আঁধারিতে আশার আলোকবর্তিকা
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০২:৫০:০১ দুপুর
ধরণী জুড়ে এখনো কিছু মানবরূপী মহামানব ও মহামানবী রয়েছেন যাদের অক্লান্ত মহতী চেষ্টা এবং অবিরাম সংগ্রামের ফলে ঘটছে অহরহ কিছু আশাতীত ঘটনা। তারই একটি জীবন্ত কিংবদন্তীতুল্য মানুষের সংক্ষিপ্ত কিছু উদাহরণ তুলে ধরার প্রয়াস। আজকের এই লিখনীতে।
চর্মচক্ষু দিয়ে এসব দৃশ্য অবলোকন করলে সত্যিই বিস্ময়ে বিমোহিত হতে হয়। ঠিক যেন দিবা স্বপ্নের মত অবিশ্বাস্য। এসব ঘটনা মনে উদিত হলে, একান্তে বিস্ময়ের ঝড় তোলে মনে মাহদিয়ার। বিড় বিড় করে বলে উঠে, হে দয়ার অফুরান ভাণ্ডার! অবারিত তোমার মহাসিন্ধু রহমত ও করুণার!
হে ঈমাদারগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক (লাভজনক) বাণিজ্যের সন্ধান দেবো যা তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি হতে রক্ষা করবে (সূরা আস সাফঃ ১০)।
আর তা এই যে (সে ব্যবসাটি হচ্ছে), তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান আনবে এবং আল্লাহ্র পথে তোমাদের জান ও মাল দিয়ে সংগ্রাম করবে, এটিই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা তা বুঝতে পারো (সূরা আস সাফঃ ১১)।
আল্লাহ্ তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদের তিনি প্রবেশ করাবেন এমন এক সুরম্য জান্নাতে যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে, তিনি তোমাদের আরও প্রবেশ করাবেন জান্নাতের স্থায়ী উত্তম বাসগৃহে। আর এটাই হচ্ছে মহা সাফল্য (সূরা আস সাফঃ ১২)।
তাইতো সবার অলক্ষ্যে আল্লাহ্র অমিয় বাণী ও রাসূলের সুন্নাহর দাওয়াত দিতে একজন বয়োবৃদ্ধা মহিলা প্রায় প্রতিদিন তাহাজ্জুদ এবং প্রত্যুষে ফযরের নামায আদায় শেষে বেড়িয়ে পড়েন গ্রামের অলিগলি ও সরু পথে। কখনো বস্তির কুঁড়েঘরে, কখনো আশেপাশের প্রতিবেশীর করিডোরে আবার কখনো ঘুমন্ত মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। জাগিয়ে দেন নামাযের জন্য। আবার কখনও পরম মমতায় দাঁড়িয়ে থাকেন দীর্ঘদিন ধরে রোগে জর্জরিত মুমূর্ষ রোগীর শিয়রে। কখনো বা হাজির হন ধনাঢ্য কোন সুখনীড়ে।
সন্তানতুল্য স্নেহে বুকে জড়িয়ে নেন সেইসব ব্যথাতুর মানুষগুলোকে। যারা দীর্ঘদিন অবশ অচেতন হয়ে বিছানায় শুয়ে আছেন বছরের বছর। সান্ত্বনার শীতল পরশ বুলিয়ে দেন যারা এসব মৃতপ্রায় আপনজনের ছবি সামনে রেখে প্রতিটি মুহূর্ত পার করছেন। জীবনের সমস্ত সুখ আর আনন্দকে ভুলে। এহেন দুর্ভাগ্যময় কঠিন পরীক্ষা জীবনে আর কি বা হতে পারে। পাঁচ বছর কাটছে এমনিভাবে। মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করতে করতে মুখমণ্ডল একেবারে পাংশু বর্ণ ধারণ করেছে। পুরো শরীর একটি হাড্ডিসার কাঠামো। দেখা মাত্র কলিজার ভিতর কেমন যেন ছ্যাঁৎ করে উঠে। এই মহতী মানুষটির উদ্দেশ্য একটিই তাঁদের মনে সান্ত্বনা ও শক্তি জোগানো।
প্রতিটি ঘরে ঘরে এভাবেই নামাযের প্রয়োজনীয়তা, ধর্মের কথা, আখিরাতের কথা, জন্ম মৃত্যুর কথা, ধর্ম শিক্ষার গুরুত্বের কথা পৌঁছে দেয়াই তাঁর একমাত্র কাজ। প্রতিদিন ছোট ছোট মেয়ে ও বয়স্কা মহিলাদেরকে কোরআন শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি নিয়মিত তালিমে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তাই নিয়মিতভাবে তালিমে শরীক হয়ে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বার বার গুরুত্বের সাথে সকলকে স্মরণ করিয়ে দেয়াই তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য।
ছোট বড় প্রত্যেকের কাছে তিনি জননীতুল্য। তাঁর উপস্থিতিতে মুহূর্তেই জায়গাটি সর্বস্তরের মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। পরম সমাদর, প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণার সঞ্জীবনী সুধায়। বিপদে সাধ্যমত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া এই মহামানবীর পদধূলিতে অসহায় দরিদ্র মানুষগুলোর অন্তর আনন্দ ও কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠে। পারস্পারিক প্রেমপূর্ণ মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালবাসা আর ভক্তি শ্রদ্ধায় ভরে উঠে অজস্র তারকারাশির উজ্জ্বল আলোকমালার এক প্রাণবন্ত সমারোহ। যেন এক বিজয় উৎসব। রূপ নেয় এক মিলন মেলায়। তাঁর দরদপূর্ণ দ্বীনের কথা শুনে প্রাণ আকুল করা উৎসুক মানুষের মনের সেতারে ছন্দের সুর তোলে ঢেউয়ের মত।
আল্লাহ্র বাণী শুনে বুকের গভীরে শুরু হয় ন্যায় অন্যায় আর পাপাচারের সূত্রে গাঁথা, ফেলে আসা দিনগুলোর শত শত হাতুড়ির অবিরাম দংশন। ঠুকাঠুকি। গ্রামের অধিকাংশ অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত মানুষগুলোর অন্তর অত্যন্ত সহজ সরল। ধর্মের কথা শুনলে তারা আরও শুনতে চায়। এভাবেই দ্বীনের আলো তাঁদের দিলের পাপ পঙ্কিলতা ধীরে ধীরে দূর করে দেয়। অনুতপ্ত হয় দিল। অন্তহীন অনুশোচনায় অন্তর ভরে উঠে। অন্ন বস্ত্রের সীমাহীন দুর্ভোগ ও অসহ্য অগ্নিদগ্ধ মরণোম্মুখ জীবনের কথা ভুলে কেবলমাত্র পরকালের চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠে। পরিসমাপ্তি ঘটে মানসিক পীড়নের।
তারপর আল্লাহ্র চিন্তা ও ভাবনার সমুদ্রে ডুবে থাকে মন ও অন্তর। একসময় ধীরে ধীরে তারাও শরীক হয় নিয়মিত তালিম ও দাওয়াতী আয়োজনে। মন দিয়ে শুনে আল্লাহ্র বাণীর গুঢ় মর্মকথা। বদলে যায় অনেকের জীবন জিন্দেগী। তারপর তারাই একদিন ব্যস্ত ব্যাকুল হয়ে পড়ে দাওয়াতি কার্যক্রমে। এক সাথী তখন আরেক সাথী বোনের প্রাণাধিক্য বনে যায়। এযেন অভিভূত করা দৃশ্য। আল্লাহ্র প্রতি কতো গভীর তাঁদের প্রেম। কত মহৎ তাঁদের হৃদয় ও উদ্দেশ্য। চর্মচক্ষু তা অবলোকন করে স্তম্ভিত হয়ে যায় মাহদিয়া। এযেন প্রখর রৌদ্রতাপে দেহমন জুড়ানো সুশীতল শান্তির ছায়া।
যেকোন বিপদে আপদে একান্ত আপনজনের মত মমতামাখা মিষ্টি কথা দিয়ে সান্ত্বনা ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। অকৃপণভাবে। অসীম ধৈর্যসহকারে তাদের ক্ষুধা, জ্বরা কষ্ট গাঁথা জীবনের কাহিনী শোনেন। মর্মজ্বালার সমব্যথী হন। কোরআন ও নবীজির জীবনের উদাহরণ টেনে তাদেরকে সান্ত্বনা যোগান।
যারা একে অপরকে গভীরভাবে সততার সাথে ভালোবাসে একমাত্র মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে। তাঁদের কণ্ঠে সতত ধ্বনিত হয় আল্লাহ্ প্রেরিত সৎকর্মের সুমিষ্ট জাদুগ্রস্ত মহাবাণী, যা দিশেহারা মানুষকে দান করে হিদায়তের আলোকোজ্জ্বল পথ ও পাথেয়। যে হিদায়তের পথে রয়েছে চিরমুক্তির প্রতিশ্রুতি ও চির নাজাতের উন্মুক্ত অবারিত শান্তির বার্তা।
আল্লাহ্র করুণায় দয়ার দরিয়ায় পাল তুলে সান্ত্বনা খুঁজে পায় তাঁরা। নিমিষেই ব্যথাক্লিষ্ট মানুষগুলোর মুখে যেন আশার আলো ফুটে উঠে। কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই মহৎপ্রাণ মানুষের সান্নিধ্যে তাঁদের হৃদয় কিছুটা প্রশান্তি লাভ করে। হালকা হয় পাহাড়সম ব্যথাভার। নিঃসহায় নিঃসম্বল মানুষগুলোর প্রাণে সঞ্চারিত হয় অপূর্ব মনোবল ও প্রভূর প্রতি অসীম তাওয়াক্কুল। রাতের আঁধার মিলিয়ে সেখানে জেগে উঠে ভোরের স্নিগ্ধ সমীরণে নতুন আশার আলোকবর্তিকা।
বিষয়: বিবিধ
১২৯১ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ তায়ালা মাহদিয়ার চিন্তার জগৎকে আরো প্রসারীত করুক।
মহান রবের করুনায় কানায় কানায় ভরে উঠুক তার দুনিয়া ও আখিরাতের জীবন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ
দোয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। যদিও মাহদিয়া লিখাটিতে শুধুই একজন ভাবনা ও চিন্তাশীল একজন দর্শকমাত্র।
আমিও আমার অন্তরের গভীর থেকে সেই মহীয়সী নারীর জন্য দোয়া করি যিনি তাঁর সমস্ত জীবন অপরের কল্যাণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এবং দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছেন। বদলে দিচ্ছেন মানুষের ভিতরের জগতটাকে। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও।
মন্তব্যের জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনি যে একজন মনযোগী বোদ্ধা পাঠক তা আপনার মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট। আর হ্যাঁ ইচ্ছে করেই সেই মহীয়সী নারীর পরিচয় এখানে তুলে ধরিনি।
প্রথমতঃ তাঁকে কেউ চিনবেন না। দ্বিতীয়ত এই লিখার উদ্দেশ্য তাঁর পরিচয় বা প্রশংসা কুড়ানো নয় বরং তাঁর কর্মের অনুপ্রেরণাটুকু ছড়িয়ে দেয়া।
লিখাটিতে কিন্তু গ্রামের চিত্র তুলে ধরে কিছু বর্ণনা দেয়া আছে। যাতে ধীমান পাঠক নিজেরাই আবিষ্কার করতে সক্ষম হবেন কৌতূহলী হয়ে।
আমার আকাঙ্ক্ষা মনে হল ফলপ্রসূ হয়েছে। এ চিত্র এবং ঘটনা বাংলাদেশের ভাইয়া।
মন্তব্যের জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আমীন! আমীন! আমীন!
মূল্যবান মন্তব্যটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আমীন! আমীন! আমীন!
অনেক হৃদয়গ্রাহী ও মূল্যবান মন্তব্যটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
লেখা, সেই মমতাময়ী মহিলা আমাদের শ্রদ্ধাময়ী আপুর মা। যারা আপুর সব লেখা পড়েছেন, তারাই বুঝতে পারবে।
একজন জ্ঞানী, অসাধারণ ও একনিষ্ঠ মহতী মনের ভাইয়ের জন্য অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে রইলো অন্নেক অন্নেক দোয়া।
মূল্যবান মন্তব্যটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
অনেক কিছু জেনেছি আপু কিন্তু জীবনের অনেক উত্তর নেই। আল্লাহই জানেন, কোন ভাবে, কোন পথে জীবন শেষ হবে! দোয়া কোরো।
কেন জানি তোমার মন্তব্যটি পড়ে চমকে উঠেছি!!
তোমার আন্তরিক উপস্থিতি ও মূল্যবান অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন