মধুময় দাম্পত্য জীবনের আশে ….
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১৯ জুলাই, ২০১৬, ০৬:১৫:৪০ সন্ধ্যা
অমূল্য প্রেম ও ভালোবাসাপূর্ণ বিবাহিত জীবনের রত্নতুল্য মুহূর্তগুলো প্রত্যেক নর-নারীর কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন। মধুময় দাম্পত্য জীবনের আশে অনাগত দিনগুলি রঙিন হয়ে উঠবে, সুখের বসত গড়বে, এমন অনেক সুন্দর এক পৃথিবীর বুক ভরা স্বপ্ন নিয়েই ঘর বাঁধে নারী ও পুরুষ। দু’টি বৃন্তের দু’টি মুক্ত বিহঙ্গ মানুষ দায়িত্বহীন জীবন থেকে বেরিয়ে এসে প্রবেশ করে দায়িত্বপূর্ণ কর্তব্যপরায়ণতায় ভরা এক পূর্ণতার জগতে। তাই শুরু থেকে একান্ত ভালোবাসার এই জায়গাটিতে অবিশ্বাস, কার্পণ্যতা, নির্দয়তা কিংবা উদাসীনতার দেয়াল টেনে দেয়া অনুচিত। পারস্পারিক হৃদ্যতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ নির্মল নিখাদ ভালোবাসা উজাড় করতে সচেষ্ট হওয়া উচিৎ সেই মধুর স্বপ্ন পূরণে। তবেই গড়ে তোলা সম্ভব প্রশান্তিপূর্ণ সুখময় এক প্রত্যাশিত আজন্ম লালিত স্বপ্নসৌধ। এক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছে বিনয়, বিশ্বাস, নম্র, ভদ্রোচিত ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণের প্রত্যাশী। ধর্মীয় বিবাহ বন্ধনের পবিত্র অনুভূতি উভয়ের হৃদয়ে স্ফুরণ ঘটে গভীর অনুভূব, আনুগত্য ও শ্রদ্ধাবোধের। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল উত্তম চারিত্রিক গুণাবলী সম্পন্ন নেক নারী এবং পুরুষ নির্বাচন। অন্যথায় জান্নাতি মধুর সম্পর্কের পরিবর্তে জীবন হয়ে উঠে মরু সাহারা। ভালোবাসা হয়ে উঠে কণ্টকপূর্ণ, বিরাগভাজন, বীতশ্রদ্ধ ও বিষময়।
স্বামীদের মহানুভব দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন এজন্য যে বিয়ের পর মেয়েরা সম্পূর্ণ এক অচেনা পরিবেশে অজানা এক মানুষের সাথে ঘর বাঁধতে আসে। যার সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই সে মোটেও পূর্বে পরিচিত থাকে না। মমতাময়ী মা, শ্রদ্ধেয় বাবা, আদরের ভাই বোন, আত্মীয়স্বজন ও দীর্ঘদিনের বন্ধু বান্ধবদের ছেড়ে সম্পূর্ণ এক অজানা জগতে পাড়ি জমায়। মিলিত হয় এমন এক সঙ্গীর সাথে যাকে সে চেনে না, জানে না। তাই নব বিবাহিত স্ত্রীর প্রতি সহৃদয়বান একজন মানুষ হিসাবে প্রতিটি বিষয় বিবেচনা যোগ্য। সূরা রোমে বর্ণিত, এটা আল্লাহ্রই নিদর্শন যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের ভেতর থেকে জোড়া সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা একসাথে বসবাস করতে পারো এবং তোমাদের মধ্যে স্নেহমমতা, ভালোবাসা ও মহব্বত সৃষ্টি করেছেন।
প্রতিটি নর-নারী বিয়ে করে শান্তি ও ভালোবাসার প্রত্যাশায়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে পারস্পারিক অবিশ্বাস, অবজ্ঞা ও উদাসীনতা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ ডেকে আনে। প্রাণোচ্ছল ও উচ্ছ্বাসে ভরা মুহূর্তগুলো হয়ে উঠে তপ্ত বালুচর। একঘেয়ে, নিরস ও অসহনীয়। ছেলে কিংবা মেয়ে অপর লিঙ্গের সাথে অবাধ মেলামেশার কারণে বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে অধিক বিত্তশালী, স্বাস্থ্যবতী, রূপবতী, মিষ্টভাষী কাউকে দেখলে হা হুতাশ করে। আফসোস করে বলে, আহা! এই কুৎসিত কদাকার ফকির লোকটার সাথে বিয়ে না হয়ে যদি ঐ সুদর্শন বিত্তশালী লোকটার সাথে বিয়ে হতো, তাহলে জীবনটা কতোই না মধুর হতো! হতো মনোহর, উপভোগ্য!! সূরা বাকারায় বলা হয়েছে, “নারীরা তোমাদের পোশাক এবং তোমরাও নারীদের পোশাকস্বরূপ”।
অথচ স্বামী স্ত্রীর পবিত্র প্রেম ভালোবাসার ক্ষেত্রে এসব অবাঞ্ছিত বিষয় একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। বিবাহিত জীবনে প্রেম ভালোবাসার কোন নির্ধারিত বয়স নেই। বিবাহিত জীবন যত দীর্ঘ হবে বিশ্বাস ও ভালোবাসার বন্ধনও ততই মজবুত, দৃঢ় ও গাঢ় হবে। আর এজন্য প্রয়োজন একে অন্যকে একটু ভালোবাসার মধুর আলতো স্পর্শে রাঙিয়ে দেয়া কিংবা হাতে হাত রেখে দৈনন্দিন জীবনের সুখকর ও কষ্টকর মুহূর্তগুলো একান্ত অনুভূতি দিয়ে শেয়ার করা। সম্পর্ককে সজীব ও সুন্দর রাখতে একসাথে সাধ্যমত সংসারের কাজ, চিন্তাভাবনা এবং বিপদাপদ বন্ধুর মত শেয়ার করা। স্বামীর জন্য পছন্দের রান্না করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে উপভোগ করা। আত্মীয় স্বজনদের সুখে দুঃখে সময় কাটানো। ভালোবাসায় মিশানো ছোট্ট উপহারের আদান প্রদান। ভালো কাজের জন্য একে অপরের প্রশংসা করা। ক্লান্তিকর মুহূর্তে হাসিমুখে কথা বলে জিরিয়ে নেয়া। কখনোই অন্য কারো সাথে নিজের সঙ্গীকে তুলনা না করা। জীবনসঙ্গী যেমন স্বভাবেরই হোক না কেন, তার ভালোলাগার মত করে তাকে উপলব্ধি করা। আর এভাবেই ছোট্ট নীড়ে বয়ে যাবে শান্তির সুবাতাস। আত্মিক ভালোবাসার গভীর অতলে জীবন হয়ে উঠবে আলো ঝলমলে।
জান্নাতি নারীরা তার কাঙ্ক্ষিত মানুষটির কাছে একজন বিনীত দাসী হিসাবে নিজেকে নিবেদন করবে। স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজের ইজ্জতের হেফাজত করবে। স্বামীকে মনে করবে সঞ্চিত ধন। স্বামীর সঙ্গে অল্পে তুষ্ট থাকবে। জীবনযাপন করবে আনুগত্য ও মান্যতার মানসিকতা দিয়ে। স্বামীর খাওয়া দাওয়ার প্রতি যত্নবান হবে এবং নিদ্রার সময় নীরব থাকবে। কারণ ক্ষুধায় মানুষের মন অধৈর্য হয়ে উঠে আর ঘুম ভেঙ্গে কম্পিত মুহূর্ত মনকে ক্ষেপিয়ে তোলে। সর্বদাই স্বামীর সম্পদ বিশ্বস্তার সাথে রক্ষণাবেক্ষণ, সন্তান সন্ততির লালন পালন ও পরিবার পরিজনদের প্রতি লক্ষ্য রাখা তার কর্তব্য বলে মনে করবে। স্বামীর কোন ন্যায্য আদেশ অমান্য করে তার মনকে চটিয়ে দিবে না। তার দায়িত্ব হবে, কোন বিষয়ে বিশ্বাসঘাতকা করে সুখী পরিবেশকে অশান্ত ও অনিরাপদ না করা। স্বামীর বিষণ্ণতায় উল্লসিত না হওয়া এবং আনন্দের সময় বিষণ্ণ না হওয়া। অর্থাৎ স্বামীর সুখে সুখী এবং দুঃখে দুঃখী হওয়া। নিজের চাওয়া পাওয়া এবং ভালোলাগা, মন্দলাগাকে স্বামীর সন্তুষ্টির উপর অগ্রাধিকার দেয়া।
বিপদে আপদে ও শারীরিক অসুস্থতার সময় গভীর অনুভূতি প্রদর্শনের পাশাপাশি পরম যত্নের সাথে সেবাশশ্রুষা করা, সান্ত্বনাদান ও পরামর্শকারিণীরূপে আবির্ভূত হওয়া। ভুল ত্রুটির ক্ষেত্রে একে অন্যের দুর্বলতাগুলো পরম বন্ধুর ন্যায় কোমল আচরণ দিয়ে শুধরিয়ে নেয়া। ধীরে ধীরে সুগভীর বোধ ও বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে হৃদয় তলে গ্রত্থিত হয়ে উঠে মহৎ ও কল্যাণকর অনুভূতি। একে অপরের জন্য প্রতিভাত হয় বিশ্বাসভাজন নির্ভরযোগ্য সর্বোত্তম এক সঙ্গী-সঙ্গীণীরূপে। আর এভাবেই আসলে “সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে, গুণবান পতি যদি থাকে তার সনে” প্রবাদটির বাস্তব প্রতিফলন ঘটে। দু’টি প্রশস্থ মহানুভব আত্মার সুঘ্রাণ প্রস্ফুটিত গোলাপের ন্যায় সৌরভ ছড়াতে থাকে আর পবিত্র এ বন্ধনের আনন্দানুভূতিগুলো হয়ে উঠে দুর্লভ ও অলৌকিক। আল্লাহ্ সুবহানু তা’আলা সকল বিবাহিত নর-নারীর দাম্পত্য জীবনকে স্বর্গীয় সুখশান্তি, উন্নতি অগ্রগতি ও দু’নো জাহানের কামিয়াবি অর্জনের তৌফিক দিন এটাই প্রার্থনা।
বিষয়: বিবিধ
২৫৭২ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার মূল্যবান প্রথম উপস্থিতি ও প্রেরণাপূর্ণ সুন্দর ভালোলাগা অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
তবে!!
সপ্নেই শুধু মধু। বাস্তবে কদু হলেও চলত কিন্তু তাও মিলেনা!
সবার ভাগ্যে সবকিছু জোটে না। এটিও আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলার একটি পরীক্ষা এবং নেয়ামত।
সুতরাং......
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
দোয়ায় আমীন।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
প্রিয়তে রেখেছেন জেনে আনন্দিত হলাম।
আপনি যে নারীর চরিত্র অঙ্কন করেছেন তা বিরল হয়ে পড়েছে। তবে অবশ্যই সেটা কাঙ্খিত। আমার ধারনা সংসারে উভয়কে উভয়ের দিকেবিশেষ মনোনিবেশ করতে হবে। উভয়েই যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আচরন করে তবে উভয়েই সুখে থাকবে। আযান দিয়ে ডাল ভাত খাবে কিন্তু মনে থাকবে তৃপ্তী,পেটে থাকবে আলুভর্তা...
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক দ্বিপাক্ষিক এবং অবশ্যই দ্বীনমুখী হওয়া বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ্তে ভীতি থাকলে এবং তাঁর সন্তুষ্টি কাঙ্ক্ষিত হলে অবশ্যই মধুময় দাম্পত্য জীবন সম্ভব।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
ইদানীং পুটীর মাকে নিয়ে খুব ব্যস্ত বুঝি?
সহমত। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক দ্বিপাক্ষিক এবং অবশ্যই দ্বীনমুখী হওয়া বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ্তে ভীতি থাকলে এবং তাঁর সন্তুষ্টি কাঙ্ক্ষিত হলে অবশ্যই মধুময় দাম্পত্য জীবন সম্ভব।
ব্যস্ততা সত্ত্বেও তোমার মূল্যবান উপস্থিতি ও প্রেরণাপূর্ণ সুন্দর ভালোলাগা অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
নিয়মিত হবার অনুরোধ রইলো। ভালো থেকো খুউব ভালো। দোয়া সবসময়ই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন