হিয়ার মাঝে রেখেছি তোমায় পুস্প মালিকা করে
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২৬ মে, ২০১৬, ০৭:৪৭:০৮ সন্ধ্যা
আত্মার পবিত্র এক মহতী আবেদনে যাকে পরম যতনে সদা হৃদয় কাননে গেঁথে রাখি তাজা সুরভিত পুস্প মালিকা করে সে আমার পিয়ারা রাসূল হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ)। ধরণীতে তাঁর রেখে যাওয়া সজীব সতেজ ফুলগুলোর স্নিগ্ধ সৌরভ ভরিয়ে রাখে সারা তনুমন শান্তিসুখের নরম প্রলেপে। অনন্তকালের অনাবিল ভালোবাসার ছলাত ছলাত স্রোতস্বিনীর যে উৎসমূল তা অবিরামভাবে উৎসারিত হয় তাঁরই নিখাদ নির্মল ভালোবাসার মর্মমূল থেকে যা পূত পুণ্যময়। মহান আল্লাহ্পাক প্রিয়তম বন্ধুর জন্য অবারিত করে রেখেছেন তাঁর অসীম রহমতের অমূল্য রত্নভাণ্ডার।
যে মহামানবের নবুয়ত পূর্ববর্তী জীবন ছিল সত্য ও ন্যায়ের আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল এবং নবুয়ত পরবর্তী জীবন হয়ে উঠেছিল ঐশী মহিমায় আরও ব্যতিক্রমী সমুজ্জ্বল ও মহিমান্বিত। তাঁর সাম্য ও মৈত্রীর হৃদয়স্পর্শী বিশ্বজনীন আবেদন মানুষের অন্তরের মর্মমূল ভেদ করে গভীরভাবে তা নাড়িয়ে দেয়। মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় হাবীবকে দরদভরা মানসে বলেন, আপনি “বলুন, সত্য এসেছে এবং মিথ্যা (চিরতরে) বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্ত হবে” (সূরা বনী ইসরাঈলঃ ৮১)।
রাসূল (সাঃ) এর পবিত্র ও নিষ্কলুষ চরিত্রের মাধুর্যতা এবং অন্তরের শুভ্রতার সুঘ্রাণের সত্যায়ণপত্র স্বয়ং আল্লাহ্পাক কর্তৃক মনোনীত। মহান রাব্বুল আলামীন মানবজাতির জন্য তাঁর প্রিয় হাবীবকে সংজ্ঞায়িত ও বিশেষায়িত করেছেন; দয়ালু, নম্র, পথনির্দেশক, ধৈর্যশীল, উত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং সর্বোত্তম আদর্শের নমুনাকারী হিসাবে। তিনি এরশাদ করেন, “আপনি সৃষ্টিকূলের জন্য রহমতস্বরূপ” (সূরা হাজ্জ্বঃ ১০৭)। যার উত্তম আহ্বানে অসভ্য বর্বর মানুষগুলো রূপান্তরিত হয়েছিলো সুসভ্য মানুষে। বিশৃঙ্খল উন্মত্ত জাতির পুনর্জন্ম হয়েছিলো মহিমান্বিত জাতিতে। কিছুদিন পূর্বেও যারা ছিল অত্যাচারী তারাই রাসূলের সান্নিধ্যে ও দ্বীনের পরশে রাতারাতি হয়ে গেলো দারিদ্র পীড়িতদের রক্ষাকারী এবং সাহায্যকারী। নিঃসংকোচে দ্বিধাহীন চিত্তে তারাই জানমাল কোরবানী দিতে উদ্দীপ্ত উফুল্ল হয়ে উঠলো। ফলশ্রুতিতে ইসলামের ছায়াতলে গড়ে উঠলো এক অভাবনীয় ঐক্যের বিশাল দুর্গ যা কোরানিক ভাষায় বলা হয় সীসাঢালা প্রাচীর।
আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) সৎকাজের নির্দেশদান ও অসৎ কাজে বাধা দানের মাধ্যমে মানুষকে ভ্রান্তির কুটিল আবর্ত থেকে মুক্তির পথে আহ্বান করেন। তিনি তাঁর উম্মতের জন্য পবিত্র বস্তু বৈধ করেন ও অপবিত্র বস্তু অবৈধ বা হারাম ঘোষণা করেন যাতে তারা শয়তানের মনোরম হাতছানি থেকে পাপমুক্ত হতে পারে। রাসূল (সাঃ) এর জীবনাচরণের স্বচ্ছ দর্পণ ও জীবন্ত নিদর্শন হল কোরআন মজীদ। সুতরাং যারা তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে তাঁকে সম্মান করে, তাঁকে সাহায্য করে এবং যে আলো তাঁর সাথে অবতীর্ণ হয়েছে তার অনুসরণ করে তারাই সফলকাম (সূরা আরাফঃ ১৫৭)।
বিভিন্ন ধর্ম গোত্র বর্ণ নির্বিশেষে “মদীনা সনদ” নামে যে মূল্যবান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় প্রায় চৌদ্দ শত বছর আগে তা আজও বিশ্ব ইতিহাসে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজিরবিহীন এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। তাই সমগ্র পৃথিবীর জ্ঞানী গুণীজনেরা তাঁর মহামূল্যবান আদর্শের সুবাসিত ফুলগুলো কুঁড়িয়ে কুঁড়িয়ে পরম যত্নে আগলে রেখেছেন মনের গহীনে। ক্লান্তিহীনভাবে বিকশিত করছেন দেশে দেশে যার অনুপম পরশে ও একান্ত সান্নিধ্যে মানবজাতি খুঁজে পাচ্ছেন মহা সত্যের আলোকবর্তিকা এবং অর্জন করছেন দুনো জগতের প্রশান্তিময় তৃপ্তি ও সুখস্বাচ্ছন্যপূর্ণ জীবন।
এজন্যই মুসলিম উম্মাহর সর্বাধিক আনুগত্য ও পূর্ণ মুহাব্বতের যিনি নিঃশর্ত দাবীদার তিনি হলেন আমাদের পিয়ারা রাসূল হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ)। আল্লাহ্র পক্ষ থেকে তিনিই আমাদের সর্বোত্তম সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা (সূরা হুদঃ ২)। এক্ষেত্রে আল্লাহ্ প্রদেয় সন্মানিত জনক জননী, অতি আদরের সন্তান সন্ততি, পরিবার পরিজন, শুভাকাঙ্ক্ষী আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব সকল কিছুর উর্দ্ধে সর্বাধিক এবং সর্বোচ্চ ভালোবাসা ও মুহাব্বত একমাত্র তাঁরই প্রাপ্য। যিনি সর্বোত্তম স্বভাবের উপর অধিষ্ঠিত (সূরা ক্বালামঃ ৪)। এমন বিস্ময়কর প্রশংসার অভাবনীয় সৌকর্যে ও কোটি কোটি মানবপ্রাণের অনবদ্য মুহাব্বতে প্লাবিত বিশ্বময় একজনই মহামানব তিনি মোদের গৌরব মোদের নবী (সাঃ)। বিশ্ব নিখিলে অত্যুচ্চ মর্যাদারও অধিকারী যিনি। যার মধ্যেই নিহিত আমাদের ঈমানের পরিপূর্ণতা ও দু’নো জগতের কামিয়াবী এবং সফলতা।
আর এই মুহাব্বত ও ভালোবাসা প্রমাণের উত্তম পথ হল সকল শিরক, বিদআত ও পৌত্তলিকতার মূলচ্ছ্যেদ করে আল্লাহ্র দ্বীনকে যমীনে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিজের জানমাল আনন্দচিত্তে কোরবানী করা। কেননা সমগ্র মানবজাতির কল্যাণে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত সব ধন সম্পদ অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন দ্বীনের পথে। মহা সংস্কারের গুরুদায়িত্ব পালনে ও সামগ্রিক শান্তি আনায়নে সারা জীবন মহানবী (সাঃ) এ লক্ষ্য সাধনেই ব্রতী হয়েছিলেন অত্যন্ত ন্যায়নিষ্ঠভাবে। যদিও সেসময়ে পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতা ছিল শত শত বছরের পৌত্তলিকতার পাপ পঙ্কিলতায় মারাত্মকভাবে আচ্ছন্ন, ন্যায় ও সত্য গ্রহণে মানুষের পাষাণ হৃদয়সমূহ ছিল প্রবলভাবে ধর্ম বিমুখ। ভয়াবহ সমস্যাসঙ্কুল পথের যাত্রা মহা কঠিন জেনেও আল্লাহ্র নবী (সাঃ) পরিপূর্ণ উদ্যোগে ও স্বতঃস্ফুর্ত উদ্যমে নিজেকে নিয়োজিত ও সমর্পিত করেছিলেন এই পথে।
কোরআনের বাণী তিনি ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন শত বাধা বিপত্তি ও অমানবিক হেনস্থাকে নির্ভীক সাহসিকতার সহিত উপেক্ষা ও মোকাবিলা করে। তাঁর দ্বীনি দাওয়াত তথা কোরআনের শ্বাশত বাণী কোরাইশদের অন্তরে জ্বালা ধরিয়ে দিল। এসব দেখে তারা আল্লাহ্র নবীকে উন্মাদ, কবি, মিথ্যেবাদী, যাদুকর ইত্যাদি নিত্য নতুন বিভিন্ন উপাধিতে জর্জরিত করাসহ শারীরিকভাবে নানাবিধ নির্যাতনে তাঁর জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। নিপীড়নে জর্জরিত হয়ে অশ্রুভেজা চোখে ও বেদনাহত হৃদয়ে প্রাণপ্রিয় জন্মভুমি পর্যন্ত ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। আল্লাহ্পাক কোরআন মযীদে উদ্ধৃত করেন, “কাফেরেরা যখন কুরআন শুনে, তখন তারা এমনভাবে তাদের দৃষ্টিপাত করে যেন ওরা আপনাকে আছড়িয়ে মেরে ফেলে দেবে এবং তারা বলে, সে তো একজন উন্মাদ। অথচ এই কোরআন বিশ্বজগতের জন্যে উপদেশ বৈ অন্য কিছু নয়” (সূরা হাক্ক্বা: ৫১-৫২)। উপরন্তু আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় হাবীবকে আশ্বাস ও সান্ত্বনার বাণী শুনালেন এভাবে, “ওরা আল্লাহ্র আলো মুখের ফুঁৎকারে নিভিয়ে দিতে চায় কিন্তু আল্লাহ্ তাঁর আলোকে পূর্ণরূপে উদ্ভাসিত করবেন যদিও কাফেরদের তা অপছন্দ” (সূরা ছ্বাফ : ৮)।
কুকর্ম কুসংস্কার ও পৌত্তলিকতার ভ্রান্তিকর বিশ্বাসে নিপতিত কোরাইশ জাতির নিরবচ্ছিন্ন জুলুম নিপীড়ন, হত্যার হুমকিসহ শত ভয়ভীতি উপেক্ষা করে আল্লাহ্র নবী তাঁর ধর্মপ্রচারে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ব্যাপৃত ছিলেন। এমতাবস্থায় কোরাইশ নেতৃবর্গ ব্যর্থ মনোরথ হয়ে শেষে নবী (সাঃ) এর পিতৃব্য আবু তালেবের মাধ্যমে একটি প্রস্তাব পেশ করে। তাদের দাবী মুহাম্মদ (সাঃ) ধর্ম প্রচার না করলে তাঁকে আরবের রাজত্ব, ধন সম্পদ ও সুন্দর রমণী প্রদান করা হবে। সরাসরি এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করে নবী (সাঃ) পরিষ্কারভাবে তাদেরকে জানিয়ে দিলেন, তারা যদি তাঁকে এক হাতে সূর্য ও অন্য হাতে চন্দ্রও এনে দেয় তদুপরি তিনি ধর্মপ্রচার থেকে নিবৃত্ত হবেন না।
নবীজি অবিচল চিত্তে স্পষ্টভাবে সকলকে জানিয়ে দেন, আল্লাহ্ এক এবং অদ্বিতীয় তাঁর কোন শরীক নেই এই মহাসত্য প্রতিষ্ঠাই তাঁর একমাত্র ধ্যান জ্ঞান ও মূলমন্ত্র। এই খাঁটি বিশুদ্ধ নিয়্যত বুকে ধারণ করে অসীম হিম্মত, অটুট মনোবল এবং দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত তিনি মানবতার শান্তি, কল্যাণ ও মুক্তির কাজে নিবেদিত ছিলেন, ক্ষণিকের জন্যও তা থেকে এক বিন্দু সরে আসেননি বা আপোষ করেননি। বিশ্বময় সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও সমতার ভিত্তিতে সুখ শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলাই ছিল রাসূল (সাঃ) এর মূল আদর্শ ও লক্ষ্য।
তাই বিরাজিত পরিবেশে বিশ্বজাহানের মানুষকে জুলুম নিপীড়নে অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে ফেলে রেখে, আল্লাহ্র একক প্রভুত্ব বা একত্ববাদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ভরে অবজ্ঞা অবহেলা করে ও তাওহীদি আমানতকে অরক্ষিত রেখে শুধুমাত্র নামায আদায় আর তসবীর দানা জপে জান্নাতের আকাঙ্ক্ষা মূর্খতা এবং ভীরুতা বৈ আর কিছুই নয়। সেজন্যই মানবজাতিকে কোরআনের শিক্ষা ও মহানবী (সাঃ) এর আনুগত্যকে উপেক্ষা করে জীবন জিন্দেগী কাটানোর মহাবিপদ ও ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক ও সাবধান বাণীর কথাও কোরআন পাকে আল্লাহ্ জানিয়ে দিয়েছেন স্পষ্টভাবে। সেজন্য রাসূলের প্রতি রবের এরূপ নির্দেশ ছিল, “জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সদুপদেশ দ্বারা আপনি মানুষকে আপনার রবের পথে আহ্বান করুণ এবং তাদের সামনে দ্বীনের মর্মার্থ উত্থাপণ করুণ সর্বোত্তম পন্থায়” ( সূরা নাহল: ১২৫)। আল্লাহ্পাক আক্ষেপ করে আরও বলেন, “আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা হৃদয়ঙ্গম করতে অপারগ (সূরা সাবাঃ ২৮)।
আগামী পর্বে শেষ হবে ইনশাআল্লাহ
বিষয়: বিবিধ
১২০৯ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিন্তু......
মাশা আল্লাহ আপনার লিখনির ধার আছে বলতেই হবে। মহা মানবের মহান জীবনী ফিঙ্গার ও কি বোর্ড দিয়ে চমৎকার গাঁথিয়েছেন।
আপনার রামাদানের প্রস্তুতি কেমন চলছে, আমিতো এখনো গাফেলদের কাতারে রয়ে গেলাম। দোয়া চাই, যেন অলসতা কেটে উঠতে পারি।
অনেক অনেক শুকরিয়া, জাযাকিল্লাহ খাইর।
আপনিও খালামনির জন্য বেশী বেশী দোয়া করবেন।
গত ২০১২ সাল থেকে নিয়্যত করেছি আমৃত্যু যেন সকল বালা মুসীবত ও দুনিয়াভি সকল পেরেশান মুক্ত হয়ে রমযানের শেষ দশ দিন একাগ্রচিত্তে ইতেকাফে থাকতে পারি।
এ যাবত পর্যন্ত পালন করতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ্। কিন্তু ৮ই জুন নিয়ে খুবই চিন্তান্বিত আছি। কোনভাবেই ফ্রি থাকতে পাচ্ছি না। ঐ দিনটিতে। ভীষণ বিব্রতকর অবস্থা। কাকে অনুরোধ করবো বুঝতে পাচ্ছি না।
পড়িনি, পূরোটা একটানে পড়তে চাই
ইনশাআল্লাহ
টান শেষের অপেক্ষায়......
অনিঃশেষ শুভেচ্ছা।
আমীন। ছুম্মা আমীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন