প্রেম ও প্রজ্ঞাপূর্ণ প্রাণোৎসর্গ
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৩:৫২:৫৯ দুপুর
প্রজ্ঞাময় প্রেম ও নিখাদ ভালোবাসা একজন মানুষকে দ্বীন প্রতিষ্ঠায় যেমন পূর্ণ মনোনিবেশ ও সর্বোচ্চ ত্যাগ করতে শেখায় তেমনি দুনিয়া ও পার্থিব জগতের মোহে লোভ, লালসা ও হিংসার প্রতি তৈরী করে সম্পর্কহীনতা। বিশেষ ব্যক্তিত্বের ভীড়ে এমন একজন ছিলেন আমর ইবনু’ল জামূহ (রাঃ)। তিনি ছিলেন খোঁড়া। তাঁর ছিল যুবক চার পুত্র। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাথে কুরবানী ও আত্মোৎসর্গের প্রতিটি মুহূর্তেই তিনি হাজির থাকতেন।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন ওহুদ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন আমর ইবনু’ল জামূহ (রাঃ) ও যাত্রায় শরীক হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন। কিন্তু তাঁর পুত্রগণ বললেন, আল্লাহ্ তা’আলা আপনাকে যুদ্ধে যোগদান করা থেকে মাফ করেছেন। আপনার ওপর জিহাদ ফরয নয়। বরং আপনার থেকে আমরাই যথেষ্ট।
আমর ইবনু’ল জামূহ (রাঃ) তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমার ছেলেরা আমাকে জিহাদ থেকে নিবৃত্ত রাখতে চাইছে। কিন্তু আল্লাহ্র কসম! আমি শাহাদাতের সৌভাগ্য বরণ করতে চাই! আর এটাই আমার ঐকান্তিক বাসনা! রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে বললেন, আল্লাহ্ জিহাদ থেকে তোমাকে মুক্তি দান করেছেন। এরপর তিনি তাঁর পুত্রগণকে বললেন, তাঁকে জিহাদে যেতে দিলে তোমাদেরই বা কী ক্ষতি হবে! সে তো তাঁর মনোবাসনা পূর্ণ করার সুযোগ পাবে। এরপর তিনি ওহুদ যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সফরসঙ্গী হন এবং তাঁর শাহাদাত বরণের সৌভাগ্য নসীব হয়।
হযরত যায়দ ইবন ছাবেত (রাঃ) বর্ণনা করেন, ওহুদ যুদ্ধের সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে আমর ইবনু’ল জামূহ (রাঃ) এর খোঁজে পাঠান। তিনি বলেন, যদি তাঁর দেখা পাও তাহলে তাঁকে আমার ছালাম দিবে এবং বলবে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জানতে চেয়েছেন, এ সময় তুমি কেমন অনুভব করছ? হযরত যায়দ ইবন ছাবেত (রাঃ) বলেন, নিহতদের লাশের ভীড়ে আমি তাঁকে তালাশ করলাম। হঠাৎ এক স্থানে তাঁকে দেখতে পেলাম। আমি কাছে গিয়ে দেখতে পেলাম তাঁর শেষ মুহূর্ত সমাগত! তাঁর শরীরে তীর ও তলোয়ারের সত্তরটি আঘাত।
আমি তাঁকে বললাম, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তোমাকে সালাম দিয়েছেন এবং এই মুহূর্তে তোমার অবস্থা কেমন তা জানতে চেয়েছেন। উত্তরে তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে আমার সালাম দেবে এবং বলবে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই মুহূর্তে আমি জান্নাতের খোশবু অনুভব করছি! এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর প্রাণবায়ু বের হয়ে যায়। এভাবেই তিনি নবীজির প্রতি তাঁর প্রেম ও প্রজ্ঞাপূর্ণ প্রাণোৎসর্গের নজীর স্থাপন করে ইতিহাসের পাতায় চির অম্লান এক আলোক দিশারী হয়ে জ্বল জ্বল করছেন। আলহামদুলিল্লাহ্! মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকেই আমর ইবনু’ল জামূহ (রাঃ) এর ন্যায় সৌভাগ্যময় মৃত্যু নসীব করুণ। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৫০৭ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
উপকারী উদ্দিপনামূলক নসীহা নিয়ে লিখা ও পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য শুকরিয়া!
জাযাকিল্লাহ খাইর। আল্লাহ আমাদের সিরাত্বল মুস্তাকীমে রাখুন! আমিন।
তোমার অত্যন্ত মর্মস্পর্শী দোয়ায় আমীন।
সবাইকে নিয়ে ভালো থেকো দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
উৎসাহব্যঞ্জক অতুলনীয় একটি মূল্যবান মন্তব্য রেখে যাওয়ার জন্য বারাকাল্লাহু ফিক।
এ বয়সেও কি আপনি চাকুরি করেন? তা কি কাজের চাকুরি! সংকোচ মনে না করলে জানাবেন প্লিজ!
হৃদয়স্পর্শী একটি মূল্যবান মন্তব্য রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
জ্বি এই বয়সেও আপনাদের সকলের দোয়ায় আল্লাহ্ পাক অনেক সুস্থ ও সবল রেখেছেন আলহামদুলিল্লাহ্।
আমি অতি ক্ষুদ্র একটি যব করি এখানে আংকেল।
একটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে আমি ফ্লোর ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করি। আলহামদুলিল্লাহ্।
দোয়া করবেন।
একেবারে খাঁটি কথাই বলেছেন।
আল্লাহ্ পাক আমাদের খাঁটি মুসলমান হওয়ার তৌফিক দিন আমীন।
এই ধরনের কিছু পড়লে বা দেখলে আমার কান্না পেয়ে যায়
এই জন্য বাসায় সবাই আমাকে বেআক্কেল বলে
জামানা পাল্টে গেছে। সত্যকে মিথ্যা, ন্যায়কে অন্যায় বলা যেন আজকাল স্বভাবসিদ্ধ স্বাভাবিক একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাইতো দ্বীনের কথায় চোখে পানি আসলে আপনাকে এরূপ ব্যঙ্গোক্তি হজম করতে হয়।
মহান রব নিশ্চয়ই আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিবেন ইনশাল্লাহ।
আললাহ সবাইকে কবুল করুন
আপনার ভালোলাগা অনুভূতি আমাকেও আনন্দিত করলো।
উপস্থিতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্তব্যের জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন