নীলপদ্মে লুকায়িত নীলাম্বরী নীলাঞ্জনা - পর্ব ২
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২২ এপ্রিল, ২০১৫, ০৬:০৯:৪৭ সন্ধ্যা
পর্ব ১
http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/detail/6327/mbanu/64288#.VTep95O9iac
প্রত্যাশিত গন্তব্য স্থল এডিনবরায় পৌঁছে লাগেজ সংগ্রহের পর কাঁচের অটো দরজা পেরিয়ে বাস ষ্টেশনের ভিতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়লো চিরচেনা জায়গাটিতে উন্নতমানের পরিবর্তনের ছোঁয়া। কেন জানি মনের অজান্তেই বুকের ভিতর থেকে ছোট্ট একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। হালকা একটু নাস্তা করে নিয়ে এলাকাটি একটু প্রদক্ষিণ করে গৃহাভিমুখে রওয়ানা দেয়ার জন্য কয়েক কদম পা রাখতেই আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
পুরো সিটি সেন্টার জুড়ে ট্রাম লাইনের উপর যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যকরী করা হয়েছে। যেখানে অত্যাধুনিক সুশোভিত ঝকঝকে গাড়ীতে বসে যাত্রীরা পরমানন্দে উপভোগ করছে তাদের সময়গুলো। পাঠকের উদ্দেশ্যে একটু বলে রাখি, অন্য দেশের কথা আমি জানিনা তবে ইউ কে তে দেখছি সেই ১৯৯৬ সাল থেকে আজ অবধি প্রতিদিন ভোরে সারা দেশব্যাপী একটি সরকারী দৈনিক খবরের কাগজ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয় যাত্রীদের জন্য। তারপরও যাত্রীরা তাদের পছন্দের বই, ইবুক, ম্যাগাজিন কেউবা মোবাইলে যে যার মত ব্যস্ত সময় কাটান। প্রতিটি বাস স্টপেজে আছে ছোট একটি স্ক্রিন যেখানে বাসের আগমনের সময়সূচী প্রতি মুহূর্তে ভেসে উঠছে। কোন কারণে পাঁচ মিনিট বিলম্ব হলে সেটাও তত্ক্ষণাৎ যাত্রীদেরকে স্ক্রিনের মাধ্যমে অবগত করা হচ্ছে। সুতরাং আগমন কিংবা প্রস্থানে যাত্রীদেরকে কোন বাড়তি সময় ব্যয় করতে হয় না।
যদিও জীবনে প্রথম ট্রামে করে ভ্রমণের বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা হয়েছিলো ১৯৯৭ সালে সুইজারল্যান্ডে। যেখানে চালকের সাথে যাত্রীদের কোন সাক্ষাৎ বা যোগাযোগের সুযোগ নেই। টিকিট সংগ্রহ করতে হয় বাস স্টপেজে ক্যাশ মেশিনের মত একটি বক্স থেকে। সে আর এক স্বপ্নিল ভ্রমণ কাহিনী! যাহোক তারপরও কিছুক্ষণ পথে দাঁড়িয়ে নব যোগাযোগের এই অভিভূত করা দৃশ্যগুলো অবলোকন করছিলাম আর ভাবছিলাম আমার সোনার দেশটির হতভাগ্য ৯৫ ভাগ দুর্দশাগ্রস্থ মুসলমানদের কথা, তাঁদের পরিণতি ও অস্তিত্বের কথা!! যারা আজ পথভ্রষ্ট জাতির কলঙ্ক তিলক ধারণ করে অন্যায়কারী জালিমদের সাথে বিভিন্নভাবে আপোষ করছে। আর আল্লাহ্ তা’য়ালা নিশ্চয়ই জালিম সম্প্রদায়কে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন না (সূরা মায়েদাঃ ৫১)।
এসব ভেবে ভেবে অন্তরের ভার ক্রমেই যেন ভারীতর হয়ে উঠছিলো। তার ছোট্ট একটি সংগত কারণ এখানে উল্লেখ না করেই পারছি না। দূরদেশে থাকার কারণে আমার স্নেহময়ী মায়ের সাথে প্রায় দু একদিন পর পরই কথা হয়। আর মায়ের দু একটি কথায় সহসাই আঁচ করতে পারি গ্রামের দুরাবস্থাময় ভয়াবহ চিত্রের কথা। একদিন মায়ের মুখে জানতে পারি আমার বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে ক্ষমতাধর কিছু ভূমি খেকো বখাটে ছেলে লাল পতাকা লটকে দিয়ে বড় অংকের টাকা দাবী করেছে। তাদের দাবী পূর্ণ করা না হলে পরবর্তীতে লোমহর্ষক পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে নিকৃষ্টতম পন্থায় ও মধ্যযুগীয় কায়দায় হুমকিও দেয়া হয়েছে। সুতরাং ভয়ে এবং দুশ্চিন্তায় আমার পরিবারের শান্তি হারাম! যদিও এ সংবাদটি শোনার পর বজ্রাহত হলেও আমি মাকে অভয়বাণী শুনিয়ে দিয়ে কিছু শ্বান্তনামূলক কথা বললাম বটে কিন্তু স্বাধীন দেশে গ্রামীণ পরিবেশের এই কুকর্ম কিছুতেই মেনে নিতে পাচ্ছিলাম না।
এভাবেই অসুর ক্ষমতার জাদুবলে মুখচেনা কাঙালরা রাতারাতি হয়ে গেছে কোটি কোটিপতি। মদ, জুয়া, গুম, ভূমিদখল, ব্যভিচার, নারী পাচারসহ বহুমুখী অপকর্মে জড়িত এসব অমানুষদের বিলাসী জীবনে অনায়াসলভ্য প্রচুর সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে এতো দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে যা আলাউদ্দিনের চেরাগকেও আজ হার মানায়। কপটদের শক্তি এতই প্রবলতর যে বিশ্বাসী ও ধর্মভীরু নামের কুলাংগাররা তাদের পদ লেহন করছে অরুচিকরভাবে।
আর এই পরিবেশ মূলতঃ সৃষ্টি হয়েছে ইসলামের প্রকৃত জীবনদর্শনে চেতনার প্রাণস্পন্দন সঞ্চারকারী তাওহীদের আলো নিভিয়ে দেয়ার কারণে। তাইতো মুসলমানিত্ব কবরস্থ করে কুৎসিত সর্বপ্রণয়ী অভিশপ্ত চেতনার সাথী ইবলিসের সহচরে পরিণত হয়েছি আমরা। আর একারণেই মহান কবি ও দার্শনিক ডঃ আল্লামা ইকবাল ক্ষোভে ও দুঃখে বলেছেন, “তমদ্দুন সে হুনূদ” মুসলমান হলো হিন্দু এবং “ইহ মুসলমা হায় জ্বিন হে দেখকে শরমায়ে য়ুহুদ” অর্থাৎ মুসলমানকে দেখে ইহুদী পর্যন্ত লজ্জা পায়।
অথচ পাক কালামে আল্লাহ্ সু্বহানু তা’য়ালা বলেন, তোমরা সৎকাজ ও আত্মসংযমে একে অপরকে সাহায্য করবে এবং পাপ ও সীমালংঘনে একে অপরকে সাহায্য করবে না, এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহ্ তা’য়ালাকে ভয় করো কেননা আল্লাহ্ তা’য়ালা শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর (সূরা মায়িদাহঃ ২)
সুদূর বিদেশ বিভূয়ে অমুসলিমদের ঐক্যে গড়া হৃদয়স্পর্শী কর্মকাণ্ড যেকোন বর্ণের মানুষের মন মননকে জাগিয়ে তোলে, পুলকিত করে, হতবাক করে দেয়। অথচ তথাকথিত মুসলিমদের ঘৃণিত কর্মকাণ্ডে আমাদের হৃদয় হয় রক্তাক্ত ক্ষত বিক্ষত। এতবড় পরাজয়, গ্লানি, লজ্জা ও দুঃখ আমরা রাখবো কোথায়?! এযেন বিপরীতমুখী জীবনদর্শনের দৃশ্যমান করুণ ব্যঞ্জনা। তাইতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় মুগ্ধ করা মনোরম ও বিনোদনমুখী আয়েশি যোগাযোগের কথা স্মরণে আসতেই মনে পড়ে যায় ব্রিটিশ কাউন্সিলের এক শিক্ষকের কথা। ইউ কের ভ্রমণের সাথে আমাদের দেশের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলনা করে একদিন একটি কটূক্তি করেছিলেন তিনি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, একটি সভ্য দেশে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ট্র্যাফিক জ্যামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় যা তার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এক তিক্ত অভিজ্ঞতা। পাশাপাশি ভিক্ষুক, ছিনতাইকারী, ময়লা দুর্গন্ধময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর ধুলাবালির যন্ত্রণা তো আছেই। সেদিন তার সামনে কষ্টে রাগে দুঃখে অনেক যুক্তি দাড় করলেও একান্ত নিভৃতে বিষয়গুলো আমাকে ভাবিয়েছে অনেকদিন। আজো এতগুলো বছর পেরিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সেই বেদনাময় স্মৃতিগুলো নীলপদ্মে লুকায়িত নীলাম্বরী নীলাঞ্জনা হয়ে দগদগে ক্ষতের সৃষ্টি করে জন্ম দিচ্ছে হাজারো প্রশ্নের। জীবনের বাঁকে বাঁকে বিদ্ধ করা এসব প্রশ্নের জবাব আদৌ কোনদিন মিলবে কী ??!!!
যাক হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকাতেই চমকে উঠি আর ভ্রমণানন্দের সুখানুভূতির নির্যাসটুকু অপুষ্টিত রেখে কল্পনার ললাটে রুদ্র বহ্নি লেপে তাড়াতাড়ি আপণ গৃহাভিমুখে ছুটে চলি প্রত্যাশিত ঠিকানায়...... চলবে ইনশআল্লাহ্
বিষয়: বিবিধ
১৭৮৭ বার পঠিত, ৫২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি প্রথম!
এখানেও দেখেছি সবার মাঝে খুব সুন্দর ঐক্য, শৃংখলা এবং সংহতি কাজ করে! নিজে রদেশের কথা ভাবলে আসলেই খারাপ লাগে!
এ পর্বটিও চমৎকার হয়েছে আপু! পর্ব সংখ্যা ২ উল্লেখ করে দিলে পাঠকের বুঝতে সুবিধা হবে!
জাযাকিল্লাহু খাইর!
স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ও সুন্দর অনুভূতিসহ প্রথম হওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর। ফুলেল শুভেচ্ছা নীচে দিলাম ত্রুটির কারণে।
তোমার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো। মঙ্গলময় তোমাকে সর্বাবস্থায় ভালো রাখুন এই কামনা।
তোমার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো। মঙ্গলময় তোমাকে সর্বাবস্থায় ভালো রাখুন এই কামনা।
আমরা নিজেরাই যে নিজেদের কে ধ্বংস করছি।
"সুবিচার সে প্রকৃতির রিতি,প্রকৃতি খেলাপ করেনি তার।
কাফির লভিল হুর গেলমান,মুসলিম নিতি করিয়া সার।"
আপনি ঠিকই বলেছেন ভাইয়া। মুসলমানরা আজ ঈমান হারিয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে বসে আছি আর এখানে অমুসলিমরা পাথর কেটে প্রাসাদ বানাচ্ছে। পরিতাপ করা ছাড়া যেন আজ আমাদের কিছুই করার নেই!!! কী হতভাগ্য জাতি আমরা। অথচ আল্লাহ্ বলেছেন মুসলমানরাই শ্রেষ্ঠ।
মন্তব্যের জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
চলুক লেখা আমরা সাথে আছি....!
আপনার স্বতঃস্ফূর্ত মূল্যবান উপস্থিতি, উৎসাহব্যঞ্জক সুন্দর অনুভূতিসহ সাথে থাকার প্রেরণামূলক মন্তব্যটি অনেক সুন্দর লাগলো।
আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা । মঙ্গলময় আপনাকে সর্বাবস্থায় সুস্থ রাখুন ভালো রাখুন এবং মানসিকভাবে প্রফুল্ল রাখুন এই দোয়া করি।
আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা। মঙ্গলময় আপনাকে সর্বাবস্থায় সুস্থ রাখুন ভালো রাখুন এবং মানসিকভাবে প্রফুল্ল রাখুন এই দোয়া করি।
কবে যে এই জাতির হুশ ফিরিয়ে আসবে..........
আপনারা সবাই ভালো আছেন তো আংকেল? ইউ কে তে বেড়াতে আসেন সময় করে।
ইউ কে তে বেড়াতে যাওয়া আমাদের কাছে হিমালয় জয় করার সমান। তবুও আল্লাহ তায়ালা কখনো সুযোগ করে দিলে সারা পৃথিবী ভ্রমন করার ইচ্ছ। নিমন্ত্রনের জন্য জাযাকিল্লাহ খাইর।
ইউ কে তে বেড়ানো হিমালয় জয়সম হবে কেন?
ইচ্ছা যখন আছে অবশ্যই দয়াময় কৃপা করবেন ইনশাআল্লাহ। আপনাদের জন্য আমার গরীবের দুয়ার সবসময় উন্মুক্ত থাকবে আংকেল।
তুমি কী আমাদের প্রিয় রাসূলের নিন্দনীয় জঘন্য অত্যাচারের কথা ভুলে গেলে আপু??!!
আর হ্যাঁ এভাবে বলে শুধু শুধুই আমাকে লজ্জা দেয়া হচ্ছে তাই না?!! আপনি কিন্তু আমার চেয়ে অনেক অনেক বেশী সুন্দর লিখেন আপুজ্বি।
নীল রঙ আপনার পছন্দ জেনে আনন্দিত হলাম। ঠিকই বলেছেন আপু বিদেশে থেকেও দেশের ভাবনায় মনে এতোটুকু স্বস্তি নেই।
সম্ভব হলে স্কাইপে আসার অনুরোধ থাকলো......
আপনার স্বতঃস্ফূর্ত মূল্যবান উপস্থিতি, উৎসাহব্যঞ্জক সুন্দর অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার স্বতঃস্ফূর্ত মূল্যবান উপস্থিতি, উৎসাহব্যঞ্জক সুন্দর অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
সুন্দর পোস্টের জন্য যাজাকিল্লাহু খাইর প্রিয় খালাম্মুণি
কি শুধু ভাবতেছো আর শুধু ভাবতেছো????!!!! কিছুই কিন্ত বলোনি!!
খালাম্মুণিকে উৎসাহ, প্রেরণাসহ সুন্দর অনুভূতি রেখে জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
তোমার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা। মঙ্গলময় তোমাকে সর্বাবস্থায় সুস্থ রাখুন ভালো রাখুন এবং মানসিকভাবে প্রফুল্ল রাখুন এই দোয়া করি।
ছোট ভাইয়ার জন্য প্রানভরা অন্নেক অন্নেক দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
নীলাম্বরি নীল বসনা নারী
নীলাঞ্জনা দহন যন্ত্রণা
খুব ভালো লাগলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন