মনুষ্যকূলের জন্য শিক্ষণীয় সত্য ঘটনা!
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১৪ জুলাই, ২০১৬, ০৯:৫৩:৫৯ রাত
সমগ্র সাবা নগরটি ছিল দু’টি সুদৃশ্য পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত। নয়নাভিরাম শ্যামল সবুজ বনানী ও শস্য ক্ষেতে পরিপূর্ণ ছিল সে রাজ্যটি। পাহাড়দ্বয়ের কিনারায় শহরের ডানে ও বাঁয়ে অবস্থিত ছিল চক্ষু শীতলকারী ফল মূলের উদ্যান। যা ছিল বেশ মনোরম, সুখকর ও উপভোগ্য। বাগান পূর্ণ ছিল সবরকম বৃক্ষ আর সুস্বাদু প্রচুর ফলমূলে। যে কোন স্থানে দাঁড়িয়ে অবলোকন করা যেত বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত ডানে ও বাঁয়ে সুদৃশ্য বাগানগুলি। কোন মানুষ খালি ঝুড়ি নিয়ে সেখানে প্রবেশ করলে বৃক্ষ থেকে পতিত ফলমূল দিয়ে আপনা হতেই তা ভরে যেত। সোবহানআল্লাহ্। (ইবনে কাসীর, ফাতহূল কাদীর, কুরতুবী)। উদ্যানের মাঝে ছোট ছোট বিল ঝিলে পানি প্রবাহিত হত।
মহান রাব্বুল আলামীন রাসূলগণের মাধ্যমে সাবা বাসীদেরকে আদেশ দিয়েছিলেন, তারা যেন আল্লাহ্ প্রদত্ত এই অফুরন্ত জীবনোপকরণ ভোগ করে এবং কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সৎকর্ম ও আল্লাহ্র আনুগত্য করে। অনুরূপভাবে এসব অপার নিয়ামতরাজি ও ভোগবিলাস দুনিয়াতে উপভোগ করে শোকর গোজার করলে ও আল্লাহ্র আদেশ মেনে চললে আখিরাতেও আছে তাদের জন্য স্থায়ী জান্নাত।
কোরআনে মজীদে আল্লাহ্ পাক বলেন-
“তোমরা পালনকর্তার রিজিক খাও আর তাঁর শোকর কর। উত্তম এই শহর এবং মহান ক্ষমাশীল প্রতিপালক”। (সূরা সাবাঃ১৫)।
মহান রব সাবা নগরীকে উপহার দিয়েছিলেন ঝকঝকে তকতকে একটি মনোমুগ্ধকর স্বাস্থ্যসম্মত শহর রূপে। আবহাওয়া ছিল নাতিশীতোষ্ণ, স্বাস্থ্যকর এবং বিশুদ্ধ। শহরজুড়ে ছিল না কোন মশা মাছি, কীট পতঙ্গ, ছারপোকা ও সাপ বিচ্ছু। বাহির থেকে কোন ব্যক্তি ময়লা পোশাকে উকুন বা ছারপোকা ইত্যাদি নিয়ে এ শহরে প্রবেশ করলে তা আপনা আপনিই মরে সাফ হয়ে যেত। (কুরতুবী)
দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যকায় শহরটি অবস্থিত ছিল বিধায় উভয় পাহাড়ের উপর থেকে বৃষ্টির পানি বন্যার আকারে নেমে আসতো। ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হতো। দেশের সম্রাটগণ উভয় পাহাড়ের মাঝখানে একটি শক্ত ও মজবুত বাঁধ নির্মাণ করেন। বাঁধের মধ্যে তিনটি দরজা নির্মাণ করা হয় যাতে সঞ্চিত পানি সুশৃঙ্খলভাবে সকলের কাছে প্রয়োজন অনুসারে বণ্টিত হয়।
কিন্তু আল্লাহ্র অশেষ নিয়ামতরাশি ভোগ করার পরও সাবাবাসী রাসূলগণের দাওয়াত অস্বীকার করলো। আল্লাহ্র আদেশ অমান্য করে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অবাধ্য স্বরূপ সূর্যের পূজা করতে লাগলো। পরিণতিতে আল্লাহ্ তা’আলা তাদের উপর বাঁধ ভাঙ্গা বন্যা রূপ গজব নাযিল করেন। আল্লাহ্র ইচ্ছায় বাঁধ ভিতের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি হল এবং বাঁধ ধসে তার পিছনে সঞ্চিত পানি সমস্ত উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়লো। নিমিষেই সাবা শহরের সমস্ত ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত হয়ে গেল এবং সব গাছপালা হয়ে গেল নিশ্চিহ্ন। আর পাহাড়ের কিনারায় সারিবদ্ধ উদ্যানের জন্য সংরক্ষিত পানি নিঃশেষ হয়ে গেল।
কোরআনে কারীমে বর্ণিত –
“অতঃপর আমি তাদের উপর বাঁধ ভাঙ্গা ঢল প্রবাহিত করলাম এবং বৃক্ষগুলোকে বিস্বাদ ফলে রূপান্তরিত করলাম” (সূরা সাবাঃ১৬)।
আমি তাদেরকে কাহিনীর বিষয় বস্তুতে পরিণত করলাম এবং সম্পূর্ণরূপে ছিন্নভিন্ন করে দিলাম। নিশ্চয়ই এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞ বান্দাদের জন্য নির্দেশনাবলী রয়েছে (সূরা সাবাঃ১৯)।
যে বাঁধ একদা সাবা সম্প্রদায়ের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের উপায় ও উপকরণ ছিল, সেটাই তাদের জন্য ধ্বংস ও বিপর্যয়ের কারণ হল। শুধুমাত্র না শোকরির কারণে তাদের ভোগবিলাস ও ধনৈশ্বর্য ধ্বংসস্তূপে পরিণত হল। কালের ইতিহাসে তারা একটি সত্য কাহিনীর নিকৃষ্ট উপাখ্যানে রূপান্তরিত হল। আর পরকালের ভয়ঙ্কর অনন্তকালের আযাব তো আছেই!
সাবা সম্প্রদায়ের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের উত্থান পতন ও ধ্বংসের অকাট্য সত্য কাহিনীতে আমাদের জন্য আছে এক শিক্ষণীয় নিদর্শন। আমরা অনেকেই যে যার অবস্থানে থেকে অস্থায়ী ক্ষমতার দাপট আর অহংকারে যারা ধরাকে সরা জ্ঞান করছি না, তাদের জন্য। আল্লাহ্র দুনিয়ায় তাঁর অবাধ্য হয়ে চালিয়ে যাচ্ছি নির্বিকারভাবে নির্মম অত্যাচার আর হত্যাযজ্ঞ! ক্ষণিকের বিলাসী মোহে শান্তি সুখের আবাস ভূমিকে বানাচ্ছি নরক কুণ্ড। আমাদের একটি বারের জন্য হলেও আকস্মিক গযব ও মৃত্যুর পরের জীবনের ভয়াবহ বিচার দিবসের কথা স্মরণ করা উচিৎ নয় কী?!
বিষয়: বিবিধ
১৬৬১ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও প্রেরণাপূর্ণ সুন্দর ভালোলাগা অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও প্রেরণাপূর্ণ সুন্দর ভালোলাগা অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
ঠিকই বলেছেন, আমরা আজ এতোটাই নির্বোধ যে, আল্লাহ তা’আলার সাবধানবাণী থেকে বেখেয়াল হয়ে গেছি।
ব্যস্ততা সত্ত্বেও আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও প্রেরণাপূর্ণ সুন্দর ভালোলাগা অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
ধন্যবাদ শিক্ষনিয় লিখাটির জন্য।
ঠিকই বলেছেন, আমরা আজ এতোটাই নির্বোধ যে, আল্লাহ তা’আলার সাবধানবাণী থেকে বেখেয়াল হয়ে গেছি।
ব্যস্ততা সত্ত্বেও আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও প্রেরণাপূর্ণ সুন্দর ভালোলাগা অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
ব্যস্ততা সত্ত্বেও আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও প্রেরণাপূর্ণ সুন্দর ভালোলাগা অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আমিতো নিয়মিত! কিন্তু আপনি?
ইদানিং আমি রাতে ঘুমাতে পারিনা খুব ভয় হয়। ভূমিকম্প হবে আমি বিল্ডিংয়ের নীচে চাঁপা পরে মরব কিন্তু তারপর? কবরে কি জবাব দিব? চোখ বন্ধ করতে চাইনা কিন্তু ক্লান্তিতে যখন চোখ বন্ধ হয়ে যায়, হটাৎই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়- গলা শুকিয়ে যায়, হার্টবিট বেড়ে যায়, ঘেমে যাই, নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হয়। জানি, খুব তাড়াতাড়ি পরিস্হিতি আরো জটিল হবে।
যাইহোক, জাঝাক আল্লাহ আপি।
মুমিনদের হতাশ হতে নেই। বিপদে আপদে ধৈর্যহারা হতে নেই। মৃত্যু ভয়ে দিশেহারা বা আতঙ্কিত হতে নেই। একমাত্র আল্লাহ্ সুবহানু তা’আলার প্রতি ভরসা রাখা উচিৎ। নিশ্চয়ই আমাদের জন্য যা কিছু কল্যাণকর তাই তিনি করবেন। ইনশাল্লাহ।
নিয়মিত হবার অনুরোধ রইলো। ভালো থেকো খুউব ভালো। দোয়া সবসময়ই।
আপু কেমন আছেন?
চমৎকার লিখা সাথে অসাধারণ জীবণানুভূতি । মাশা আল্লাহ। জাযাকিল্লাহ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন