সেহরীর ফযিলত এবং কিছু কথা
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ০৮ জুন, ২০১৬, ০৯:৫৯:৩৪ সকাল
সকল প্রশংসা একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তা রাব্বুল আলামীনের জন্য। অনিঃশেষ সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক রাহমাতাল্লিল আলামীন, সিরাজাম মুনিরা, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর), তাঁর প্রাণাধিক পরিবার ও সাহাবা আজমাঈনগণের ওপর। আরো অশেষ সালাম ও রাহমা বর্ষিত হোক ওইসব সালফে-সালেহীনদের ওপর যাদের সুচিন্তিত, কল্যাণকর ও প্রাণান্তকর সাধনায় আমরা আল্লাহর হক আর বাতিলের দ্বীনকে পরম বিশুদ্ধতায় এবং প্রশান্তিময়রূপে পেয়েছি আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে। আলহামদুলিল্লাহ্।
ক্ষমাশীল মেহেরবান মহিমাময় দয়াবান প্রভূ তাঁর মানবকূলকে সৃষ্টির সেরা রূপে শুধু সৃষ্টিই করেননি বরং তাঁর প্রিয় বান্দাগণকে অফুরাণ মহব্বত করে তাঁদের হেদায়ত ও সৎপথের নিদর্শন এবং ন্যায় ও অন্যায় পার্থক্যকারী হিসাবে তাঁর প্রেরিত রাসূল হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ওহী আকারে নাযিল করেছেন আসমানি কিতাব আল কোরআন।
আর এই পাক কালামে স্পষ্ট করে মহান রাব্বুল আলামীন এভাবেই উল্লেখ করেছেনঃ
হে ঈমানদারগণ। তোমাদের ওপর সিয়াম (রোজা) ফরয করে দেয়া হয়েছে, যেমন করে ফরয করে দেয়া হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীগণের ওপর, যাতে তোমরা (এর দ্বারা) তাক্বওয়া অর্জন করতে পারো ( সূরা বাকারাঃ ১৮৩)।
এই সিয়াম সাধনা ও তাকওয়া অর্থাৎ এই পবিত্র মাসের একটি রোযার এতো গুরুত্ব যে, সারা জীবনের রোযা এই মাসের একটি রোযার সমতুল্য নয়। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত রমযানের একটি রোযা ভেঙ্গেছে তার সে রোযা পূর্ণ হবে না যদিও সে সারা জীবন রোযা রাখে। ( আহমদ তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, বুখারী ও দারেমী)।
আর এই গুরুত্বপূর্ণ রোযার অপরিহার্য একটি বিষয় হল সেহরী। সেহরী হল রোযা রাখার উদ্দেশ্যে রাতের শেষাংশে যাহা কিছু খাওয়া হয়। সেহরী দেরী করে খাওয়া অর্থাৎ তা শেষ ওয়াক্তে খাওয়া উত্তম। তবে এতো দেরী করা উচিৎ নয় যাতে ছোবহে ছাদেক হবার আশঙ্কা হয় এবং রোযার মধ্যে সন্দেহ আসতে পারে। যদি রাত্রে কারো ঘুম না ভাঙ্গে এবং সেজন্য সেহরী খেতে না পারে, তবে সেহরী না খেয়ে রোযা রাখবে। সেহরী না খাওয়ার কারণে রোযা ছেড়ে দেয়া বড়ই গুনাহর কাজ।
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সেহরী খাবে। কেননা সেহরীতে বরকত আছে। বুখারী ও মুসলিম (হাদীস-১৮৮৫)। সেহরী খাওয়া কখনো বাদ দিও না। ক্ষুধা না থাকলে অন্ততঃ ২/১ একটি খোরমা বা এক ঢোক পানি পান করে হলেও সেহরী খেয়ে নাও। সেহরীর সময় যদি কেহ সেহরী না খেয়ে মাত্র এক মুষ্টি চাল পানি দিয়ে খায় তাতেও সেহরীর সওয়াব হাসিল হবে। সেহরীর খাদ্য গ্রহণকারীকে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফেরেশতাগণ স্মরণ করে থাকেন। (আহামদঃ ১০৭০২)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রোজাদারদের নিদ্রা এবাদতের সমতুল্য। তাদের চুপ থাকা তাসবীহ পড়ার সমতুল্য। মানুষ সামান্য ইবাদতে অন্য সময় অপেক্ষা রমযান মাসে অনেক সওয়াবের অধিকারী হয়। আর এই সওয়াব রোযার বরকতে হাসিল হয়। বায়হাকী।
হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের রোযা ও আহলে কিতাবদের ইহুদী ও খৃষ্টান রোযার মধ্যে পার্থক্য হল সেহরী খাওয়া। মুসলিম (হাদীস-১৮৮৬)। সুতরাং জেনে বুঝে কেহই যেন আমরা সেহরীর ফযিলত হতে মাহ্রুম না হই। কেননা আমরা রোযা রাখি সেহরী খেয়ে, আর ইয়াহূদী-নাসারারা সেহরী না খেয়ে রোযা রাখে। এর দ্বারা স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় সেহরী খাওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ আযান শুনে আর খাওয়ার বাসন তার হাতে থাকে তখন সে যেন তা রেখে না দেয় যতক্ষণ না তা থেকে নিজ প্রয়োজন পূর্ণ করে। (আবু দাউদ)।
সেহরীর পর খাছ দিলে নিয়্যত করতে হবে মহান রাব্বুল আলামীনের আদেশ পালন, সন্তুষ্টি লাভ ও অফুরন্ত সওয়াবের আশায়। রোযাকালীন সময়টুকু মহামূল্যবান স্মরণে রেখে বেশী বেশী কোরআন তিলওয়াত, জিকির আজগর, নফল ইবাদত ও ইতিম মিসকিনকে সাহায্য করা সহ নেক আমলসমূহে ব্যস্ত থাকা জরুরী। মু’মিনের সেহরীতে উত্তম খাবার হল খেজুর। তেমনি সেহরি ফজরের আজানের একটু পূর্বে খাওয়া সুন্নত। বেশী আগে খাওয়া সুন্নত পরিপন্থী। আর আমাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে যে, অন্যান্য আমলের পুরুস্কার ফেরেশতাদের মারফত প্রদত্ত হবে কিন্তু রোযার পুরস্কার স্বয়ং আমাদের মালিক নিজ হাতে প্রদান করবেন।
সেহরীর খাওয়ার পূর্বে রুটিন মোতাবেক সময় হাতে রেখে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা উত্তম। গভীর রাতে এগার রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সুন্নত। তবে এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত শারীরিক সুস্থতার উপর নির্ভর করে যথাক্রমে দু, চার থেকে শুরু করে এগার রাকাত পর্যন্ত আদায় করা যায়। মুমিনগণ অধিক পরিমাণে সওয়াবের আশায় রামাদ্বানের এই সুবর্ণ সুযোগ কখনই হাতছাড়া করেন না।
হাদীস শরীফে বর্ণিত, রমযান শরীফের প্রথম রাত্রি যখন আসে তখন আসমানের সমস্ত দরজা খুলে দেয়া হয় এবং রমযান শরীফের শেষ রাত্রি পর্যন্ত ঐ সকল দরজা উন্মুক্ত থাকে। মুমিন বান্দাগণের আমল উঠানো এবং তাদের উপর রহমত নাযিল করার জন্যই ঐ সকল দরজা উন্মুক্ত রাখা হয়।
মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকেই এই নাজাত, মাগফিরাত আর রহমতের মাসে যথাযথভাবে সেহরী খাওয়াসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ আমলসমূহ পালন করার তৌফিক এনায়েত করুণ। আমীন।
বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ.........
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয়/শ্রদ্ধেয়া সকল ব্লগারবৃন্দগণকে......
আজকের এই বিশেষ ক্ষণে পরম শ্রদ্ধায় ও অশেষ কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছি আমার প্রাণপ্রিয় ব্লগার “ভিশু” ভাইয়াকে। যিনি এই ব্লগে রমযানের মহান মাসে স্বতঃস্ফূর্ত আলোচনার মাহফিল আমাদেরকে উপহার দিয়ে কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করে রেখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ্। ভিশু ভাইয়ার প্রতি আন্তরিক অনুরোধ ফিরে আসুন আমাদের সকলের মাঝে। সকল অভিমান রাগ আর কিছু মানুষের অন্যায় ঈর্ষামূলক অনভিজ্ঞ কথাকে ভূলে গিয়ে এবং ক্ষমা করে। এই ব্লগের অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী আপনাকে খুবিই মিস করে।
সেইসাথে আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছি সুহৃদ ছোট ভাই গাজী সালাউদ্দিনসহ সকল ব্লগার ভাই ও বোনদেরকে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে রমাদ্বানের আলোচনায় শরীক হয়ে এই অঙ্গনকে বিকশিত, সুবাসিত এবং প্রশংসিত করছেন। আলহামদুলিল্লাহ্।
হে রাহমানুর রাহীম। দয়াবান মাওলা। একটিবার আপনি আপনার করুণা ও রহমতের দৃষ্টি আমাদের সকলের উপর বর্ষণ করুণ। আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে আপনার নেক বান্দার তালিকায় আমাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করুণ। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৭৯৫ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এই দোয়া ও শুভকামনা সবসময়ই।
খুব ভালো লাগলো। জাযাকিল্লাহ সুন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ পোস্টটির জন্য।
অপারেশন ভিশু হান্ট দিতে হবে।
দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ব্লগে! ব্যস্ত বুঝি?
ঠিকই বলেছ ভিশু ভাইয়াকে......
খুব ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এই দোয়া ও শুভকামনা রইলো। রামাদানুল কারীম।
জাঝাক আল্লাহ খাইরান, আপুনি
ইসলামিক বিধিনিষেধ গুলো যত বার ই পড়া হয়,
মনে হয় নতুন করে পরছি, আর তাতে ভয়টাও কাজ করে ভিতরে আবার আশা ও জাগে মনে মহান আল্লাহর অফুরন্ত রহমতের।
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে কবুল করুন এবং তাওফিক দান করুন। আমীন
আমরা সর্বাবস্থায় ভয় ও আশায় মহান রাব্বুল আলামীনের রহমত প্রত্যাশী।
আপনার প্রেরণাপূর্ণ মন্তব্যের জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
সুন্দর দোয়ায় আমীন। ছুম্মা আমীন।
ছুম্মা আমীন।
আপনার লিখার অপেক্ষায় ছিলাম...... । সম্ভব হলে সেহরীর উপর একটি লিখা দিন।
আমীন। ছুম্মা আমীন।
সেহরী খাওয়ার পর লক্ষ্য করবেন শরীরে ও মনে এক ধরণের প্রশান্তি অনুভূত হয়।
গরুর গোস্তের সংযম কী এখনো অব্যাহত আছে?
আপনার সুন্দর দোয়ায় আমীন। ছুম্মা আমীন।
দোয়া করি জান্নাতুল ফিরদাউসে আল্লাহ যেন আপনাকে নানান খাবার দিয়ে সেহরী খাওয়ান....রোজা হব ১ ঘন্টার। এরপর পুরষ্কার স্বরূপ রাইয়ান দরজা দিয়ে ঢুকে ওপাশ দিয়ে বের হয়ে আবার সেহরী খেয়ে ১ ঘন্টার রোজা
বুঝতে পেরেছি ছোট ভাইয়ের খাওয়া দাওয়া জব্বর চলছে! মাশাআল্লাহ।
আপনার দোয়া মঙ্গলময় যেন কবুল করেন। আপনার জন্যও অনুরূপ প্রত্যাশা অ দোয়া।
এখন রমজানের ক্যালেন্ডারে সেহরির যে সময় নির্ধারণ করে দেয়া থাকে, এর কারণে অনেকেই তৃপ্তি সহকারে খাওয়া শেষ করতে পারেনা। অজ্ঞতা অজ্ঞতা অজ্ঞতা। অজ্ঞতা আমাদের ইমান আমলকে অনেক বেশি কঠিন করে ফেলছে।
আপা, আয়োজনে আপনার আগমন সর্বাগ্রে হবে, এটা কাম্য ছিল, আর আপনি তা বাস্তবে রুপ দিয়েছেনও।
অনেকের কাছেই ভিশু ভাইয়ের রমজান নিয়ে আয়োজনটির কথা শুনেছি, কিন্তু দেখিনি। দেখলে হয়তো উনারটা থেকে আইডিয়া নেওয়া যেতো।
আপা আপনার আজকের লেখাটি এক্সক্লুসিভ একটা লেখা।
তাহলে আল্লাহ্ আপনাকে সুস্থ রাখুন।
আর হ্যাঁ, আমার কালকের লেখায় আফরা একটা মন্তব্য করেছে। দেখে আসবেন এবং একটা সলিউশন দেবেন।
আর মোহাম্মদ লোকমান বলেছেন, আপনি নাকি উনাকে ২০ রমজানে লিখতে বলেছেন, কিন্তু উনার তো আজ লেখার কথা ছিল।
আর হ্যাঁ, চিন্তা করবেন না ছোট ভাই। আল্লাহ্র সন্তুষ্টির নিমিত্তে যে আয়োজন তার ফায়সালা আল্লাহ্রই হাতে। সব কিছুর উনিই যোগান এবং সুষ্ঠু সমাধান দিবেন ইনশাল্লাহ।
হয়ত ভুল বুঝাবুঝি! আমার তো স্মরণে নেই, লোকমান ভাইকে ২০ তারিখ বলেছি কিনা? যাহোক উনি যদি ২০ তারিখের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন তো সেটাই মঙ্গলজনক।
আপনার আমলের গাড়ী চলন্ত থাকুক এটাই সতত কামনা ও দোয়া।
আপনার সরব উপস্থিতি ও প্রেরণা পাথেয় হয়ে থাক।
মন্তব্যের জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
ভাবীসহ খুব ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এই দোয়া ও শুভকামনা রইলো। রামাদানুল কারীম।
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : প্রিয় ভাই, আমি সময় কড়া শাসনের কারণে বা আমার দুর্বলতার কারণে নির্ধারিত বিষয় : রমাদানের আত্মসংযম সম্পর্কে লিখতে পারিনি। এ জন্য আন্তরিকভাবে দু:খিত। ২ জুনে আমার আরেকটি পোস্ট আছে এটি বিবেচনা করবেন এবং আজকের পর্বের পরিচালক সন্ধ্যাতারা আপিকে জানিয়ে দেবেন। লিঙ্ক :
http://www.bd-desh.net/blog/blogdetail/detail/11098/MinhazMasum/77247#.V1ezKzV97IU
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন