মণি মুক্তো মোতি - “হেরার জ্যোতি”
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১৯ অক্টোবর, ২০১৬, ০৯:৪৭:৪৪ রাত
দিনটি ছিল হৃদয়ের গভীরে পুষে রাখা বাসনা পূর্ণের একটি বরকতপূর্ণ পরম পুলকময় কাঙ্ক্ষিত দিন। গত ৩১/০৮/২০১৫, মমতাময়ী মা, ছোট ভাই ও অন্যান্য সম্মানিত আগ্রহী হজ্বযাত্রী কাফেলার সাথে মাইক্রোবাসে ছুটে চলছি স্বপ্নের সেই পবিত্র ভূমিতে। বিস্ময়কর এক অনুভূতি অনুভূত হচ্ছিল গোটা অন্তর জুড়ে। বিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম আমরা প্রত্যাশিত সেই স্থানে। অন্তর বিপুল পুলকে নেচে উঠলো। যেখানে আজ থেকে চৌদ্দশত বছর পূর্বে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মহামানব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র পদধূলিতে প্রাণময় হয়ে উঠেছিলো। আরববাসীগণ মহব্বত করে যাকে বলেন, “জাবালে নূর”। জাবাল অর্থ ‘পাহাড়’ আর নূর অর্থ ‘আলো’। “নূরের পাহাড়”। স্বতঃস্ফূর্ত ভ্রমণ পিয়াসী মানুষের সামনে উপস্থিত হয়ে আমাদের বিজ্ঞ হজ্ব গাইড এই নূরের ছায়ায় ঘেরা পাহাড়ের সংক্ষিপ্ত মূল্যবান ইতিহাস চরম কৌতূহলী দর্শকবৃন্দকে আরও বেশী উজ্জ্বীবিত করলো যেন। সকলের চোখের সামনে এবং মনের পর্দায় ভেসে উঠলো আরব তথা বিশ্বজাহানের জাহেলী সমাজকে বদলে দেয়ার সেই গৌরবময় অভিভূত করা দৃশ্যের সাথে জড়িয়ে থাকা আলোকিত স্থানের ঐশ্বরিক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট।
এই সেই “নূরের পাহাড়” যে নির্জন গুহায় বসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনের পর দিন, রাতের পর রাত কাটিয়েছেন মানবতার মুক্তির জন্য। আবির্ভূত হয়েছিলেন মানবজাতির ত্রাণকর্তারূপে। ধরণী যখন বর্বরতা আর হিংস্রতায় মেতে উঠেছিলো। সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন, শোষণ-লুণ্ঠন, হত্যা-মারামারিতে মানুষের জীবন হয়ে উঠেছিলো দুর্বিষহ। সন্ত্রাস, লুটতরাজ, মদ্যপান, সভ্রমহানি, অশ্লীলতায় এক নৈরাজ্যকর ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিলো সমাজে। আল্লাহ্র একাত্ববাদকে বেমালুম অবজ্ঞা করে মূর্তি ও দেবদেবীর পূজায় উন্মত্ত হয়ে উঠেছিলো মানুষ জাতি। দুর্বলের প্রতি সবলের আক্রমণ ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। শিশুদের বুকফাটা মর্মভেদী কান্নায় আকাশ বাতাস ছিল ভারী। কন্যা সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হতো। সেই কঠিন দুঃসময়ে আরাধনার সাগরে ডুবে ছিলেন তিনি জনমানবহীন এই উঁচু পাহাড়ের চূড়ায়। মানুষের জন্য শান্তি ও কল্যাণের বাণীপ্রাপ্ত হয়ে সেই সোনালী মুহূর্তগুলো ইতিহাসের পাতায় অভিষিক্ত হয়েছিলো এক নব যুগের শুভ অধ্যায়ের।
একটি সত্য সুন্দর আলোকিত পৃথিবী উপহার দিতে প্রথম ওহীপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তিনি। আল্লাহ্ কতৃক মনোনীত হয়েছিলেন সম্মানিত শেষ নবী হিসাবে। সূচিত হয়েছিলো ন্যায়ের পথ, উন্মোচিত হয়েছিলো আলোর পরশ। যে হেরার জ্যোতি দুর্ধর্ষ বর্বর মানুষকেও পরিণত করেছিলো খাঁটি সোনার মানুষে। এনে দিয়েছিল মান সম্মান ও গৌরবদীপ্ত মর্যাদার সুখ্যাতি ও স্বীকৃতি। জীবিতাবস্থায় ধন্য হয়েছিলেন তাঁরা মহান রবের পক্ষ থেকে সুসংবাদ পেয়ে।
বিশ্বব্যাপী আজ আমরা মুসলিম জাতি সেই হেরার জ্যোতি থেকে যোজন যোজন দূরে থেকে শুধু নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করছি। ভাইয়ে ভাইয়ে লড়াই করে রক্তের বন্যা বইয়ে দিচ্ছি। নিজের মূল্যবান সময় ও শক্তি ভ্রান্ত পথে ব্যয় করে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি। বিশ্বব্যাপী বিরাজমান অস্থির অবস্থান থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদেরকে অতি দ্রুত ফিরে যেতে হবে মণি মুক্তো মোতি খচিত সেই গৌরবময় হেরার জ্যোতির সন্ধানে। সব সমস্যার সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ উত্তম সমাধান যেখানে লুকায়িত।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৪ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকিল্লাহ খায়ের আপু ।
মহান রাব্বুল আলামিন এই পথভ্রষ্ট মুসলিম জাতীর বোধোদয় দান করুণ। আমীন।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
অনেক অনেক ধন্যবাদ
জাযাকিল্লাহ খাইর
উদয় অস্তের মাঝে আপনার মূল্যবান উপস্থিতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইরান ।
শিক্ষনিয় পোষ্টটির জন্য ধন্যবাদ। কুরআন থেকে আমরা যত দুরে যাব আমরা ততই পতিত হব।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি, অতি গুরুত্বপূর্ণ সুন্দর উপলব্ধি ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি, অতি গুরুত্বপূর্ণ সুন্দর উপলব্ধি ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
অত্যন্ত খাঁটি কথা।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি, অতি গুরুত্বপূর্ণ সুন্দর উপলব্ধি ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনাকে ধন্যবাদ, সেই অনন্য মধুর, শিহরিত অনুভুতি আবার জাগিয়ে দেয়ার জন্য। জাযাকাল্লাহ।
অনেক দিন পর আপনার আন্তরিকতাপূর্ণ মূল্যবান উপস্থিতি, অতি গুরুত্বপূর্ণ সুন্দর উপলব্ধি ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি, অতি গুরুত্বপূর্ণ সুন্দর উপলব্ধি ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন