মায়াবী মাছের মর্মস্পর্শী বিরল অনুভূতি এবং দু’টি কথা.........!!!
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২২ আগস্ট, ২০১৬, ১২:৩৬:৪২ রাত
আমাদের বাসার ব্যাক গার্ডেনে আছে ছোট্ট একটি সৌখিন পণ্ড (পুকুর)। সবুজ শ্যামলিমায় ঘেরা সে ভালোবাসার পুকুরে বাস করে বিভিন্ন আকৃতি, রঙ ও বর্ণের কিছু রূপসী সোনালী রূপালী মাছ। তাদের জীবনাচরণে লুকিয়ে আছে কিছু অভাবনীয় মাধুরীময় ভালোলাগা আর শিক্ষণীয় বিষয়। যা পাশের দোলনায় বসে হৃদয়ের আকুতি দিয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মমতাময় পর্যবেক্ষণে প্রতিভাত হয়ে উঠে। ধীরে ধীরে। অনেক প্রশ্ন উৎসারিত হতে থাকে অন্তরের কোণে। মমতার এক সুগভীর সূক্ষ্ম অনুভূতি জাগিয়ে তোলে প্রাণে। আর বেদনায় বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠে! মনের অজান্তেই। আজো খুব মনে পড়ে! প্রথম প্রথম বিরক্তি এসে ভর করতো যখন এই আহ্লাদী মাছগুলোর জন্য খাবার কিনতে গিয়ে শপের পর শপ ঘুরতে হতো। ঘড়ির কাঁটায় চোখ পড়তেই আফসোসে অধীর হয়ে উঠতাম বাসায় ফিরার জন্য। কিন্তু প্রেমময়ী মাছগুলোর জন্য ছেলের দুশ্চিন্তা আর পেরেশানি দেখে নিশ্চুপ থাকতাম। অনেকটা অসহায় হয়ে।
অবিরতভাবে পুকুরে স্বচ্ছ পানি পরিবর্তন। দিনে সময়মত দু’তিনবার মাছগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট আহারের ব্যবস্থা করা। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ আনন্দমুখর রাখা। রাতে আলো সরবরাহ করা। অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা ইত্যাদি। পর্যাপ্ত অক্সিজেন যোগানোসহ নানা রকম আদর সোহাগে তারা বসবাস করে। এই মাছগুলোর পরিবারেও আছে সুখ-দুঃখ, আনন্দ বেদনার কাহিনী। যা আমাদের লোক চক্ষুর অন্তরালেই থেকে যায়। মজার ব্যাপার হল খাবার দেয়ার পর বড় অবিভাবক মাছগুলো সন্তানতুল্য ছোট মাছগুলোকে আগে খেতে সাহায্য করে। তারপর সবার খাওয়া শেষ হলে বৃত্তাকারে ছন্দময় গতিতে বেশ উপভোগ্য খেলায় আনন্দে মেতে উঠে। একের প্রতি অন্যের অপূর্ব মমত্ববোধ, সহানুভূতি ও প্রেমাবেগ অভিভূত করে তোলে।
শত ব্যস্ততার ভীড়েও এই মমতাময়ী মাছগুলোর প্রাণের আবেদন কিছুতেই উপেক্ষা করার উপায় নেই। তাদেরকে খাবার না দিয়ে নিজের মুখে আহার তুলে দেয়া সত্যিই অসম্ভব। একদিন হঠাৎ সারাহ নামের একটি মাছ খাচ্ছিল না। তার গায়ের রঙে পরিবর্তন লক্ষ্য করা হল। অপর মাছগুলো তাকে ঘিরে খুবিই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো। না খেয়ে সারাহ-এর চারিদিকে ভীড় করছিল তারা। শোকাবহ পরিস্থিতির আবহে বাধ্য হয়ে সারাহকে তাড়াতাড়ি পণ্ড থেকে তুলে সতেজ পানির মধ্যে একটি আলাদা বড় পাত্রে রাখা হল। সেইসাথে সারাহ-এর জন্য ঔষধ কিনতে শপে ছুটে গেল আমার বাবুটা। আর ইতিমধ্যেই সারাহ সকলকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেল প্রভূর ইচ্ছায়। শোকের ছায়া নেমে এলো সারাহ-এর পরিবার তথা আমাদের গোটা পরিবারে।
দুই পরিবারের বেদনার্ত হৃদয়ের মমতার পরশ আমাকে ভীষণভাবে স্পর্শ করলো সেদিন। আপন মানুষগুলোর কষ্টে হাহাকার করে উঠলো মন। আমার দু’নয়ন তাদের ব্যথায় অশ্রুসজল হয়ে উঠলো। উপলব্ধিতে এলো একটি মাছের প্রতি অন্য মাছগুলোর কত মায়া! কত অব্যক্ত ব্যথা! কি প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা!! আর আমরা আশরাফুল মাখলুকাত। স্রষ্টার সেরা সৃষ্টি। বোধ জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ, ধর্মে মুসলমান হয়ে প্রতিনিয়ত পাখীর মত ক্রস ফায়ারে মানুষ মারছি। মনগড়া অজুহাতে। কত শত সন্তানকে এতীম বানাচ্ছি! কত জননীর বুকের ধনকে ছিনিয়ে নিচ্ছি। কত বিধবার আর্তনাদ আর ক্রন্দনে আকাশ বাতাস ভারী হচ্ছে। তাদের মুখে হাসি নেই, পরিবারে সুখ নেই, নেই কোন জীবনের আনন্দ আনুভূতি! এদের আসল পরিসংখ্যান কি আদৌ আমরা রাখতে পাচ্ছি? তারপরও আমরা দাবী করি আমরা শ্রেষ্ঠতম ধর্মের মানুষ! অথচ ক্ষণস্থায়ী একটু ক্ষমতার মোহে আমরা হেন কোন কুৎসিত ঘৃণ্য কাজ নেই যা করছি না। কেন জানি আমার কেবলই মনে হয়, মাছগুলো আমাদের সাথে উপহাস করছে! বলছে! তোমাদের অন্তরদৃষ্টি দিয়ে দেখ। আমাদের কাছ থেকে শিক্ষা নাও! আমরা খোলা আকাশের নীচে কখনো বরফ জমানো হাড় কাঁপানো শীতে কিংবা প্রচণ্ড ঝড় বাদলের মধ্যেও একে অপরের কত আপন! আর তোমরা স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ মানবকূল! অথচ দয়ামায়া, মনুষ্যত্ববোধ ভুলে গিয়ে তোমরা একে অপরকে খুনের নেশায় উন্মত্ত। নিরীহ মানুষের উপর অমানুষিক বর্বরোচিত নির্যাতন চালাচ্ছো। জেলের ভিতরে এবং বাহিরে। ২৯ হাজার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন কারাগারে লক্ষাধিক মানুষকে চরম মানবেতরভাবে বন্দী করে রেখেছো। সেখানকার ভয়ঙ্কর শাস্তির কথা শুনলে আমাদেরও ভঁয়ে গাঁ কাঁপতে শুরু করে। কাটে নির্ঘুম রাত!
গায়ের জোরে ভোটবিহীন ক্ষমতারোহণ, হলমার্ক, শেয়ার বাজার, দেশ প্রেমিক সেনাদেরকে নৃশংসভাবে খুন, রিজার্ভ লুটের সাথে হাজারো তনুর সভ্রম লুট, বাবুল আক্তার, গুলশান, শোলাকিয়া, রামপাল, সুন্দরবন সহ দেশের হাজারো স্বার্থ অবলীলায় বিকিয়ে দেয়া এবং অগণিত ইস্যুকে ঢাকতে তৈরি হচ্ছে নিত্য নতুন ইস্যু। জুলুম, নির্যাতন, ব্যাঙ্ক ডাকাতি, শোষণ-লুণ্ঠন, সন্ত্রাস লুটতারাজ আজ এমন এক বিভীষিকায় পর্যায়ে উপনীত যে, ধর্মীয় শান্তির জায়গা মসজিদেও বিরাজ করছে দমবন্ধ পরিস্থিতি। প্রতিবাদের ভাষা দাউ দাউ করে জ্বলছে অসহায় মানুষের হৃদয়ের কোণে। কোনটা রেখে কোনটা বলবে আতঙ্কিত দিশেহারা মানুষ। অথচ হাজারো সমস্যাকে উপেক্ষা করে তাচ্ছিল্যভরে শান্তির নামে দেশটাকে আরও ভয়াবহভাবে অশান্ত, আতঙ্কগ্রস্থ ও উত্তাল করে তুলছে কিছু বর্ণচোরা রক্ত পিপাসু দানবরূপী মানুষ! কিন্তু এর শেষ কোথায়? নাকি এটাই একমাত্র পরিণতি?! একটি ক্ষুদ্র প্রাণীর হৃদয়ে মহব্বতের স্পর্শে যে প্রেম ভালোবাসা, দরদ ও সহানুভূতি আছে তাও কি আমাদের অন্তরে থাকতে নেই!? হতাশাব্যঞ্জক ও বেদনাদায়ক এই দুঃসহ পরিস্থিতিতে নিপীড়িত অসহায় মানবজাতিকে মুক্তির সন্ধান দিতে কবে আসবে সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবীর মত হাজারো বর্ষীয়ান দিগ্বিজয়ী অমর নেতাগণ। যারা ইসলামের শ্বাশত সৌন্দর্যে উদ্ভুদ্ধ হয়ে দুর্যোগপূর্ণ জাতির ত্রাণকর্তা রূপে আবির্ভূত হবে দেশে দেশে সত্যের আলোকবর্তিকারূপে। ইসলামের চেতনায় উজ্জ্বিবিত ও উদ্বুদ্ধ হয়ে বিপ্লবী ধারায় দুর্গম অক্টোপাসীয় সমাজের খোলস থেকে নিষ্পেষিত মানুষকে মুক্ত করে উপহার দিবে আরেকটি গৌরবমণ্ডিত প্রত্যাশিত ইতিহাস। আশা ভরা মন সেই কাঙ্ক্ষিত সোনালী ভোরের প্রতীক্ষায়...।
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৯ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখন ও স্পষ্ট মনে আছে।
বাংলা লিখতে না পারলে অন্তত বাংলিশ লিখুন।
প্রথম উপস্থিতি দিয়ে অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
তাহলে কিন্তু প্রথম আলুর হেড লাইন হতে ও পারেন।
ব্যস্ততার সময় সাবধান!
হু!
ব্রেকের ফাঁকে তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে কি দুরাবস্থা!
অনেক দিন পর আপনার লেখা পড়লাম
মাছের জন্য এতো মমতা থাকলে মানুষের জন্য মমতা না থেকে কি পারে ভাইটি!
অন্য একদিন বিস্তারিত লিখার ইচ্ছে থাকলো।
অনুবাদের কাজ কেমন হচ্ছে?
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ভালো থাকুন দোয়া রইলো। আমার জন্যও দোয়া করতে ভুলবেন না যেন।
সবাই ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ্। তোমরা সবাই ভালো তো আপু?
মন্তব্য করতে লগইন করুন