দামেস্কের পথে মহাবীর সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবী

লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ০৯ অক্টোবর, ২০১৬, ০৫:৫১:১৩ বিকাল



ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে ঘোড়া দামেস্কের পথে। উড়ছে ধূলি আল্লাহ্‌র যমীনে। ধূলো ধূসরিত বীর সিপাহীসালার। কিন্তু সেদিকে কারোরই ভ্রুক্ষেপ নেই। চোখে মুখে অদম্য বিজয়ের নেশা। দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলছে অশ্বারোহী। উঁচু নীচু টিলা ও গিরিপথ সমৃদ্ধ ঘন পাহাড়ী বনাঞ্চলে ঢাকা এক সুবিশাল প্রত্যন্ত এলাকা। টিলা ও গিরিপথের ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে পানির উৎস মূল সরু ঝর্ণাধারা ও গা ছমছমে দুর্বোধ্য এক সবুজ শ্যামল প্রান্তর। যেখানে সবুজের ছোঁয়ায় মিশে উঁচু নিচু অসংখ্য টিলা ও গিরিপথের সমন্বয়ে তিরী হয়েছে এক দুর্গম গিরি। পথ হারিয়ে ফেলার শঙ্কায় তাই কখনো মরু কাফেলারা এদিকে পা বাড়ায় না। অথচ এরই একটি অঞ্চলে টিলার আড়ালে নির্মিত হয়েছে ছোট্ট একটি তাঁবু। তাঁবুর অদূরেই অসংখ্য ঘোড়া শোভা পাচ্ছে। বিস্তৃত এক মাঠে। আর তাঁবুর ভেতরে বিশ্রাম নিচ্ছেন এক আরোহী বীরযোদ্ধা। এই আরোহী ব্যক্তিটিই হলেন, স্বয়ং সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবী। আশেপাশে বিশ্রামরত সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবীর সাথী যোদ্ধারা। প্রতিপক্ষের বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে সংখ্যায় তাঁরা মাত্র সাতশো জন। অথচ পূর্বে এঁরা সকলেই বহু অসম যুদ্ধের ময়দান থেকে বার বার বিজয়পতাকা ছিনিয়ে এনেছেন। দুর্দশা পীড়িত জাতীর আশার প্রদীপ হয়ে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ ঝটিকা হামলায় পারদর্শী গেরিলা বাহিনীর অশ্বারোহীগণও। এঁদেরকে বলা হয় ক্র্যাকের বীর অশ্বারোহী গ্রুপ। দুশমনদের নাম শুনলেই যাঁদের চক্ষুদ্বয় রক্ত জবার ন্যায় রাগে ক্ষোভে ভয়ঙ্কররূপে গর্জে উঠে। রক্তিম বর্ণ হয়ে। এঁরা আবেগদীপ্ত, উচ্ছ্বল, আপোষহীন, নির্ভীক ও প্রাণবন্ত অত্যন্ত কুশলী তরুণ যোদ্ধা।

বীর সৈনিকগণ জানতেন দামেস্কসহ অন্যান্য মুসলিম রাজ্যের আমীরদের লাগামহীন দুঃশাসন ও অন্যায় অনাচারে ভরা বিলাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে। তাঁদের অন্তরে দাউ দাউ করে জ্বলছিল আল্লাহ্‌র সৈনিক হিসাবে আল্লাহ্‌ প্রদত্ত আদেশ পালনের দুর্দমনীয় স্পৃহা। তাঁরা বিশ্বাস করতেন কোন অত্যাচারী শাসক, আমীর কিংবা খলীফা যদি সৃষ্টিকর্তার আইন লঙ্ঘন করে এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নার পরিবর্তে নিজের খায়েশের গোলাম বনে যায়, তখন তাদের বিরোধিতা করা আল্লাহ্‌র সিপাহীদের জন্য ফরয হয়ে যায়। একই সাথে মুসলিম মিল্লাতের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের জন্য যারা দায়ী, যারা ঈমানের দাবীকে অগ্রাহ্য করে শত্রুদের সাথে মিতালীর হাত প্রসারিত করেছে, আপন মিল্লাতের ইজ্জত, মানসম্মান ও গৌরববোধকে ভূলুণ্ঠিত করতে তাদের গোয়েন্দাদের আশ্রয় দিচ্ছে এমন গাদ্দারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো তাঁদের মূল দায়িত্ব ও কর্তব্য। এসব অন্যায়পরায়ণ নেতার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করা তাঁদের ঈমানের দাবী।

সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবী কায়রো থেকে চরম গোপনীয়তা রক্ষা করে রাতের অন্ধকারে এই বীর মুজাহিদগণকে এই দুর্গম প্রান্তরে সমবেত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সুলতানের নির্দেশ পাওয়া মাত্রই তাঁরা বিচ্ছিন্নভাবে সবার অগোচরে এখানে এসে সমবেত হয়েছেন। একনিষ্ঠ ও সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি ব্যতিরেকে পাশের সৈনিকটিও বুঝতে পারেননি তাঁর সাথীরা অতি গোপনে কোন অভিযানে শামিল হতে যাচ্ছেন। এদিকে ময়দানে লড়াইয়ের সাথীদেরকে সুনির্দিষ্ট স্থানে সমবেত হওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি নিজেও বেরিয়ে পড়েছেন কায়রো থেকে। তখনো কায়রোর হেড কোয়ার্টার যথারীতি পাহারা দিয়ে চলেছে রক্ষী বাহিনীগণ। শুধুমাত্র দু’জন উপদেষ্টা ও আলী বিন সুফিয়ান ছাড়া সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবীর অবস্থান সম্পর্কে পৃথিবীর কোন প্রাণীই টের পেল না। সবাই ছিলেন অজ্ঞাত। তাদের সকলেরই ধারণা ছিল সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবী কায়রোতেই অবস্থান করছেন।

সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবীর জানি দুশমনেরা তাঁর গতিবিধির উপর তখন কড়া নজরদারি রাখছিল। এদের মধ্যে ছিল খৃষ্টান গোয়েন্দা, সরকারী পদলোভী চাকুরীজীবি এবং কিছু মিসরীয় গাদ্দার মুসলমান। সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবী যে তাঁর সাতশো বাছাইকৃত অশ্বারোহী নিয়ে কায়রোর পথে যাত্রা করেছেন, তারা ঘুণাক্ষরেও সেটা জানতে পারলো না। যদিও সেই মুহূর্তে টিলার উপরে তিনজন ও চারজন টিলার নীচে টহল দিয়ে যাচ্ছিল। অথচ সবার অলক্ষ্যে সুলতানের বিস্বস্থ বাহিনী তখন ছুটে চলেছে দামেস্কের পথে। এক অবিশ্বাস্য স্পর্শকাতর লড়াইয়ের ময়দানে। গাদ্দার আমীর ও খৃষ্টানদের ক্রীড়ানক শাসকদের হাত থেকে অসহায় মানব জাতীকে রক্ষার ইস্পাত কঠিন দৃপ্ত অঙ্গীকার বুকে নিয়ে। এভাবেই একের পর এক বিজয়ের ঝাণ্ডা উড়িয়েছেন মুসলিম সাম্রাজ্যে দুষ্টু শাসকদের বিতাড়িত করে।



বিষয়: বিবিধ

১৪৩৪ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

378507
০৯ অক্টোবর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:২৩
স্বপন২ লিখেছেন : চমৎকার লেখা আপা,হৃদ্ধয় ছুঁয়ে যায়। সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবী(রHappy এ ধরনের ঈমানী চেতনার লোক কবে আসবে।
১৯ অক্টোবর ২০১৬ রাত ১০:১২
313795
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু পরম শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।


আসবেই একদিন। সেদিনের প্রতীক্ষায়।


আপনার মূল্যবান উপস্থিতি, সুন্দর উপলব্ধি ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
378513
০৯ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০৮:৫৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার ইতিহাসভিত্তিক লিখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
১৯ অক্টোবর ২০১৬ রাত ১০:১৩
313796
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু পরম শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।



আপনার মূল্যবান উপস্থিতি, সুন্দর উপলব্ধি ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
378524
১০ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ১০:৩৫
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : গৌরবজ্জ্বোল ইতিহাস তুলে ধরার জন্য জাযাকাল্লাহ খাইরান।
১৯ অক্টোবর ২০১৬ রাত ১০:১৩
313797
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু পরম শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।



আপনার মূল্যবান উপস্থিতি, সুন্দর উপলব্ধি ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
378563
১১ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ১০:৫৩
এটোম বোম লিখেছেন : assalamu alaikum warahmatullahi,ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ.

১৯ অক্টোবর ২০১৬ রাত ১০:১৪
313798
সন্ধাতারা লিখেছেন : ওয়ালাইকুম সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু পরম শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।

আপনার মূল্যবান উপস্থিতি, সুন্দর উপলব্ধি ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
378680
১৩ অক্টোবর ২০১৬ রাত ১০:৩১
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম খালামনি।
কেমন আছেন?!
আমার কথা মনে আছে তো?
আমি কিন্তু বেঁচে আছি। Happy Happy Good Luck
১৯ অক্টোবর ২০১৬ রাত ১০:১৭
313799
সন্ধাতারা লিখেছেন : ওয়ালাইকুম সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু মাই সান।


জ্বি ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ্‌।


মা কি কোনদিন সন্তানকে ভুলতে পারে?


কেমন আছ সবাই?

খুব ভালো থেকো এই দোয়াই করি সর্বদা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File