মুসাফির……!
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২৫ অক্টোবর, ২০১৬, ০৬:০৭:২৯ সন্ধ্যা
আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলার অনুপম সৌন্দর্যমণ্ডিত সৃষ্টজগতে মাতাপিতাসহ সকল আপনজনদের অন্তরে অনাবিল সুখের আবেশ ছড়িয়ে দিয়ে ধরণীতে আমাদের শুভাগমন। সব পরিবারে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে প্রত্যাশিত নবাগত শিশু অতিথি। ক্ষণিকের মুসাফির। তাকে ঘিরে থাকে মাতাপিতার বিশাল এক স্বপ্নময় মায়ার পৃথিবী। তারপর আবার সবার ভালোবাসাপূর্ণ চোখে বেদনাশ্রু টেনে এনে মহান স্রস্টার ডাকে তাঁরই কাছে ফিরে যাওয়া। ছোট্ট একটু অন্ধকার উদর থেকে যেমন আমাদের আলোকিত জগতে আগমন তেমনি ছোট্ট একটু অন্ধকার কবরে প্রত্যাগমন। এযেন এক আলো আঁধারির চিরন্তন খেলা। আজ ফজরের ছালাতের জন্য জায়নামাজে দাঁড়ানোর আগে মনে হল লাইটের সুইচটা অফ করে দিই। সুইচ অফ করতেই হঠাৎ ঝলমলে আলো শেষে নেমে এলো ঘোরতর এক অন্ধকার। চোখের সামনে ভেসে উঠলো কবরের ভয়াবহ অন্ধকারের ভীতি। ঠিক যেন জন্ম আর মৃত্যুর মত আলো আঁধারির চিরন্তন পথরেখা। মনের পর্দায় ভেসে উঠলো-
হযরত উসমান (রাঃ) যখনি কোন কবরের পাশ দিয়ে হাটতেন তখন তিনি এতো বেশী কাঁদতেন যে, তাঁর দাঁড়ি ভিজে যেতো। প্রত্যক্ষদর্শী একজন তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, জান্নাত ও জাহান্নাম সংক্রান্ত আলোচনা হলে আপনি এতো কাঁদেন না, অথচ কবরের পাশে এলে এতো কাঁদেন কেন?
উত্তরে হযরত উসমান (রাঃ) বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই কবর হল আখিরাতের ঘাঁটিসমূহের মধ্যে প্রথম ঘাঁটি। প্রথম ঘাঁটি সহজ হলে পরবর্তী ঘাঁটিসমূহ সহজতর হয়। আর প্রথম ঘাঁটি থেকে মুক্তি না পেলে পরবর্তী ঘাঁটিগুলো তার জন্য কষ্টদায়ক ও কঠিনতর হবে। কবরের কাছে এলে একথা মনে হতেই আমি কাঁদি। তিনি আরও বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কথাও বলেছেন, কবরের চেয়ে ভীতিকর আমার জীবনে আর কিছুই দেখিনি। জীবনে যা কিছু ভয়ঙ্কর দেখেছি তারমধ্যে কবর হচ্ছে সবচেয়ে বেশী ভয়ঙ্কর। (ইবনে মাযা, মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উরওয়া আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদিন আল্লাহ্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে দাঁড়িয়ে কবরের ফিতনা সম্পর্কে খুতবা দেয়া শুরু করলেন আর তা শ্রবণে মসজিদে উচ্চস্বরে হুহু করে কান্নার রোল পড়ে গেল।
হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, সাদ ইবনে মুয়াজ এমন একজন মহান ব্যক্তি যার মৃত্যুতে আল্লাহ্র আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠেছিল। তাঁর রুহকে স্বাগতম জানানোর জন্য আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়েছিলো। সেইসাথে সত্তর হাজার ফেরেস্তা তাঁর জানাজার নামাযে শামিল হয়েছিলো ( মিশকাতুল মাসাবীহ, মুসনাদে আহমদ)। এই মহান ব্যক্তিটিও স্বল্পক্ষণের কবরের চাপ অনুভব করেছিলেন।
একদিন একটি কচি শিশু মৃত্যুবরণ করলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেউ যদি কবরের চাপ থেকে মুক্তি পেতো তবে সে হতো এই শিশুটি। অথচ এই অবুঝ শিশুকেও সেই চাপ ভোগ করতে হয়েছে।
জায়নামাজে দাঁড়িয়ে অনুভূতিতে এলো কবরের দিকে অন্তিম যাত্রা শিশু কিশোর, কাঁচা পাকা দাড়ির প্রৌঢ়, শ্বেতশ্মশ্রুমন্ডিত বৃদ্ধ কিংবা শ্বেতশুভ্রকেশী বৃদ্ধা মুসাফিরের সত্য শ্বাশত পরিণতি। হৃদয় ঠেলে কান্না উগরে উঠলো। অন্ধকার কবরে শুয়ে থাকা রক্তের বন্ধনে এবং দ্বীনের টানে বাঁধা মুসাফিরদের অবয়বগুলোর স্মৃতিব্যথা প্রাণের ভিতরে ভীষণভাবে মোচড় দিয়ে উঠলো। আর সশব্দে ভীতির আবেগে মিনতিভরা ভেজা কণ্ঠে বলি, হে আমার মহামুনিব দয়াময় রব! আমাদের পুণ্য অর্জনের দিকে না তাকিয়ে আপনার বরকতপূর্ণ অসীম ক্ষমার অসিলায় আমাদের সকল মুসাফিরদের কবরের ভয়াবহ আজাব থেকে নাজাত দিন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৯ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মাঝে মাঝে আপনার মূল্যবান উপস্থিতি, অতি গুরুত্বপূর্ণ সুন্দর উপলব্ধি ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতি খুবই আনন্দদায়ক।
কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে আপনার মূল্যবান লিখা নেই কেন?
বিশেষ কোন কারণ?
ভেবে ব্যথিত হই।
জান্নাত্মনিসহ দেশের সবাই কেমন আছেন?
ড্রাইভিং এর সর্বশেষ খবর কি?
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আলহাম্দু লিল্লাহ ভালো আছি, সবাই ভালো আছে।
ও আল্লাহ! এত প্রশ্ন!!!!
সময় করে উত্তর দিব ইন শা আল্লাহ।
অনেক প্রশ্ন করে আপনাকে বিব্রত করার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত আংকেলজ্বী।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ঠিক বলেছ! প্রায় এদেশের বৃদ্ধাদের মুখে শুনি হাউ টাইম ফ্লাইস!
সত্যিই অনেক মর্মান্তিক।
অনেক দিন পর তোমার উপস্থিতি অনেক ভালো লাগলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
তোমার জন্য প্রাণভরা অফুরান দোয়া।
পরিশুদ্ধ আমল বর্ধিতকরণের ক্ষেত্রে মানসিক ভীতি নিঃসন্দেহে অনেক বড় মহত্ত্বের লক্ষণ ও বেশী বেশী আমলের নমুনা।
অনেক দিন পর পথ ভুলে বুঝি?
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার সরব উপস্থিতি ব্লগে প্রাণ ফিরে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ইনশাআল্লাহ।
আপনার জন্য প্রাণভরা অফুরান দোয়া মন্তব্যের জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি, অতি গুরুত্বপূর্ণ সুন্দর উপলব্ধি ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
কবর স্থান এর পাশে যখন দেখি মাজার ব্যবসারতখন মনে হয় এরা কবর এর কথাই ভুলে গেছে।
সহমত আপনার সাথে।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি, অতি গুরুত্বপূর্ণ সুন্দর উপলব্ধি ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
হৃদয়ছোঁয়া সুন্দর মন্তব্যটির প্রাণভরা অফুরান দোয়া।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন