......ওরে......! কোমল কুসুম কলি......
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৭:২২:৪৪ সন্ধ্যা
বেশ কিছুদিন আগে বেড়াতে গিয়েছিলাম আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষীর বাসায়। তারা নিউক্যাসেলেই দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করছেন। পুরা পরিবারসহ। স্বামী স্ত্রী দু’জনেই অনেক উদার ও মহতী মনের মানুষ। পরোপাকারী। মেধাবী ও প্রতিভাধরও বটে। পরিচিত পরিমণ্ডলে তাঁদের দু’জনেরই অনেক সুখ্যাতি। মানুষের দুঃসময়ে পাশে থেকে একান্ত আপনজনের মত সেবা ও সান্নিধ্য দেয়ার জন্য।
সুবিশাল পরিপাটি বাসায় পৌঁছে ছেলেমেয়েদের সাথে কুশল বিনিময় পর্বের পালা। কিন্তু একি! তারা বুদ হয়ে আছেন ল্যাপটপ স্ক্রিনে! চোখের পলক ফিরানোর ফুরসৎ নেই! দেখে মনে হল, শ্বাসপ্রশ্বাস ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচে না এসব কোমলমতি শিশুরাও আজকাল আইপড, ল্যাপটপ, মোবাইল ও কম্পিউটার ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারে না। তাইতো বাবা মায়ের ডাকে তাদের চাহনিতে ফুটে উঠলো এক রাশ বিরক্তি! ভয়ংকর ব্যস্ততার ছাপ তাদের চোখে মুখে! যদিও ছোট সন্তানটির বয়স মাত্র পাঁচ বৎসর।
কথা প্রসঙ্গে ভাই পরিতাপের সুরে জানালেন, কয়েকদিন আগে বিশেষ এক অভিযোগে ভাবী নাকি তার ছোট সন্তানটিকে একটু কঠোর ভাষায় শাসিয়েছিলেন। কথা না শুনলে পিটাবেন তাকে বলেছেন। আর সাথেসাথেই ছেলে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে উত্তর দিয়েছেনঃ
‘’you can shout at me but you can not hurt me, if you hurt me I must call the police’’.
একথাগুলো শোনার সর সাথে সাথে সমাজে বিদ্যমান অসংখ্য বেদনাময় উদাহরণ আমার মধ্যে যেন ভাবান্তরের সৃষ্টি করলো। আঁতকে উঠে আমি যেন মুহূর্তেই অন্য এক ভাবনার জগতে ডুবে গেলাম;
এ দৃশ্য তো আমার কাছে আদৌ নতুন কিছুই নয়। তরুণ তরুণীদের প্রকাশ্যে আপত্তিকর মেলামেশা, শরীরে মানুষের ট্যাঁটো অঙ্কন, নেশা করা, পথে দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়ানো, অর্ধনগ্ন ছবি ফেসবুকে শেয়ার করা ইত্যাদি! এইতো কয়েকদিন আগে দেশের ছেলেমেয়েদের অবস্থা স্বচক্ষেই দেখে এলাম। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ফেস বুক তথা ইন্টারনেটের জোয়ারে ভাসছে তরুণ প্রজন্ম। স্কুলে ছোট ছোট জান্নাতি পাখীদের হিন্দি গানের তালে তালে দেয়া হচ্ছে নাচ গানের তালিম। আঁকছে তারা জীবজন্তু ও মানুষের ছবি। জমানো হচ্ছে প্রতিযোগিতার আসর! দ্বীনের শিক্ষা ও দ্যুতি তাদের হৃদয় কন্দরে প্রবেশের কোন সুযোগই দেয়া হচ্ছে না। তাই আল্লাহ্ রাসূলের কথা শুনলেই তাদের মুখ কালো হয়ে যায়।
“অথচ একটি মাত্র চাঁদের আলো সারা বিশ্ব নিখিলকে করে আলোকময়। যার নরম মিষ্টি আভায় ও প্রাণস্পর্শী অলৌকিক ছোঁয়ায় সৃষ্টিজগত হয় উঠে প্রণোদিত। উদ্দীপ্ত। আঁধার ঘুচিয়ে এনে দেয় উদ্ভাসিত দীপ্তি। আমাদের শিশুরাও আমাদের পরিবার জগতের এক একটি চাঁদ। যাদের বিকিরণে উদ্ভাসিত হবে ব্যক্তি, পরিবার এবং আগামী পৃথিবী। কারণ শিশুরাই পরিবার ও জাতীর শ্রেষ্ঠতম মানব সম্পদ। তারাই আগামী দিনের কাণ্ডারি। সেজন্যই মহান প্রভু মাতৃগর্ভ থেকেই রোপিত করেছেন শিশুদের জন্য সুব্যাপ্ত সুগভীর প্রজ্ঞাপূর্ণ শিক্ষার বীজ। অভিনব বিস্ময়কর এক জগতে! মায়ের জঠরে থেকেই সেখানে সঞ্চারিত হয় নতুন প্রাণ। খুঁজে পায় তারা একদিন নতুন জগতের সন্ধান।
শিশুমন হল নরম কাঁদামাটির মত। তাদেরকে যেভাবে আমরা তৈরি করতে চাইবো সেভাবেই তারা বেড়ে উঠবে। আর সেজন্যই ছোটবেলা থেকে তাদের পরিশুদ্ধ চিন্তা চেতনাকে বিকশিত হতে দেয়া, পরিশীলিত মন ও মননের জগতের সাথে তাদের পরিচিত করা এবং সুস্থ সৃজনশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা পিতা মাতারই দায়িত্ব। এভাবেই ছোট ছোট কোমলমতি প্রাণগুলো তাদের নব নব জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রতিভা, মানবিক গুণ ও যোগ্যতার নতুন এক আঙ্গিকে ও অবয়বে আবির্ভূত হওয়ার সুযোগ পায়।
অথচ সৎ নির্ভীক জীবনের আদর্শ রূপায়নে, প্রতিবাদী চরিত্রের দুরন্ত দুর্বার অভিযানে, অন্যায় প্রতিরোধে বলিষ্ঠ শক্তি প্রদর্শনে, স্বর্গ নরকের জ্ঞান অন্বেষণে, প্রকৃত লাভ-লোকসানের ক্ষেত্র উন্মোচনে, কোরানিক জ্যোতির বিচ্ছুরণে, রাসূল ও হাদিসের বিবরণে-বিচরণে, দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণপূর্ণ উন্মুক্ত বাতায়নে এসব কোমল কুসুম কলিদের মনোজগৎ সম্পূর্ণ রুদ্ধ, অন্ধ ও বধির। এসবের দায়বদ্ধতা আসলেই কার?!
সাগর সেঁচে মুক্তো না এনে, তুলে দিচ্ছি তাদের হাতে উত্তপ্ত বিষময় বালুকণা। ঠেলে দিচ্ছি তাদেরকে নিকষ বিষাক্ত অন্তহীন কারাগারে। পুরে রাখছি প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ডলিতে! বিনষ্ট হচ্ছে মূল্যবান মূলধন!! এজন্য অবশ্যই আমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। দিতে হবে কঠিন মাশুল। পরিশোধ করতে হবে উচ্চমূল্য।
আমাদের অজ্ঞতার কারণে সীমাহীন সমূদ্রের অনিন্দ্য সোনালী চূড়ায় স্বর্ণময় স্বপ্নের স্বর্গীয় সারথিরা পথহারা হয়ে জ্বলছে অহর্নিশ! ধিকি ধিকি! এই অগ্নিতে পুড়ছে গোটাবিশ্ব! আর কত......??? এর শেষ কোথায়? কতদূর...?!
......ওরে...! কোমল কুসুম কলি... মহান শক্তিমান দয়াময় প্রভূর অসীম দোয়ায় মুদিত অন্তরে নয়, উদিত চক্ষু মেলে আমাদেরকে ক্ষমা করো! অভিশপ্ত না করে আশীর্বাদ হয়ে তোমরা শান্তি আর প্রশান্তিতে ভরে দাও আগামী দিনের এই ধরিত্রীকে। তোমাদের ঐশী জ্ঞান ও প্রজ্ঞাময় কুসুমিত ছোঁয়ায়। এটাই অসহায় বেদনার্ত হৃদয়ের আকুতি......।
বিষয়: বিবিধ
২০৮৯ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিদেশে আইন আছে সত্যিই কিন্তু আমাদের দেশের অবস্থাও তো কম ভয়াবহ নয়।
এর প্রতিকারে আমরাই বা কী উদ্যোগ গ্রহণ করছি?
এখনকার পরিস্থিতি অবলোকন করলেই তো আমার গাঁ শিউঁরে উঠে।
জানিনা এসবের পরিণতি কী?
আপনার সাথে সহমত।
সুন্দর মতামত শেয়ার করার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
সত্যিই কথাই বলেছেন!
আপনার সাথে সহমত।
সুন্দর মতামত শেয়ার করার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
সত্যি কথা বলতে কি! পুটীর মায়ের সাথে সাক্ষাৎ ও তাঁর সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য একেবারে মুখিয়ে আছি ছোট ভাই।
তাড়াতাড়ি শুভ সংবাদের আয়োজন করেন।
কী বলতে চেয়েছেন কিছুই বুঝলাম না কিন্তু?
মূল্যবান উপস্থিতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
সত্যিই ব্যথিত হৃদয়ে বলতে হয়ঃ আগামী প্রজন্ম কি মনুষ্যত্ব বিকিয়ে দেবে?
আরবদেশেও একই অবস্থা। শুধু সন্তান নয়, নিজের স্ত্রীও স্বামীর মন মত চলে না। স্বাধীন মনে যখনি চায় তখনি বড়ি মেসেজ, ভূরিভোজ, কেএফসি, নষ্টামীসহ নানান কাজে যার যার ইচ্ছে অনুযায়ী নিজেকে পরিচালিত করে। খুব কম পরিবার আছে যারা ধর্মীয় অনুশাষন মেনে চলে।
স্বামী বেতন পাওয়ার সাথে সাথে স্ত্রী ও সন্তানদের মাঝে পুরো মাসের খরচ একসাথে বিলিয়ে দেয়, আর তারা যার যার মত করে খরচ করে।
আমাদের দেশের ধার্মিক পরিবারের মত পরিবার এদেশে খুব একটা দেখা যায় না। বোরকা হিজাব লাগালেও চলন বলন সবই পশ্চিমাদের আদলে পরিচালিত।
এগুলো মনে পড়লে পৃথিবী অন্ধকার দেখায়, মহান আল্লাহই একমাত্র হেফাজতকারী। তার কাছেই ফিরে যেতে হবে ও জবাবদিহি করতে হবে। জাযাকিল্লাহ খাইর
একেবারে সঠিক চিত্রই তুলে ধরেছেন। সারাক্ষণ এসব অনুধাবন করে মাঝে মাঝেই কাতর হয়ে যাই।
আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি?
পরিত্রাণের উপায়ই বা কী?
মূল্যবান স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ও গুরুত্বপূর্ণ মতামত রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
যদি শক্ত থাকে
তাহলে গাছ ,ডালপালা,
পাতা সব কিছু ই সতেজ থাকবে
এটা ই স্বাভাবিক
আমাদের তো শিকড় ই নড়বড়ে....
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে তাওফিক দান করুন। আমীন
বুদ্ধিমতী শেকড় সন্ধানী আপু একেবারে ঠিক জায়গায় নক করেছেন।
শেকড়বিহীন শাখা প্রশাখা কী কখনও সজীব সতেজ থাকতে পারে?!!
জ্ঞানী গুণী মানুষের কথাই বটে......
কিন্তু এসব থেকে পরিত্রাণের উপায়ই কী? আপু...।।
বড় আপুদের দ্বায়িত্ব
আমাদের প্রথমে নিজেদেরকে বদলাতে হবে
কিন্তু সেটা যেন লোক দেখানো বদলানো না হয়
আপনার সুন্দর দোয়ায় আমীন!
আসসালামু আলাইকুম আপু ।
আসলে এসব দেশে বাবা,মারা যে কতটা অসহায় একমাত্র ভুক্তভূগীরাই জানে । একটা ঘটনা শুনেছিলাম কতটুকু সত্য জানিনা ।
ছেলেকে শাসন করলেই ছেলে বাবাকে ভয় দেখায় পুলিশে ফোন করবে । বাবা চুপ হয়ে যায় । কিন্তু নিজের অশায়াত্বকে সহ্য করতে না পেরে উনি পরিবারকে বলে চল আমরা দেশে বেড়াতে যাব । ঢাকা এয়ারপোর্টে নেমে সবার পাসপোর্ট ছিড়ে ছেলে ধরে পিটানী দিয়েছে আর বলছে আজকে ডাক তো পুলিশ বাবাকে ।
অনেক ধন্যবাদ আপু ।
আমার তো মনে হয় যা শুনেছ সত্যিই। কেননা এখানে এক পরিচিত ব্যক্তি এসব কারণে জেল খেটেছেন। যা খুবিই দুঃখজনক।
আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকেই অন্তর থেকে বদলিয়ে খাঁটি মুসলমান হওয়ার তৌফিক দিন আমীন।
তোমাকেও অন্নেক অন্নেক ধন্যবাদ আপুমনি।
অবশ্যই পিতামাতা এজন্য অনেকাংশে দায়ী।
কাকে থাপ্রাবেন ভাইয়া......??
বুঝে এসেছে...???
বর্তমান পরিস্থিতি যে এরকম ই আপু। আজকাল বাচ্চারা জন্মের পর থকেই চোখে রসামনে ইলেক্ট্রনিক্স এবং ডিজিটাল ম্যটারিয়েলস এর মধ্য়ে বাস করছে, এগুলো থেকে দূরে রাখা অনেকটাই দুঃসাধ্য! তবে নিয়মানুবর্তিতা এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে হয়তো ভারসাম্য রাখা যেতে পারে।
ঐ ইলেক্ট্রনিক্ষের সবচাইতে ক্ষতিকর প্রভাব হলো এই বাচ্চারা অসমাজিক থাকে, বাইরের দুনিয়ার সাথে এদের সম্পর্ক থাকে না বললেই চলে, ব্যবহারেও খুব ক্রেজি হয়!
আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।
আমিতো প্রায়ই এসব দেখে চিন্তিত ও বিষণ্ণ হয়ে পড়ি। ছোট ছোট ফুলকলিরা এখন থেকেই বড়দিন, জন্মদিন, হ্যালোইন এসমস্ত বলতেই পাগল।
অসহায়ের মত চেয়ে থাকা যেন!!
আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকেই অন্তর থেকে বদলিয়ে খাঁটি মুসলমান হওয়ার তৌফিক দিন আমীন।
আমাদের মিষ্টি জান্নাতি পাখি দু’টি কেমন আছে আপু?
সত্যিই কথাটা অনেক ভয়ংকর বটে। ছোট কাল থেকেই শিশুদের অনলাইন জগত থেকে দুরে রাখা উচিত। আর ইলেক্টনিকস ডিভাইস গুলো তাদের জন্য মোটেও উপযোগীনা,যদিও অভিভাবকগন বুঝেও না বুঝার ভান করেন।
ধন্যবাদ আপনাকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন