Rose অনুপম ধৈর্যের অনন্য নজীর!! Rose

লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ৩১ জুলাই, ২০১৬, ০৩:৫৯:৩৪ দুপুর



মাটির গভীর থেকে বীজ ফুঁড়ে অঙ্কুরিত হয় সবুজ কচি পাতা। আর হৃদয়ের গহীনে লুকায়িত থাকে সুপ্ত বিরল প্রেম ও অনুভুতির অতুলনীয় নির্যাস। উদ্গত হয়ে উঠে স্বমহিমায় কালের পরিক্রমায়। ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বল করছে তেমনি অভিভূত করা এক অবিশ্বাস্য সত্য ঘটনা। হৃদয়বিদারক যে ঘটনার মধ্য দিয়ে স্থাপিত হয়েছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। সৃষ্টি হয়েছে অনবদ্য এক নজিরবিহীন নারী চরিত্রের। যে ঘটনায় এক মহীয়সী নারী চরিত্রের অনুপম বৈশিষ্ট্য ও বহিঃপ্রকাশের এক মহত্বতম সৌন্দর্যের চিত্র অত্যন্ত মর্মস্পর্শীরূপে পরিস্ফুটিত হয়েছে। একজন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ধৈর্যশীলা রমণীর অসামান্য প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা, সহিষ্ণুতা ও নেক গুণাবলীর স্বাক্ষর খুঁজে পাওয়া যায়, এই অসাধারণ ঘটনাটির মধ্য দিয়ে।

হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত আবু তালহা (রাঃ) এর সাথে হযরত উম্মে সুলাইম (রাঃ) এর বিবাহিত জীবনে আনন্দের ঝলক হিসাবে এসেছিলো খুব সুন্দর ফুটফুটে একটি পুত্র সন্তান। নাম ছিল উমাইর। তার ছিল ছোট একটি খেলার সাথী। সুন্দর সোহাগী পাখী। যার সাথে সে খেলত প্রাণের উচ্ছলতায়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই সেই শিশুটির সাথে মিষ্টি কৌতুক করে বলতেন, হে উমাইর! তোমার বুলবুলির খবর কি?

উমাইর এর বাবা হযরত আবু তালহা (রাঃ) তার একমাত্র পুত্র সন্তানকে প্রাণাধিক ভালবাসতেন। একদিন হঠাৎ ছেলেটি অসুস্থ হলে তিনি ভীষণ উদ্বিগ্ন ও অস্থির হয়ে উঠলেন। তিনি প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় নিয়মিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর সাহচর্যে হাজির হতেন। এক বিকেলে তিনি গৃহ থেকে বাহিরে গমন করেন। আর তাঁর অসুস্থ ছেলেটি এরই মাঝে মহিমাময়ের ইচ্ছায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। সন্তানহারা শোকার্ত জননী অসীম ধৈর্যের সাথে পরম মমতায় মৃত ছেলেকে গোসল করালেন। কাফন পরিয়ে সুগন্ধি মেখে দিলেন। তারপর যত্ন সহকারে ঢেকে গৃহের এক কোণে শুইয়ে রাখলেন।

এরপর হযরত আনাস (রাঃ) কে পাঠালেন হযরত আবু তালহা (রাঃ) কে ডেকে আনতে। তবে বলে দিলেন আবু তালহা (রাঃ) কে যেন সন্তানের মৃত্যু সংবাদ দেয়া না হয়। আবু তালহা (রাঃ) সেদিন রোজারত অবস্থায় ছিলেন। উম্মে সুলাইম (রাঃ) স্বামীর জন্য খাবার রান্না করলেন। অসম্ভব রকম ক্লান্ত হয়ে আবু তালহা (রাঃ) ঘরে ফিরেই সন্তানের ব্যাপারে জানতে চাইলেন। উত্তরে স্ত্রী জানালেন, তাঁর আদরের সন্তান এখন আগের চেয়ে শান্ত। পুত্রের মৃত্যু সংবাদ ক্লান্ত স্বামীকে না জানিয়ে যথারীতি তাঁকে আপ্যায়িত করলেন। পরিবারের সদস্যদেরকে পূর্বেই নিষেধ করেছিলেন আবু তালহা (রাঃ) কে মৃত্যু সংবাদ না জানানোর জন্য। এ সংবাদ তিনি নিজের মুখে জানাবেন বলে। হযরত আবু তালহা (রাঃ) তাঁর স্ত্রীর কথা শুনে ভেবেছিলেন তাঁর সন্তান উমাইর সুস্থ হয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। এই ভেবে তিনিও নিশ্চিন্ত মনে রাতের খাবার খেয়ে বিশ্রামে গেলেন। এমনকি সকালে বিছানা ছেড়ে গোসলও সেরে নিলেন।

আবু তালহা (রাঃ) গৃহ থেকে বাহিরে যাওয়ার আগে উম্মে সুলাইম (রাঃ) তাঁকে শান্ত কোমল কণ্ঠে বললেন, কেউ যদি কারো কাছে কোনো কিছু গচ্ছিত রেখে আবার সেটা তাঁর কাছে ফেরত চায় তবে তার কি অধিকার আছে তা ফেরত না দিয়ে নিজের কাছে আটকে রাখার? আবু তালহা (রাঃ) বললেন, না তার এ অধিকার নেই। হযরত উম্মে সুলাইম (রাঃ) এবার সান্ত্বনার সুরে বললেন, আপনার সন্তানের ব্যাপারে সবর করুণ। আল্লাহ্তা’আলা তাকে আমাদের কাছে গচ্ছিত রেখেছিলেন এরপর তিনিই আবার ফিরিয়ে নিয়েছেন। আবু তালহা (রাঃ) এহেন পরিস্থিতিতে পুত্রের মৃত্যুর সংবাদ শ্রবণে রাগান্বিত হলেন। উপরন্তু রাতের আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট স্ত্রীর নামে অভিযোগ করলেন। নবীজি পুরো ঘটনা শুনে খুবই বিমুগ্ধ হলেন এবং দুয়া করে বললেন, আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের এ রাতে বরকত দান করুণ। তারপর আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে আবদুল্লাহ নামে আরেকটি পুত্র সন্তান দান করলেন। পরবর্তীতে একে একে তিনি সাত পুত্র সন্তানের জনক হলেন। যারা প্রত্যেকেই ছিলেন কুরআনের আলেম। সহীহ বুখারীঃ ১৩০১, মুসনাদে আহমদঃ ১২০৮, ফাতহূল বারী ৩/২০১, তবাকাতে ইবনে সাদ ৮/৪৩১।

আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রাহঃ) উম্মে সুলাইমের (রাঃ) এর অনন্য বৈশিষ্ট্য ও মহত্ব বর্ণনা করে বলেছেন, তিনি উক্ত ঘটনার মাধ্যমে তাঁর প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা, সহিষ্ণুতা ও নেক গুণাবলীর পরিচয় দিয়েছেন। প্রথমে স্বামীকে পুত্রের মৃত্যু সংবাদ না জানিয়ে খুবই আন্তরিকতার সাথে প্রিয় মানুষটিকে নিশ্চিন্তে রাত্রি যাপনের সুযোগ দিয়েছেন। ভালোবাসার মানুষটি যদি অসুস্থ কিংবা শোকে কাতর হয়ে পড়ে। এই আশঙ্কায়। কাতরতা নিরসনে সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে সন্তানের মৃত্যুকে গচ্ছিত বস্তুর ফেরৎ নেয়ার সাথে উদাহরণ দিয়ে শোকার্ত স্বামীকে যেমন সান্ত্বনা দিয়েছেন তেমনি আল্লাহ্র ফয়সালাকে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। উম্মে সুলাইমের (রাঃ) এর জীবনের সমস্ত অস্ত্বিত্ব জুড়ে ছিল আল্লাহ্‌র প্রতি অগাধ ভালোবাসা। আর এটাই মুমিনের শান। আল্লাহ্ তা’আলা যখন তাঁর উদ্দেশ্য ও নিয়তের সততা সম্পর্কে জানলেন তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করলেন এবং তিনি আল্লাহ্র রাসূলের বরকতের দুয়া লাভ করলেন। এক্ষেত্রে শিক্ষণীয় বিষয় হল সর্বাবস্থায় আল্লাহ্ তা’আলার ফয়সালাকে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয়া। কঠিন বিপদে আপদে ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহ্র কাছে উত্তম প্রতিদান প্রত্যাশা করা।

একমাত্র স্নেহাস্পদ পুত্রের শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে প্রেম ও ভালবাসার তাগিদে এভাবেই অসীম ধৈর্যের সাথে স্বামীর প্রতি মুহাব্বত, আন্তরিকতা প্রদর্শনে এক অনন্য নজীর স্থাপন করেছেন উম্মে সুলাইমের (রাঃ)। সেইসাথে আল্লাহ্‌ সুবহানুতা’আলার সিদ্ধান্তকে হেকমত ও সমঝদারির সাথে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়ে ধৈর্যধারণের এক অনুপম উদাহরণ পেশ করেছেন মানবকূলের জন্য। আল্লাহু আকবর।



বিষয়: বিবিধ

১৩৮৬ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

375641
৩১ জুলাই ২০১৬ বিকাল ০৪:১৪
কুয়েত থেকে লিখেছেন : মাশাআল্লাহ চমৎকার লেখা অনেক ভালো লাগলো হৃদয়ের গহীনে লুকায়িত থাকে সুপ্ত বিরল প্রেম ও অনুভুতির অতুলনীয় নির্যাস। উদ্গত হয়ে উঠে স্বমহিমায় কালের পরিক্রমায়। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
০১ আগস্ট ২০১৬ রাত ১১:৩০
311543
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।

আপনাদের নিরন্তর প্রেরণার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা।

জাজাকাল্লাহু খাইর।
০৩ আগস্ট ২০১৬ দুপুর ১২:৫৭
311578
কুয়েত থেকে লিখেছেন : অনেক অনেক ধন্যবাদ
০৫ আগস্ট ২০১৬ দুপুর ০৩:৪৭
311703
সন্ধাতারা লিখেছেন : অন্নেক শুকরিয়া।
375661
৩১ জুলাই ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:১৯
বিন হারুন লিখেছেন : খুব ভাল লাগল, এই ঘটনাটি হারানোর ব্যদনা ভুলে যেতে সাহায্য করে
সুন্দর লেখনির জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ Rose
০১ আগস্ট ২০১৬ রাত ১১:৩০
311544
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।

আপনাদের নিরন্তর প্রেরণার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা।

জাজাকাল্লাহু খাইর।
375664
৩১ জুলাই ২০১৬ রাত ০৯:০৫
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : আপি, আসসালামু আলাইকুম। এটা হাদিসে পড়েছি কিন্তু কখনো এত সুন্দরভাবে মন ছুয়ে যায়নি যেভাবে তুমি বর্ণনা দিয়েছ। এই গল্পটা প্রথমে অবিবাহিত ছেলে মেয়েদের মাঝে মুগ্ধতা তৈরী করবে কিন্তু পরের স্টেজে না পাওয়ার প্রাপ্তিতে তারা দীর্ঘশ্বাস ছাড়বে, মন খারাপ করবে। অনেক সুন্দর লিখেছ আপি জাঝাক আল্লাহ।
০১ আগস্ট ২০১৬ রাত ১১:৩৪
311545
সন্ধাতারা লিখেছেন : ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ছোট আপি।

তোমার স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ও রেখে যাওয়া সুন্দর অনুভূতি মুগ্ধ করলো খুউব।

জাজাকাল্লাহু খাইর।
375665
৩১ জুলাই ২০১৬ রাত ১০:৩৩
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
বাস্তব ঘটনা যেমন মহত্বের শিক্ষা দেয়, তেমনি লেখিকার কলমও প্রশংসার দাবী রাখে, মা-শা আল্লাহ, চমৎকার বর্ণনা ভঙ্গিকে আরো আকর্শনীয় লেগেছে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এমন ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহন করে জীবন চলার তাওফীক দান করুক। আমীন।

জাযাকিল্লাহ খাইর আন্টি।

০১ আগস্ট ২০১৬ রাত ১১:৩৯
311546
সন্ধাতারা লিখেছেন : ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় আংকেলজ্বী।

আপনার উপস্থিতি ও মন্তব্য সবসময়ই আমার জন্য এক বিশেষ প্রাপ্তি। আজকেরটিও ব্যতিক্রম নয়।

আপনাদের নিরন্তর প্রেরণার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা।

জাজাকাল্লাহু খাইর।
375684
০১ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৯:৫৮
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : চমৎকার হয়েছে | খুবই ভালো লাগলো এই লেখাটা | ধন্যবাদ নেবেন |
০১ আগস্ট ২০১৬ রাত ১১:৪০
311547
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।

আপনাদের নিরন্তর প্রেরণা ও উৎসাহ দানের জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা।

জাজাকাল্লাহু খাইর।
375739
০১ আগস্ট ২০১৬ রাত ০৮:০২
আফরা লিখেছেন : এটা আমি মামনির মুখে অনেকবার শুনেছি ।আমি ও পড়েছি । অনেক শিক্ষনীয় এগুলো যত পড়া যায় শুনা যায় ততই ভাল এতে কিছুটা হলে ও ঈমান মজবুত হয় ।

অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু ।
০১ আগস্ট ২০১৬ রাত ১১:৪৪
311548
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু আফ্রামনি।

সুন্দর বলেছো। সহমত। আসলেই ঈমানকে তাজা রাখতে বেশী বেশী উত্তম জিনিস স্মরণে রাখা প্রয়োজন।

তোমার জন্য নিরন্তর শুভেচ্ছা ও দোয়া।

জাজাকাল্লাহু খাইর।
375909
০৫ আগস্ট ২০১৬ সকাল ১১:১০
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সাহাবীদের মত মজবুত ঈমান দান করুন এবং আমাদেরকে বিজয় দান করুন !
০৫ আগস্ট ২০১৬ দুপুর ০৩:৫১
311704
সন্ধাতারা লিখেছেন : সালাম। জাজাকাল্লাহু খাইর সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
০৫ আগস্ট ২০১৬ রাত ১০:৩৮
311711
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস সালাম
১৭ আগস্ট ২০১৬ বিকাল ০৫:১০
312082
সন্ধাতারা লিখেছেন : ভালো থাকবেন ছোট ভাই। দোয়া রইলো।
376386
১৭ আগস্ট ২০১৬ সকাল ১০:০৫
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : আমি বুঝতে পারছিনা আমার কি করা উচিত তাই বাধ্য হয়ে সাহায্য চাওয়া। প্লিজ আপি যদি পার একটু সাহায্য কর। যাহরাহ এর বাবা ইসলামকে গুরুত্ব দেননা, গতানুগতিক জীবন তার। পারিবারিক কলহের জন্য যাহরাহ এর চাচাদের সাথে সম্পর্ক নেই। মামা,খালা-খালু অর্থাৎ মায়ের দিকের আত্নীয়রা অধিকাংশই ব্যাংকার। মামা, খালারা নিত্যনতুন ব্যাংকার ছেলের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয় যাহরাহ এর বাবার কাছে। যাহরাহ তার বাবাকে বোঝাতে পারেনা যে, সুদ রিলেটেড কাজকর্ম কত জঘন্য ব্যাপার, আর ইসলামের দৃষ্টিতে কত ভয়ানক। "আরে এত ইসলাম মেনে এই যুগে চলা যায় নাকি? সরকারী ব্যাংকার ছেলের পাওয়ার, টাকা পয়সা, পরিচিতি কোনটার অভাব? জীবনে টাকা পয়সা ছাড়া চলা যায় নাকি? এমন ভাবেই তার বাবা ভাবেন।" সপ্তাহখানেক আগেই বাবা তাকে এক ব্যাংকার পাত্রকে দেখানোর জন্য বাধ্য করেই নিয়ে যায়। আমাকে বলল, কি করণীয়? বলেছিলাম, নিকাব পরে যেতে। যদি বরের পুরুষ কোন আত্নীয়-স্বজন সাথে আসে তবে তাদের সরাসরি বলতে যে, ইসলাম এটা এলাউ করেনা যে, আপনাদের সামনে আমি মুখ খুলব আর আপনারা আমাকে দেখবেন, তাই আমি শুধু বরের সামনে মুখ খুলতে রাজি আছি। বর যখন তোমার সাথে কথা বলতে চাইবে বা মুখ খুলতে বলবে, তখন বরকে বলবে, "নেকাব খোলার আগে আমার কিছু কথা আছে। আমার আপনার ব্যাংক জব নিয়ে আপত্তি আছে। দেখেন আল্লাহ বলেছেন, যারা সুদের পক্ষ অবলম্বণ করে তারা যেন আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেয়। সুদের দ্বারা ৭০টির বেশি গুনাহ হয় তার মাঝে নিম্নতম গুনাহ হল নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচার। সুদ দাতা, সুদ গ্রহীতা, সুদের লেখক ও তার সাক্ষী সকলেই সমান অপরাধী এবং জাহান্নাম তাদের আবাস। নামাজ কবুলের ফরজ হল-পবিত্র শরীর, পবিত্র কাপড়, পবিত্র নামাজের স্হান, পবিত্র কাপড় দ্বারা সতর ঢাকা। কিন্তু ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত হল হালাল ইনকাম। হারাম ইনকামের টাকায় কেনা খাবারে যে শরীর গড়ে ওঠে তা অপবিত্র ও হারাম, যে কাপড় কেনা হয় তা অপবিত্র ও হারাম, যে ঘর তৈরী করা হয় সেই জায়গাও অপবিত্র সেই জায়গায় নামাজও হারাম। তাই আপনার সুদের সাথে জড়িত থেকে আপনার নামাজ, রোজা, হজ্জ কোন ইবাদতই কবুল হবেনা। আপনার সাথে আমার বিয়ে হলে আমিও আপনার হারাম উপার্জনের ভাগিদার, হারাম ভক্ষণকারীণী হব, জাহান্নামের আগুন আমার জন্যও বৈধ হয়ে যাবে। তাই আমি রাজি হতে পারছিনা।"
আমি জানতাম ও পারবে কারণ ওর যে পরিমাণ সাহস তা আজকালকার দীনি ছেলেদের মাঝেও খুব কম দেখা যায়। আর ও সত্যি সত্যি বরের সামনে আর তার ফ্যামিলির সামনে আমার কথাগুলো মুখস্ত বলে গেছে। পাত্র তার মা বাবা আর চাচা, ভাইকে নিয়ে আসছিল ওকে দেখার জন্য। পরে ওকে পাত্রও নেকাব খুলতে বলার সাহস পায়নি তারা চলে গেছে। এরপর থেকেই যাহরাহ এর বাবা ওর উপর মারাত্নক রেগে গেছে। আর রাগটা এমন পর্যায়ের যে তার চিন্তাভাবনা এমন হয়ে দাড়িয়েছে, আমি তোকে চরম শিক্ষা দিব। আমি তোকে ব্যাংকার পাত্রের সাথেই বিয়ে দিব দেখি তুই কি করতে পারিস? তার মামা, খালা, খালুরাও কাজে লেগে গেছে। এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ছেলে ঠিক করা হয়েছে। তার খালাও এমন কিছু পাত্র নিয়ে হাজির হয়েছে। আমি আমার পরিচিত মানুষজনের কাছে বেশ কিছুদিনব যাবত দীনি পাত্রের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি কিন্তু এখন পর্যন্ত পাইনি। যাদের পাই সবাই গতানুগতিক। ভাল চেহারা, ভাল চাকরি এখন সুন্দর বউ চাই। দীনি পাত্র দাবিদার একজন দুজন পেলেও তারাও ইসলামের নানান অনুষঙ্গ পালনে অজুহাত পেশ করে। আবার অন্যরা একদম বেকার। জানিনা কি হতে যাচ্ছে? যেন তামাশা হচ্ছে। যাহরাহ দীনের ব্যাপারে খুবই কড়া। ইসলামের এটা মানছি কিন্তু ওটা মানতে রাজিনা- এমন ব্যাপারগুলো সে মানতে রাজিনা। দীনি পাত্র বলতে সে দীনি ছেলেই মিন করে, যারা অজুহাত পেশ করেনা। তোমার পরিচিতদের মাঝে এমন কেউ কি আছে, যে দীনি,হালাল ইনকাম করেন আর দীনি পাত্রী খুঁজছেন? যাহরাহ বিবিএ ২য় বর্ষের ছাত্রী, চট্টগ্রামের স্হানীয়।
১৭ আগস্ট ২০১৬ বিকাল ০৫:৩১
312083
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ছোট আপি।

আপাত দৃষ্টিতে তোমার মন্তব্যটি জটিল হলেও এর সহজ সমাধান হল পরিবারের কাছে নিজের অবস্থান আত্মবিশ্বাসের সাথে উপস্থাপন করা যে, কোন অবস্থাতেই তাঁদের সিদ্ধান্ত তুমি মেনে নিবে না। এতে সারাজীবন অবিবাহিত থাকলেও নয়। বরং তারা যেন তোমার ইচ্ছে ও মতকে প্রাধান্য দেয় কেননা জীবনটা একান্তই তোমার।

নিজের পাহাড়সম অজ্ঞতা ও দ্বীনতা থাকা সত্ত্বেও আমার পরামর্শ হল আল্লাহ্‌র কাছে সাহায্যপ্রার্থী হওয়া। বেশী বেশী নফল নামায পড়ে আল্লাহ্‌ সুবহানু তা’আলার কাছে নিজের আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়ে মিনতি সহকারে কল্যাণ ও মঙ্গলজনক সমাধান প্রত্যাশা করা।

আপাতত এরকম কেউ নেই আপুমণি। সবার কাছে আমার একান্ত অনুরোধ রইলো সাধ্যমত সকলেই যেন তোমার সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন।

জাজাকাল্লাহু খাইর।
১৭ আগস্ট ২০১৬ রাত ১১:০৬
312084
সন্ধাতারা লিখেছেন : হঠাৎ করে এক ছেলের কথা মনে পড়লো, তাই আবারো লিখা। তোমার বান্ধবীর সাথে যোগাযোগের উপায় কি? ছেলেটি বর্তমানে সুইডেনে সেটেলড। বাহ্যিক দৃষ্টিতে দ্বীনি বলে মনে হয় আমার। দাঁড়ি আছে। আগে ইংল্যান্ডে ছিল। আগ্রহী হলে cv এবং ছবি দিতে হবে। শুধুমাত্র ছেলের জন্য। পরে হয়তো পারিপারিকভাবে যোগাযোগ করবে।

বিস্তারিত জানিও।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File