণে ও বিস্বস্থ বন্ধুর আভরণে ছিল কেউটে বিষাক্ত সর্প। সে সময়ে সিংহভাগ শাসকই জাগতিক ভোগ-বিলাস, আরাম-আয়েশ, মদ-নারী আর নাচ গানে আকণ্ঠ ডুবে ছিল। তাঁদের হেরেমখানা অপূর্ব সুন্দরী, বুদ্ধিমতী ও বিচক্ষণ তরুণী, নর্তকী, বিউটিশিয়ান ও নেশার সুরাভর্তি পানপাত্রে ছিল সুসজ্জিত। আমীর, উজীর, উপদেষ্টা ও বড় বড় আমলারা সুন্দরী তরুণীদের নৃত্য গীতে থাকতো বিভোর। শরাবে উচ্চমানের বিষ মিশিয়ে আসরগুলো রাখা হতো সরগরম। দেয়ালে দেয়ালে শোভাবর্ধন করতো বিভিন্ন ভঙ্গিমার নগ্ন, অর্ধনগ্ন উন্মত্ত তরুণীদের যৌন উদ্দীপক অশ্লীল ছবি। আর সেগুলো দেখামাত্রই যেকোন কঠিন মনের অধিকারী ও আদর্শিক পুরুষও মোমের মত গলে যেত। কিন্তু অবৈধ নারী সম্ভোগ আর হারাম মদ সুরায় সাল্লাউদ্দীন আইউবীর ছিল আজন্ম তীব্র ঘৃণা। তাঁর চিন্তা ও দৃষ্টিতে দেশ শাসন বাদশাহী নয়, বিলাস প্রমোদ নয়, শুধুমাত্র জনসেবা। সর্বস্তরের মানুষের মানসম্মান-ইজ্জত, নিরাপত্তা, উন্নতি-সমৃদ্ধি ও সুখ শান্তি নিশ্চিত করাই ছিল তাঁর একমাত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই শত্রুপক্ষের সুগভীর চক্রান্তের ফাঁদ পাতা ছিল চিরদিনের জন্য তাঁকে খতম করে দেয়া।
ইহুদী খৃষ্টানদের প্রশিক্ষিত দক্ষ গোয়েন্দা কিশোরীরা এভাবেই মুসলিম শাসকদের চিন্তাবোধ, বিবেক বিশ্বাস ও সততাকে ভূলুণ্ঠিত করে সমস্ত ক্ষমতার চাবিকাঠি রাখতো তাদের হাতের মুঠোয়। কুটচালে এ গোষ্ঠীগুলো মুকুটবিহীন সিংহাসনের কারিগর। এভাবেই মুসলিম খেলাফতের সঞ্জীবনী সুধার অনন্ত প্রাণরস ভীতর থেকে উঁই পোকার মত খেয়ে খেয়ে অসাড় করে দিতো। মুসলিম শাসকদের মধ্যে গ্রথিত করতো পারস্পারিক অবিশ্বাস, সংঘাত ও প্রতিহিংসার ধ্বংসাত্মক বীজ। এ কাজে তারা এতোটাই সাফল্য অর্জন করেছিলো যে মুসলমানরা নিজেদের মধ্যে আত্মকলহ, সংঘাত, ধর্মীয় দলাদলিতে শতধা বিভক্ত হয়ে পড়েছিল । যা আজও অব্যাহত।
একদিন সাল্লাউদ্দীন আইউবীকে গার্ড অব অনার দিয়ে অভিবাদন জানাচ্ছিল নাজির স্পেশাল বাহিনীর নির্বাচিত সদস্যরা। স্পেশাল বাহিনীর সৌন্দর্য সৌকর্য, সুঠাম দেহ, উন্নত আধুনিক হাতিয়ার, অভ্যর্থনা আর গার্ড অব অনারের বিন্যস্ত আয়োজন দেখে আইউবীর আঁখিযুগল আনন্দে চিক চিক করে উঠলো। কিন্তু কিছুদূর এগোতেই সাল্লাউদ্দীন আইউবী স্তম্ভিত হলেন। ছেদ পড়লো তাঁর চিন্তায়। বিষাদে মলিন হল তাঁর চেহারা। দরজায় পা রাখতেই চার উর্বশী তরুণী নৃত্যের ভঙ্গিতে শরীর দুলিয়ে ঝুঁকে তাঁকে অভিবাদন জানালো। আর ঝুড়িভ র্তি তাজা ফুলগুলো শৈল্পিক ভঙ্গিমায় ছিটাতে লাগলো তাঁর যাত্রাপথে। তরুণীদের শরীরে শোভা পাচ্ছিলো মিহি রেশমের সাদা ধবধবে ঘাগরী। তাদের দেহের দ্যুতি সূক্ষ্ম কাপড়ের বাইরে ঠিকরে পড়ছিল যেন। তাদের নৃত্য ভঙ্গিমার তালে বেজে উঠলো বাদ্যযন্ত্র। সঙ্গীতের লহরীতে তখন সুরের মূর্ছনা।
ঠোঁটে এক রহস্যময় হাসির আভা ছড়িয়ে সাল্লাউদ্দীন আইউবী বললেন, “মোলায়েম ফুল পাঁপড়ি আমি এখানে মাড়াতে আসিনি”। জবাবে নাজি বললেন, মাননীয় গভর্নরের চলার পথে আমরা আসমানের তারাও বিছিয়ে দিতে পারি”।
আমার যাত্রা পথে শুধু একটা জিনিসই আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারে আর তা হল “ ক্রুসেডারদের লাশ” বললেন আইউবী। তিনি আরও বললেন, যারা মুসলিম সালতানাতকে ইঁদুরের মত টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে, বিচ্ছিন্ন করছে আমাদেরকে। যেদিন থেকে আমরা যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে ফুলের পাঁপড়ি মাড়াতে শুরু করেছি, আর নিজের যুবতী কন্যাদের নগ্ন করে তাদের সভ্রম ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছি। সেদিন থেকে ব্যর্থতা ও গ্লানিই হয়ে গেছে মুসলমানদের বিধিলিপি।
তাইতো আমি আপনাদের কাছে বাদশা হয়ে আসিনি। এসেছি ইসলামের একজন নিবেদিতপ্রাণ সৈনিক হয়ে…।
এরপর থেকেই চলন্ত ভ্রমণের ন্যায় একে একে ষড়যন্ত্রের মালা গাঁথা হতেই থাকে সাল্লাউদ্দীন আইউবীর বিরুদ্ধে। আর দুশমনদের প্রতিটি কূটচাল, নোংরা ষড়যন্ত্র ও দুরভিসন্ধিমূলক সুন্দরী নারীর ফাঁদ তিনি সূক্ষ্ম কারিগরের মত সুচারুরূপে নস্যাৎ করে দিয়ে মুসলিম মিল্লাতকে উপহার দেন ইসলামের অপ্রতিরোধ্য স্বর্ণমুকুট ও গৌরবগাঁথা বিজয়ের অমর ঝাণ্ডা। যা সৃজনশীল পাঠককূলকে গর্বে ও আনন্দে ভাসিয়ে নিয়ে যায় স্রোতস্বিনী এক মনোমুগ্ধকর অবিশ্বাস্য স্রোতে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৫৮ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মর্মস্পর্শী অতুলনীয় মন্তব্যটির জন্য অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে দোয়া রইলো বোনটির জন্য। আমিও খুব বই পাগল। মনের মত বই কাছে পেলে হুশ থাকে না।
তোমার হৃদয়গ্রাহী সুন্দর প্রার্থনায় আমীন! আমীন! আমীন!
ভালো লাগলো / অনেক ধন্যবাদ
সুন্দর ভালোলাগা অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
কেমন আছেন, নিশ্চয়ই ভালো, কামনাও তাই।
জ্বী এই সিরিজের ৮ খন্ড অনেক সময় নিয়ে পড়েছিলাম। গোয়েন্দার ফারফরমেন্সগুলো খুব ভয়ানক মনে হতো।
এত তীক্ষ্ণ জ্ঞান সম্পন্ন লোক এযুগেও হয়তো পাওয়া যাবে না।
সুন্দর পোষ্ট, অনেক অনেক ধন্যবাদ
দোয়া ও মঙ্গল কামনার জন্য অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে জানাই অফুরন্ত কৃতজ্ঞতা। জান্নাতমণি ও আংকেলজ্বীসহ সবার জন্যই রইলো অনিঃশেষ দোয়া ও মঙ্গল কামনা।
জেনে আনন্দিত হলাম যে আপনি সব সিরিজগুলো পড়েছেন। ইসলামের দুশমনদের ভয়ানক দুরভিসন্ধি ও কূটকৌশল এখনকার দিনে তেমন আর প্রয়োজন নেই। কেননা এখন একজন মুসলমান আর এক মুসলমানের দুশমন। আমাদের মধ্যে বিষাক্ত বীজ রোপণ করে তারা দূর থেকে তামাশা দেখছে!
গুরুত্বপূর্ণ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার ড্রাইভিং এর খবর কি?
লিখাটি পোষ্ট করার সময় কেন জানি মনে হয়েছিলো আপনার কাছ থেকে নতুন কোন বইয়ের নাম মিলবে। সেই প্রত্যাশা পূর্ণ হল।
আসাদ বিন হাফিজ এর লিখা ক্রুসেড সিরিজ পড়ার ইচ্ছে ও আগ্রহ রইলো শতভাগ।
ভালো থাকুন খুব ভালো। সতত এই দোয়া অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে।
জ্বি অনেক অসাধারণ গৌরবগাঁথা ঘটনাবলী রয়েছে। লিখার চেষ্টা থাকবে ইনশাআল্লাহ।
তবে আপনার সময় ও সুযোগ হলে “ প্রিয় ব্লগ” শিরোনামে আমি সেইভ করে রেখেছি “ইতিহাস আশ্রিত ইসলামের ইতিহাস” বইগুলোর দিকে একটু দৃষ্টি রাখতে পারেন। ভালো লাগবে আশাকরি।
আপনার পড়ার নেশা মুগ্ধ করলো। ঠিকই বলেছেন। দুজন প্রসিদ্ধ লেখকই আমার খুব প্রিয়। তবে আমার মনে হয় উনাদের দুজনের মধ্যে একটু তফাৎ আছে।
নসীম হিজাজীর উপন্যাসগুলো সত্য এবং ঘটনাবহুল ইতিহাসগুলোর পাশাপাশি হৃদয়ঘটিত বিষয়গুলোকে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আর আলতমাসের লিখাগুলোতে হৃদয়ঘটিত বিষয়গুলোকে এড়িয়ে ইতিহাসকেই অধিক প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
ভাল লেগেছে আপনার লেখাটি, আশা করি আরো লিখবেন । ধন্যবাদ আপনাকে
নসীম হিজাজী আমারও একজন প্রিয় লেখক। ওনার উপন্যাসগুলো অসাধারণ। তবে আমার লিখার বিষয়বস্তু কিন্তু নসীম হিজাজীকে ঘিরে নয়।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতিসহ উৎসাহদানের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
অবশেষে চোখে পড়েছে এতেই আমি অন্নেক খুশী।
মতামতসহ মূল্যবান উপস্থিতির জন্য আন্তরিক মুরাকবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন