নব্য ফেরাউনের দেশ - বাংলাদেশ!
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৭:০৬:৪৩ সন্ধ্যা
নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে ফেরাউনের প্রেত্মাতারা জোরেসোরে জেঁকে বসেছে। সিরিয়া, মিশর, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর মানবেতর হিংস্র বর্বর চিত্রসহ দেশে দেশে দুর্বিষহ লোমহর্ষক নির্যাতনের সব যোগসূত্র একই বৃন্তে গাঁথা। এই ভয়ঙ্কর নরপিশাচী নিষ্ঠুরতা হতে জান্নাতী নিষ্পাপ কচি মুখ থেকে বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত কেহই রেহাই পাচ্ছে না। মুসলমান নামধারীদের বিবেক পচে গলে দুর্ঘন্ধ ছড়াচ্ছে বিশ্বময়। নির্যাতিত দের একটাই অপরাধ তাঁরা খাঁটি মুসলমান এবং তাঁদের প্রাণের ধর্ম ইসলাম। তাইতো আজ ধর্মীয় ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে গড়ে উঠছে হিন্দুদের উপাসনালয়। কোরআন মজীদ পুড়ছে, পবিত্র কাবা শরীফের উপর মূর্তি বসিয়ে খেল তামাশা চলছে। আল্লাহ্ এবং তাঁর প্রিয়তম হাবীব (সাঃ) ও তাঁর পবিত্র বিবিদেরকে নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রূপাত্মক রসাত্মক কুরুচিপূর্ণ লিখা অব্যাহত আছে। এসব মারাত্মক অপরাধের কোন ত্বরিত পদক্ষেপ বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোন নজীর নেই দেশটিতে। উল্টো আলেমগণকে জঙ্গীর ট্যাগ পড়িয়ে নির্বিচারে চলছে নির্যাতন নিধন। ইসলামবিরোধী চিন্তা চেতনা সংবিধান থেকে শুরু করে পাঠ্যসূচী, দাড়ি টুপী, মসজিদ মাদ্রাসা, ইসলামিক বই, ধর্মালোচনা সর্বত্রই চলছে গভীর ষড়যন্ত্র, খিস্তি খেউর।
ধর্ম বর্ণ, সত্য মিথ্যা ও হক বাতিলের লড়াইয়ে দীর্ঘদিন থেকে চলছে তুমুল বাকবিতণ্ডা, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ। সরলপ্রাণ নিরীহ নিরাপরাধ মানুষ তাঁদের প্রতিক্রিয়ার এক পর্যায়ে পথে নামতে বাধ্য হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তৌহিদী জনতার কাফেলায় ৫ ও ৬ই মে শাপলা চত্বরে ঘটে যায় স্মরণকালের এক নৃশংস ও বর্বরোচিত ভয়াবহতম ঘটনা। আল্লাহ্র যমীনে সেদিন জন্ম হয়েছিল লোমহর্ষক কাপুরুষোচিত এক জঘন্যতম ইতিহাসের। রাতের অন্ধকারে সরলচিত্ত ইসলামপ্রেমী মজলুমের বুক ফাটা চিৎকারে সেদিন ভারী হয়েছিল বাংলাদেশের আকাশ বাতাস। রক্তে প্লাবিত ছিল শাপলার প্রান্তর। নিথর নিস্তব্ধ রক্তমাখা প্রাণহীন পবিত্র দেহগুলো পড়েছিলো যত্রতত্র। বিশ্ববিবেক থমকে দাঁড়িয়েছে, স্তম্ভিত হয়েছে! ঈমানী চেতনা ও স্পৃহাকে প্রজ্বলিত করতে আসা এসব নিরস্ত্র নিরীহ খোদাপ্রেমীদেরকে মিথ্যা অপবাদে জর্জরিত করে ঠেলে দেয়া হয়েছিল মৃত্যুর নারকীয় দুয়ারে। আর উচ্চ পর্যায়ের নেতৃস্থানীয় আলেমদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিল জেল জুলুম, মামলা হামলাসহ নানা ধরণের তাণ্ডব। যা আজও অব্যাহত।
একইভাবে ইসলামকে চিরতরে নির্মূল করার প্রয়াসে সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের অংশ হিসাবে মিথ্যা বানোয়াট যুদ্ধোপরাধীর তকমা লাগিয়ে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে অনেক নিরাপরাধ মহৎ গুণী মানুষকে। বর্বর পন্থায় হত্যা, গুম, বাড়ী ঘড় জ্বালিয়ে দিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা, প্রকাশ্যে সম্ভ্রমহানি, ব্যাঙ্কের কোটি কোটি টাকা লোপাট, লুণ্ঠিত শেয়ার বাজার, হল মার্কসহ নিত্য নতুন হাজারো ঘটনার উদ্ভব হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আজো আতংগ্রস্থ মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে মৃত্যুর ভয়ে। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে দম্ভোক্তি করছে ক্ষমতার দাপটে। সত্য কাহিনীগুলোর ঠাই মিলছে না পত্রিকার পাতায়!
এরপরও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় পরিবেশের কাঠিন্যতা, নিষ্ঠুরতা ও ভয়াবহতা সহসাই আঁচ করা যায়। যা পাষাণ হৃদয়ের মানুষকেও আতঙ্কিত না করে পারে না। প্রতিহিংসা, প্রতিশোধপরায়ণতা, নগ্ন রুচিহীনতা ও বর্বরতার এক অসহ্য অসহনীয়তার তীব্র দাবানলে জ্বলছে বাংলাদেশ। দুঃখক্লিষ্ট ব্যথাতুর শহীদি পরিবারের উপর আঘাতের পর আঘাত হেনেই চলেছে এই নব্য ফেরাউনরা। নরপশুদের কাপুরুষোচিত এসব অমানবিক বর্বরতা, লোমহর্ষক নির্যাতন ও মানসিক পীড়ন সভ্য সমাজে অচিন্তনীয় এবং অসম্ভব। যা সুস্থ বিবেককে দংশিত করে, হৃদয়ে তোলে ঝড় তুফান হৃদয়বিদারক এক দৃশ্যের। মনে করিয়ে দেয় চেঙ্গিস, হালাকু খান এবং ফেরাউনের নির্যাতন ও হিংস্রতাকে। তাঁদের প্রাণপ্রিয় বাবাকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিয়ে শোকাকুল এক পরিবেশ থেকে তাঁদের সন্তানদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে গুম করে ফেলা! তারপর বেমালুম অস্বীকার করা কোন ধরণের হিংস্রতা! বর্বরতা!! কাপুরুষতা!!!
বিগত ৪ আগষ্ট থেকে ২২ আগষ্টের মধ্যে নিখোঁজ হন তিন সমাজবরেণ্য বিশেষ ব্যক্তিত্ব। তাঁরা হলেন আমান আযমী, আরমান ও হুমাম কাদের। সেনা বাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী তিনি জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের গর্বিত সন্তান। একই কায়দায় গত ৪ আগস্ট বলপূর্বক তুলে নেয়া হয় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছোট ছেলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হুমাম কাদের চৌধুরীকে।
এই ঘটনার ৫ দিনের মাথায় ৯ আগস্ট রাতে অপহরণ করা হয় জামায়াতের সাবেক নেতা মীর কাসেম আলীর ছোট ছেলে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেম আরমানকে। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও কোনভাবেই খোঁজ মিলছে না এই তিন সূর্য সন্তানদের। প্রতিটি পরিবারের একই দাবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তাদেরকে তুলে নেয়া হয়েছে। তাঁদের স্বজনদের জানা নেই আদৌ তাঁরা বেঁচে আছেন কিনা? কোনদিন ফিরে আসবে কিনা? এ ধরণের পৈশাচিক জঘন্য মানসিকতাকে কার সাথে তুলনা করা চলে জানা নেই! এ ধরণের মানবতা বোধের জন্যই কী আমরা স্বাধীনতা চেয়েছিলাম? পৈশাচিক এসব বর্বর ঘটনায় নব্য ফেরাউনদের আসন্ন বিপদের শেষ পরিণতির সঙ্কেতধ্বনিরই যেন তির্যক প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে!
বিষয়: বিবিধ
১১৪৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাযাকিল্লাহ খাইর।
আপনার স্বতঃস্ফূর্ত আন্তরিক উপস্থিতি ও অনেক হৃদয়গ্রাহী একটি মূল্যবান মন্তব্য রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
খুব বেশী বেশী করে দোয়া করবেন আমার জন্য।
অনেকদিন পর আপনার স্বতঃস্ফূর্ত আন্তরিক উপস্থিতি ও জ্ঞানগর্ভ মন্তব্য পেয়ে অনেক ভালো লাগলো।
হৃদয়গ্রাহী ও মূল্যবান মন্তব্যটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার স্বতঃস্ফূর্ত আন্তরিক উপস্থিতি ও চিরন্তন সত্য কথাটি মন্তব্য হিসাবে পেয়ে অনেক ভালো লাগলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন