“প্রিয়... তম ...পলক”
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ০৫ জুন, ২০১৫, ০৬:০৪:১১ সন্ধ্যা
আশা নিরাশার বাঁকে বাঁকে জীবন চলার পথে সকলেরই প্রিয় কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত থাকে যা শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তির বাতিরঘর হয়ে জ্বলজ্বল করে উঠে মনোদর্পণে একান্ত নিরালায়। সেই পবিত্র আরাধ্য মুহূর্তগুলো জীবনের প্রশান্তির দুয়ার খুলে দিয়ে সকল শূন্যতাকে পূর্ণ করে দেয়। নিয়ে যায় জীবনকে অন্য কোন মোহনায়। রেখে যায় কাঙ্ক্ষিত ভাবনার অনিঃশেষ খোরাক। এমনি এক সময়ে জীবনের পরতে পরতে মিশে থাকা অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু মুহূর্তের মুখামুখি হয়ে যখন আমি শান্তির অন্বেষণে নির্মল সুকোমল একটি পরিবেশের প্রত্যাশায় মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম ঠিক তখনি এক মাহেন্দ্র ক্ষণে আসন্ন ছিল মাহে রমজান। তাইতো এই মহিমান্বিত ক্ষণের প্রত্যাশায় রবের নৈকট্যলাভের জন্য ঐশ্বর্যময় অভিজ্ঞতা আহরণের আকুলতা নিয়ে মাসব্যাপী মসজিদে ইফতার ও তারাবীর নামায আদায়ের পাশাপাশি শেষ দশ দিন মসজিদে ইতিকাফ করার নিয়্যত করি।
২০১২ সালের কথা। দিলের মধ্যে ছিল একটিই ব্যাকুলতা সকল জাগতিক ব্যস্ততা ও মোহমায়া থেকে পরিপূর্ণরূপে নিজেকে মুক্ত রেখে নির্জনে, নিরালায় একাগ্রচিত্তে নিবিড় আকুতি নিয়ে আমার আপন প্রভূকে কাছে পাবো এই প্রত্যাশা। যেখানে শুধুই কর্ণে ভেসে আসবে মহান রাব্বুল আলামীনের মহামিষ্ট বাণী। হৃদয় বিগলিত হয়ে আঁখিতে আসু ভরবে স্রষ্টার মহব্বতে। প্রতিটি পলকে দয়াময়ের দয়ার ছায়াতলে থেকে ইবাদত, বন্দেগী, তওবা ইস্তেগফার ও জিকিরের মাধ্যমে নিজেকে তাঁর ধ্যানে নিবিষ্ট ও নিমগ্ন রাখার পরিতৃপ্তির অনুপম স্বাদ আজো আমাকে তন্ময় করে তোলে। যা বাসায় ইতিকাফ করার মধ্যে কখনও অনুভূত হয়নি। মসজিদে প্রভুকে সদা দিলের মধ্যে পরম যত্নে ও মহব্বতে লালন করে তাঁর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত তালাশ করে সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য লাভ করার প্রাণপণ আরাধনার অনুভূতি ছিল সত্যিই অতুলনীয়।
মসজিদ প্রাঙ্গনে পরম করুণাময়ের অশেষ মেহেরবানী ও রহমতের করুণাধারায় সর্বস্তরের মুসলিম পরিবারের মধ্যে জমে উঠেছিলো জমজমাট দ্বীনি এক মহামিলন মেলা। পারস্পারিক ধর্মীয় বোধের আদান প্রদান, একের জন্য অন্যের মহব্বত, হাদিয়া দেয়া-নেয়া, প্রতিদিন বিভিন্ন রকমারি সুস্বাদু খাবার মসজিদে সরবরাহ করা, ফলমূল ও পানীয় পরিবেশন এবং নিজেকে অন্যের সেবায় উৎসর্গ করার যে ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিযোগিতা, চেতনা ও মূল্যবোধ যা হৃদয়কে বিপুলভাবে নাড়িয়ে দিতো আলহামদুলিল্লাহ্। মসজিদে মধুর সুরে কোরআন তেলোওয়াত, সুন্দর সুন্দর হাদীস নিয়ে আলোচনা, নারী পুরুষ, শিশু কিশোরের ভরপুর উপস্থিতির মধ্যে মাগরিব, এশা, তারাবী এবং তাহাজ্জুদ আদায় করা ছিল ব্যতিক্রম এক অভিজ্ঞতা। নামাযের পর হতো কুইজ প্রতিযোগিতার প্রশ্ন বিতরণ।
এই হৃদয়স্পর্শী পরিবেশের মাঝে আরেক অন্যতম আকর্ষণ ছিল শুভ্র ইসলামী পোশাক পরিহিত পবিত্র আর জান্নাতি সৌন্দর্যের মায়াভরা এক ঝাঁক কচি মুখের নয়নজুড়ানো কিছু সোনামণি। তারা বড়দের পাশাপাশি সবার খেদমতে নিয়োজিত ছিল যেমন ইফতার পরিবেশন করাসহ কখন কার কী প্রয়োজন তা পরমানন্দে পূরণ করতো এই জান্নাতি ফুলগুলো। এছাড়াও মসজিদ প্রাঙ্গনে সবসময় থাকতো দশ বারো বছরের বেশ কয়েকজন শিশু কিশোর। প্রতিদিন পর্যায়ক্রমে তাদের কচি কণ্ঠের মিষ্টি মধুর আযানের ধ্বনি প্রত্যুষে আমাকে বিমোহিত করতো।
রমযানের শেষ দশ দিন রাতের রান্না হতো মসজিদ প্রাঙ্গনে। সন্মানিত ইমাম সাহেব একদিন স্বয়ং রন্ধন প্রণালীতে শামিল হলেন। এভাবেই পুলকিত চিত্তে মহানন্দে রমযানের প্রতিদিন কোন না কোন অবিশ্বাস্য ঘটনা বা দৃশ্য হৃদয়কে নতুন চেতনায়, নতুন ভাললাগায়, নতুন উদ্দীপনায় ও ঈমানী মাধুর্যের স্পর্শে ভরিয়ে তুলতো। আর কেবলিই মনে হতো এটাই ইসলামের প্রকৃত অনুপম সৌন্দর্য। বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে পালন না করার কারণেই মূলত এই মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য থেকে আমরা অনেকভাবে বঞ্চিত এবং নির্যাতিত।
রমযান শরীফে আমার ইতিকাফের আরেকটি মহতী বাসনা ছিল শবেকদর রাত্রির অসামান্য ফজিলত ও কল্যাণ হাসিল করা। আল্লাহ্ সুবহানু তা’য়ালার কাছে প্রবল প্রাপ্তির সম্ভাবনাময় প্রত্যাশা নিয়ে শবে ক্বদরের মহিমাময় রজনী লাভের উত্তম উপায় অনুসন্ধানে আমি সবসময় এক বুক আশা নিয়ে অধীর আগ্রহে উদ্বেলিত ছিলাম যেন তার মহামূল্যবান স্বাদ উপভোগ করার সৌভাগ্য তিনি আমাকে দান করেন।
দিলের গহীনে পুঁতে রাখা সুপ্ত এই বাসনা যেন কোনভাবেই হাতছাড়া না হয় সেজন্য একটু বেশী বেশী সতর্ক থাকতাম। পাওয়া না পাওয়ার দোলাচলে এই ভেবে শান্তনা পেতাম যে, সর্বাবস্থায় একজন ইতিকাফকারীর শ্বাস-প্রশ্বাস ইবাদতের মধ্যে গণ্য। এমনকি নিদ্রা ও জাগরণ, ঘুম, খাওয়া-দাওয়া, নড়াচড়া সবকিছুই ইবাদতের শামিল। তাই একদিন বেজোড় রাত্রিতে তাহাজ্জুদ নামাযের পর মসজিদ প্রাঙ্গন নিস্তব্ধ হলে ঘর থেকে বের হয়ে আমি প্রকৃতির উদ্দেশ্যে আমার নয়ন যুগল উন্মেলিত করলাম। হঠাৎ আমি প্রকৃতির ভাব বিহ্বলতা দর্শনে মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আমার সারা শরীর কেমন যেন পুলকিত শিহরণে হিম হয়ে আসলো। মনে হল আসমান জমীন একনিষ্ঠ চিত্তে সেজদাবনত তাঁর মহান প্রভূর প্রার্থনায়।
আমার দেহ মনে অন্য রকম এক ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। আমার অন্তরাত্মা অভাবিত ভাবানন্দে শিহরিত হয়ে কেঁপে কেঁপে উঠলো। শরীরের প্রতিটি লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল। শীত শীত অনুভূত হল। একটু ভীত হয়ে গেলাম আমি। কিন্তু পর মুহূর্তেই সর্বশক্তিমান আমার সাথে আছেন ভেবে শক্তির সাথে সম্বিৎ ফিরে পেলাম। পরম তৃপ্ততায় আমার প্রতি মহান প্রভূর দয়ার কৃতজ্ঞতায় তন্ময় হয়ে রইলাম আমি কিছুক্ষণ।
অভিভূত করা অধীর প্রতিক্ষিত এই হৃদয় হরণ করা জীবনের শ্রেষ্ঠতম পাওয়া প্রিয়তম মুহূর্তটিকে অপলক দৃষ্টিতে প্রাণভরে উপভোগ করলাম। মহতী আবেশের এই অবিস্মরণীয় অনুভূতি ও ছোঁয়া মানসে ভরে পরম মুগ্ধতায় হৃদয়ে শুরু হল তোলপাড় ও ভাবান্তর। তারপর ধীরে ধীরে আবার আমার নির্দিষ্ট কক্ষটিতে ফিরে এলাম অন্য এক আমি...। বিদায় ক্ষণে বুকের ভিতরে বিষাদের হাতছানি মনকে বেদনার্ত করে তুললো। অন্তরটা হু হু করে কাঁদছিল তখন। বার বার পেছন ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিলাম আমি। একান্ত নিভৃতে ভেতরে তখন অব্যক্ত ঝড়ের কম্পন শুধুমাত্র ঐ একজন অন্তর্যামীই তা প্রত্যক্ষ করলেন......।
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৯ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাদের মত কল্যাণকামী ও হিতাকাঙ্ক্ষী ভাইদের জন্য তাই শুধুই দোয়া।
অনেক দিন পর পোষ্ট পেয়ে যেমন আনন্দিত হলাম, মহান প্রভূর প্রসংশায় ভরা গদ্যমালাটি পেয়ে শিহরিত হলাম বারবার।
হে মহান প্রভূ আমাদের শ্রদ্ধেয়াকে যুগ যুগ আমাদের মাঝে জীবিত রাখিও এই প্রত্যাশা।
রমজানের এই ছোট্ট আঙ্কেলটিকে দোয়াতে ভূলবেন না কিন্তু। অনেক অনেক সালাই রইল, রমজানের রহমত মাগফিরাত ও মুক্তি মহান রবের পক্ষথেকে আপনাকে গ্রাস করুন এই কামনা।
আর হ্যাঁ আংকেল আপনি সহ অন্যান্য শ্রদ্ধেয়, শ্রদ্ধেয়া ও প্রাণপ্রিয় ব্লগারদের জন্য আমার দোয়া সবসময় প্রাণ থেকেই এসে যায়। আপনাদের জন্য তো আর কিছুই করতে পারিনা শুধু দোয়াটুকু ছাড়া তাই না? খালামনির জন্যও দোয়া রাখবেন। আশাকরি জান্নাতমণি সহ সকলেই ভালই আছেন? কামনাও তাই।
হৃদয়স্পর্শী সুন্দর মন্তব্যটির জন্য জাজাকাল্লাহূ খাইর।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় সবুজ ভাইয়া। আপনার স্বতঃস্ফূর্ত মূল্যবান উপস্থিতি এবং প্রেরণাপূর্ণ সুন্দর অনুভূতি অনেক আনন্দদায়ক মাশাআল্লাহ। আমার সীমাহীন অযোগ্যতাকে আড়ালে রেখে আপনাদের আলোকিত মহতী দৃষ্টিভঙ্গী আমার ক্ষুদ্রতম প্রচেষ্টার এই লিখার জগতকে প্রশস্থ করবে বলে গভীর বিশ্বাস হৃদয়ে পোষণ করি।
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য জাজাকাল্লাহূ খাইর।
আপনাদের মত কল্যাণকামী ও হিতাকাঙ্ক্ষী ভাইদের জন্য তাই শুধুই দোয়া।
ব্যাতিক্রম হয়নি।
উৎসাহব্যঞ্জক সুন্দর মন্তব্যটির জন্য জাজাকাল্লাহূ খাইর।
আপনাদের মত কল্যাণকামী ও হিতাকাঙ্ক্ষী ভাইদের জন্য তাই শুধুই দোয়া।
কেমন আছেন আপু? ভীষণ মনে পরে...।
আপনার জন্য অনেক দোয়া ও শুভ কামনা রইলো।
এমন লেখায় আমার কমেন্ট করতে খুবই কষ্ট হয় । কি বলব কিছু বুঝতে পারি না । সবাই সুন্দর লেখায় সুন্দর করে কমেন্ট করেছে ,আমি শুধু এটুকুই বল্লাম আপু অনেক ভাল লেয়েছে । ধন্যবাদ আপু ।
তোমার জন্য অনেক দোয়া ও শুভ কামনা।
আপনার জন্য অনেক দোয়া ও শুভ কামনা।
অভিব্যক্তি যাওয়ার জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া।
আপনার জন্য অনেক দোয়া ও শুভ কামনা রইলো।
তোমার অসাধারণ হৃদয়স্পর্শী দোয়ায় আমীন।
তোমাদের জন্যও অনিঃশেষ দোয়া ও শুভ কামনা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন