দু’টি দিলে জোনাকী জ্বলে... Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২৪ জুলাই, ২০১৬, ০১:৩৭:২৮ দুপুর



মাগরিবের নামায আদায় করে বাড়ীর বারান্দায় এসে দাঁড়ায় ফাতিমা। নারিকেল গাছের ফাঁকে লুকানো চাঁদের মিষ্টি কিরণ ছড়িয়ে আছে পুরো আঙিনা জুড়ে। তন্ময় হয়ে নিবিষ্ট চিত্তে স্রষ্টার নিপুণ কারুকার্যময় সৃষ্টির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করে সে। ধবধবে জোছনায় ধীরে ধীরে একটি চেয়ার টেনে আঙিনায় বসে পড়ে ফাতিমা। আশেপাশে সোনালী জোনাকীরা দ্যুতি ছড়াচ্ছে। মুগ্ধ করা সুর তুলে। সে সুর যেন ঝংকৃত হচ্ছে তার হৃদয়ে। এরই মাঝে উঠানে লাগানো হাসনা হেনা ফুলের প্রাণ থেকে সুবাস ভেসে আসছে। তাকিয়ে আছে সে মন্ত্রমুগ্ধের মত আর ভাবছে সোলাইমানের কথা।

আচম্বিত কাঁধে কারো হাতের স্পর্শে সম্বিৎ ফিরে আসে ফাতিমার। চোখ ফিরাতেই সোলাইমানের পরিচিত মিষ্টি কণ্ঠ! আনন্দাবেগে উদ্বেলিত হয়ে উঠে ফাতিমার মন। ছয় মাসের বিবাহিত জীবনে প্রতি মুহূর্তের পতিসঙ্গ যেন জান্নাতী সুখের অনুভূতি। মনে হয় তার কাছে। ছোটবেলায় মা’কে হারিয়ে অনেক নিষ্ঠুরতার মাঝে বিমাতার কাছে বড় হয়েছে সে। বিয়ের পর সোলাইমানের প্রাণভরা নিখাদ প্রেম-ভালোবাসা যেন তার জন্য প্রভূর এক অপরিমেয় করুণাপূর্ণ দান। মমতাময়ী শাশুড়ি ও স্নেহভাজন এক দেবরের সংসারে তার সমস্ত মন প্রাণ জুড়ে থাকে সোলাইমানের পবিত্র সাহচর্য ও নিষ্কলুষ সহযোগিতা।

আজ তিন দিন হল সোলাইমান দ্বীনের দাওয়াতি কাজে বের হয়েছে। এ কাজে ফাতিমাই তাকে উৎসাহিত করেছে। তারপরও ফোনে কথা দেরীতে হলে ফাতিমার হৃৎপিণ্ড ধক ধক করে উঠে। নাড়ীর গতিও দ্রুত বেড়ে যায়। অজানা আশঙ্কায়। প্রতিটি ক্ষণ এবং দিন সে গুণতে থাকে পরম আগ্রহ ভরে। ফাতিমার মন আজ বেশ উৎফুল্ল। সপ্তম দিনে সোলাইমানের বাড়ীতে ফেরার পালা। ভাবতেই অন্তরে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়। নয়নে ব্যাকুলতা আর হৃদয়ে অস্থির প্রতীক্ষা। বেদনাদগ্ধ জীবনে সোলাইমান দিয়েছে তাকে মধুময় প্রশান্তির এক মায়াভরা জগত আর স্বর্ণময় সুখ। যা সে কোনদিন কল্পনাও করেনি।

ভালোবাসাপূর্ণ জীবনে সোলাইমানের অবর্তমানে শাশুড়িকে সে আপন মায়ের মত মন প্রাণ ঢেলে সেবা শ্মশ্রুষা করে। দেবরের সাথে পর্দা করলেও সে তাকে ছোট ভাইয়ের মত স্নেহ করে। শাশুড়ির মনেও সে মেয়ের আসন তৈরি করে নিয়েছে ইতিমধ্যেই। মা হারা জীবনে একজন দরদী মা পেয়ে সে এখন অনেক খুশী। অপরদিকে সোলাইমানের কোন বোন না থাকায় বৌমাকে মেয়ে হিসাবে পেয়ে ভীষণ আনন্দিত তার মা। পতিজ্বীকে সর্বত সন্তুষ্ট রাখতে সে আপ্রাণ চেষ্টা করে। অফিসে কিংবা বাড়ীতে কোন বিপদাপদ হলে দু’জনেই পরামর্শ করে সুষ্ঠু সমাধান করে। এতে সোলাইমানের মনটা অনেক হালকা হয়ে যায়। এভাবেই দু’জন দু’জনকে হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসে। সোলাইমানের চোখে ফাতিমা যেন জান্নাতী হুর। আর ফাতিমার দৃষ্টিতে তার স্বামী একজন ফেরেশতা তুল্য মানুষ।

ফাতিমা সবসময় স্বামীর সুখ ও মঙ্গল চিন্তায় পেরেশান। এর পরেও কোন কাজে ত্রুটি চোখে পড়লে সোলাইমান অনেক সুন্দর করে কোমল ভাষায় ফাতিমার ভুলটা সংশোধন করে দেয়। আর এই শিক্ষণীয় আচরণকে ফাতিমা অনেক সন্মান ও শ্রদ্ধার সাথে বিবেচনা করে। মনে তার এক প্রকার আনন্দানুভূতি জেগে উঠে। স্বামীর ব্যাপারে। আর কোন কাজে প্রশংসা করলে সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। পরে আরও ভালো ভালো কাজের জন্য সে নিজেই নিজের প্রতিযোগী হয়ে উঠে।

কোন কারণে সোলাইমান কটূক্তি করলে ফাতিমা প্রতিউত্তর না করে চুপ করে থাকে। সব দোষ নিজের বলে বিনয়ের সাথে ক্ষমা চেয়ে নেয়। এতে সোলাইমানের হৃদয়ে অনুশোচনা বোধের জন্ম হয় আর স্ত্রীর প্রতিও ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ অনেক গুণে বেড়ে যায় তার। আবার ফাতিমা কোন বিষয়ে অভিমান করলে সোলাইমান এমন সব আচরণ করে যে, এক ফালি হাসির মাঝে সব মান অভিমান মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায় এবং স্বামীর প্রতি তার অনুরাগের মাত্রা আরও তীব্র ও গভীর হয়।

বাড়ীতে প্রায়ই দ্বীনি মজলিসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করে সোলাইমান। আর মন দিয়ে পরিবারের সবাই শোনে। সেখানে শান্তি আর প্রশান্তির ছায়ায় বিরাজিত থাকে এক সুশীতল আবহ। অন্তরে পয়দা হয় দ্বীনের ভাবালুতা। এভাবেই দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য করে বীজ বপন। কাঙ্ক্ষিত কল্যাণে ভরপুর তাদের যাপিত জীবন। ন্যায় ও সত্য পথের জোনাকীরা তখন অবিরত জ্বলে। রহমতের বরিষণে প্রস্ফুটিত হতে থাকে সতেজ শুভ্র গোলাপগুলো যার সুবাস কেবলিই ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় প্রতিটি মহতী দিলে।



বিষয়: বিবিধ

১২১৪ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

375157
২৪ জুলাই ২০১৬ দুপুর ০২:১৬
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ পিলাচ
২৪ জুলাই ২০১৬ দুপুর ০২:৪২
311127
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু সুহৃদ শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।

আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
375161
২৪ জুলাই ২০১৬ দুপুর ০২:৩৩
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! মাশ-আল্লাহ হৃদয় প্রশান্তি লাভ করলো লেখাটি পড়ে। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। আমাদের সকলকেও।
২৪ জুলাই ২০১৬ দুপুর ০২:৪৬
311128
সন্ধাতারা লিখেছেন : ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু প্রাণপ্রিয় ছোট আপু।

তোমার সুন্দর প্রেরণাপূর্ণ ভালোলাগা অনুভূতিতে আনন্দিত হলাম।

সুন্দর দোয়ায় আমীন।

তোমাদের সকলের জন্য অন্নেক অন্নেক দোয়া ও শুভেচ্ছা।

জাজাকাল্লাহু খাইর।
Good Luck Good Luck Good Luck
375184
২৪ জুলাই ২০১৬ রাত ০৮:০৬
শেখের পোলা লিখেছেন : আস সালামু আলাইকুম। মা শা আল্লাহ গল্প সুন্দর হয়েছে। ভাল থাকুন।
২৫ জুলাই ২০১৬ রাত ০৮:০৪
311167
সন্ধাতারা লিখেছেন : ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।

আপনার সুন্দর প্রেরণাপূর্ণ ভালোলাগা অনুভূতিতে আনন্দিত হলাম।
375197
২৪ জুলাই ২০১৬ রাত ১১:২৬
আল ইমরান লিখেছেন : অসাধারণ গল্প। ভালো লাগলো এগিয়ে যান।
২৫ জুলাই ২০১৬ রাত ০৮:০৫
311168
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু সুহৃদ শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।

আমার লিখায় আপনার মূল্যবান প্রথম উপস্থিতি ও প্রেরণাপূর্ণ সুন্দর ভালোলাগা অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
375201
২৫ জুলাই ২০১৬ রাত ০২:০৩
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু। চমৎকার। ভালো লাগছে।
২৫ জুলাই ২০১৬ রাত ০৮:০৬
311170
সন্ধাতারা লিখেছেন : ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।

আপনার সুন্দর প্রেরণাপূর্ণ ভালোলাগা অনুভূতিতে আনন্দিত হলাম।
375207
২৫ জুলাই ২০১৬ রাত ০২:৪৮
কুয়েত থেকে লিখেছেন : সে সুর যেন ঝংকৃত হচ্ছে তার হৃদয়ে। এরই মাঝে উঠানে লাগানো হাসনা হেনা ফুলের প্রাণ থেকে সুবাস ভেসে আসছে। অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২৫ জুলাই ২০১৬ রাত ০৮:০৭
311171
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু সুহৃদ শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।

আপনার সুন্দর প্রেরণাপূর্ণ ভালোলাগা অনুভূতিতে আনন্দিত হলাম।

জাজাকাল্লাহু খাইর।
৩১ জুলাই ২০১৬ রাত ০৩:৩৩
311417
কুয়েত থেকে লিখেছেন : مرحبا بكم بارك الله فيك وجزاك الله خيرا
০৪ আগস্ট ২০১৬ রাত ১০:৩৭
311663
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক অনেক শুকরিয়া।
০৬ আগস্ট ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:১২
311731
কুয়েত থেকে লিখেছেন : মাশাআল্লাহ হৃদয় প্রশান্তি লাভ করলো আপনার লেখাটি পড়ে। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। অনেক অনেক ধন্যবাদ Good Luck Good Luck
০৭ আগস্ট ২০১৬ বিকাল ০৪:২০
311760
সন্ধাতারা লিখেছেন : সর্বাবস্থায় সুস্থ ও ভালো থাকুন।
375230
২৫ জুলাই ২০১৬ দুপুর ০২:৫০
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : এমন গল্প লেখার উদ্দেশ্য আমার অস্থিরতাকে হাজারগুণ বাড়িয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়!!!!
আপা, i'm going to mad....
২৫ জুলাই ২০১৬ রাত ০৮:০৯
311172
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু সুহৃদ ছোট ভাইয়া।

অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ার কারণ কি?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File