“জয়নব আল গাজালী” সত্য-ন্যায় কণ্ঠের এক বিমূর্ত তুলি

লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৬:৪৩:০৯ সন্ধ্যা



“জয়নব আল গাজালী” - তিমিরে নক্ষত্র উঠে জ্বলি। ভূবণভেদী সত্য ও ন্যায় কণ্ঠের বজ্রনিনাদী। হিমালয়সম ঈমানের জীবন্ত প্রতীক। যে নামে আছে অজেয়কে জয় করার দুর্বার দুরন্ত এক মহাশক্তি। আল্লাহ্‌র দ্বীন প্রতিষ্ঠায় ও দুর্গতির কবলে নিপতিত মুসলিম মিল্লাতের মধ্যে পুনর্গঠন ও পুনর্জাগরনের এক অগ্রপথিক। মৃত্যুঞ্জয়ী এক নারী। অন্যায়, অসত্য ও জুলুমবাজ বর্বর শক্তির কাছে মাথা নত না করার অসাধারণ অদম্য এক অনুপ্রেরণা। মুহতারেমা “জয়নব আল গাজালী” কিংবদন্তী আপোষহীন সংগ্রামী ও দ্বীনের পথে অবিচলিত জীবন্ত এক অতন্দ্রপ্রহরী উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। তাওহীদ ও রিসালাত প্রতিষ্ঠায় এক প্রচণ্ড আত্মপ্রত্যয়ী আদর্শিক রমণীর নাম। নিষ্ঠুর জল্লাদ ও জালিম শাসকদের ত্রাসের মুখে এক বিরল বীরত্বের নাম। নির্মম নিষ্ঠুর বন্য নৃশংস শাস্তির মুখে প্রতিবাদী নেত্রীর নাম। বিক্ষুব্ধ ভয়ঙ্কর জুলুম অত্যাচারে অতিষ্ঠ থেকেও যিনি ছিলেন অবিচলিত অসীম ধৈর্যের দূত। ভীত বিক্রীত বিকৃত মানুষদের কাছে একটি ইতিহাসের নাম। ন্যায়ের পক্ষে, অসহায় নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষের সত্যের শ্লোগানে মুখরিত ঝঙ্কারের নাম। তাইতো দেশে দেশে হিংস্র বন্য শাসকরা এখনো তাঁর নাম শুনলে আতঙ্কিত হয়ে উঠে। তাদের কণ্ঠনালী শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। আর এই গুণী মানবদরদী তুখোড়, বিচক্ষণ বিজ্ঞ নারী ছিলেন ইখওয়ানুল মুসলিমুন সংগঠনের আদর্শে উজ্জ্বীবিত মুসলিম মহিলা সংস্থার সম্মানিতা সভানেত্রী। এই প্রখ্যাত নেত্রী ১৯১৭ সালের ২রা জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।

মিশরের খোদাদ্রোহী বাতিল শক্তি প্রেসিডেণ্ট জামাল নাসের যখন আল্লাহ্‌র মনোনীত দ্বীনকে নির্মূল করার ষড়যন্ত্রে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী নেতৃবৃন্দগণকে নির্বিচারে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দেয় এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকরী করার মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের হাজার হাজার নারী পুরুষ কর্মী শাহাদতবরণ করেন সেই মুহূর্তে মেঘে ঢাকা আকাশে বিদ্যুতের ন্যায় গর্জে উঠেছিলেন এই মহীয়সী নারী। কারণ দণ্ডিত ইসলামের এই বিপ্লবী মুজাহিদগণের একটিই অপরাধ ছিল তাঁরা আল্লাহ্‌র কুরআন এবং রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহকে বাস্তবায়নের প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। তাঁদের দীপ্ত কণ্ঠের বলিষ্ঠ উচ্চারণ ছিল, আল্লাহ্‌র কুরআন এবং রাসূলের সুন্নাহ মুলতবী করে রাখার জন্য পৃথিবীতে প্রেরিত হয়নি। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে তা পূর্ণাঙ্গরূপে অনুশীলনের জন্যই এসেছে। এরপরই তাঁদের জীবনে নেমে এসেছিলো এই করুণ ভয়াবহ পরিণতি। ক্ষমতান্ধ জালিম অত্যাচারী শাসক এই জঘন্যতম কর্মকেই বাহাদুরী মনে করতো। এমনি এক ভয়ঙ্কর দুঃসহ অরাজক পরিস্থিতিতে তাওহীদ ও রিসালাতের বিজয় ঝাণ্ডাকে বুলন্দ করতে “জয়নব আল গাজালী” কাণ্ডারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সত্য পথের অটল এক দুর্দমনীয় বিপ্লবী অভিযাত্রী। তাই তিনি নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও বেঁচে নিয়েছিলেন দ্বীনি আন্দোলনের আদর্শিক পথ।

ইসলামী শাসন কায়েমের আন্দোলনে জয়নব আল গাজালীর নিরলস নির্ভীক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ, অবিশ্বাস্য অনুপম ধৈর্য ও মহান আত্মত্যাগ বিশ্বের ইতিহাসে এক নজীরবিহীন ঘটনা। প্রিয় স্বামী সংসার, এহলৌকিক ভোগবিলাস, আপনজনদের ভালোবাসা, ধনদৌলত ও শাসকদের উচ্চ পদমর্যাদা প্রদানের লোভনীয় প্রস্তাবকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে যিনি স্বেচ্ছায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমৃত্যু মরণপণ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন বিশ্ব জাহানে মানুষের সত্যিকার সুখ-শান্তি-কল্যাণ, সফলতা এবং স্বার্থকতার চাবিকাঠির মূলেই হল ইসলামী জীবনব্যবস্থা। আর এই জীবনব্যবস্থা বাস্তবায়নের শেকড় হল ইসলামী আন্দোলনের সফলতা। তাইতো শাসকদের চরম আস্ফালন ও নিষ্ঠুর যন্ত্রণা সহ্য করার মুহূর্তেও তিনি স্থির অবিচল।

জয়নব আল গাজালীর নেতৃত্বে পরিচালিত প্রচণ্ড গণআন্দোলনের মুখে প্রেসিডেন্ট জামাল নাসের বেসামাল হয়ে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের গণরোষের কথা বিবেচনায় রেখে “জয়নব আল গাজালী” কে সাজানো এক সড়ক দুর্ঘটনায় মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করেন। কিন্তু তাঁকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলে ধৈর্যহারা ক্ষমতালোভী সরকার তাঁকে নিক্ষেপ করে অন্ধকারাচ্ছন্ন নিকৃষ্টতম জ্বলন্ত কারা প্রকোষ্ঠে। যে রুদ্ধ কৃষ্ণ কুঠুরীতে তাঁর উপর চলতে থাকে দৈহিক ও মানসিক পৈশাচিক বর্বরতা। যেখানে বাছাই করা বলশালী পাষাণ জল্লাদ এবং জঘন্য চাবুকবাজদের লেলিয়ে দেয়া হতো এক সত্যের পতাকাবাহী নির্ভীক নারীনেত্রীকে শায়েস্তা করার জন্য। এ বিষয়ে কারাগারের রাতদিন বইটিতে তাঁর অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তাঁর মুখেই শুনুন -

কারাগারের প্রধান গেটে নামফলক পড়েই বুঝতে পারি, এই হচ্ছে কুখ্যাত জঘন্য সামরিক কারাগার। কারা অভ্যন্তরে প্রবেশ করতেই ভয়ঙ্কর আকৃতির একটি লোক আমাকে টেনে হেঁচড়ে নির্দয়ভাবে একটি কক্ষে নিয়ে যায় এবং গালিগালাজের অভিধানে যত গালি আছে সবকিছুই প্রয়োগ করে কুৎসিতভাবে। পানাহারবিহীন জীবন ছিল সেখানে। এমনকি মানুষের প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণেও ছিল বাধা। এসব নোংরা অসভ্য অভদ্র পরিবেশের কথা কোন সভ্য মানুষ কল্পনাও করতে পারে না। তাদের কার্যকলাপ শয়তানকেও লজ্জিত করে। এক ব্যক্তি প্রচণ্ড বেগে দেয়ালের গায়ে আমাকে ছুঁড়ে মারে এবং অপরজনকে বলে বুট দিয়ে যত পার লাথি মার। আমাকে লটকানোর প্রস্তুতি পূর্ণ হলে একটি ফুলপ্যান্ট চেয়ে নিলাম। একটি কক্ষ থেকে ফুলপ্যান্ট পরে ফিরে এলে শামস বাদরানের ইচ্ছে মাফিক ঝুলিয়ে আমাকে দেয়া হয়। তারপর শুরু হয় পাঁচশো বেত্রাঘাত করার নৃশংস তাণ্ডবলীলা। অচেতন দেহ মাটিতে পড়ে গেলে আবার আমাকে দাঁড়িয়ে ঝুলানোর চেষ্টা করছিলো তারা।

আরেকদিন জল্লাদ এসে আমাকে একটি কূপে ঝাঁপ দিতে বলে কিন্তু আমি স্বেচ্ছায় ঝাঁপ দিতে অস্বীকার করি। নিশ্চিত মৃত্যু জেনে আমি বরং চাচ্ছিলাম তারাই আমাকে ধাক্কা দিয়ে কূপে ফেলে দিক। আল্লাহ্‌র পথে শহীদ হওয়ার বাসনা এভাবেই আমার পূর্ণ হোক। তারপর শ্রাবণের বৃষ্টি ধারার মত বেত্রাঘাতে আমি রক্তে প্লাবিত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। তখন তিনজন মিলে আমাকে পানির কূপে নিক্ষেপ করে।

শাস্তির ধারাবাহিকতায় এক জল্লাদ সিপাহী অনেক উপর থেকে আমাকে ধরাম করে নীচে ফেলে দিলে আমি বেহুঁশ হয়ে যাই। জ্ঞান ফিরলে দেখি কসাই যেমন জবাইকৃত পশুকে কাঠের উপর লটকিয়ে রাখে আমাকেও তেমনি উল্টোভাবে লটকিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। আমার সর্বাঙ্গ থেকে তখন রক্ত ঝরছিল। অপর একটি বিভৎস বিকৃত লোক অগ্নিশর্মা হয়ে গালি দিতে দিতে বলল, আমরা তোকে এক ঘণ্টা পরেই হত্যা করবো। তোর অসংখ্য সাথীকে যেমনি এখানে দাফন করেছি, তেমনি তোকেও এখানে দাফন করবো। এরপর আমার দু’হাত পিছমোড়া করে বেঁধে নিয়ে চললো চব্বিশ নম্বর কক্ষের পথে। ওদের হাতে ছিল লিকলিকে কালো চাবুক। কারাগারের বিভিন্ন অংশে তখন ইখওয়ানদেরকে অত্যাচার উৎপীড়ন ও বিবস্র করে থামের সাথে কষে বেঁধে চাবুক মারা হচ্ছিল। চাবুকের ঘায়ে তাদের চামড়া চৌচির হয়ে শতধারায় রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল। আবার মেরে তাদের উপর ক্ষুধার্ত কুকুর ছেড়ে দেয়া হচ্ছিল। কুকুরের বিষাক্ত দংশনে ক্ষত বিক্ষত হচ্ছিল তাদের দেহ। কপাল বেয়ে দরদর করে পড়ছিল উষ্ণ রক্তধারা। তারপরও তাদের চেহারায় স্বাভাবিক দীপ্তি, ধৈর্য ও স্থিরতা দেখে আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়েছি।

এদের মধ্যে অনেকেই আমার সন্তানসম ছিল। তাদের উপর বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতার দৃশ্য দেখে আমি আল্লাহর নাম জপতেই এক জল্লাদ তার প্রকাণ্ড ভারী দুহাত তুলে প্রচণ্ড জোরে আমার কান পট্টির উপর মুষ্ঠাঘাত হানে। আঘাতের তীব্রতায় আমি বধির হয়ে পড়ি এবং কিছুক্ষণের জন্য দৃষ্টি শক্তিও লোপ পেয়ে যায় আমার। চাবুক এবং হান্টারের আঘাত শপাং শপাং বৃদ্ধি পেতে থাকলে মনে হচ্ছিল আমার দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ছিঁড়ে ছিঁড়ে পড়ছে। জালিমদের কঠিন মুষ্ঠাঘাত পিঠের উপর মুষলধারে বৃষ্টির মত বর্ষিত হতে লাগলো। এরপর এক নিশ্ছিদ্র অন্ধকার কক্ষে প্রবেশ করতেই কক্ষের দ্বার বন্ধ হয়ে যায়। বিসমিল্লাহ বলে অন্ধকার কক্ষে প্রবেশ করা মাত্রই তীব্র বৈদ্যুতিক আলোকে চোখ ধাঁধিয়ে উঠে আমার। পুরো কক্ষটি ছিল কুকুরে ভরা। আমার সারা শরীর জুড়ে অসংখ্য হিংস্র কুকুরের অসহ্য দংশন চলছিলো। কুকুরের বিষাক্ত দংশনের কথা ভুলে গিয়ে আমি আল্লাহর জিকিরে মশগুল হয়ে পড়লাম। হঠাৎ কক্ষের দরজা খুলে যায় এবং আমাকে কক্ষে নেয়া হয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, আমার পরনের সাদা পরিচ্ছদ রক্তে লালে লাল হয়ে আছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে পরনে পরিহিত সাদা পরিচ্ছদ ঠিক আগের মতই নিখুঁত সাদা! আল্লাহ পাকের সে কি গায়েবি রহমত! কারাগারের জল্লাদও এই অবিশ্বাস্য ঘটনায় অবাক হয়ে ভাবল কতক্ষণ!

ইসলামের দুশমনদের চরম নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা ইসলামী আন্দোলনের নেত্রীর মনোবলকে গুঁড়িয়ে দেয়ার পরিবর্তে বরং তাঁর দিলে আরও সীমাহীন ধৈর্য, অফুরন্ত সাহস ও অসীম মানসিক শক্তি বহুগুণে বর্ধিত হতো। তিনি এই ভেবে সান্ত্বনা পেতেন যে, যুগে যুগে সত্যের পতাকাবাহীদেরকে এসব মুসীবত ও কঠিন পরীক্ষার মুখামুখি হতে হয়েছিলো। অথচ নমরুদ ফেরাউনের মতো নিকৃষ্টতম পরাক্রমশালী শাসকের তীব্র লোমহর্ষক শাস্তিও তাঁদেরকে সত্যের আদর্শ থেকে বিচলিত কিংবা বিচ্যুত করতে পারেনি। সেই তুলনায় এ শাস্তি কিছুই নয়!

এভাবেই “কারাগারের রাত দিন” বইটির প্রতিটি ছত্রে ছত্রে মিশে আছে সেই জঘন্য লোমহর্ষক অমানবিক বর্ণনা যা পড়লে পশুচিত্তের মানুষেরও হৃদয় বিগলিত হয়ে উঠবে এবং অঝোর ধারায় ঝরবে দু’চোখের পানি। প্রথম যেদিন বইটি পড়েছিলাম কয়েক রাত্রি আমি ঠিকমত ঘুমাতে পারিনি এক ভয়াবহ বিবেকবোধের যন্ত্রণায় ও মানসিক অস্থিরতায়। আপনজনের মৃত্যুতে মানুষ যেমন করে ডুকরে ডুকরে কাঁদে তেমনিভাবে শব্দ করে কেঁদেছিলাম আর অবশ হয়ে বিছানায় পড়েছিলাম। অর্ধ মৃত্যুপ্রায় অবস্থায়। প্রচণ্ড এক ঝড়ের তাণ্ডব যেন আমার কল্পিত পৃথিবীর সবকিছুকেই এলোমেলো করে দিয়েছিলো সেদিন। কেন্দ্রীয় সভানেত্রী পদে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য মিথ্যা অপবাদে আমাকে যেদিন চোখ বেঁধে বাসা থেকে সরকারের পালিত কুকুরেরা ধরে নিয়ে গিয়েছিলো এবং একটি মহিলা হোস্টেল কক্ষে আটকে রেখেছিলো সেদিনও আমি এতোটা বিচলিত হইনি কিংবা ভেঙ্গে পড়িনি। আমার মনোবল এতোটাই অটুট ছিল যে তাদের একটি লিখা কাগজে আমাকে স্বাক্ষর করার জন্য হেন উপায় নেই তারা ব্যবহার করেনি। এমনকি আমার স্বামীর একটি হস্তলিখা চিরকুট পর্যন্ত আমাকে দেয়া হয়েছিলো। যাতে লিখা ছিল সাময়িকভাবে উপশমের জন্য আমি যেন তাতে দস্তখত করি। কিন্তু আমি পণ করেছিলাম প্রয়োজনে মৃত্যুকে বরণ করবো কিন্তু কিছুতেই সেই মিথ্যা বক্তব্যের সাজানো কাগজে স্বাক্ষর করবো না। আমার একমাত্র সাহায্যকারী, আশা ভরসার আশ্রয়স্থল মহান রব আমাকে অক্ষত অবস্থায় সেদিন উদ্ধার করেছিলেন। নারকীয় এক পরিবেশ থেকে। আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী ও কল্যাণকামী আপনজনদের ত্বরিত হস্তক্ষেপে। আর পাশে ছিলেন সান্ত্বনার দূত হিসাবে আমার পরম শ্রদ্ধেয় স্যার মরহুম জাতীয় অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। সুপ্রিয় পাঠক মাফ করবেন, কিছুটা আবেগমথিত হয়ে নিজের ভয়ার্ত বিষাক্ত অতীতের কাছে কিছুক্ষণের জন্য বিচরণ। যদিও “জয়নব আল গাজালী” এর নৃশংস ঘটনার কাছে এসব অতি তুচ্ছই বটে। একেবারেই বালুকণাসম।

মহান স্রস্টার সন্তুষ্টি অর্জন ও বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত প্রিয়তম নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ বাস্তবায়নই ছিল জয়নব আল গাজালীর জীবনের একমাত্র ধ্যানজ্ঞান, সাধনা ও ব্রত। তিনি ছিলেন এক নিবেদিত সত্যনিষ্ঠ নিরলস এক আলোকময়ী মহামানবী। নারীনেত্রী। তাগুতি শক্তির বিরুদ্ধে যার রক্তে প্রবাহিত হয়েছিলো পবিত্রতম দায়িত্বপালনের অদম্য স্পৃহা। সত্যের পথে চলতে গিয়ে হাজারো কঠিন সমস্যা সঙ্কুল ও প্রতিকুল ঝড় তুফানের মধ্যেও তাঁর দুর্বার যাত্রা ছিল অব্যাহত, মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। তাঁর স্বপ্ন ছিল অনাচারী ভয়ঙ্কর শাসকদের স্বীয় খেয়ালখুশীমত রীতিনীতি ও তাদের প্রভূত্বের মূলোৎপাটন করে তাওহীদি আইন কানুন কায়েম করা। আর তা মুসলিম মিল্লাতের ঐক্যবদ্ধ প্রত্যয়পূর্ণ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই কেবল উচ্ছেদ করা সম্ভব।



বিষয়: বিবিধ

১৮৭২ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

380558
০৮ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ০৯:১৫
আকবার১ লিখেছেন :

Excellent Apa,
Zainab al-Ghazali was our Great Sister. Last interviewed before passed way. Jazak Allah Khair
১২ ডিসেম্বর ২০১৬ সকাল ০৯:২০
314947
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু পরম শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।

আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও হৃদয়গ্রাহী ভিডিওটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।

ভিডিওটি দেখলাম।

জাজাকাল্লাহু খাইর।
380571
০৯ ডিসেম্বর ২০১৬ সকাল ০৯:১৬
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : অনেক কিছু জানলাম জয়নব আল গাজ্জালী সম্পর্কে|ভালো লেগেছে আপনার এই লেখা|এই ধরণের লেখা আরো লিখুন | অনেক ধন্যবাদ|
১২ ডিসেম্বর ২০১৬ সকাল ০৯:২২
314948
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু পরম শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।

আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও প্রেরণামূলক মন্তব্যের জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।

চেষ্টা থাকবে ইনশাআল্লাহ্‌।
380587
১০ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:৫২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১২ ডিসেম্বর ২০১৬ সকাল ০৯:২৩
314949
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু পরম শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।

আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও প্রেরণামূলক মন্তব্যের জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।

চেষ্টা থাকবে ইনশাআল্লাহ্‌।
১২ ডিসেম্বর ২০১৬ সকাল ০৯:২৫
314950
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু পরম শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।

খুবই মর্মাহত হলাম। আশাকরি ভুলের জন্য ক্ষমা করবেন।
382144
০৭ মার্চ ২০১৭ দুপুর ০৩:৩২
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : বইটা পড়ে আমিও আপনার মতই খুবই মর্মাহত হয়েছিলাম।
তবে সময়ের জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাচ্ছি এমন একটা সময়য়ের ভিতর আমাদেরকে আল্লাহ পাটিয়েছেন। ঈমান রক্ষার জন্য জয়নব আল গাজালীর মত উম্মাহর মাতাদের ত্যাগ এই জামানাইও দেখতে পারছি।
আল্লাহ আপনার লেখায় বরকত আপনার দিন, ঈমানকে আল্লাহ আরও মজবুত করে দিন। আমীন। জাযাকাল্লাহ খায়ের।
০৮ মার্চ ২০১৭ বিকাল ০৫:৩৯
315915
সন্ধাতারা লিখেছেন : Jajakallahu khair

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File